ইচ্ছা
ফারহান আহমেদ মল্লিক
আমি ফারহান, আমার এখন বয়স-১১. আমার কাকা এনজিওতে কর্মরত,তাই দুই সপ্তাহ পর পর ঝাড়গ্রামে কর্মসূত্রে যায়, আমি একবার, আমার কাকার সঙ্গে ঝাড়গ্রামে বেড়াতে যাই। নির্জন রাস্তা, কেউ কোথায় নেই, চারিদিকে জঙ্গল, মাঝে রাস্তা, হঠাৎ গাড়ি থেমে গেল। আমরা গাড়ি থেকে বের হয়ে পড়লাম, এবং কাকা ড্রাইভারকে বলল, কি হলো, গাড়ি থামালেন কেন। ড্রাইভার বলল, গাড়ির চাকা পাংচার হয়ে গেছে। তাই সবাই গাড়ীতে বের হয়ে পড়ল, ড্রাইভার গাড়ির চাকা পাল্টাচ্ছেন, হঠাৎ হাতির ডাক শোনা গেল। সবাই ভয় পেয়ে গেলাম, যে যেদিকে পারলো স সেদিকে দৌড় হলো। অমিও দৌড়লাম। আমার সামনে একটি আদিবাসী বালক এলো। বালকটি বলল, তুমি জঙ্গলে কেন। আমি বললাম,আমাদের দল ছত্রভঙ্গ হয়ে গেছে। বালকটি বলল,কি কারনে ছত্রভঙ্গ হলো। আমি বললাম, আমি বুনো হাতির ডাক শুনতে পেয়েছি। বালকটি বলল তুমি আমার সাথে চলো। অমিও বালকটির সাথে চলে গেলাম। আমি জিজ্ঞাসা করলাম বালকটিকে, তোমার নাম কি? তোমার বয়স কত? বালকটি বলল আমার নাম বাপি মান্ডি। বলল আমার বয়স ১১। বাপি বলল তোমার নাম? আমি বললাম আমার নাম ফারহান। বাপি বলল আমি আমার গ্রামে এসেগেছি। আমি বাপিকে বললাম তোমাদের গ্রামটা খুব সুন্দর। বাপি বলল ধন্যবাদ। গ্রামে আসতে সকলে বাপিকে জিজ্ঞাসা করল, এটা কে। বাপি মান্ডি বলল এটা আমার বন্ধু। বাইরে থেকে এসেছে, তারপর বাপি সকলকে সব কথা খুলে বলল । বাপি আমাকে তাদের বাড়িতে নিয়ে গেল। আমি ওদের বাড়িতে কয়েকটা রাত থেকে ছিলাম। কয়েক দিন পর আমার কাকা আমাকে খুঁজে পেল। এনজিও ক্যাম্পটি ওদের গ্রামের পাশেই ছিল।এরপর কাকা আর কাকা র সঙ্গীরা নিয়ম মাফিক যখন কাজে চলে যেত, আমি প্রায় সব সময় বাপির সঙ্গে ওদের গ্রামের চারপাশে ঘুরে বেড়াতাম। আমি তখনই ভেবেছিলাম যে আমি বড় হয়ে এমএলএ হবো, আর আদিবাসীদের উন্নয়নের চেষ্টা করবো।এরপর আমি বাপিদের বাড়িতে গেলাম বাপিকে খুঁজতে। অনেক চেষ্টা করেও আমি বাপিকে খুঁজে পাইনা। সেদিন আমাদের বাড়ি ফেরার দিন ছিল।
আজ আমার বয়স ২৭ বছর।আমি এখন আদিবাসীদের উন্নয়নের জন্য চেষ্টা করি। আজও আমি আমার বন্ধু বাপিকে খুঁজে পাইনি। হঠাৎ একদিন আমার সহযোগী বন্ধু, স্বপন রায় বলল।
বন্ধু ফারহান, আমি সেই বাপি। আমি বিশ্বাস করিনা, এবং বললাম কি সব বলছেন। স্বপন কি যেন একটা পকেট থেকে বের করলো। আমি দেখে অবাক হলাম, বাপিকে দেওয় আমার উপহার স্বপ্নের কাছে রয়েছে। আমি অবাক হয়ে বললাম। তুমি বাপি ই তুমি! বাপি বলল, হ্যাঁ আমি বাপি। আমি জানি যে তুই প্রশ্ন করবি, তাহলে তো তোকে ছোটবেলায় খুঁজে পেয়েছিলাম না? আমি বললাম হ্যাঁ। বাপি বলল আমি আমার পরিবারের লোকজনকে,ও বন্ধুদের বলে দিয়েছিলাম, যে তোকে এই কথা বলতে আমি হারিয়ে গিয়েছিলাম। আমি বললাম, কিন্তু কেন? বাপি বলল, কারণ আমি দেখতে চেয়েছিলাম, তুই তোর ছোটবেলার কথা, রাখিস কিনা। আমি বললাম, এই জন্যই তুই কি তোর নাম পাল্টে, স্বপন রায় দিয়েছিস। বাপি বলল, হ্যাঁ। এরপর থেকে আমরা দুজনে, আদিবাসীদের জীবন জীবিকার উন্নয়নে চেষ্টা করি।
____________________________________________________________________________________
ফারহান আহমেদ মল্লিক,
গ্রাম+পোস্ট-গাববেরিয়া (কাজীপাড়া)
থানা-পাঁচলা, জেলা-হাওড়া, পিন-৭১১৩২২
পশ্চিমবঙ্গ।
বয়স-১১ বছর.
শ্রেণী-ষষ্ঠ
বিদ্যালয়ের নাম- তালবন্দি বেলায়েত আলী উচ্চ বিদ্যালয়।
চিত্রঃ নেট থেকে সংগৃহীত
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন