Featured Post

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় ৪৭ অক্টোবর, ২০২৫

ছবি
    সম্পাদকীয় প্রিয় বন্ধুরা, পুজো শেষ! ঢাকের আওয়াজ থেমে গেছে, প্যান্ডেলগুলো ভাঙছে, বিজয়া শেষে একটু মনখারাপ হলেও পুরোপুরি আনন্দের রেশ কাটেনি। নতুন জামাগুলো আলমারিতে, ফুচকার স্বাদ এখনও জিভে, আর মনে এখনো সদ্য মজার দিনগুলোর রেশ! পুজো শেষ মানেই কিন্তু মন খারাপ নয়—কারণ সামনে আরও অনেক মজার দিন বাকি! এই মাসেই আসে কালী পুজো, দীপাবলি আর ভাইফোঁটা। অক্টোবর মানেই শরতের নীল আকাশ, সাদা মেঘ আর হালকা ঠান্ডা হাওয়া। অনেকে বেড়াতে গেছো, মজা করেছো। এখন সময় আবার নতুন করে শুরু করার—স্কুলে ফেরা, বন্ধুদের আড্ডা, পড়াশোনার মাঝে খানিকটা হাসি-মজা। পুজোর আনন্দের মতোই আমাদের মনটাও থাকুক রঙিন আর উজ্জ্বল। তবে বিভিন্ন জায়গায় বন্যার জন্য মনটা একটু খারাপ। প্রকৃতির কাছে আমরা অসহায়। অথচ সেই প্রকৃতির জন্য আমরা অনেকেই ভাববার সময় পাই না। প্রকৃতিকে ভালোবাসলে তবেই না আমরা প্রকৃতির ভালোবাসা পাবো! এই সংখ্যায় পাবে ভ্রমনের গল্প, মজার গল্প, ছড়া, কবিতা, প্রবন্ধ আর তোমাদেরই আঁকা ছবি। পড়ে ফেলো, মজা করো, আর পরের সংখ্যার জন্য তোমার লেখাটাও পাঠিয়ে দিও। তাহলে চল, পুজোর আনন্দটুকু সঙ্গে নিয়ে শুরু হোক নতুন উদ্যমের আগা...

বিস্তারিত জানতে ছবিতে ক্লিক করুন :

ছোটগল্প ।। ডানপিটে অনি ।। দীপক কুমার পাল

                                             

 Cartoon boy with his cat | Premium Vector

                                                                        ডানপিটে অনি   


                                                                                   দীপক কুমার পাল 



            পাড়ার অনিন্দ্য মালাকার খুব ডানপিটে ছেলেছিল। ভয় ডর বলে তার কিছু নেই। এক
বাবা ছাড়া। বাবাকে ভীষণ ভয় পায় অনিন্দ্য মানে অনি। বাড়ীতে সবাই ওকে অনি বলে ডাকে।
এমন কি ছোট বোনটা পর্য্যন্ত। ওর থেকে কত ছোট। ওকে কতবার বলেছে,
- ' এই তুই আমাকে দাদা বলে ডাকবি এবার থেকে বুঝলি? পুঁচকে কোথাকার।'
- ' না আমি পুঁচকে না। আমি বড়ো।'
- ' আচ্ছা তুই মা এর থেকেও বড়ো না? যা এখান থেকে যা।'
            ছুটকি দৌড়ে বোধহয় মার কাছে চলে যায়। পাড়াতে বন্ধুরা তো বটেই তাছাড়া সবাই
ওকে অনি বলে ডাকে। শুধু ইস্কুলের বন্ধুরাই কেবল ওকে অনিন্দ্য বলে সম্বোধন করে। বাবা
এমনিতে এক সরকারী অফিসের বড়োবাবু। সকালে ঘড়ির কাঁটাকে মান্যতা দিয়ে ঘর থেকে
প্রতিদিন ঠিক একসময় বের হয়। কিন্তু ফিরতে একটু দেরী হয়। অফিস ছ'টায় ছুটি হলেও
টেবিলের কাগজ পত্রের জঞ্জাল সব গুছিয়ে রেখে চেয়ার ছেড়ে উঠতে উঠতে আধ ঘন্টা
চল্লিশ মিনিট লেগে যায়। কারণ তিনি কাজে ফাঁকি দেওয়া মোটেই বরদাস্ত করতে পারেন
না। এরকম একজন বাবা পড়াশোনায় ফাঁকি পছন্দ করবেন না এটা স্বাভাবিক। তাই কোন
কোনদিন রাতে বা ছুটির দিন সকালে অনিন্দ্যর লেখা পড়ার অগ্রগতি কতদূর হলো সেটা
পরখ করতে বসেন অবশ্যই অনিকে সামনে বসিয়ে। তখন বাবার হাতের কানমলা, থাপ্পর
প্রায়শই ভাগ্যে জোটে। তখন অনির মনে হয় কানটা হয়তো একদিন গরুর মতো লম্বা না
হয়ে যায়। কিন্তু কি করবে সে । ওর যে পড়ার বইয়ের থেকে গল্পের বইয়ের বিশেষত
ফেলুদা প্রফেসর শঙ্কু ও পঞ্চ পান্ডবের বই পড়তেই বেশী ভালবাসে। তাছাড়া খেলাধূলায়
অনি ফার্স্ট বয়। ও পাড়ার টিমের ক্যাপ্টেন। সে ফুটবলই হোক ক্রিকেটেই হোক বা অন্য
কোন খেলাই  হোক অনি টপ স্কোরার সবেতেই। সে টিমে একজন অলরাউন্ডার।
            কিন্তু পরীক্ষার কিছুদিন আগে থেকে সে পড়াশোনায় একদম খুব সিরিয়াস হয়ে
পড়ে। এমনিতে সে ইস্কুল কামাই করে না একদম। ক্লাসের পড়াগুলো ও মন দিয়ে শোনে
ও নোট করে নেয়। যার জন্য বাড়ীতে সেগুলো একবার ভালো করে দেখে নিয়ে সব তুলে
রাখে। তারপর গল্পের বই। তাই বাবার ধারণা ও সারাদিন বুঝি খেলেই বেড়ায়। পড়াশোনা
মোটেই করে না। আবার যখন পরীক্ষার রেজাল্ট বেরোয় তখন বাবার মুখে হাসি হাসি
ভাবটা লক্ষ্য করে অনি। তাছাড়া স্কুলের স্পোর্টসে দৌড়ে লং জাম্প হাই জাম্পের প্রথম
পুরস্কারটা বাড়ীতে নিয়ে আসে তখন বাবাই ওর পিঠ চাপরে দেয়।
            অনি অঙ্কে প্রায় পুরো নম্বরই তোলে কিন্তু ও জ্যামিতি পড়তে তার একটুও ভাল
লাগে না। তাই এদিকটাতে ও বড়ো কাঁচা। কিন্তু পরীক্ষায় বসতে হবে তো। তাই জ্যামিতি
উপপাদ্য গুলো মুখস্থ করতে লাগলো। কিন্তু না বুঝে পড়লে যা হয় কিছুতেই সেটা মুখস্থ
হবার নয়। মা যেন কাকে বলছিল আজ ভরা পূর্ণিমা। অনি ভাবলো তাহলে একবার ছাদে
বইটা নিয়ে গিয়ে দেখা যেতে পারে পূর্ণিমার আলো আর ছাদের খোলা হাওয়ায় কিছুটা
হলেও উপপাদ্যগুলোকে কায়দা করা যায় কিনা। যা ভাবা তাই করা গেল। অনি ছাদে
উঠে জোৎস্নার আলোয় ভিজে বই না দেখে বলতে লাগলো উত্তর থেকে দক্ষিণ আর
দক্ষিণ থেকে উত্তর দিকে পায়চারী করতে করতে। যেই আটকে গেল অমনি পেছন থেকে
একটা গর্ গর্ আওয়াজ শুনে পেছনে তাকিয়ে দেখে ঠাকুমার আদরের বেড়ালটা। যাকে
সবাই গুন্ডা বলে ডাকে। গুন্ডা কিন্তু অনিকে ঠিক চিনেছে। তাই ওর পায়ে পায়ে ঘষে ঘষে
সেও পায়চারী করতে লাগলো। কিন্তু যেই উত্তর দিকে যাচ্ছে অমনি গুন্ডাটা গর্ গর্ করে
উঠছে। অনির অত দেখার সময় নেই। কারণ অনেক চেষ্টা করেও চাঁদের আলোয় কিছুই
পড়া যাচ্ছে না বইয়ের লাইনগুলো। বিরক্ত হয়ে যেই মুখ ঘুরাতে যাবে নিচে নামার জন্য
অমনি দেখে উত্তর দিকের একেবারে ওদের বাড়ীর মাত্র ছ ফুট দূরত্বের বাড়ীটার ছাদের
রেলিংয়ের ওপর এদিকে পা ঝুলিয়ে একটা কুঁজো মতো ছায়ামূর্তী ওকে এই ' অনি ' বলে
ডাকলো। অমোন ডানপিটে অনিও কেমন ভয়ে ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল। ঐ ছায়ামূর্তীটা
বলে উঠলো,' অনি অনেকখন থেকে শুনছি তুমি উপপাদ্য পড়ছো কিছু না বুঝে। তাই
ভেবেছিলাম তোমাদের ছাদে গিয়ে তোমাকে ভাল করে উপপাদ্য ও সম্পাদ্যটা বোঝাবো।
কিন্তু তোমাদের ঐ হুলো বেড়ালটা আমাকে দেখে এমন রেগে উঠছে যে ঠিক সাহস
পাচ্ছিনা তোমাদের ছাদে যেতে।' অনি তো শুনে অবাক। গুন্ডাটা ঐ ছায়ামূর্তিকে দেখে
গর্ গর্ করছিল, কিন্তু  সেতো এই এখন ছাড়া এর আগে একবারও দেখতে পায় নি।
গুন্ডাটা দেখছি এখন আরো রাগে সারা শরীরটা এমন ফুলিয়ে তুলেছে দেখে অনিরই
কেমন ভয় লাগছে। বিড়ালটার চোখ দুটো কেমন জ্বলে উঠেছে আর লেজটা কেমন
মোটা হয়ে উঠে একটু একটু নড়ছে। মুখে গর্ গর্ আওয়াজটা হঠাৎ চরমে তুলে রাগে
সামনের দিকে ছায়ামূর্তির দিকে আস্তে আস্তে এগোতে থাকলো। ঠিক এই সময় নীচে
থেকে মায়ের চিৎকার শুনতে পেল। ' এই অনি, ছাদে উঠেছিস কেন? শিগগির  নেমে
আয়। ' ওদিকে ছায়ামূর্তিটা রেলিং থেকে নেমে যেতেই অনি গুন্ডাকে ' আয় ' বলে
ওকে কোলে তুলে নিয়ে চটপট ছাদ থেকে ভেতরে ঢুকে দরজাটা দড়াম করে বন্ধ
করে দিল। গুন্ডাটা জোর করে অনির কোল থেকে নেমে দরজাটা আঁচড়াতে লাগল।
অর্থাৎ দরজাটা খুলে দাও আমি ওটাকে দেখে ছাড়বো।
            অনি কিন্তু ঐ ছায়ামূর্তিকে চিনতে পেরেছে। উনি হচ্ছেন ওই বাড়ীর দাদু।
ছাদ থেকে নিচে নামতে গিয়ে ছাদের দরজার চৌকাটে হোঁচট খেয়ে পড়ে সিঁড়ি দিয়ে
গড়তে গড়তে নিচের চাতালে পড়ে গিয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। সে জ্ঞান আর ফেরেনি।
তিনি সেলিব্রাল স্ট্রোকে  মারা যান। ঘটনাটা ছাদে হয়েছে বলে বোধহয় কেউ কেউ
রাতে তাকে ছাদে ঘুরতে দেখেছে। এখন আশেপাশের বাড়ীর ছাদে সন্ধের  পরে কেউ
আর থাকে না। অনির সেটা একদম মনে ছিল না। তাই তো প্যাঁচে পরে গিয়েছিল ছাদে।
গুন্ডাটা সেই সময় ছাদে না থাকলে যে কি হতো কে জানে। এখন ও অনির কোলে বসে
দিব্যি আদর খাচ্ছে।

____________________________________________________________________________





দীপক  কুমার পাল ,
ডি টি সি, সাওদার্ন হেইটস
ব্লক-৮,  ফ্ল্যাট-১বি,
ডায়মন্ড হারবার রোড,
কলকাতা - ৭০০১০৪,


[চিত্রঃ: ইন্টারনেট মাধ্যম থেকে সংগৃহীত]



মন্তব্যসমূহ

সূচিপত্র

আরও দেখান

সপ্তাহের পছন্দ

ক্যুইজ, ধাঁধা, শব্দখেলা, 23rd issue: August 2023,

দুটি ছড়া ।। রথীন পার্থ মণ্ডল

ছড়া ।। মাছরাঙা রে ।। কার্ত্তিক‌ মণ্ডল

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় ৪৬ ।। সেপ্টেম্বর, ২০২৫

গল্প ।। সত্যমেব জয়তে ।। মিঠুন মুখার্জী

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় ৪৭ অক্টোবর, ২০২৫

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় ৪৪ ।। জুলাই ২০২৫

গল্প ।। মেজমামার অদ্ভুত কান্ড ।। অঞ্জনা মজুমদার

ছড়া ।। প্রত্যুষ ।। প্রবীর বারি

ছড়া ।। ভূতের বাড়ি ।। শচীন্দ্র নাথ গাইন

মাসের পছন্দ

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় ৪৭ অক্টোবর, ২০২৫

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় ৪৬ ।। সেপ্টেম্বর, ২০২৫

কবিতা ।। মুঠোফোন ।। জীবন সরখেল

কবিতা ।। হযবরলর জঙ্গলে ।। দীপক পাল

ছড়া ।। ভালো দাদু ।। জীবন সরখেল

ছড়া ।। চাঁদের বুড়ি ।। প্রবোধ কুমার মৃধা

ছড়া ।। এসো আলো ।। গোবিন্দ মোদক

ছড়া ।। পুজো এসেছে ।। শংকর হালদার

ছড়ার কথা ।। দেবদাস কুণ্ড

ছড়া।। পুজো এলো ।। রঞ্জন কুমার মণ্ডল

বছরের পছন্দ

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় ৪০ ।। মার্চ ২০২৫

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় ৪৪ ।। জুলাই ২০২৫

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 38th issue: January 2025

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সুচিপত্র ।। 37th issue: December 2024

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় ৪৬ ।। সেপ্টেম্বর, ২০২৫

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় ৪১ ।। এপ্রিল ২০২৫

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় ৪২ ।। মে ২০২৫

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। ,39th issue: February 2025

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় ৪৫ ।।আগস্ট, ২০২৫

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় ৪৭ অক্টোবর, ২০২৫

অতি প্রিয়

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। আত্মপ্রকাশ সংখ্যা ।। অক্টোবর ২০২১

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। দ্বিতীয় সংখ্যা ।। নভেম্বর ২০২১

নিবন্ধ ।। শিশু-কিশোর সাহিত্যবলয়ে শিশুরাই যেন ব্রাত‍্য না থাকে ।। অরবিন্দ পুরকাইত

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 4th issue: January 2022,

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 7th issue: April 2022

নিবন্ধ ।। দেশীয় উদ্ভিদ কেন গুরুত্বপূর্ণ ? ।। ডঃ চিত্তরঞ্জন দাস

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় - ১১ ।। আগস্ট ২০২২

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় - ১০ ।। জুলাই ২০২২

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র : 8th issue: May 2022

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় - ১২ ।। সেপ্টেম্বর ২০২২