সম্পাদকীয়
গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে ঘরবন্দি হয়ে আছো অনেকেই। ভেজা বাতাস, গরম তেলেভাজা, আর গল্পবইয়ের মরসুম এখন। গল্প, ছড়া, ধাঁধা এসব নিয়ে হাজির কিশলয়ের আগস্ট সংখ্যা। আর আগস্ট মাস মানেই স্বাধীনতা দিবসের সেই গুরুত্বপূর্ণ দিন। আগামী ১৫ই আগস্ট ৭৫ তম বর্ষে পদার্পণ করতে চলেছে ভারতের স্বাধীনতা দিবস। সেদিনটি উদযাপন অনুষ্ঠানের জন্য তোমরা বক্তৃতা, গান, কবিতা, নাটকের প্রস্তুতি নিচ্ছ অনেকেই। এই স্বাধীনতা সমগ্র দেশবাসীর কাছে গর্বের, এবং সম্মানের। ইতিহাসে তোমরা নিশ্চয় পড়েছ যে, অনেক রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম, অনেক বীর শহীদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে ভারতবর্ষ ইংরেজদের প্রায় দুশো বছরের পরাধীনতা থেকে মুক্তি পেয়েছে। এই স্বাধীনতার অনুভব কেমন তাঁরাই বুঝেছেন, যাঁরা পরাধীনতার শিকলে বাঁধা থেকেছেন দীর্ঘদিন। তবে তোমরা এটুকু তো বুঝতে পারো যে, স্বেচ্ছায় দেশের জন্য মৃত্যুবরণ সহজ নয়। কতখানি যন্ত্রণা পেলে তা থেকে মুক্তি পেতে মৃত্যুকেও তুচ্ছ মনে হয়! সে যন্ত্রণা থেকে আমাদের যাঁরা মুক্ত করে গেছে তাঁদের তাই ভোলা যায় না।
তোমাদের মত অল্প বয়সেই দেশের জন্য মৃত্যুকে হাসিমুখে বরণ করেছিলেন বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসু। যে বয়সে তোমরা আজ স্বাধীনভাবে পড়াশুনো, খেলাধুলো করছো সেই বয়সেই তিনি দেশের স্বাধীনতার ভার মাথায় নিয়েছিলেন। ভাবা যায়!
মেদিনীপুরে গড়ে ওঠা একটি গুপ্ত বিপ্লবী সংগঠনের সদস্য ছিলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের ছেলে ক্ষুদিরাম বসু। সেই সময় আলিপুর প্রেসিডেন্সি বিচারালয়ের মুখ্য হাকিম ছিলেন ডগলাস কিংসফোর্ড। এই হাকিমের বিচারেই বাঙালি ছেলে বিপ্লবী সুশীল সেনকে চাবুক মারার সাজা দেওয়া হয়। নিশ্চয় বুঝতে পারছো তোমরা যে তিনি কতখানি কঠোর ও নিষ্ঠুর প্রকৃতির ছিলেন।
তাই ক্ষুদিরাম বসু আর বিপ্লবী প্রফুল্ল চাকির সঙ্গে মিলে এই ব্রিটিশ বিচারক, ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ডকে হত্যার জন্য পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। সন্ধ্যায় ক্ষুদিরাম এবং প্রফুল্ল তাঁদের পরিকল্পনা কার্যকর করার জন্যে স্কুল ছাত্রের ভান করে মুজাফফরপুর পার্কে অপেক্ষা করছিলেন, যেখানে কিংসফোর্ড ঘনঘন আসতেন। তাঁর গাড়ি লক্ষ্য করে ক্ষুদিরাম বসু ও প্রফুল্ল চাকী বোমা ছুড়েছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ড অন্য একটা গাড়িতে বসেছিলেন। বোমার আঘাতে মারা যান দুজন ব্রিটিশ মহিলা, মিসেস কেনেডি ও তার কন্যা। বোমা মেরে প্রফুল্ল চাকি গ্রেপ্তারের আগেই আত্মহত্যা করেন। ক্ষুদিরাম বসু গ্রেপ্তার হন। দুজন মহিলাকে হত্যা করার জন্যে বিচারে তার ফাঁসির আদেশ হয়।
ফাঁসি হওয়ার সময় ক্ষুদিরামের বয়স ছিল মোটে ১৮ বছর। তিনি ছিলেন ভারতের কনিষ্ঠতম বিপ্লবী।
এ-তো মাত্র একজন বিপ্লবীর ঘটনা বলা হল। আমাদের দেশের এই রকম কত বিপ্লবী সন্তানের সংগ্রামের বিনিময়ে ভারত স্বাধীন হয়েছে। মাতঙ্গিনি, নেতাজী, গান্ধীজী, ভগৎ সিং -এঁদের মত প্রতিটি বিপ্লবীর জীবন যেন এক একটা রোমহর্ষক গল্প। তাঁদের এই বিপ্লবগাথা পড়ে দেখো, শিহরণ জাগানো সেসব গল্প। তাঁদের জীবনকাহিনী তোমাদের দুর্দম সাহসিকতা, স্বদেশপ্রেম আর কর্তব্যনিষ্ঠায় অনুপ্রাণিত করবে। তাই ক্লাসের পড়াশুনার সাথে এই বিপ্লবীদের গল্প, স্বাধীনতার ইতিহাসটা পড়ে দেখো।
আজ স্বাধীন দেশে আমাদের আর এতখানি ত্যাগের দরকার হয়তো নেই, কিন্তু দেশকে ভালোবাসাটা দরকার। আর নিজের কাজকে সততা নিষ্ঠা সহকারে করলে, আমাদের চারপাশের দুর্গতদের ভালোবেসে সেবা করলেই দেশকে ভালোবাসা হয়।
দেশের প্রতি ভালোবাসা তোমাদের দৃঢ় হোক। তোমাদের কাঁধেই যে ভবিষ্যত ভারতের দায়ভার! তোমাদের দেশপ্রেমের শক্তিতে বিশ্বের দরবারে আদর্শ রূপে প্রতিষ্ঠিত হোক আমাদের ভারতবর্ষ।
জয় হিন্দ।
শুভকামনাসহ--
প্রিয়ব্রত দত্ত ও কার্তিক চন্দ্র পাল।
কার্যনির্বাহী যুগ্ম সম্পাদক,
কিশলয় মাসিক শিশুকিশোর ই-ম্যাগ।
১২ ই, আগস্ট, ২০২২
=============
বিঃদ্রঃ অনুগ্রহ করে স্ক্রিন শেয়ার নয়, লেখার লিঙ্ক শেয়ার করুন। যত্ত খুশি।
প্রচ্ছদ-চিত্র: সোহম দত্ত , নবম শ্রেণি, ওবর্ধমান সি এম এস হাই স্কুল, পুর্ববর্ধমান ।
-------------০০০-------------
সূচিপত্র
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন