Featured Post

লেখা-আহ্বান : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য

ছবি
     মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কোন বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো (যেমন, কবিতা ১২-১৪ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে)। তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়। সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৫-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) যতিচিহ্নের আগে স্পেস না দিয়ে পরে দেবেন। ৪) বিশেষ কোন চিহ্ন (যেমন @ # *) ব্যবহার করবেন না। ৫) লেখার নীচে একটি ঘোষণা দিন:  'লেখাটি স্বরচিত ও অপ্রকাশিত'। মেল আইডি :  printednabapravat@

নিবন্ধ ।। শিশু-কিশোর সাহিত্যবলয়ে শিশুরাই যেন ব্রাত‍্য না থাকে ।। অরবিন্দ পুরকাইত


শিশু-কিশোর সাহিত্যবলয়ে শিশুরাই যেন ব্রাত‍্য না থাকে

অরবিন্দ পুরকাইত

(ধরে নেব কোনও এক কিশোর পড়বে এই লেখাটি। শিশু পড়বে ধরে নিচ্ছি না, কেন-না এটি তাদের উপযোগী করে লেখা হয়ে উঠছে না)

স্বাগত 'কিশলয়' এবং প্রসঙ্গত

'নবপ্রভাত' পত্রিকা প্রকাশ করেন যাঁরা, শিশু-কিশোরদের জন্যে তাঁরা 'কিশলয়' নামে একটি অনলাইন পত্রিকা প্রকাশ করতে যাচ্ছেন জেনে ভালো লাগল। ভালো লাগার আর একটা বড় কারণ আছে। শিশু-কিশোরদের পড়ার জন্যে বড়রাই কেবল লিখবেন এতে তা নয়, শিশু-কিশোররাও লিখবে। পড়বে পরস্পরের লেখা। তার মানে হল, ছোটরা বড়দের লেখা ছড়া, গল্প, কবিতা ইত্যাদিই কেবল পড়বে তা নয়, তারা ছোটদের লেখা ছড়া, গল্প, কবিতা ইত্যাদিও পড়তে পাবে। আর বড়রাও কেবল বড়দের লেখা পড়বেন না, ছোটদের লেখাও পড়বেন। ছোটরা যেমন বড়দের লেখা থেকে শিখবে কেমন করে মনের ভাব ভাষায় ভালোভাবে প্রকাশ করতে হয়, তেমনই বড়রাও ছোটদের লেখা থেকে একই সময়ের ছোটদের মনের হদিস করতে পারবেন। তাঁরা বুঝতে পারবেন তাঁদের ছোটবেলার থেকে অনেক পরের আজকের ছোটরা কী ভাবছে, কেমন লেখা চাইছে ইত্যাদি। প্রয়োজনে ছোটরা বড়দের লেখা নিয়ে প্রশ্ন করবে, প্রস্তাব দেবে। শিশুরা তাদের মতো করে লিখবে। বড়রা নিজেদের লেখার ধরন শিশুদের উপর চাপিয়ে দেবেন না। বরং ভাববেন, আহা, দেখি তো ওই শিশুদের মতো লিখতে পারি কি না!

       শিশু-কিশোরদের পত্রিকা বা এমনকি কোনও কোনও খবরের কাগজেও শিশু-কিশোরদের নিজেদের লেখার জন্যে জায়গা রাখা হয় অনেকসময়। কিন্তু তার পরিসর খুব বেশি নয়। বেশির ভাগ ওই 'তোমাদের পাতা', 'তোমরা বলছ' বা 'তোমাদের দপ্তর', 'খুদে প্রতিভা', 'হাত পাকাবার আসর'-এর মতো দু-এক পৃষ্ঠা। কিংবা 'পাঠকের কলম' জাতীয় ছোট-বড় সকলের চিঠিপত্রের একটি-দুটি পাতা (কেবল উৎসব উপলক্ষ‍্যে প্রকাশিত বছরে দু-একটি সংখ‍্যার পত্রিকার কথা বাদই দিতে হয়)। এক-একটি শারদীয় শিশু-কিশোর পত্রিকা কত পাতার হয়! তার মধ্যে ছোটদের লেখা দূরবীন দিয়ে খুঁজতে হবে। এটা কি আমাদের লজ্জা বা অক্ষমতা নয়? সম্পাদক মহাশয়েরা 'তোমাদের' করে না রেখে কাউকে কাউকে আপন করে নিতে পারেন না কি! প্রায় কেউই যদি আপন হয়ে ওঠার যোগ্যতা অর্জন করে উঠতে না পেরে থাকে তার দায় আমাদের উপরও খানিক বর্তায় বই-কি!  তাই তাদের জন্যে লেখা এবং তাদের নিজেদের লেখা নিয়ে গোটা একটা পত্রিকা প্রকাশের গুরুত্ব অস্বীকার করার নয়। অনলাইন এবং মাসিক হওয়ায়, লেখা পাঠিয়ে দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হবে না লেখা প্রকাশিত হবে কি না জানার জন্যে। এখানে লেখা প্রকাশিত হওয়া এবং কার কেমন লাগল জানা আর সেইসঙ্গে নিজেরই বা কেমন লাগল তা জানানোও অনেক তাড়াতাড়ি হবে। তাছাড়া বড় আকর্ষণ রয়েছে দেখা এবং শোনার! আবৃত্তি করে পাঠানো যাবে, গল্পের ভিডিও পাঠানো যাবে। অর্থাৎ লেখা, পড়া, দেখা, শোনা – সব মিলিয়ে জমজমাট! আর অনলাইন পড়াশোনা করতে হয় বলে অনেক বাচ্চারই এখন অনলাইনে অভ‍্যাস আছে। সেদিক দিয়েও সুবিধা। তবে বিভিন্ন রকম শিক্ষার প্রয়োজনে ও পরস্পরের সঙ্গে ভাববিনিময়ের নিমিত্ত বাচ্চারা হোয়াটস অ্যাপ বেশি ব‍্যবহার করে। বেশির ভাগেরই মুখ-বইয়ে (ফেসবুক) অ্যাকাউন্ট নেই, থাকার কথাও নয় (এমনকি বাচ্চাবেলা থেকে মুখ-বইয়ের অ্যাকাউন্ট থাকা উচিত কি না তা নিয়ে বিতর্ক হতে পারে), তাদের বাপ-মায়ের মেইলের মাধ্যমে লেখা পাঠাতে হবে এবং প্রকাশিত পত্রিকা তাঁদেরই অ্যাকাউন্ট মারফত পড়তেও হবে। তুলনায়, কিশলয়-এর ক্ষেত্রে, হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপে লেখা পাঠানো সহজ এবং সেই লেখা উপযুক্ত বিবেচিত হলে সম্পাদক মহাশয় পত্রিকায় নিলে ভালো হয়। পত্রিকায় পাঠানোর ব‍্যাপারটা আর থাকবে না তাতে। একেবারে প্রকাশিত পত্রিকা দেখলেই হবে।


শিশু ও কিশোর কি একই লেখার পাঠক?

পত্রিকা চালাতে শিশু ও কিশোর উভয় পাঠককে যুক্ত করে চলাই সুবিধার। কিন্তু একই লেখা কি শিশু এবং কিশোর পড়বে? এরকম পত্রিকায় বেশির ভার লেখাই সচরাচর থাকে কিশোর-কিশোরীদের জন্যে। সদ‍্য-কৈশোর ও প্রস্থানোদ‍্যত-কৈশোরেও বেশ তফাৎ। এর মধ্যে সবচেয়ে কঠিন বোধহয় শিশুদের জন্যে লেখা। তাদের বোধগম‍্য করে, তাদের আকর্ষণ করার মতো উপাদান রেখে, তাদের ভাব ও ভাষার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ করে আনন্দদায়ী রচনা, যতটা সহজ মনে হয় আসলে ততটা সহজ নয়। অর্থ সেখানে তত বড় নয় যতটা বড় ভাষা, ভঙ্গি, ছবি, ছন্দ ইত‍্যাদির দোলা। তাই একেবারে শিশুদের জন্যে লেখা লেখকের বিশেষ মনোযোগ দাবি করে। কেন-না শিশুদের জন্যে যে লেখা তার পাঠক শিশু, কিশোর-কিশোরী থেকে হতে পারে সব বয়সের, কিন্তু নিতান্ত শিশু তার পত্রিকার কিশোর-কিশোরীদের জন্যে লেখা ছড়া, কবিতা, গল্প, নিবন্ধ ইত‍্যাদির রস নাও গ্রহণ করে উঠতে পারে। অর্থাৎ শিশুদের জন্যে লেখার রসায়নটাই আলাদা, লেখককে সেটা মাথায় রেখে চলতে হয়। শব্দচয়নেও সেইমতো হতে হয় যত্নবান। কিছু কিছু অপরিচিত শব্দের সঙ্গে শিশু-কিশোররা পরিচিত হতে থাকবে নিশ্চয়ই, তবে একসঙ্গে একই লেখায় প্রচুর অপরিচিত বা দুরুহ শব্দের সম্মুখীন হতে যেন না হয় তাদের।


শিশুসাহিত‍্য রচনাকালে অনেকসময় শিশুদের কথা ভুলে যাচ্ছি না তো!

শিশুসাহিত‍্যের অন‍্যতম এক প্রধান অংশ হল ছড়া। মৌখিক থেকে দীর্ঘদিনই তা লেখায় এসেছে। অর্থাৎ ছড়া কাটা থেকে ছড়া লেখা। স্বনামধন্য বহু সাহিত্যিকই এই বিভাগটিতে হাত দিয়েছেন। তা অনেক লেখকেরই অবচেতন মনে একটা ব‍্যাপার কাজ করে যে ছড়া মানেই ছোটদের। সে কারণে বড়দের ছড়ার কাগজেও অনেকে বাচ্চাদের উপযোগী ছড়া পাঠিয়ে দেন। এটা তবু মানা যেতে পারে, কিন্তু যে ছড়াটি দেখছি কিশোরদের নয়, একেবারে বাচ্চা বা শিশুদের সেখানেও কি আমরা সুবিচার করছি সবসময়? একেবারে শিশুর কল্পনা বড়দের মধ্যে সবসময় আশা করা সম্ভব না হলেও, বিষয় নির্বাচন বা তার উপস্থাপন এবং বিশেষত শব্দ ব‍্যবহারে সর্বদা সচেতন থাকছি তো আম‍রা! একেবারে শিশুতোষ লেখা লিখতে গিয়েও অনেকসময় আমরা বাচ্চা নয়, মাথায় রাখছি বড় পাঠক, অন‍্যান‍্য ছড়াকার বা বইটি প্রকাশের পরে আলোচকরা কেমনভাবে নেবেন তার দিকে। একটি কারণও এর পিছনে কাজ করছে খানিক। শিশুসাহিত‍্যিকদের সামনে প্রত‍্যক্ষভাবে শিশু-কিশোর পাঠক যত রয়েছে তার কতগুণ যে প্রাপ্তবয়স্ক বা পরিণতমনস্ক পাঠক! বিশেষত সামাজিক মাধ‍্যমের রমরমার এই দিনে। মুখ-বইয়ে সংখ‍্যায় এবং বৈচিত্র‍্যে প্রতিদিন কত যে বাচ্চাদের ছড়া প্রকাশিত হচ্ছে! তার মধ্যে ভালো মানের ছড়াও নিশ্চয়ই কম নয় এবং ছোটদের জন্যে লেখা হলেও বড়দের তার রসগ্রহণে কোনো বাধা থাকার কথা নয়। কিন্তু ভালোলাগা বা মন্দলাগা অর্থাৎ প্রতিক্রিয়া প্রত‍্যক্ষভাবে আসছে কাদের থেকে? মূলত বড়দের থেকে। মুদ্রিত পত্রিকার স্তরে এটা ততটা বোঝা যেত না বা যায় না। কেন-না বেশি পাঠক তাতে প্রতিক্রিয়া পাঠায় না, তা সে আগের দিনের কাগজে চিঠি পাঠিয়ে হোক বা আজকের দিনের চিঠি বা ই-মেইলে হোক। আর পত্রিকার দপ্তর প্রতিক্রিয়া যদি বেশি পায়ও, মুদ্রিত তো হয় নিতান্ত গুটিকয়। মুখ-বইয়ে সেখানে প্রতিক্রিয়া যথেষ্টই, কোনও কোনও লেখায় শতশতও। শিশুসাহিত্য থেকে শিশুরা নিশ্চয়ই শিক্ষালাভ করবে; প্রকৃতিকে, সমাজকে চিনতে শিখবে; কিন্তু সবচেয়ে বেশি লাভ করবে নির্মল আনন্দ। বলতে গেলে আনন্দের মধ্যে দিয়েই জ্ঞান আহরণ, রুচি ও মূল‍্যবোধ তৈরি হওয়া, সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা গড়ে ওঠা ইত্যাদি। জ্ঞানদানের প্রবল ইচ্ছা নিয়ে কোমরবেঁধে লিখতে লাগলে পাঠক কমার সম্ভাবনা, অন্তত উদ্দিষ্ট সেই শিশু-কিশোর পাঠক। খেয়াল রাখলে দেখা যায় যে নামে শিশুসাহিত‍্য পত্রিকা বা শিশু-কিশোর পত্রিকা হলেও কোনও কোনও পত্রিকা বা কোনও কোনও পত্রিকার কোনও কোনও লেখা কেমন তা ভুলে থাকে মাঝেমধ্যে! তার উপরে আছে অযোগ্য লেখা, তা সে পত্রিকা হোক বা মুখ-বই, কিংবা বিশেষত গাঁটের পয়সা খরচ করে ছাপানো কোনও কোনও লেখকের বইয়ে। বাচ্চাদেরকে পড়তে দেওয়ার আগে অনেকসময় তাই ভেবে দেখতে হয় কোনও একটি লেখা বা বই পড়তে দেওয়া ঠিক হবে কি না। ছোটবেলায় ভুল শেখার মূল্য চোকানো বড় চাট্টিখানি কথা নয়।

      

শিশু নিজেই লিখেছে কি না

যে-কোনো পত্রিকায়, কোনও শিশু বা কিশোর – বিশেষত শিশু যখন লেখা পাঠায় প্রকাশের জন্যে, আমরা বিশ্বাস করে নেব যে সে লেখা সেই শিশু বা কিশোরেরই একেবারে নিজের লেখা, অন্য কারও হাত তাতে নেই। কিন্তু কোনও কোনও নামীদামি শিশু-কিশোরদের পত্রিকাতেও ছোটদের কোনও কোনও লেখা পড়ে অনেকসময় মনে হয় যেন বড় কারও হাত রয়েছে তাতে। বিশেষত বিদ‍্যালয়ের পত্রিকার ক্ষেত্রে অন্তত দেখেছি কোনও কোনও অভিভাবককে তাঁর ছেলেমেয়ের এমনকি পুরো ছড়া, গল্প ইত্যাদি লিখে দিতে। এমনই এক পিতা প্রতি বছরই তাঁর কন‍্যার পুরো লেখাটা লিখে দেন শুনে আমি বিস্ময় প্রকাশ করায় বলেছিলেন, 'তা নইলে ও কী করে লিখবে! ও লিখতে পারে নাকি?' বলতে পারিনি যে লিখতে না পারলে লিখবে না, সবাইকে কি লিখতেই হবে! বিদ‍্যালয়ের পত্রিকায় সবাই তো লেখে না, আরও দু-পাঁচজন না হয় না-ই লিখল। যার যা পছন্দ সে তাই চর্চা করবে।
       কিন্তু অনেকসময় দেখা যায় সত‍্যিই কোনও কোনও ছোট ছেলেমেয়ের লেখার হাত বেশ ভালো। সেক্ষেত্রে সন্দেহ দেখা দিলেও, সে সন্দেহ সত‍্যিসত‍্যিই তো ঠিক নয়। একাধিক লেখকের ছোটবেলার লেখার ক্ষেত্রে এমন দেখা গেছে যে পাঠানো লেখা তাঁর কি না সন্দেহ দেখা দিয়েছে বা সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে।
       কিন্তু যদি দেখা যায় যে কারও ছেলে বা মেয়ে যে লেখাটি লিখেছে তাতে কিছু দুর্বলতা রয়েছে (আমরা ধরে নিচ্ছি অভিভাবকের তা বোঝার এবং শুধরে দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে)। অভিভাবক কী করবেন? তিনি নিজে সংশোধন না করে, জানাবেন কীসে কোথায় দুর্বল লেগেছে। সংশোধন করবে রচনাকারই। প্রয়োজনে একাধিকবার। শিশুর লেখার ভাব, ভঙ্গি, সুর ইত্যাদি যতদূর সম্ভব বজায় রেখে কোনও লেখাকে আরও একটু সুন্দর করে তোলা যায় কীভাবে বড়রা তা দেখিয়ে দেবেন, শিখিয়ে দেবেন নিশ্চয়ই; কিন্তু কোনও পত্রিকায় পাঠানো হচ্ছে যে লেখা, নৈতিক কারণে এবং শিশুরই সত‍্য ও আদর্শনিষ্ঠভাবে মানুষ হয়ে ওঠার নিমিত্ত সেই লেখায় অভিভাবক/অভিভাবিকা, আত্মীয়স্বজন, শিক্ষক কারও বেশি হাত লাগানো সঙ্গত নয়। বড়জোড় খুব ছোটখাটো দু-একটি সংশোধন, বাচ্চা-সেই রচনাকারকে বলে করিয়ে নিতে পারেন অভিভাবকরা। অভিভাবক, ব‍্যক্তিগত শিক্ষক প্রমুখ বেশি ভূমিকা নিলে বাচ্চাদের ক্ষমতাটা বোঝা যাবে না ঠিকমতো এবং যোগ্য হয়ে ওঠার চেষ্টাটাও তো থাকবে না তাদের সেইভাবে।


সম্পাদকের গুরুদায়িত্ব

শিশু-কিশোরদের সাহিত্য পত্রিকার ক্ষেত্রে সম্পাদকের হল গুরুদায়িত্ব। পত্রিকায় পাঠাতে-যাওয়া লেখাটির ক্ষেত্রে বাবা-মা, অভিভাবক-আত্মীয়স্বজন, শিক্ষক যেটা করে উঠতে পারলেন না বা যতদূর করাটা উচিত হল না, সেটি পরম নিষ্ঠায় এবং দৃষ্টান্তমূলকভাবে করবেন পত্রিকাটির সম্পাদক মহাশয়। একান্ত প্রয়োজন মনে করলে, প্রকাশের আগে শিশুর লেখার ভাব, ভাষা, ভঙ্গি ইত্যাদি যতদূর সম্ভব রেখে, কীভাবে লেখাটিকে আরও সাবলীল ও সুন্দর করে তোলা যায় তা করবেন তিনি এবং প্রকাশিত লেখায় সেটি দেখতে পাবে এবং অনুধাবন করতে পারবে শিশুটি। সেই সম্পাদনা পছন্দ বা অপছন্দ করার অধিকারও থাকা উচিত রচনাকারদের। মনে রাখা দরকার যে শিশুটির মনে এটি একবারও উদয় হওয়ার অবকাশ যেন না থাকে তার লেখা ছড়া, গল্প, ভ্রমণকাহিনি বা নিবন্ধটি শেষ অবধি আর তার রইল কোথায় বা কতটুকু! দরকার মনে হলেই সংশ্লিষ্ট লেখাটির নিচে মন্তব্য করবেন সম্পাদক মহাশয়। উৎসাহিত করবেন, বাহবা দেবেন। যাদের লেখা ছাপাতে পারলেন না যোগ‍্য হয়ে না ওঠার জন্যে, সম্ভব হলে তাদের উদ্দেশে বার্তা পাঠাবেন। সে বার্তা, বাহবা বা উৎসাহদান অনেকসময় সারাজীবনের সুখস্মৃতি হয়ে থাকবে ভবিষ‍্যতের নাগরিক সেই শিশুটির কাছে। সন্দেশ-এর সন্দেশ সম্পদ হয়ে উঠেছে কতজনের কাছে। 

সন্দেশ-এর কথা যখন এসে পড়ল তবে সেই সূত্রে আমাদের ভাবনার সঙ্গে মেলে এমন দু-একটি কথা এখানেই স্মরণ করে নিই না কেন!  "ছেলেবেলায় অনেকেরই থাকে নিজের নিজের কথার খেলাঘর। পড়ার বই এসে একদিন খেলাঘরটি ভেঙে দেয়। বানান আর ব‍্যাকরণের ভয়ে কথা জড়িয়ে যায়। বইয়ের বাঁধাবুলি এসে ছোটদের মুখের কথা কেড়ে নেয়।

"'সন্দেশ' পত্রিকা যখন নতুন ক‍রে বার হয়, তখন তাতে আমরা 'হাত পাকাবার আসর' বসিয়েছিলাম। সেই আসর চালাতে গিয়ে মজার অভিজ্ঞতা হয়েছিল। সবে যারা লিখতে পড়তে শিখেছে, তাদের লেখাগুলোই হত সবচেয়ে ভাল। কিন্তু আবার তারাই যেই একটু বড় হত, তাদের লেখায় আগের সেই প্রাণ থাকত না। ছোটদের ব‍্যাপারে বড়দের বেশি মাথা গলানোর ফলে তারা তাদের স্বাচ্ছন্দ‍্য হারিয়ে ফেলে। নিজের কথা ভুলে গিয়ে তখন তারা প‍রের বুলি আওড়াতে শেখে।" মানুষের মুখের ভাষাকে অনবদ‍্যভাবে কবিতার ভাষায় রূপ দিতে পারতেন যে সুভাষ মুখোপাধ্যায়, এর সঙ্গে আরও কী লিখছেন তিনি? লিখছেন, "চলায় বাধা পড়লেই ছোটদের মন কেন্নোর মতন গুটিয়ে যায়। বড় গাছের আওতায় রাখলে চারাগাছ বাড়ে না। ছোটদের দেখেও না-দেখাটা যেমন দোষের, তেমনি বেশি আদিখ‍্যেতাও ছোটদের মাথা খায়। স্রোত বেঁধে দিলে নদী মরে যায়, আবার পাড় না থাকলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে নদী হারিয়ে যায়। দুই পাড়ে ঠেকে নদী মোহানার দিকে এগিয়ে যায়। শুধু বাধাও নয়, শুধু ছাড়াও নয়।" ('শিশুর মন গড়ার কাজে শিশুসাহিত‍্য', কথার গুণে তরি কথার দোষে মরি, অভিজাত প্রকাশনী, বৈশাখ ১৪০৫) একদিন আড্ডার সময় সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের প্রস্তাবে ঠাকুরদা উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর শুরু-করা সন্দেশ যিনি আবার তাঁর সঙ্গে যৌথভাবে সম্পাদনায় নতুন করে প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন সেই সত‍্যজিৎ রায়ের কথাও আমরা স্মরণ করতে পারি একটু। তিনি লিখেছেন, "সন্দেশ যখন প্রথম উপেন্দ্রকিশোর বার করেন তখন দুু'বছর তিনি সম্পাদক ছিলেন। উপেন্দ্রকিশোর নিজে শিশু-সাহিত‍্যিক হিসেবে এত বড় ছিলেন এবং এত ভালো লিখতে পারতেন খুব ছোটদের জন‍্য যে, সন্দেশ তখন প্রধানতঃ শিশু পত্রিকাই বলা যেতো। কিন্তু উপেন্দ্রকিশোর মারা যাওয়ার পর যখন আমার বাবা সুকুমার রায় সন্দেশ বার করতে আরম্ভ করলেন তখন কিন্তু চেহারা কিছুটা বদলে গিয়ে সেটা কিশোর পত্রিকায় নতুন একটা চেহারা নিয়েছিল। আমরা যেটা বার করি – সেটা নিঃসন্দেহে প্রধানতঃ কিশোর পত্রিকা, কেননা আমাদের এখানে এখনও আমি তো কাউকে দেখিনা যিনি উপেন্দ্রকিশোরের মত শিশু সাহিত্য রচনা করেন। সেরকম আর কেউ নেই এবং যারা লেখেন তারা অধিকাংশই, অধিকাংশ মানে শতকরা নিরানব্বই ভাগ কিশোরদের জন্যে লেখেন। কাজেই সন্দেশকে আমরা শিশু পত্রিকা বলি না। আমরা ছোটদের পত্রিকা বলি। ছোট বলতে কিশোরও তো বোঝায়।" ('আমার ভাবনায় সন্দেশ', শারদীয় 'কিশোর ভারতী', ১৪২৮-এ পুনর্মুদ্রিত)

      আর একটা অবশ‍্যকর্তব‍্য আছে সম্পাদক মহাশয়ের। পুরো পত্রিকায় একই বানানরীতি মানা উচিত। না হলে লেখক-জীবনের শুরুর দিক থেকেই বাচ্চাদের বানান বিষয়ে বিভ্রান্ত হয়ে পড়ার সমূহ সম্ভাবনা।


শিশসাহিত‍্যপত্রে শিশুসাহিত‍্যপুস্তকের আলোচনা কতটুকু

পত্রপত্রিকায় বইয়ের আলোচনার অন‍্যতম উপযোগিতা হল যারা তখনও বইটি পড়েনি, বইটি সম্বন্ধে তারা একটা ধারণা করতে পারবে। সেটি পড়তে তারা উৎসাহিত বোধ করতে পারে। দৃশ‍্য-শ্রাব‍্য (অডিও ভিস‍্যুয়াল) মাধ‍্যমের দাপট এবং বিদ‍্যালয়ের পড়াশুনার পাঠ‍্যক্রম থেকে অন‍্যান‍্য নানান শিক্ষায় সময় দিতে দিতে বা দৌড়তে দৌড়তে এমনিতেই বাচ্চাদের বাইরের বই পড়ার অবসর কম। এ বিষয়ে ছেলেমেয়েদেরকে বাবা-মায়েদের উৎসাহদানও নগণ্য। আর এক, বই পড়ার অভ‍্যাস হতে পারত জন্মের পর থেকে যদি বাড়ির লোকেদের বই পড়তে দেখত বাচ্চারা। তেমনটি খুবই কম। এমনকি খবরের কাগজটাই পড়েন না অনেকে বাড়িতে! তো এমত অবস্থায় বাচ্চারা পাঠ‍্যক্রমের বাইরে বেশি বই পড়বে ভাবাটা খানিক বাড়াবাড়িই। তার উপর আমরা যদি তাদের সঙ্গী করতে না পারি তো কথাই থাকে না। আমাদের তো ভাবতে হচ্ছে, দৃশ্য-শ্রাব‍্য মাধ‍্যমের এই রমরমার দিনে বই তথা লেখাজোখা কতটা কী দিতে পারে আজকের শিশুদের‌। যেমন, পত্রপত্রিকায় বইপত্রের আলোচনার অন্য একটি মূল কথাই হল বই বা পত্রিকাটি কেমন লেগেছে তা জানানো। তা যে শিশু-কিশোরদের পত্রিকা তাদেরকে কখনো জিজ্ঞাসা করা হয় তো যে কোনও একটি বই কেমন লেগেছে! আলোচনা সবসময় তাদের উপযুক্ত করে করা হয় তো! সবচেয়ে বড় কথা, একটি শিশু বা কিশোরের কেমন লেগেছে তা লিখতে বলা হয় কি! অর্থাৎ শিশু-কিশোরদের দিয়ে বইপত্রের আলোচনা করানো হয় তো! করাতে পারলে কিন্তু ভালো হত।

 

শিশুসাহিত্য পত্রিকার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে শিশুরা ডাক পায় কি?

       একবার এক শিশুসাহিত‍্য পত্রিকার প্রকাশ-অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন পত্রিকার সম্পাদক মহাশয়। আমি তাঁর কাছে জানতে চাইলাম, শিশুদের পত্রিকার উদ্্বোধন অনুষ্ঠানে শিশুরা থাকবে তো? তিনি বললেন, কী যে বলেন, শিশুদের পত্রিকার উদ্্বোধন বলে কি আর শিশুরা থাকে অনুষ্ঠানে! বড়রা অনেকেই থাকবেন। আমি জানতাম এমনই উত্তর আসবে। আর কথা বাড়াইনি। অর্থাৎ শিশুসাহিত‍্য পত্রিকার প্রকাশ-অনুষ্ঠানে শিশুদের আমন্ত্রণ প্রায় থাকেই না। এমনও দেখা গেছে যে শিশুদের পত্রিকার প্রকাশ উপলক্ষ্যে আয়োজিত শিশু উৎসবে কোনো শিশু আমন্ত্রিত নয়! কেবলমাত্র অনুষ্ঠানে আবৃত্তি, গান, নাটক ইত‍্যাদিতে অংশগ্রহণকারী হিসাবে উপস্থিত থাকে যেসব  শিশু-কিশোর তাদের এর মধ্যে ধরলে হবে না কিন্তু। শিশুসাহিত‍্য পত্রিকার প্রকাশ-অনুষ্ঠানে শিশুরাই যখন ব্রাত‍্য, কোনোদিন এ দৃশ্য দেখতে পাওয়ার আশা করা যাবে কি যে কোনও শিশু বা কিশোর/কিশোরীরই হাতে শিশুসাহিত্য পত্রিকা প্রকাশ পাচ্ছে অর্থাৎ পত্রিকার উদ্্বোধনের জন্যে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে কোনও শিশু বা কিশোর/কিশোরীকে! দেখতে পেলে ভালো হত।


কিশোর-কিশোরীরাও এগিয়ে আসতেই পারে সম্পাদনায়

হ‍্যাঁ, শিশু-কিশোর পত্রিকা বলে তাতে লেখার ক্ষেত্রে একেবারে শিশু-কিশোরনির্ভর হয়ে চলা মুশকিল নিশ্চয়ই। তত শিশু-কিশোর সাহিত্যমনস্ক হলে, দু-চারটি – শিশু না হোক – কিশোর-কিশোরী সম্পাদিত পত্রিকার সাক্ষাৎও পাওয়া যেত অনায়াসে। বড়জোর ব‍্যবস্থাপনায় থাকতেন বড়রা। কিন্তু সামাজিক মাধ্যম আজ যে স্তরে পৌঁছেছে এবং বিস্ময়বালক/বালিকাদের কথা বাদ দিলেও, কোনও কোনও সাহিত্য-ভালোবাসা মেধাসম্পন্ন ছেলেমেয়ের পক্ষে অসম্ভব নয় তা। বিশেষত পড়াশুনার পাশাপাশি ছেলেমেয়েদের খেলা-নাচ-গান-আবৃত্তি ইত্যাদি শেখানোর জন্যে অনেক অভিভাবক যেমন চেষ্টা চালিয়ে যান, লেখাজোখা শেখানোর সঙ্গে সঙ্গে পত্রিকা সম্পাদনার কাজ শেখাতেও কোনও কোনও অভিভাবক যদি তেমন খানিক সচেষ্ট হন। আর পত্রিকা সম্পাদনার জন্যে তো এখন ছাপাখানার গলি না মাড়ালেও চলে। ব্লগজিন হয়েছে। এককালে ছোটদের হাতে দেয়ালপত্রিকা হয়েছে, পারিবারিক পত্রিকা হয়েছে, হাতে-লেখা পত্রিকা হয়েছে এমন দৃষ্টান্ত আছে। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের তত্ত্বাবধানে ছোটদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় – কখনও সম্পাদনা-সহায়তায় – বিদ‍্যালয়ের পত্রিকা প্রকাশিত হওয়ার নজির কম নয়। সেই হিসাবে বর্তমান সময়ে ইলেকট্রনিক মাধ্যমে কোনও কোনও কিশোর-কিশোরী এগিয়ে আসতে পারে পত্রিকা সম্পাদনায়। আমার তো মনে হয়, প্রতি শিশু-কিশোর পত্রিকায় দু-একজন কিশোর সহ-সম্পাদক থাকা উচিত। পড়াশুনার ফাঁকে সপ্তায় এক-দু-দিন অন্য কিছু শেখে যেমন অনেকে, কিশোর সম্পাদকও তেমনই সপ্তায় এক-দু-দিন শেখার সঙ্গে সঙ্গে সহায়তা করবে সম্পাদনায়। তাদের রুচি-পছন্দ ইত্যাদি পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত হলে শিশু-কিশোরসাহিত্যের পক্ষে তা সুফলদায়ী হবে বলেই মনে করি।


সবাই আনন্দ পাক, ছোটদেরকে সঙ্গী করে

      আসলে কিছু বই থাকে ছোটদের, কিছু বড়দের। কিছু বই থাকে যাদের সরাসরি এভাবে বিভাজন করা চলে না, সেগুলি সব শ্রেণির পাঠকের। ছড়া প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে অন্নদাশঙ্কর রায় যেমন বলেছিলেন, "আমার কতক ছড়া ছোটদের জন্যে, কতক বড়োদের জন্যে, কতক ছোট বড়ো নির্বিশেষে সকলের জন্যে। কিন্তু পরিষ্কারভাবে চিহ্নিত করা যায় না। কয়েকটি বই ছোটদের জন্যে ও কয়েকটি বড়োদের জন্যে অভিপ্রেত।" অন্নদাশঙ্করের কথা যখন উল্লেখে এল তবে ছড়া সম্বন্ধে তাঁর দু-একটি বক্তব্য এখানে দেখে নিতে পারি আমরা। তিনি লিখেছেন, "ছড়া যদি কৃত্রিম হয় তবে তা ছড়াই নয়, তা হালকা চালের পদ‍্য। তাতে বাহাদুরি থাকতে পারে, কারিগরি থাকতে পারে, কিন্তু তা আবহমানকাল প্রচলিত খাঁটি দেশজ ছড়ার সঙ্গে মিশ খায় না।" "ভাব ও ছন্দ তো থাকবেই, এছাড়াও ছড়ার থাকবে ইমেজ ও মিল। ছড়ার ইমেজ মিল রেখে আসে না, পারম্পর্য কম।" – বলেছেন তিনি। বলেছেন, "খাঁটি ছড়া কলমের মুখে ফুটলেও তার ধরনটা হবে অশিক্ষিত মানুষের মুখে ফোটা ছড়ার মতো। দেশের মৌখিক ঐতিহ‍্যের সঙ্গে মিশ খাবে। সহজেই মুখস্থ হয়ে যাবে। সহজেই মুখে মুখে ঘুরবে।" ছেলেভুলানো ছড়া নিয়ে অতুলন লেখা লিখেছিলেন যে রবীন্দ্রনাথ – যিনি তাঁকে ছড়া লেখায় উৎসাহ জুগিয়েছিলেন – সেই রবীন্দ্রনাথের ছড়াও তাঁর কানে ছড়ার মতো লাগেনি। "জনগণের হৃদয়ে যদি সামান্যতম স্থান পাই, আমার একটা ছড়াও যদি তাদের মনে গাঁথা থাকে, কানে কানে সঞ্চারিত হয়, মুখে মুখে পুরুষানুক্রমিক হয় তা হলেই আমি ধন‍্য।" – বলেছিলেন যে অন্নদাশঙ্কর, নিজের ছড়া সম্বন্ধে তিনি কী বলছেন এখন দেখা যাক। একস্থানে তিনি লিখেছেন, "পরিশেষে স্বীকার করি, আমার সব ছড়া, ছড়া হয়নি। 'সে কহে বিস্তর মিছা যে কহে বিস্ত‍র।' তেমনি, যে লেখে বিস্তর ছড়া সে লেখে বিস্তর পদ‍্য। আমার নিজের ত্রুটি সম্বন্ধে আমি অবহিত আছি। তাছাড়া পদ‍্য যেমন নিখুঁত হয়, ছড়া তেমন নিখুঁত হয় না। লোকমুখে নিখুঁত হয়নি ও হবে না। কোনো কোনো ছড়ায় আমি ইচ্ছা করে কিছু খুঁত রেখে দিয়েছি। অনেকসময় এক্সপেরিমেন্টও করেছি। কতকটা বিলিতীর অনুসরণে। ছড়ার দেশকাল নেই। দেশী বিলিতী অবান্তর।" (ছড়াসমগ্র, বাণীশিল্প, প্রথম প্রকাশ জানুয়ারি ১৯৮৫। চতুর্থ পরিবর্ধিত সংস্করণ জানুয়ারি ২০০৩, দ্বিতীয় মুদ্রণ জানুয়ারি ২০১০) তো কৈশোরই সেই সময় যখন নিজেদের গণ্ডি অতিক্রম করে বড়দের জগতে উঁকি দেওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। সবরকম বইয়ের প্রতি আকর্ষণ, দরকারে লুকিয়েও বড়দের বই পড়া। সেসব ঠিক আছে। আমাদের বলার কথাটা হল, যাদের নামে সাহিত্যের এই বিভাগটির আয়োজন, যারা উদ্দিষ্ট, যারা একইসঙ্গে সহায় এবং অবলম্বন – তারা যোগ্য মর্যাদা যেন পায়। তাদের পূজার ছলে যেন তাদেরই ভুলে থাকা না হয়। শিশু-কিশোরসাহিত্যের জগৎটা যেন বয়স্কসর্বস‍্য হয়ে না ওঠে। 'কুটুম্বর জন্যে মারে হাঁস/সাঁইগুষ্টি খায় মাস' প্রবাদটিকে স্মরণ করে বলি যে শিশু-কিশোরসাহিত্যের বৃত্তটা সবাই উপভোগ করুক, কিন্তু শিশু-কিশোর/কিশোরীদেরকে সঙ্গী করে; তাদের এড়িয়ে বা বাদ রেখে নয়।

 

________________________________________________________

 

অরবিন্দ পুরকাইত

গ্রাম ও ডাক – গোকর্ণী,

থানা – মগরাহাট,

জেলা – দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা,

ডাকসূচক – ৭৪৩ ৬০১

ই-ডাক – arabinda13purkait@gmail.com



মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সপ্তাহের পছন্দ

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 32nd issue: May 2024

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচীপত্র ।। 28th issue: January 2024

ছড়া ।। তোর ।। বিবেকানন্দ নস্কর

প্রচ্ছদ ও সূচীপত্র ।। 25th issue: October 2023

ছড়া ।। সবুজ ঘাসেতে প্রাণ খুঁজে পাই ।। জয়শ্রী সরকার

অনুবাদ ।। কথা না-বলা টিয়া ।। সুস্মিতা পাল

প্রচ্ছদ ও সূচীপত্র ।। 23rd issue: August 2023

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। ষড়ত্রিংশ সংখ্যা ।। সেপ্টেম্বর ২০২৪

মাসের পছন্দ

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। ষড়ত্রিংশ সংখ্যা ।। সেপ্টেম্বর ২০২৪

ছড়া ।। খোকাবাবু ।। মেশকাতুন নাহার

কবিতা ।। মাটির কাছে যায় ।। অবশেষ দাস

ছড়া ।। তোর ।। বিবেকানন্দ নস্কর

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 32nd issue: May 2024

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচীপত্র ।। 28th issue: January 2024

ছড়া ।। বর্ষার উৎসবে ।। আরতি মিত্র

ছড়া ।। পুজোর খুশী ।। আরতি মিত্র

কবিতা ।। ব্যাঘ্রমশাই ।। দীনেশ সরকার

বছরের পছন্দ

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। ত্রয়োত্রিংশ সংখ্যা ।। জুন ২০২৪

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচীপত্র ।। 29th Issue: February

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। চতুর্ত্রিংশ সংখ্যা ।। জুলাই ২০২৪

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 31st issue: April 2024

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 32nd issue: May 2024

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 30th issue : March 2024

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। পঞ্চত্রিংশ সংখ্যা ।। আগষ্ট ২০২৪

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। ষড়ত্রিংশ সংখ্যা ।। সেপ্টেম্বর ২০২৪

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচীপত্র ।। 26th issue: November 2023

অতি প্রিয়

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। আত্মপ্রকাশ সংখ্যা ।। অক্টোবর ২০২১

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। দ্বিতীয় সংখ্যা ।। নভেম্বর ২০২১

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 4th issue: January 2022,

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 7th issue: April 2022

নিবন্ধ ।। দেশীয় উদ্ভিদ কেন গুরুত্বপূর্ণ ? ।। ডঃ চিত্তরঞ্জন দাস

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় - ১০ ।। জুলাই ২০২২

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় - ১১ ।। আগস্ট ২০২২

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র : 8th issue: May 2022

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 5th issue: February 2022