Featured Post

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় ৪১ ।। এপ্রিল ২০২৫

ছবি
[প্রচ্ছদচিত্রঃ : ইন্টারনেট মাধ্যম থেকে সংগৃহীত ]    সম্পাদকীয় ক্রমে গ্রীষ্মের দিন এসে গেল। নতুন বছরের দোরগোড়ায় আমরা। কৃষ্ণচূড়া আর পলাশের সমারোহে রাঙা হয়ে রয়েছে চতুর্দিক। কচি কচি আমে ভরে আছে গাছগুলো। ছুটির দিনে বেশ লাগে কাঁচামিঠে আম খেতে খেতে বন্ধুদের সাথে গল্প করা। সব ঋতুরই একটা নিজস্ব সৌন্দর্য আছে। শুধু দেখার চোখ আর অনুভবের মন দরকার।  সামনেই চড়ক উৎসব, মেলা। শিবের গাজনে ভক্ত সন্ন্যাসীদের অদ্ভুত সব কসরত দেখতে পাওয়া যায়। চড়কের মেলা শেষ হলেই আবার শুভ নববর্ষে বেশ নতুন জামা পরে ঘুরে বেড়ানো, খাওয়া দাওয়া, হালখাতায় দোকানে দোকানে নতুন ক্যালেন্ডার, মিষ্টি এসব নিয়ে আসা। মেশ মজাতেই কাটবে আগামী কয়েকটা দিন।  এই আনন্দ উৎসবের মাঝে একটু গল্প উপন্যাস পড়া, লেখালিখি,আঁকার জন্যও একটু সময় দিও। সৃজনশীল কাজে একটা বেশ আনন্দ আছে, তাই না?  নিজেদের লেখা আঁকার বিষয়ে তোমরা আগামী দিনে যাতে পটু হতে পারো তার জন্যই তো তোমাদের কিশলয়ের পাতা রয়েছে।  দ্বিধাহীন ভাবে নিজেদের সকল লেখা আঁকা পাঠিয়ে যাও নিয়মিত।  এভাবেই কিশলয় গজিয়ে উঠুক, প্রাণবন্ত হয়ে উঠুক তোমাদের সবুজ প্রাণের আবেগ মেশানো সৃষ্টি...

গল্প ।। শাবক ।। অশোক দেব


শাবক

অশোক দেব

 

আজও অভি'দের বাড়ি থেকে এসেই সায়ন বলল, বাবা ওদের মত একটা কুকুর ছানা এনে দেবে আমাকে কি সুন্দর বাচ্চাটা ! সায়ন অভিদের বাড়িতে যায় প্রাইভেট পড়তে ওখানেই মাষ্টারমশাই আসেন চারজনের ব্যাচ ওদের সবাই এবছরের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী

অভিদের লোমস আর ছোটখাটো চেহারার ভূটিয়া প্রজাতির কুকুরটির নাম ডকি সায়ন ওদের বাড়ি গেলেই ডকি লেজ

নেড়ে আর লাফিয়ে ঝাঁপিয়ে ওকে অভ্যর্থনা করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে সায়নের খুব ভালো লাগে ডকিকে   ভাবে ওর বাবাও যদি ওরকম একটা কিনে আনত ওর জন্য কি দারুন হোতো

সায়নের আবদার শুনে নারায়ণ বাবু বললেন কি হবে ওসব কিনে সামনেই তোর মাধ্যমিক এখন দিনরাত পড়াশোনা করতে হবে তোকে

এবারই প্রথম নয় এর আগেও একবার বলেছিল বাবাকে তখনও একই কথা শুনতে হয়েছিল বাবার উপর খুব রাগ হোলো সায়নের

এর কদিন পর স্কুল থেকে ফেরার পথে সায়ন দেখল চৌমাথার মুদির দোকানের পাশে চারটি কুকুরছানা শুয়ে রয়েছে তাদের মায়ের সঙ্গে কাছে যেতেই বাচ্চাগুলো লেজ নাড়তে নাড়তে ওর চারপাশে ঘোরাঘুরি শুরু করল তা দেখে সায়ন খুব মজা পেল

সে দোকান থেকে কটা বিস্কুট কিনে এনে ছড়িয়ে দিতেই বাচ্চাগুলো মহানন্দে খেতে শুরু করল

দোকানের মালিক ঐসব দেখে সায়নকে বলল, কুকুর তোমার খুব ভালো লাগে বুঝি ? বলল হ্যাঁ ভী--

তাহলে নিয়ে যাও একটা এগুলো আমার কুকুর

সায়ন এক কথাতেই রাজি হয়ে গেল

ভদ্রলোক বাদামি রঙের একটা বাচ্চা ওর হাতে তুলে দিল সায়নের মনে হোলো ও যেন মহামূল্যবান কোন সম্পদ পেয়েছে

মনে মনে ভাবল হোক না দেশি কুকুর একেই সে যত্ন করে পালবে সে মহানন্দে বাচ্চাটাকে কোলে করে বাড়ি নিয়ে এল

সায়নের মা বললেন, কোত্থেকে নিয়ে এলি এটা কার কুকুর ? সায়নের মুখে সব শুনে তারপর বললেন , জানিস তো  তোর বাবা এসব পছন্দ করে নাতবুও নিয়ে এলি ? এখন এটাকে রাখবি কোথায় !

সে তুমি ভেবো না এই বলে নাইলনের এক টুকরো দড়ি দিয়ে বারান্দার গ্রিলের সাথে বাচ্চাটাকে বেঁধে সে ছুটল বাজারে

ফিরে এল গলার বেল্ট, শিকল , কাঠের বাক্স আর থার্মোকলের বোর্ড নিয়ে প্রথমেই বেল্ট আর শিকল পড়িয়ে দিল বাচ্চাটার গলায় তারপর বাক্সের মাপে  থার্মোকল কেটে নিয়ে তার ভিতরে বসিয়ে দিলো

রাতের দিকে এখনও বেশ ঠাণ্ডা   বাক্সের তলার দিকটা বেশ পাতলা বাচ্চাটা অসুস্থ হয়ে যেতে পারে থার্মোকলের টুকরোটা অনেকটা ম্যাট্রেসের কাজ করবে

সায়ন নিজেই নিজ বুদ্ধির তারিফ করতে লাগল রাতে বাড়ি ফিরে ছেলের কান্ডকীর্তি দেখে নারায়ণবাবু খুব বকাবকি করলেন

সায়নের মা ছেলের পক্ষ নিয়ে দুকথা বলতেই নারায়ণ বাবু বললেন তোমার প্রশ্রয়েই ছেলেটা গোল্লায় যাবে সামনেই পরীক্ষা এখন এসব নিয়ে মাতামাতি করলে চলে ? এতসব কেনার পয়সা পেল কোত্থেকে ?

ওর মা বললেন, জমানো টাকা দিয়ে কিনেছে

রাত বাড়তে থাকলো বাচ্চাটার কুঁই কুঁই করা আওয়াজও বেড়ে চলল সদ্য মাকে ছেড়ে এসেছে তার উপর অপরিচিত জায়গা সব মিলিয়ে হয়তো নিরাপদ মনে করছে না নিজেকে আপন মনেই কথাগুলো ভাবল সায়ন

 

মা-বাবা শুয়ে পড়েছে পড়ার টেবিল থেকে মাঝে মধ্যেই উঠে এসে সে বাচ্চাটাকে দেখতে থাকলো ওকে দেখতে পেলেই  চুপচাপ হয়ে যায় বাচ্চাটা তখন সায়নের দিকে তাকিয়ে শুধু লেজ নাড়াতে থাকে

সায়ন ওর  নাম রাখল ভুলু

 

দিনকয়েক পর প্রাইভেট টিউটর রমেনবাবুর সাথে কথা বলে নারায়ণ বাবু জানতে পারলেন সায়ন আজকাল আশানুরূপ পড়াশোনা করছে না

সায়ন পড়াশোনায় যথেষ্ট ভালো কিন্তু নারায়ণবাবু চান অতি ভালো রাজ্যে না হলেও অন্তত জেলায় এক নম্বর হোক তার ছেলে এই তার প্রত্যাশা

বাড়ি ফিরেই তিনি যাচ্ছেতাই বকাবকি শুরু করলেন কিন্তু পরবর্তী কয়েকদিনেও  সায়নের কোনো পরিবর্তন হোলো না আসলে এবয়সে যা হয় আর কি এই কদিনে অবলা এই প্রাণিটির সাথে বন্ধুত্ব এতটাই জমে উঠেছে যে একমূহূর্ত ছেড়ে থাকতে পারে না বাচ্চাটাও ওকে না দেখতে পেলেই চিৎকার জুড়ে দেয়

একদিন টিউশনি থেকে বাড়ি ফিরে সায়ন দেখল ভুলু নেই খালি শিকল ঝুলছে বারান্দার গ্রিলে এঘর ওঘর কোথাও না দেখতে পেয়ে সে চিৎকার করে মাকে ডাকল ওর মা বাথরুম থেকে বেরিয়ে আসতেই জিজ্ঞেস করল ভুলু কোথায়?

-তোর বাবা এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনে রেখে এসেছে

-কেন ?

-তুই ঠিকমতো পড়াশোনা করছিস না তাই

কথাগুলো শুনেই সায়নের মন গভীর দু:খে আচ্ছন্ন হয়ে গেল সে পড়ার ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে কাঁদতে শুরু করল ভুলুর সঙ্গে তার কাটান মূহূর্তগুলি জীবন্ত হয়ে চোখের সামনে দিয়ে ভেসে বেড়াতে লাগলো

সন্ধ্যার মুখে  কাঁপুনি দিয়ে জ্বর এল সায়নের নারায়ণ বাবু ভাবলেন সিজন চেঞ্জের সময় একটু আধটু শরীর খারাপ,জ্বর, ইনফ্লুয়েঞ্জার মত অনেকেরই হয় তিনি পাড়ার ফার্মাসি থেকে ওষুধ এনে খাওয়ালেন

রাতটা কোনমতে কাটলেও সকাল হতেই আবার জ্বর এল সঙ্গে বমি

নারায়ণ বাবু ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলেনকয়েকটা ওষুধ আর  পরীক্ষা নিরীক্ষার কথা  লিখে ডাক্তারবাবু বললেন রিপোর্ট গুলো না দেখা পর্যন্ত কনফার্ম কিছু বলা যাচ্ছে না আপাতত ওষুধগুলো চলুক

সায়নের অবস্থা ক্রমশঃ খারাপ হতে লাগল

দুদিন পর রিপোর্ট দেখে ডাক্তারবাবু বললেন,খারাপ কিছু তো দেখতে পাচ্ছি না

তারপর বললেন কোনো কারণে মনে আঘাত পেয়েছে মনে হচ্ছে ওকে কি বকাঝকা করেছিলেন কোন ব্যপার নিয়ে 

নারায়ণবাবু বললেন,  না তবে একটা কুকুর পুষত

তারপর পুরো ঘটনাটা ডাক্তারবাবুকে বললেন

উনি বললেন আমি তেমনই কিছু আন্দাজ করছিলাম ছেলেকে তাড়াতাড়ি সুস্থ করতে চাইলে শিগগির ফিরিয়ে

আনুন ওটাকে


ভুলু ফিরে এল

ওকে দেখা মাত্রই সায়ন ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলোতারপর পরম মমতায় বুকে জড়িয়ে ধরল

                      

নারায়ণবাবু অন্তরাত্মা দিয়ে অনুভব করলেন, ভালবাসার বস্তুকে চোখের বাইরে সরিয়ে নিলেও মনের বাইরে সরিয়ে নেওয়া সম্ভব হয় না

__________________________________________________________________________

 অশোক দেব

 নেতাজি রোড বাইলেন,

  নিউটাউন,

   কোচবিহার

 

[ছবি: ইন্টারনেট মাধ্যম থেকে সংগৃহীত]

 

 

 



মন্তব্যসমূহ

সপ্তাহের পছন্দ

গল্প ।। ছোট দুই চড়ুই ছানা ।। আরজু মুন জারিন

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় ৪১ ।। এপ্রিল ২০২৫

অণুগল্প ।। তিথি ।। দেবাঞ্জন প্রামাণিক

অণুগল্প ।। ইচ্ছেশক্তি ।। রমলা মুখার্জী

ছড়া ।। এলো রোজার মাস ।। ইমরান খান রাজ

ছড়া ।। ছুটির দিনের মধুর স্মৃতি ।। কল্যাণ কুমার শাণ্ডিল্য

ছড়া ।। হাঁস ও খোকন ।। দীনেশ সরকার

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় ৪০ ।। মার্চ ২০২৫

গ্রন্থ আলোচনা ।। কবিতা অর্ধশত / পড়াতে তুষ্টি কত! ।। অরবিন্দ পুরকাইত

ছড়া ।। হিংসুটে ।। শ্রীমন্ত সেন

মাসের পছন্দ

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় ৪১ ।। এপ্রিল ২০২৫

অণুগল্প ।। তিথি ।। দেবাঞ্জন প্রামাণিক

ছোটদের আঁকিবুঁকি 41st Issue: April 2025,

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় ৪০ ।। মার্চ ২০২৫

ছড়া ।। মিতুলের কথা ।। গোবিন্দ মোদক

ছড়া ।। খোকার পাঠশালা ।। প্রবোধ কুমার মৃধা

ছড়া ।। দুর্ভাবনা ।। সুদামকৃষ্ণ মন্ডল

ছড়া ।। সত্যি হল ।। সুশান্ত সেন

ছড়া ।। চ্যাটার্জি বাড়ির চার পোষ্য ।। জয়শ্রী বন্দ্যোপাধ্যায়

ছড়া ।। নতুন বছর ।। রঞ্জন কুমার মণ্ডল

বছরের পছন্দ

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় ৪০ ।। মার্চ ২০২৫

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 38th issue: January 2025

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সুচিপত্র ।। 37th issue: December 2024

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। ত্রয়োত্রিংশ সংখ্যা ।। জুন ২০২৪

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 31st issue: April 2024

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। চতুর্ত্রিংশ সংখ্যা ।। জুলাই ২০২৪

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় ৪১ ।। এপ্রিল ২০২৫

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। ,39th issue: February 2025

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 32nd issue: May 2024

অতি প্রিয়

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। আত্মপ্রকাশ সংখ্যা ।। অক্টোবর ২০২১

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। দ্বিতীয় সংখ্যা ।। নভেম্বর ২০২১

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 4th issue: January 2022,

নিবন্ধ ।। শিশু-কিশোর সাহিত্যবলয়ে শিশুরাই যেন ব্রাত‍্য না থাকে ।। অরবিন্দ পুরকাইত

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 7th issue: April 2022

নিবন্ধ ।। দেশীয় উদ্ভিদ কেন গুরুত্বপূর্ণ ? ।। ডঃ চিত্তরঞ্জন দাস

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় - ১০ ।। জুলাই ২০২২

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় - ১১ ।। আগস্ট ২০২২

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র : 8th issue: May 2022

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় - ১২ ।। সেপ্টেম্বর ২০২২