Featured Post
ছোটগল্প ।। দুই ভাইয়ের কাণ্ড ।। সুব্রত সুন্দর জানা
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
দুই ভাইয়ের কাণ্ড
সুব্রত সুন্দর জানা
পাপুসোনা ও বিশ্ব, দুই ভাই, বয়সে তারা খুবই ছোট। তবু দৌরাত্ম তাদের কম নয়। সারা বাড়িময় ছুটে বেড়ায়। এটা টানছে, সেটা ভাঙছে। কুকুর, বেড়াল, ছাগল ছানা, মুরগী বাচ্চা তাদের দৌরাত্মে অতিষ্ঠ সবাই। তাদের খেলার সাথি আর একজন, সে হচ্ছে বুধাই, একটি ছোট্ট বাছুর। সে প্রায়ই দুই ভাইয়ের খেলার মাঝে তার স্যাঁতস্যাঁতে নাকটা গলিয়ে দেয়। কখনো বা জিভ দিয়ে তাদের গা চাটতে থাকে। তাদের মায়েরা কিছুতেই কাউকে বাড়িতে আটকে রাখতে পারে না। একটু ফাঁক পেলেই তারা বেরিয়ে পড়ে ঘরের বাইরে। সেখানে হয় কোন ছোট গাছের কচি ডাল ধরে ঝুলছে, না হয় যদি কোন কঞ্চি-টঞ্চি হাতে পেয়ে যায় তবে পুকুর পাড়ে গিয়ে ছিপ ফেলা খেলা খেলছে। কখনো বা একেবারে বেরিয়ে পড়ে রাস্তায়। বাড়ির পাশে বাস রাস্তা, একটু দূরে ট্রেন লাইন। তারা যে কখন কোথায় যায়, কী করে বসে এই নিয়ে ছিল সবার ভয়।
একদিন ভোরবেলা বাবা অফিসে, মা তখনো ঘুম থেকে ওঠেনি। পাপুসোনা চুপি চুপি বিশ্বকে ডেকে বলল- ভাই চল্, এই সময় আমরা একটু মর্নিং ওয়াক করে আসি।
বিশ্ব চোখ ডলতে ডলতে বাইরে বেরিয়ে এল, দাদা মর্নিং ওয়াক মানে কি রে?
-মর্নিং ওয়াক্ মানে জানিস না? সকাল বেলা রাস্তায় ঘোরাকে বলে মর্নিং ওয়াক্।
তারপর তারা রাস্তায় গিয়ে লেফট-রাইটের ভঙ্গিতে হাঁটতে লাগলো। এমন সময় দূরে কী একটা দেখে বিশ্ব বলল- দাদা, কত বড় একটা বাস গাড়ি।
পাপু বলল, দূর বোকা। ওটা বাস গাড়ি কী রে? ওটা তো রেল গাড়ি।
বিশ্ব বলল, দাদা রেল গাড়ি কী রে?
– রেল গাড়ি হচ্ছে খুব বড় গাড়ি। রেলের ওপর দিয়ে চলে।
বিশ্ব বলল- দাদা রেল কী রে?
- অত সব জানার দরকার নেই। বিশ্ব চল্, একটু কাছে গিয়ে দেখে আসি।
এই বলে তারা ছুটতে ছুটতে রেল লাইনের পাশে পৌঁছে গেল। গাড়ি তখন প্রায় কাছে চলে এসেছে। রেল গাড়িটি যেন দূর থেকে দৈত্যের মত ছুটে আসছে। বিশ্ব ভয় পেয়ে বলল -দাদা, কী জোর শব্দ রে! চল পালিয়ে যাই।
পাপুর মাথায় একটা দুষ্টু বুদ্ধি খেলে গেল। সে বলল -দেখবি বিশ্ব, গাড়িটা কেমন থেমে যাবে।
বিশ্ব অবাক হয়ে বলল -গাড়ি থেমে যাবে? এতবড় গাড়ি কী করে থামবে রে দাদা।
-ঠিক থামবে, তোর প্যান্টটা খুলে ফেল।
-প্যান্ট খুললেই গাড়ি থামবে।
-আঃ বকর্ বকর্ করিস না তো। যা বলি তাড়াতাড়ি কর। গাড়ি এসে গেল বলে।
বিশ্বর পরনে ছিল লাল প্যান্ট। আর পাপুর ছিল লাল জামা। দুজনে দুটো খুলে হাতে নিয়ে ওড়াতে লাগল। গাড়িটা তাদের কাছে প্রায় এসে সত্যি সত্যি থেমে গেল। সেই দেখে তারা লাগালো ছুট, সোজা বাড়ির দিকে।
গাড়ির মধ্যে তখন হৈ চৈ, কী হল ব্যাপারটা। স্টেশনে ঢুকতে তখনো বাকি। ড্রাইভার নেমে গেছে গাড়ি থেকে। দেখা গেল কিছু দূরে প্রায় এক ফুটের মতো রেল পাত ভেঙ্গে আছে। আগের গাড়িটি যাওয়ার সময় লাইনটি ভেঙ্গেছে। তাতে সেই গাড়িটি বেরিয়ে গেছে, কিন্তু পরের গাড়ির সামনের চাকা গিয়ে যখন ঐ ভাঙ্গার মুখে পড়তো তখন তা ঐ ভাঙ্গা দিয়ে বেরিয়ে যেত। এক ফলে গাড়িটি লাইন চ্যুত হয়ে এক বিরাট দুর্ঘটনা ঘটতো। হাজার হাজার মানুষের জীবন সংশয় হয়ে যেত।
খবর পেয়ে ছুটে এলেন রেলের পদস্থ অফিসারগণ। জরুরি ভিত্তিতে শুরু হয়ে গেল লাইন সারানোর কাজ। একজন বড় অফিসার সব দেখে শুনে জিজ্ঞেস করলেন গাড়িটা থামল কী করে? ড্রাইভার বলল, দুটো বাচ্চা ছেলে ইশারা করে গাড়িটা থামিয়েছে।
কোন্ দুটো ছেলে, খোঁজ পড়লো তাদের। সবাই প্রশংসা করতে লাগল তাদের তাৎক্ষণিক বুদ্ধির জন্য। কিন্তু যাদের জন্য আজ একটা বড় দুর্ঘটনা রক্ষা পেল, বেঁচে গেল কতগুলো নিরীহ মানুষের প্রাণ, যাদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ আজ এত মানুষ, সেই পাপু আর বিশ্বর সেদিকে কোন নজর নেই। তারা তখন মেতে উঠেছে অন্য খেলায়। ___________________________________________________________________________________________
সুব্রত সুন্দর জানা
গ্রাম ও পোঃ- গণেশনগর
থানা – কাকদ্বীপ
জেলা – দঃ ২৪পরগনা
পিন নং- ৭৪৩ ৩৫৭
চিত্রঃ নেট থেকে সংগৃহীত
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন