অদ্ভুত বাড়ি
ইয়াছিন ইবনে ফিরোজ
একটি শান্ত শহরের ছোট্ট কোণায় এক পরিত্যক্ত বাড়ি ছিল, যা অনেকদিন ধরে অবহেলিত ছিল। পুরনো কাঠের দরজা আর ভেঙে যাওয়া জানালাগুলি তার অতীতের গোপনীয়তা চাপা রাখতে সাহায্য করেছিল। শহরের লোকেরা বলত, সেই বাড়ির ইতিহাস রহস্যে ঘেরা এবং সেখানে বহু বছর আগে কোনো এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছিল । তবে, কিশোর বন্ধুদের কাছে এই বাড়ি ছিল তাদের পরবর্তী অ্যাডভেঞ্চারের স্থান। অমিত, শাওন, ওমর, এবং রেশমী এরা চার বন্ধু ছিল, যারা সবসময় নতুন কিছু আবিষ্কারের জন্য আগ্রহী থাকত। তাদের বয়স পনেরো-ষোলো বছর, আর তাদের জন্য এমন কোনো রহস্য ছিল না যা তাদের সাহসকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে । একদিন, তারা শহরের পুরনো দোকানে গিয়ে সেই পরিত্যক্ত বাড়ি সম্পর্কে আরও জানার চেষ্টা করে। দোকানদার জানায়, অনেক বছর আগে এক ব্যক্তি সেখানে খুন হয়েছিলেন, এবং সেই খুনের তদন্ত এখনো শেষ হয়নি। তবে, এই তথ্য তাদের কোনও ভয় দেখাতে পারেনি। তারা সিদ্ধান্ত নেয়, সেই রহস্যময় বাড়িতে গিয়ে খুঁজে দেখতে হবে। রাতের দিকে, তারা সেখানে যায়, একেবারে নিঃশব্দে, যেন কেউ জানতে না পারে। বাড়ির ভিতরে ঢুকে প্রথমেই কিছু অদ্ভুত আওয়াজ শোনা যায়,একটি দুর্বল, পাঞ্চানো শব্দ। এটি যেন কোনও ভাঙা আসবাবের আওয়াজ, কিন্তু তারা দেখতে পায় না। বাড়ির দেয়ালে আঁকা কিছু অদ্ভুত চিহ্ন তাদের চোখে পড়ে, যা তাদের আরও বেশি কৌতূহলী করে তোলে। শাওন দেয়ালে কিছু সিক্রেট কোড দেখতে পায়, যা আগে কখনো সে দেখেনি। তাদের মনে হয়, এই কোডগুলো কিছু গভীর সাঙ্কেতিক বার্তা বহন করছে।
কিন্তু, যতই তারা বাড়ির গভীরে প্রবেশ করে, ততই তারা বুঝতে পারে কিছুই ঠিক নয়। বাড়ির এক কোণায় একটি পুরনো গোপন ঘর রয়েছে, যেখানে অনেক পুরনো কাগজপত্র রাখা ছিল। রেশমী সেখানে গিয়ে কিছু দলিল খুঁজে পায়, যার মধ্যে রয়েছে একটি অজ্ঞাত নামের ব্যক্তি ও ঘটনার বিশদ বিবরণ। এবং তারা দ্রুত জানতে পারে, সেই খুনের মামলা একসময় ভুলভাবে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল এবং সেই ব্যক্তি, যাকে খুন করা হয়েছিল, সম্ভবত এখনো কোনোভাবে শহরে ফিরে আসার চেষ্টা করছে। হঠাৎ, তাদের পিছনে একটি সুরে কাঁপানো শব্দ শোনা যায়। একজন ব্যক্তি তাদের দিকে এগিয়ে আসছে,এই ব্যক্তি কে হতে পারে? তাদের জানালার নিচে কিছু অদ্ভুত পদচিহ্ন পড়ে থাকে। তারা তাড়াতাড়ি বের হয়ে আসতে চায়, কিন্তু বের হওয়ার পথও বন্ধ হয়ে যায়। তাদের বন্ধুত্ব এবং একে অপরের প্রতি আস্থার মাধ্যমে, তারা এই গোপন রহস্যের সমাধান খুঁজে বের করার জন্য একে অপরের সাহায্য নিয়ে সাহসিকতার সঙ্গেই বাঁচতে চেষ্টা করে।
তবে, সত্যি কথা বলতে, তাদের জীবনের সবচেয়ে বড় রহস্য এখনো একেবারে সামনে আসেনি। পথে তাদের কোনো ছলনা ছিল না। তারা জানতো, তাদের সামনে যে রহস্য দাঁড়িয়ে আছে, তা তাদের কেবল সাহস এবং বন্ধুত্বের জোরে মোকাবেলা করতে হবে। শাওন আর ওমর সিদ্ধান্ত নেয়, তাদের সকলেই একত্রে আবার সেই গোপন রুমে ফিরে যাবে। রেশমী, যদিও ভয় পাচ্ছিল, কিন্তু সে জানত, ভয় কেবল তখনই শক্তি হারিয়ে ফেলে, যখন তুমি তা মেনে নাও। তাই সে দৃঢ় মনোভাব নিয়ে তাদের সাথে রুমের দিকে এগিয়ে যায়।
অমিত জানতো যেকোন মুহূর্তে পুলিশ বা অন্যান্য লোকেরা যদি এখানে এসে কিছু ঘটানোর চেষ্টা করে, তাহলে তাদের বিপদ হতে পারে। তাই সে কিছু সময় ধরে বাড়ির বাইরের জায়গায় নজর রাখছিল। হঠাৎ, বাইরে থেকে একটি অদ্ভুত শব্দ শোনা যায়। মনে হয় কেউ ভিতরে ঢুকতে যাচ্ছে, কিন্তু ভিতরে ঘরের অন্ধকারে তাদের শরীর থেকে বাতি ছাড়া কিছুই দেখা যাচ্ছে না। শাওন ও রেশমী দ্রুত তাকে ডাকে, এবং তারা চুপিসারে দরজা বন্ধ করে দেয়। এদিকে, রেশমী গোপন রুমের পাশের একটি পুরনো টেবিল থেকে এক ধরনের ফাইল খুঁজে পায়। সেগুলোর মধ্যে একটি ফাইল ছিল, যেটি ছিল অনেক পুরনো, কিন্তু একে দেখতে মনে হচ্ছিল যেন নতুন। রেশমী ফাইলটি খোলে এবং অবাক হয়ে দেখে, সেখানে একটি ফটো রয়েছে।একটি অদ্ভুত ছবির মধ্যে তিনজন ব্যক্তি দাঁড়িয়ে আছে, আর তাদের মুখগুলো আসলে ড্যামেজ হয়ে গেছে। ওই ছবির পাশের একটি মুদ্রিত কাগজে লেখা ছিল, "প্রকৃত খুনী কে?"
এই নতুন তথ্য তাদের চমকে দেয়। তারা হঠাৎ বুঝতে পারে, যে খুনের মামলাটি ২০ বছর আগে এখানকার ঘটনা ছিল, সেটা আসলে সেভাবে সমাধান হয়নি। এবং এই খুনী এখনও এখানে কোনোভাবে থাকতে পারে।
একটা ভয়াবহ চিন্তা তাদের মনে আসে তারা কি ভুল করেছিল? সেই মৃত ব্যক্তি তাদের অনুসরণ করছে? অথবা তারা বুঝতে পারছে না যে তারা যা খুঁজছে, সেটা তাদের বিপদে ফেলে দিচ্ছে। বাড়ির ভিতরে আরও কিছু অদ্ভুত ঘটনার মাধ্যমে তাদের মনে হতে থাকে যে এই বাড়ি কোনো সাধারণ জায়গা নয়, বরং এটি তাদের জীবনের সবচেয়ে বড় ধাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। শাওন হঠাৎ করে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখে, কিছু অদ্ভুত ছায়া ধীরে ধীরে বাড়ির কাছাকাছি আসছে। তার মনে হয়, এখানে তাদের নিরাপত্তার জন্য কিছু গভীর রহস্য লুকিয়ে আছে, যা হয়তো তাদের জীবনকে একেবারে বদলে দেবে।
বাড়ির মধ্যে অন্ধকারের সঙ্গে আরও কিছু অদ্ভুত আওয়াজ শোনা যাচ্ছিল। সেই আওয়াজগুলো ক্রমশই কাছাকাছি আসছিল, যেন কেউ তাদের দিকে এগিয়ে আসছে। শাওন ঘরের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখে, কিছু অন্ধকার ছায়া বাড়ির পেছনের দিকে চলে যাচ্ছে। তবে, এটি তাদের কাছে এক রহস্যজনক সংকেত হয়ে দাঁড়ালো। ওমর ভীত হয়ে বলে, "আমরা এখান থেকে চলে যাই, খুব দ্রুত!" কিন্তু রেশমী একদম স্থির দাঁড়িয়ে থেকে বলে, "না, আমি এখান থেকে কিছু না কিছু জানতে চাই। আমাদের ফাইলগুলোর মধ্যে নিশ্চয়ই কিছু তথ্য লুকানো আছে।" তার মধ্যে এক ধরনের দৃঢ়তা ছিল, যা তাকে ভয়কে জয় করতে সাহায্য করছিল। অমিত ও শাওন কিছুক্ষণ পর একে অপরের দিকে তাকায়, এবং একমত হয় যে, যদি তারা এখান থেকে না বেরিয়ে যায়, তবে সত্যিই তারা কোনো বিপদে পড়তে পারে। তবে রেশমী তাদের কাছে প্রমাণ চেয়েছিল। "তবে, আমার কাছে একটা প্রশ্ন আছে," সে বলে, "এই ফাইলগুলো সত্যিই কি পুরনো? আমার মনে হচ্ছে, এগুলো তাজা যেমন আজকে রচিত!"
এই প্রশ্নের উত্তরে শাওন এগিয়ে এসে ফাইলগুলো আবার দেখে। হ্যাঁ, সত্যিই এগুলি একেবারে নতুন লেখা, যেন সেগুলো বর্তমানে লেখা হয়েছে। তাদের চোখে এক ধরনের আতঙ্ক দেখা যায়। এখন তারা বুঝতে পারে, এই রহস্যের শেষ কোথাও তাদের আগে অপেক্ষা করছে। এটি অতীতের কোনো ভুল বা ঘটনা নয়, বরং আজকের এক অবিশ্বাস্য পরিকল্পনা হতে পারে। তাদের আলোচনার মাঝেই, বাইরে থেকে একটি দরজা খোলার শব্দ আসে। "এটা কি ছিল?" রেশমী জানতে চায়। ওমর দ্রুত দরজার দিকে চলে যায়, কিন্তু ততক্ষণে দরজা নিজেই খুলে যায় এবং তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকে এক অচেনা মুখ। একজন পুরনো ব্যক্তি, যার চেহারা কিছুটা অদ্ভুত এবং মলিন। তার হাতে একটি অদ্ভুত আঙটি ছিল, তা যেন রহস্যের চাবিকাঠি। সে খুব ধীরে ধীরে বলে, "তোমরা কী জানো? তোমরা যে খেলায় প্রবেশ করেছ, তার পরিণতি একেবারেই ভিন্ন।" তারা ভীত হয়ে ওঠে, তবে রেশমী সাহস করে প্রশ্ন করে, "আপনি কে? আপনি এখানে কী করছেন?"
বৃদ্ধ ব্যক্তি মাথা নিচু করে বলতে থাকে, "আমি সেই খুনের তদন্তের অংশ। বহু বছর আগে এই বাড়ির ইতিহাসে কিছু অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছিল। আর আজও সেই ঘটনা এখানে পুনরায় ঘটছে। তোমরা কিছু জানো না, কিন্তু তোমাদের জানা উচিত।" তার কথায় কোনো রহস্যপূর্ণ গম্ভীরতা ছিল। তাদের সামনে এখন দুইটি পথ। একদিকে, তারা যদি এই রহস্যের অনুসন্ধান করে, তবে হয়তো তারা নিজেদের বিপদে ফেলবে। অন্যদিকে, তারা যদি ফিরে চলে যায়, তবে এই সমস্ত রহস্য মনের মধ্যে একটি অসমাপ্ত প্রশ্ন হিসেবেই থেকে যাবে। কিন্তু যেহেতু তারা ইতিমধ্যে ঝুঁকি নিয়ে এখানে এসেছে, তারা আর পিছু হটবে না। "আমরা জানতে চাই," অমিত বলল, "এখানকার সত্য কী? কী ঘটেছিল, এবং আমরা কীভাবে আমাদের জীবন বাঁচাতে পারব?"
বৃদ্ধ ব্যক্তি কিছুক্ষণ নীরব থাকে, তারপর বলল, "এটা একটি পরীক্ষা। তোমরা জানো না, কিন্তু তোমাদের হাতে এখন এই রহস্য সমাধানের চাবিকাঠি রয়েছে।" তাদের মধ্যে একটি দৃঢ় অঙ্গীকার তৈরি হয়। তারা একত্রে সিদ্ধান্ত নেয়, শেষ পর্যন্ত তারা যা জানার চেষ্টা করছে, তা জানবে। তারা বাড়ির গভীরে প্রবেশ করার জন্য প্রস্তুত হয়।
বৃদ্ধ ব্যক্তি তাদের দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ নীরব থাকে। তারপর, তার মুখে এক রহস্যময় হাসি দেখা যায়। "এটা সহজ কাজ নয়," সে ধীরে ধীরে বলে, তবে তোমরা যদি সাহসী হও, তাহলে তোমাদের পথ খুলে যাবে। আপনি কী বলতে চাচ্ছেন? রেশমী অবাক হয়ে প্রশ্ন করে। "আমরা কীভাবে এর সমাধান পাবো?"বৃদ্ধ ব্যক্তি একে একে তাদের দিকে তাকিয়ে বলে, "তোমরা জানো না, কিন্তু এই বাড়ির মধ্যে এমন কিছু লুকানো আছে যা বহু বছর ধরে এখানে বন্দী। এবং একমাত্র যারা সত্যিই সাহসী, তারা সেগুলো আবিষ্কার করতে পারবে।"তিনি তাদের কাছে একটি পুরনো মানচিত্র তুলে দেয়। মানচিত্রে কিছু অদ্ভুত চিহ্ন ও চিত্র রয়েছে, যা দেখে মনে হয়, কোনো গোপন পথ বা লুকানো কক্ষের সন্ধান দেয়া হয়েছে। "এই মানচিত্রটি তোমাদের সাহায্য করবে," বৃদ্ধ ব্যক্তি বলল, "এটি তোমাদের গন্তব্যে পৌঁছানোর পথ দেখাবে। তবে সাবধান থেকো এটা শুধুমাত্র তোমাদের বন্ধুত্ব এবং সাহসিকতার মাধ্যমে সম্ভব হবে।" শাওন একটু চিন্তা করে বলে, "আমরা যদি এই রাস্তায় পা রাখি, তবে কোথায় পৌঁছাবো জানি না। তবে আমরা একে অপরের সঙ্গে আছি।" অমিত মানচিত্রটি হাতে নিয়ে আবার যাচাই করতে থাকে, তারপর বলে, " আমরা এখান থেকে বেরিয়ে যেতে পারি না? কেন আমাদের এই পথে যেতে হবে?" বৃদ্ধ ব্যক্তি একটু রুক্ষ স্বরে বলে, "কারণ, তোমরা যদি এই রহস্যের সমাধান না করতে পারো, তবে এখানে যা ঘটছে তা কখনও থামবে না। সেই পুরনো খুনী, তার নিঃশ্বাস, সবসময় তোমাদের উপর থাকবে।" এটা শুনে তাদের মধ্যে একটা ভয়াবহ অনুভূতি তৈরি হয়। তবে, তীব্র মানসিক শক্তি নিয়ে তারা সিদ্ধান্ত নেয়, যে তারা এই রহস্য সমাধান করবে। তারা একে অপরকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন দেয় এবং মানচিত্র অনুসরণ করতে শুরু করে। ধীরে ধীরে, তারা বাড়ির এক ভেতরের কোণে পৌঁছায় যেখানে একটি ছোট দরজা ছিল, যা তারা আগে লক্ষ্য করেনি। সেই দরজা খুলে গেলে, ভেতরে একটি গোপন কক্ষ দেখতে পায়, যা একেবারে অন্ধকার। তারা একে একে কক্ষের ভিতরে ঢোকে, এবং সেখানে একটি পুরনো চিত্রের সামনে দাঁড়িয়ে যায়। ছবির মধ্যে তিনটি মানুষ ছিল একজনকে তারা পুরনো ব্যক্তির মতো দেখতে, আর বাকি দুজন অচেনা। "এটা কী?" রেশমী বলে, তার কণ্ঠে ভয় লুকিয়ে ছিল। "এটি সেই পুরনো হত্যাকাণ্ডের ছবি," বৃদ্ধ ব্যক্তি বলল। "তোমরা কি জানো, এটি শুধু একটি ছবি নয়। এটি একটি সীল। যে এটি ভেঙে ফেলবে, সে এই রহস্যের চাবিকাঠি পাবে।" রেশমী এবং তার বন্ধুরা বুঝতে পারে, তারা শুধু একটি রহস্যময় বাড়ির ভিতরে ঢোকেনি, বরং তাদের জীবনের সবচেয়ে বিপজ্জনক খেলায় প্রবেশ করেছে। তাদের সামনে এখন এটি খোলার সুযোগ রয়েছ। একটি চিত্রের সীল ভেঙে সেই রহস্য উদঘাটন করার। কিন্তু তারা জানে না, সীল ভাঙলে তাদের জীবনে কী বিপদ আসবে।তাদের মধ্যে কিছুক্ষণের জন্য নীরবতা বিরাজ করে। তারপর, অমিত সাহস নিয়ে চিত্রের সীলটি স্পর্শ করে। আর ঠিক তখনই, বাড়ির ভিতরে ভয়াবহ শব্দ শুরু হয়,যেন কিছু তৎপর হয়েছে, যেন কোনো রহস্যময় শক্তি তাদের দিকে এগিয়ে আসছে। কিন্তু তাদের কাছে কোনো বিকল্প ছিল না। তারা জানত, এই পথেই তাদের সত্যের সন্ধান মিলবে।
অমিত চিত্রের সীলটি স্পর্শ করার পর, বাড়ির পুরো কাঠামো যেন হঠাৎ করে কাঁপতে শুরু করে। দেয়ালগুলো সরে যায়, জানালাগুলো ঝাঁকুনি দেয়, এবং অন্ধকার কক্ষে অদ্ভুত আলো বিচ্ছুরিত হতে থাকে। এমন লাগছিল, যেন বাড়ি নিজের অস্তিত্বের শেষ মুহূর্তে এসে দাঁড়িয়েছে। একে একে সবাই টান টান হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে, তাদের চোখে ভয় ও কৌতূহলের মিশেল। অমিত দ্রুত পিছনে সরে গিয়ে বলে, "এটা ঠিক কী হচ্ছে?" বৃদ্ধ ব্যক্তি, যে এখন তাদের পাশে ছিল, ধীরে ধীরে এক পলকও না ফেলে বলে, "এটা সেই শক্তির মুক্তি। আজকের দিনেই তোমরা শেষ মুহূর্তে এসে পৌঁছালে।" এতটুকু বলেই, পুরনো ব্যক্তি সেই চিত্রের সামনে এসে দাঁড়ায় এবং তার আঙুল দিয়ে সীলটির মাঝখানে একটি গোপন চিহ্ন উৎঘাটন করে। তার সাথে সাথে একটি তীব্র আলো একটানা ঝলকাতে থাকে এবং কিছু সময়ের মধ্যে কক্ষে একটি পুরনো চিঠি, কয়েকটি পাণ্ডুলিপি পাওয়া যায়। রেশমী এগিয়ে গিয়ে হাত দিয়ে চিঠি তুলে নিল। চিঠিতে লেখা ছিল, "তোমরা যে পথে এসেছ, সে পথ কখনও শেষ হয় না। তবে, এই খুনের মামলা সমাধান হবে , যদি তোমরা সাহসী হয়ে এগিয়ে যাও।" তারা চারজন একে অপরের দিকে তাকায়, বুঝতে পারে যে তারা যা খুঁজছিল, তা সব সময় তাদের সামনে ছিল। পুরো রহস্যের মূল ছিল তাদের বন্ধুত্ব, একে অপরের প্রতি বিশ্বাস এবং সাহসিকতা যার মাধ্যমেই তারা এই গোপনীয়তার সমাধান পেয়েছে। এই চিঠির মাধ্যমে পুরো বাড়ির ভয়াবহতা বন্ধ হয়ে গেছে।"শাওন বলে, "আমরা সফল।" "হ্যাঁ," অমিত মন্তব্য করে, "আমরা শুধু এই রহস্যের সমাধান করিনি, বরং নিজেদের এক নতুন দিকে খুঁজে পেয়েছি।" আর তখনই, বাড়ির কাঠামো আরও একবার কাঁপে, তবে এইবার তীব্রতার বদলে, কিছুটা শান্তির অনুভূতি আসে। তারা বুঝতে পারে, পুরো বাড়ির শক্তি নিঃশেষ হয়ে গেছে এবং রহস্যের বাঁধন খুলে গেছে। বাড়ি আস্তে আস্তে সুস্থ হতে শুরু করে, যেন সেই পুরনো ইতিহাসের ছায়া কেবল তাদের সহ্য করা সাহসিকতার কারণে বিদায় নিয়েছে। তারা ঘরের দরজা খুলে বাইরে আসে, প্রথম আলোর রশ্মি তাদের ওপর পড়তে থাকে।"এটা আর কোনো অদ্ভুত বাড়ি নয়," রেশমী হেসে বলে, "এটা এখন আমাদের স্মৃতি।"
______________________________________________________________________________________
[চিত্রঃ: ইন্টারনেট মাধ্যম থেকে সংগৃহীত]
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন