সঙ্ঘমিত্রার পপুলারিটি
সুকন্যা ভট্টাচার্য্য
আজকাল বন্ধুমহলে সঙ্ঘমিত্রা বেশ পপুলার।বন্ধু বলতে ছেলের স্কুলের জনা পঁচিশ মায়েদের গ্রুপ।তাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপও আছে।ওরা বাচ্চাদের স্কুলে দিয়ে একজাগায় বসে গল্পগুজব করে।কোনো বিশেষ দিন সেলিব্রেট করে।সবাই মিলে একটা ঘর ভাড়া নিয়েছে কয়েক ঘন্টার জন্য।।তবে যে জন্য সঙ্ঘমিত্রা পপুলার হয়েছে তা হল এর মধ্যেই সে দুজনের কিছু সমস্যা সমাধান করে ফেলেছে।এক হল মীনাক্ষীর ব্যাগ থেকে টাকা চুরি আর জপমালার স্বামীর প্রেমিকাকে খুঁজে বার করে দেওয়া।দুটো কাজই এমন ভাবে করেছে যাতে সাপও মরে আর লাঠিও না ভাঙে।
আজ কথা হচ্ছিল সবাই মিলে 'দুই পুরুষ' সিনেমা কোথায় যাওয়া যায়।মধুমিতা ছানার গজা এনেছিল সবাইকে দিল।রঞ্জিতা বলল ওর ছেলে বাবান যেখানে খেলে সেখান থেকে বলগুলো খেলেতে খেলতে হাপিস হয়ে যায়।ছোটো ক্যাম্বিস বল।সঙ্ঘমিত্রা ফোনে কিছু দেখছিল, ও বলল আশেপাশে খুব গাছপালা?
রঞ্জিতা বলল, না না দুটো মাত্র গাছ একটা আমগাছ আর একটা কৃষ্ণচূড়া। আসলে এটা একটা ছোটো জমি এতোদিন পড়েই ছিল,বাচ্চারা খেলতো।
গত বছর এই জমিটা কিনে বাড়ি হয়। বাড়িটা ছোটোই সামনের জায়গাটা ওনারা ঘিরে দেয়।
মধুমিতা বলল -কে কিনেছে?
রঞ্জিতা- মিঃ এন্ড মিসেস ঘোষাল, দুজনেরই প্রায় ষাটের উপরে বয়স।ওদের দুজন কাজের লোক আছে সবসময়ের।প্রথমথেকেই ওনারা বাচ্চাদের খেলতে দেওয়ার বিপক্ষে, পাঁচিল তুলে গেট বসিয়ে দিয়েছে।
সঙ্ঘমিত্রা - তাহলে তুই বলছিস বাচ্চারা খেলে?
রঞ্জিতা - হ্যা খেলে।সবাই মিলে আমরা কাউন্সিলার কাছে যাই উনি ঘোষালদের সাথে কথা বলেন।ওনারা রাজি হন।
বাচ্চারা বিকেলে দু ঘণ্টা খেলতে পারবে পারবে।শক্ত বল নিয়ে খেলা বারণ।খেলার সময় অভিভাবকদের থাকতে হবে।সন্ধে ছটায় গেট বন্ধ হয়ে যাবে। এইসব..।
এই বলে একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলল রঞ্জিতা।
স্কুল ছুটি হতে দেরি আছে, চল্ একটু ঘুরে আসি,সঙ্ঘমিত্রা বলল।তারপর রঞ্জিতাকে বাইকের পেছনে চলল বাগমারী।রঞ্জিতা দাঁড় করালো সেই খেলার মাঠের গেটে।গেট বন্ধ চারটায় খুলবে।সবুজ ঘাসে ঘেরা মাঠ দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়।
-তাহলে শনিবার ছুটি আছে ঐ দিনই আসব বিকেল চারটের পর,এই বলে ও রঞ্জিতাকে নিয়ে আবার চলল স্কুলের কাছে কারণ আর পনেরো মিনিট বাকি স্কুল ছুটি হতে।
শনিবার সকালেই সঙ্ঘমিত্রা পড়ার ছেলে জোজোর কাছ থেকে হকির স্টিক চেয়ে নিল।বিকেলে ছেলে আশাদীপকে নিয়ে বাইকে করে গেল বাগমারী যেখানে রঞ্জিতার ছেলে জয়মাল্য(বাবান) ক্রিকেট খেলে। আজ ওরা ফুটবল খেলছে,বারবার বল হারানোয় মন খারাপ তাই।আশাদীপকে পেয়ে ওরা খুব খুশি।রঞ্জিতা, দুজন আরো অভিভাবকদের সংগে কথা বলল সঙ্ঘমিত্রা। এবার ও মাঠ টা ঘুরে দেখছে আর মাঝে মাঝে হকি স্টিক দিয়ে ঠুকছিল মাটিতে।ছেলেরা ব্রেক নিয়ে দূরে গল্প করছে। এই বাবান এদিকে আয়,বলে ডাক দিল সঙ্ঘমিত্রা। চার পাঁচজন এগিয়ে এলো।
এবার হকি স্টিক দিয়ে দুটো বল অনায়াসে বার করল।সবাই ঝুঁকে পড়েছে মাটিতে।সঙ্ঘমিত্রা দেখালো, এই দেখো তোমরা, এখানে কোনো ঘাস নেই। সবুজ কার্পেট একদিকটা লাগানো আর একদিক খোলা।তোমরা যখন বল মারছ তখন এই সব জায়গায় নীচে ছোট গর্ত করা আছে যাতে বল গর্তে চলে যায় আর তোমরা ভয় পেয়ে এখানে না খেল।
-আমরা ভয় পাইনা আন্টি।
-তাই!! তাহলে চল আমরা আরো এমন কটা গর্ত আছে তা বার করি।
আন্টির কথায় কাজ হল, সব বাচ্চারা আরো পাঁচটা গর্ত খুঁজে বার করল বল পেল আরো পাঁচটা।
এবার সঙ্ঘমিত্রা বলল -মাঠের ধারে মাটি নিয়ে এসে চল আমরা গর্ত বুজে দেই কি বল তোমরা।
সবাই ছুটলো মাটি আনতে। গর্ত বোজানো হল।
এবার ছুটি চল এখন আমরা বাড়ি যাই।
সবাই খুব আনন্দ করছে আর বলছে -জিও আন্টি জিও।
রঞ্জিতা আগেই বাড়িতে ফিশ ফ্রাই আনিয়ে রেখেছিল।সবাই মিলে জমে গেল কফির সাথে।
বাইক নিয়ে যখন ও আর আশাদীপ বাড়ি ফিরল তখন প্রায় আটটা বাজতে যাচ্ছে।
___________________________________________________________________________
সুকন্যা ভট্টাচার্য্য
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন