Featured Post

লেখা-আহ্বান : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য

ছবি
     মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কোন বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো (যেমন, কবিতা ১২-১৪ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে)। তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়। সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৫-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) যতিচিহ্নের আগে স্পেস না দিয়ে পরে দেবেন। ৪) বিশেষ কোন চিহ্ন (যেমন @ # *) ব্যবহার করবেন না। ৫) লেখার নীচে একটি ঘোষণা দিন:  'লেখাটি স্বরচিত ও অপ্রকাশিত'। মেল আইডি :  printednabapravat@

ছোটগল্প ।। পুজোর জামা ।। ডঃ রমলা মুখার্জী

পুজোর জামা

ডঃ  রমলা মুখার্জী


কোপাই নদীর তীরে কোপাই গ্রাম। মাঠের ধারে ধারে কাশ দুলছে। শেফালিদের উঠোনটা শিউলি ফুলে ভরে আছে। ওদের পুকুরে কত শালুক ফুটেছে। সত্যি তো মা দুর্গার যে আসার সময় হয়েছে তা প্রকৃতি জানিয়ে দিচ্ছে। সবার মনেই আনন্দ। কিন্তু শেফালির মনে এখনও আষাঢ়ের কালো মেঘ। এবারে যে পুজোতে ওর একটাও নতুন জামা হয়নি। ওর বাবা সুচাঁদ গেছে সেই কলকাতায় ঢাক বাজাতে। ওখানে রোজগার একটু বেশি হয়। পুজোর পরে একেবারে সব্বাইকার জামা-কাপড় কিনে নিয়ে তবেই সুচাঁদ ফিরবে। এদিকে কুমোরটুলিতে ঠাকুর গড়েই মামাদের সংসার চলে। কিন্তু এবারে বৃষ্টিতে অনেক ঠাকুর নষ্ট হয়ে যাওয়াতে মামারাও টাকা পাঠাতে পারেনি, তাই মনের দুঃখে শেফালি কেঁদে কেঁদে মাকে বলে,''সব বন্ধুদের নতুন জামা হল, আমারই কেবল হল না; আমি স্কুল যাব না। সবাই নতুন জামার গল্প করবে- আমি কি বলব?'' মা চঞ্চলা বোঝে মেয়ের দুঃখ। টিনের ট্রাঙ্ক থেকে বার করেন গত বছরেরই রেখে দেওয়া একটা একদম নতুন জামা। গায়ে শেফালির একটু বড় বড় মনে হয়েছিল চঞ্চলা দেবীর তাই সুচাঁদের আনা তিনটের থেকে এই বেশ বড় সাইজের জামাটা ট্রাঙ্কের একদম তলায় রেখে দিয়েছিলেন। নিজের একটা কাপড়ও তুলে রেখেছিলেন অষ্টমীতে অঞ্জলি দেবার জন্যে। নতুন সুন্দর জামা পেয়ে তো শেফালি মহা খুশি। তাড়াতাড়ি স্নান করে খেয়ে স্কুলে ছুটল- আজ আর পুকুরে বেশিক্ষণ সাঁতার কাটা হল না আর মিঠুদিদিমণির জন্যে শালুক ফুল তোলা হল না। স্কুলে পৌঁছে শেফালি তার সেই একটা জামার গল্প সবাইকে বলতে লাগল। একটা জামা শুনে তো বন্ধুরা ব্যাঙ্গের হাসি হাসতে লাগল। মিঠুদির ক্লাসেও তার পড়া ভুল হতে লাগল। মিঠুদি কোনদিন তাকে বকেননা- কিন্তু আজ তাঁর কাছেও কিনা শেফালিকে বকুনি খেতে হল। খুব মন খারাপ নিয়ে বাড়ির পথে হাঁটা দিল। রাস্তায় বন্ধুদের সাথে একটাও কথা বলল না শেফালি। ওমা, দরজায় যে তার দাদা দাঁড়িয়ে আছে একমুখ হাসি নিয়ে। দাদাকে দেখে তার সব মন খারাপ ভাল হয়ে গেল। তার দাদা সুদীপ মামার বাড়িতে থেকে কলকাতার আর্ট কলেজে পড়ে। ছোট থেকেই মামার বাড়িতে মানুষ সে- খুব সুন্দর আঁকার হাত দেখে মামারাই তাকে আর্ট কলেজে ভর্তি করে দিয়েছে। মূর্তিও ভাল গড়ে সুদীপ। শেফালির হাত ধরে সুদীপ ঘরে নিয়ে গেল, বলল, ''জানিস শেফু, এবার কলকাতায় একটা থিমের পুজোর গোটা প্যান্ডেলটাই আমি পরিকল্পনা করেছি- আর আমার সব বন্ধুরা মিলে সেটা তৈরী করেছি। কাল সব কাজ শেষ হয়েছে, উদ্বোধনও হয়ে গেছে। সবাই খুব প্রশংসা করছে। ওরা অনেক টাকাপয়সা দিয়েছে- আর যদি মণ্ডপটা পুরষ্কার পায় তো প্রতি বছরই কাজটা আমি পাব, শিল্পী হিসেবে সম্মানও পাব। দেখ তোর জন্যে কি কি এনেছি"- বলতে বলতে সুদীপ একটা প্যাকেট শেফালির হাতে দিল। শেফালি অবাক হয়ে গেল- দাদা তো চাকরি করে না, পড়ছে- তা হলে কি তার জন্যে দুর্গার মুখ তৈরী করে দিতে বলেছিল তাই দাদা নিয়ে এল। হ্যাঁ ঠিক তাই, দুর্গার মুখ কিন্তু তার তলায় পলিথিনের প্যাকেটে লাল আর সবুজে এটা কি? ওমা এতো সুন্দর একটা চুড়িদার- আরও একটা প্যাকেট, নীল আর সাদায় সুন্দর একটা ফ্রক, আনন্দে চোখে জল এসে গেল শেফালির। দাদাকে জড়িয়ে ধরল, তারপর সব নিয়ে ছুটল মাকে দেখাতে। মা বললেন, ''দেখেছি শেফু, আরও একটা জিনিস আছে। তুই যদি পুকুরে সাঁতার একটু কম কাটিস, স্কুল যেতে দেরি না করিস তো দেখাব।'' শেফালির তো তর সয় না, বলে, ''হ্যাঁ মা, এবার থেকে ঠিক তাড়াতাড়ি স্কুলে যাব, দেখাও না মা, কি জিনিস।'' মা হাতে দিলেন একটা মেরুণ রঙের জরির কাজ করা মেখলা। বললেন, ''তোমার মামাদের ঠাকুর জল কমে যাবার পর ভালই বিক্রী হয়েছে- তাই তোমার জন্যে এটা পাঠিয়েছেন।'' এবার শেফালি আনন্দে নাচতে লাগল। তার কত দিনের সখ- এইরকম একটা মেখলার, সে ভালই নাচে। কিন্তু ভাল পোষাক তৈরী করতে পারে না বলে নাচের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারে না, এবার পুজোয় পাড়ার প্রোগ্রামে সে এই মেখলাটা পড়ে অসমীয়া নাচ করবে ঠিক করে ফেলল। পরদিন পঞ্চমী, তাড়াতাড়ি খেয়ে মিঠুদির জন্যে শালুক ফুল নিয়ে চলল শেফালি স্কুলে। জামার গল্প করতে করতেই সারাদিন কেটে গেল শেফালির। আজ টিফিনে ছুটি হয়ে গেল। মিঠুদি একটা সুন্দর ছড়ার বই উপহার দিয়েছে শেফালিকে- মিঠুদি দারুণ ছড়া, গল্প এসব লেখেন। মিঠুদিকে ভীষণ ভাল লাগে শেফালির। 
      প্রায় একমাস ছুটি থাকবে তাই যত গল্প জমা ছিল সব উজাড় করে দিচ্ছে সব ছাত্রীরা। ছোটদের কল-কাকলিতে স্কুলটা মুখরিত হয়ে উঠেছে। কিন্তু একি মিড-ডে মিল রাঁধে স্বপ্না মাসীর মেয়ে টুকটুকি কাঁদছে কেন? প্রায় ওরই বয়সী, ওদের ক্লাসেই তো পড়ে। দুদিন তো স্কুলেও আসে নি। তবে টুকটুকির শরীর খারাপ হয়েছে, শেফালি ভাবল। বন্ধুদের ফেলে শেফালি টুকটুকির কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করল, ''টুকটুকি, তুই কাঁদছিস কেন? তোর কি শরীর খারাপ হয়েছে?'' শেফালিকে দেখে টুকটুকি আরও বেশি করে কাঁদতে লাগল। স্বপ্না মাসি বলল, ''এবার লা ঘাটা ব্রীজ ভেঙে টুকির মামাদের ঘরবাড়ি ভেঁইসে গিয়েঞ্চে বটে, তাই টুকির এবারে নতুন জামা হয় লাই, তাই কানছে বটে। আমি যা পাই তাতে তিন ছেলেমেয়ের পড়ার খরচ চালাতেই হিমশিম খাই তো জামা কুতায় পাব বটে। দিদিমণিরা আমারে লতুন শাড়ি না দিয়ে যদি মেয়েটারে দিত তো ভাল হত।'' শেফালি বোঝে পুজোয় নতুন জামা না হওয়ার কত কষ্ট। তাই শেফালি বলে, ''টুকটুকি, আমার অনেকগুলো এবারে জামা হয়েছে, বাবাও আনবে আবার, তোকে একটা দেব।'' স্বপ্নামাসি বলে, ''না, মা, তুই বুলেইছিস ইতেই অনেক বটে, তুর জামা দিতে হবেক লাই।'' ওমা মিঠুদি দেখছি এদিকেই আসছে, হাতে একটা প্যাকেট নিয়ে। হ্যাঁ, ঠিক তাই সব ছাত্রছাত্রীদের প্রিয় মিঠুদি টুকটুকির জন্যে টুকটুকে লাল একটা সুন্দর ফ্রক প্যাকেট থেকে বের করতে করতে এসে হাজির। ''টুকটুকি, তুমি কালকেও স্কুলে আসনি পুজোর জামা হয়নি বলে, তাই তোমার জন্যে দেখ আমি এই ফ্রকটা নিয়ে এসেছি, কি পছন্দ হয়েছে?'' মিঠুদি বলেন। টুকটুকির মুখে দেখা দিল হাসির ঝিলিক। ততক্ষণে আর সব বন্ধুরাও চলে এসেছে। সবাই মিলে আনন্দে ঝলমল করতে লাগল- আর তাই দেখে মিঠুদিদিমণির মনটা ভরে উঠল আর তার একমাত্র মৃত ছেলের মুখটা ভেসে উঠল তার মানসচক্ষে। ব্লাড ক্যানসারে মিঠুদিদিমণির ছেলে খুব অল্প বয়সেই মারা গিয়েছিল। তাই মিঠুদিদিমণি সব ছোটদের মধ্যে তাঁর সেই মৃত ছেলেকে খুঁজে বেড়ান। ছোটদের আনন্দে উদ্ভাসিত মুখ দেখেই তাঁর বড় পরিতৃপ্তি। এভাবেই তিনি পথশিশু, গরীব, অনাথদের সাহায্য করে সবাইকার মা হয়ে গেছেন।     
____________________________________________________________________________
 
 
 
ডঃ রমলা মুখার্জী
বৈঁচি, বিবেকানন্দ পল্লী
জেলা  হুগলী, পিন  ৭১২১৩৪
 


মন্তব্যসমূহ

সপ্তাহের পছন্দ

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 32nd issue: May 2024

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচীপত্র ।। 28th issue: January 2024

ছড়া ।। তোর ।। বিবেকানন্দ নস্কর

লেখা-আহ্বান : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য

প্রচ্ছদ ও সূচীপত্র ।। 25th issue: October 2023

ছড়া ।। সবুজ ঘাসেতে প্রাণ খুঁজে পাই ।। জয়শ্রী সরকার

অনুবাদ ।। কথা না-বলা টিয়া ।। সুস্মিতা পাল

প্রচ্ছদ ও সূচীপত্র ।। 23rd issue: August 2023

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। ষড়ত্রিংশ সংখ্যা ।। সেপ্টেম্বর ২০২৪

মাসের পছন্দ

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। ষড়ত্রিংশ সংখ্যা ।। সেপ্টেম্বর ২০২৪

ছড়া ।। খোকাবাবু ।। মেশকাতুন নাহার

কবিতা ।। মাটির কাছে যায় ।। অবশেষ দাস

ছড়া ।। তোর ।। বিবেকানন্দ নস্কর

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 32nd issue: May 2024

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচীপত্র ।। 28th issue: January 2024

ছড়া ।। বর্ষার উৎসবে ।। আরতি মিত্র

ছড়া ।। পুজোর খুশী ।। আরতি মিত্র

কবিতা ।। ব্যাঘ্রমশাই ।। দীনেশ সরকার

বছরের পছন্দ

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। ত্রয়োত্রিংশ সংখ্যা ।। জুন ২০২৪

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচীপত্র ।। 29th Issue: February

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। চতুর্ত্রিংশ সংখ্যা ।। জুলাই ২০২৪

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 31st issue: April 2024

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 32nd issue: May 2024

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 30th issue : March 2024

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। পঞ্চত্রিংশ সংখ্যা ।। আগষ্ট ২০২৪

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। ষড়ত্রিংশ সংখ্যা ।। সেপ্টেম্বর ২০২৪

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচীপত্র ।। 26th issue: November 2023

অতি প্রিয়

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। আত্মপ্রকাশ সংখ্যা ।। অক্টোবর ২০২১

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। দ্বিতীয় সংখ্যা ।। নভেম্বর ২০২১

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 4th issue: January 2022,

নিবন্ধ ।। শিশু-কিশোর সাহিত্যবলয়ে শিশুরাই যেন ব্রাত‍্য না থাকে ।। অরবিন্দ পুরকাইত

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 7th issue: April 2022

নিবন্ধ ।। দেশীয় উদ্ভিদ কেন গুরুত্বপূর্ণ ? ।। ডঃ চিত্তরঞ্জন দাস

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় - ১০ ।। জুলাই ২০২২

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় - ১১ ।। আগস্ট ২০২২

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র : 8th issue: May 2022

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 5th issue: February 2022