Featured Post
জ্ঞান বিজ্ঞানের খবর ।। যে দ্বীপে বৃষ্টি হয় না ।। সবিতা বিশ্বাস
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
যে দ্বীপে বৃষ্টি হয় না
সবিতা বিশ্বাস
শিরোনাম শুনে নিশ্চয়ই মনে হচ্ছে, যাঃ তাই আবার হয় নাকি? কিন্তু এটাই সত্যি| রহস্যময় দ্বীপ বাল্ট্রা (Baltra), যাকে বৃষ্টি কখনোই ছুঁতে পারেনা| এই দ্বীপের অনেক উপর দিয়ে মেঘের দল উড়ে যায় অন্য কোনো দ্বীপে কিন্তু এই দ্বীপে এক ফোঁটাও বৃষ্টি পড়েনা কখনো| শুধু কি বৃষ্টি? প্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জের ছোট্ট এই দ্বীপে পাখি আসেনা গান শোনাতে, মাছেরা পাশ কাটিয়ে চলে যায় অন্য দ্বীপে| অভিশপ্ত, রহস্যময় এই দ্বীপের দিকে ফিরেও তাকায় না| এই দ্বীপের উপর দিয়ে উড়ে যাবার সময় বিমানের কম্পাস অদ্ভুত আচরণ করে, ভুল নির্দেশ দেয় কিন্তু দ্বীপটি পেরিয়ে গেলেই সব ঠিক হয়ে যায়|
বাল্ট্রা দ্বীপ (ছবিটি নেট থেকে সংগৃহীত)
দক্ষিণ আমেরিকার ইকুয়েডরের কাছে মোট তেরোটি দ্বীপ নিয়ে গঠিত গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জ| বাল্ট্রা দ্বীপটি গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জের কেন্দ্রে অবস্থিত ছোট সমতল একটা দ্বীপ| এই দ্বীপের অপর নাম ইসলা বাল্ট্রা| অনেকে এই দ্বীপকে দক্ষিন সিমুর (লর্ড হিউ সিমুর) নামেও ডাকে| এই দ্বীপের আজব সব ব্যাপার বিশ্ববাসীর সামনে আসে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন| যুদ্ধের কৌশলগত কারণে এই গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জের কয়েকটি দ্বীপে বিমানঘাঁটি স্থাপন করে মার্কিন সরকার| ফ্রান্সিস ওয়েগনার ছিলেন সেনাবাহিনীর একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার| কাজের সূত্রে তাঁকে গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জের বিভিন্ন দ্বীপে যাতায়াত করতে হত| দ্বীপগুলির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তাঁকে এতটাই মুগ্ধ করেছিল যে কাজের ফাঁকে সময় পেলেই তিনি নৌকা নিয়ে এক দ্বীপ থেকে আরেক দ্বীপে ঘুরে বেড়াতেন| তেমনই একদিন ঘুরতে ঘুরতে তিনি উপস্থিত হলেন বাল্ট্রা দ্বীপে| দ্বীপের কাছাকাছি আসতেই প্রথমেই তাঁর নজরে পড়ল দ্বীপটি একটা ন্যাড়া দ্বীপ| চারিদিকের দ্বীপগুলিতে এত সবুজের সমারোহ অথচ এই দ্বীপটিতে ছোট ছোট কাঁটাঝোপ ছাড়া কিছুই নেই|
নৌকো থেকে নেমে ওয়েগনার যাত্রা শুরু করলেন দ্বীপটির দিকে| কয়েক পা যেতেই শুরু হয়ে গেল ভুতুড়ে কান্ড| হাতে ধরে থাকা কম্পাসের কাঁটা ঘুরতে লাগলো বোঁ বোঁ করে, তারপরে হঠাত্ স্থির হয়ে গেল| দ্বীপের আরো একটু ভেতরে যেতে ওয়েগনেরের অস্বস্তি শুরু হল| মাথাটা যেন হঠাত্ই হালকা হয়ে গেল, মনে হল তিনি যেন অচেনা জগতে ভেসে বেড়াচ্ছেন, হারিয়ে যাচ্ছেন| বেশিক্ষণ এই দ্বীপে থাকার সাহস হয়নি তাঁর, ফিরে এসেছিলেন সেনা ছাউনিতে| ফিরে আসার পর বেশ কিছুদিন এই ভাব ছিল, পরে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়|
বাল্ট্রা দ্বীপের কথা বিশ্ববাসী জানতে পারে ওয়েগনেরের কাছ থেকে| বিজ্ঞানীরা এলেন এর সত্যতা যাচাই করতে| তারাও অবাক হয়ে দেখলেন দক্ষিণ আমেরিকার ইকুয়েডরের নিকটবর্তী গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে প্রচুর বৃষ্টিপাত হলেও এক ফোঁটা বৃষ্টি হয়না এই দ্বীপে| পাখিরা উড়ে যেতে যেতে হঠাত্ই দিক পরিবর্তন করে, দেখে মনে হয় ওরা ধাক্কা খেয়েছে বাল্ট্রা দ্বীপের দেওয়ালে| দানবীয় কচ্ছপ, গিরগিটি, ইগুয়ানা কেউ কখনো ভুল করেও এই দ্বীপের পথ মাড়ায় না| এখানে আগুন জ্বালালে ধোঁয়া কুন্ডলী পাকিয়ে আকাশে উঠতে থাকে| বিজ্ঞানীরা অবিশ্বাস্য ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেছেন এই দ্বীপে একটি শক্তিশালী ম্যাগনেটিক ঘূর্ণিপাক কাজ করছে|
জনবসতিহীন এই দ্বীপটিকে মৃত দ্বীপ বলেন কেউ কেউ| তবে জনশ্রুতি কয়েকশো বছর আগে এখানে জনবসতি ছিল| কিন্তু হঠাত্ কোনো অজানা রোগে মানুষজন মারা যেতে লোকজন পালিয়ে যেতে শুরু করে| একসময় পুরো দ্বীপটি অভিশপ্ত দ্বীপে পরিণত হয়|
মানুষ রহস্য ভালবাসে, সেই রহস্যের অনুসন্ধানে মানুষ বারে বারে ছুটে গেছে এই দ্বীপে| বর্তমানে বাল্ট্রা দ্বীপে বছরে গড়ে দুই লক্ষ পর্যটক ঘুরতে আসে| এখানে ১৯৮৬ সালে তৈরী হয় একটি বিমানবন্দর (Seymour Airport). ২০১১ সালে বিমানবন্দরটি আধুনিকীকরণের কাজে হাত দেওয়া হয়| এই কাজ সম্পূর্ণ হয় ২০১৩ সালে| রাতে থাকার জন্য কয়েকটি হোটেল আছে| বিজ্ঞানীরা বৃষ্টি নামাতে না পারলেও পর্যটক আনতে পেরেছেন মৃত দ্বীপে| তাই একে আর অভিশপ্ত দ্বীপ বলা যায়না, এটি এখন কর্মচঞ্চল দ্বীপ|
তথ্যসূত্র—১) রহস্যময় বাল্ট্রা দ্বীপ – কমলবিকাশ বন্দ্যোপাধ্যায়
২) বাল্ট্রা দ্বীপ: গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জের রহস্যময় দ্বীপ – Rubaida Aktar
৩) বাল্ট্রাদ্বীপের অজানা রহস্য—উইকিপিডিয়া
______________________________________________________________
Sabita Ray Biswas
Flat - 3k Block -4,
Shankar Tower,
33 Sukanta Sarani, Italgachha
Kolkata 700079
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন