রসগোল্লা ভূত
ইমরান খান রাজ
এক অজপাড়া গাঁয়ে বাস করতো এক বুড়ি। তাঁর তিন কুলে কেউ ছিল না। বহুবছর আগেই তাঁর স্বামী-সন্তান মারা গেছে। বুড়ির বয়সও প্রায় একশো ছুঁই ছুঁই। এই বয়সেও জঙ্গল থেকে লাকড়ি কুড়িয়ে আনা, খাবার-দাবার রান্না করা সবই পারে সে। তবে একা বসবাস করার কারণে খুবই কষ্টে দিন যাচ্ছিলো তাঁর।
একদিন বুড়ি জঙ্গল থেকে লাকড়ি নিয়ে বাসায় ফিরলো। সারাদিন জঙ্গলে অনেক পরিশ্রম করার কারণে সে খুব ক্লান্ত হয়ে পরে। তাই ক্লান্তিটা কাটানোর জন্য সে নিজের ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে কিছুক্ষণের জন্য শুয়ে পড়লো।
হঠাৎ দরজার ওপার থেকে টক টক আওয়াজ ভেসে এলো বুড়ির কানে৷ বিছানায় উঠে বসলো সে৷ সময়টা ঠিক ভরদুপুর। এই সময়ে বুড়ির বাড়িতে সচরাচর কেউ আসে না। তবে আজ হঠাৎ কে এলো ? বুড়ির মনে কৌতুহল হলো। কে দরজায় টোকা দিচ্ছে ? প্রশ্ন করতেই দরজার ওপার থেকে এক বিকট কণ্ঠে উত্তর এলো, আমি রসগোল্লা ভূত দরজাটা খুলে দাও।
রসগোল্লা ভূতের নাম শুনে তো ভয়ে বুড়ির চোখ কপালে উঠলো। ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বুড়ি আবার জিজ্ঞেস করলো আমার বাড়িতে কেন এসেছো ? কি চাও ? আমার তো দেবার মতন কিছুই নেই তোমাকে ! জবাবে রসগোল্লা ভূত বললো, আমি অনেক দূর থেকে এসেছি। আরো অনেক দূরে যেতে হবে। কিন্তু চলতে চলতে আমি খুব ক্লান্ত হয়ে পরেছি। তাই তোমার ঘরে আমি কিছুক্ষণ বিশ্রাম করতে চাই। তুমি যদি আমাকে বিশ্রাম করতে দাও তবে আমি তোমাকে একটা মূল্যবান পুরস্কার দেবো।
পুরস্কারে কথা শুনে বুড়ি দরজা খুলে দেয় ও রসগোল্লা ভূত'কে বিশ্রাম করার জন্য নিজের বিছানা ছেড়ে দেয়। বুড়ির বিছানায় শুয়েই এক গভীর নিদ্রায় মগ্ন হয়ে যায় রসগোল্লা ভূত। সে এতই ক্লান্ত ছিল যে, দুপুর গড়িয়ে বিকেল আর বিকেল গড়িয়ে রাত চলে এসেছে তবুও তাঁর ঘুম ভাঙছে না। তাই বুড়িও তাকে না ডেকে বারান্দায় চলে যায় ঘুমানোর জন্য।
পরদিন সকালে বুড়ির ঘুম ভাঙার পর সে ঘরে ঢুকে রসগোল্লা ভূত'কে ডেকে তুলে৷ লম্বা এক ঘুম দেবার পর সে আড়মোড়া দিয়ে ঘুম থেকে উঠে বুড়িকে ধন্যবাদ জানায়। পরে সে চলে যাবার সময় বুড়িকে একটা মাটির হাঁড়ি পুরস্কার হিসেবে দেয়। মাটির হাঁড়ি দেখে বুড়ি ভাবে, এটা তো সামান্য মাটির হাঁড়ি ! এটা কিভাবে মূল্যবান পুরস্কার হয় ! কিন্তু তারপর-ই রসগোল্লা ভূত বুড়ি'কে জানায় এটা সামান্য হাঁড়ি নয়। এটা এক যাদুর হাঁড়ি৷ রাতে এই হাঁড়ি ঢেকে রাখলে সকালে হাঁড়িটি মিষ্টি স্বাদের রসগোল্লায় পরিপূর্ণ হয়ে যাবে৷
যাদুর হাঁড়ির কথা শুনে বুড়ি খুব খুশি হয় এবং রসগোল্লা ভূত'কে ধন্যবাদ দেয়। তারপর রসগোল্লা ভূত বুড়ির কাছে বিদায় নিয়ে চলে যায়। বুড়ি তাকে আবার বেড়াতে আসতে বলে বিদায় নেয়। ঐদিন রাতে ঘুমাতে যাবার আগে, বুড়ি তাঁর যাদুর হাঁড়িটা একটা ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রাখে। পরদিন সকালে হাঁড়ির ঢাকনা খুলতেই দেখে হাঁড়িভর্তি রসালো সাদা রসগোল্লা। এক হাঁড়ি রসগোল্লা দেখে বুড়ি অনেক খুশি হয়। পরে সে প্রতিদিন তাঁর গ্রামের সকল বাড়িতে গিয়ে রসগোল্লা ভূতের দেওয়া রসালো রসগোল্লা বিক্রি করে ও অনেক টাকা উপর্জান করে। এভাবে সে সুখে শান্তিতে তাঁর বাকি জীবন কাটিয়ে দেয়।
_______________________________________________________________________________________
নামঃ ইমরান খান রাজ
শিক্ষার্থী, শেখ বোরহানউদ্দিন পোস্ট গ্রাজুয়েট কলেজ।
ঠিকানাঃ সাতভিটা, নারিশা, দোহার-ঢাকা ১৩৩২।
চিত্রঃ সোহম দত্ত
অষ্টম শ্রেণি
বর্ধমান সি.এম.এস হাইস্কুল
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন