Featured Post

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় ৪৫ ।।আগস্ট, ২০২৫

ছবি
সম্পাদকীয় প্রিয় বন্ধুরা, আবার এল আগস্ট মাস। ছাতা মাথায় বৃষ্টি ভেজা দিন, স্কুলে দেরি, আর খেলার মাঠে কাদামাটি—সব মিলিয়ে একেবারে অ্যাডভেঞ্চারের মরশুম! তবে আগস্ট মানে শুধু বৃষ্টির দুষ্টুমি নয়, স্বাধীনতারও মাস। ভাবো তো, যদি আমাদের দেশ স্বাধীন না হতো, তবে কি আজ আমরা এত মজা করে খেলাধুলা, গান, পড়াশোনা করতে পারতাম? স্বাধীনতা মানেই সুযোগ—যে সুযোগ দিয়ে তোমরা নিজেদের স্বপ্ন গড়ে তুলতে পারো। কিন্তু সেই স্বাধীনতার পথে কত আত্মত্যাগ, কত রক্ত, কত অশ্রু লুকিয়ে আছে—তা ভোলা যায় না। আজকের কিশোররা যদি সেই ত্যাগের ইতিহাস মনে রাখে, তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কখনো পথ হারাবে না। তোমাদের হাতে আজকের কলমই আগামী দিনের অস্ত্র—যা দিয়ে গড়ে উঠবে বিজ্ঞান, সাহিত্য, শিল্প আর মানবিকতার এক নতুন পৃথিবী।  এই সংখ্যায় পাবে ভ্রমণের উপন্যাস, নিবন্ধ, গল্প  আর তোমাদের জন্য লেখা দারুণ সব ছড়া আর কবিতা। পড়ে দেখো, আর তোমাদেরও লেখা বা আঁকা আমাদের পাঠিয়ে দিও—আগামী সংখ্যায় প্রকাশের জন্য।   সকলে ভালো থেকো, আনন্দে থেকো।       শুভকামনাসহ-- প্রিয়ব্রত দত্ত ও কার্তিক চন্দ্র পাল। কার্যনির...

কিশোর ভ্রমণ উপন্যাস ।। তিতলির বিশ্বভ্রমণ ।। ডাঃ অরুণ চট্টোপাধ্যায়

 world-tour

ছোটদের ভ্রমণ উপন্যাস

তিতলির বিশ্বভ্রমণ 

দ্বিতীয় পর্ব : আমাদের ভারত 

ডাঃ অরুণ চট্টোপাধ্যায়

এক

হাতিদাদার প্রস্তাব

নতুন বছরে নতুন ক্লাসে উঠল তিতলি আর পুচকি। নতুন ক্লাস, নতুন বই আর নতুন হৈ হৈ তাদের দারুণ লাগছিল। এর মধ্যে হাতিদাদা, রাইনোদাদা, কাজলনয়না, বাঘুমামা, টিয়ারাণী সকলের কথা তারা কেউ ভোলে নি। ভুলবে কি করে? দাদু কি আর তার নাতনিদের ভুলতে দেয়? সে তো প্রায় একটা না একটা গল্প পাঠিয়ে দেয়।

হাতিদাদা, রাইনোদাদা এদের সঙ্গে প্রায়ই দেখা হয় দুই বোনের। আপ্পুও মাঝে মাঝে মাঝে ঘোরে তার বাবার সঙ্গে। মা অত বেশী ঘুরতে পারে না। বনে ঘুরতে ঘুরতে একটা বেশ বড় সড় কাঁটা তার পায়ে বিঁধেছিল। চলতে আর পারে না। সেখানেই শুয়ে পড়েছিল। আপ্পুর তখন কী দুঃখ। আহা বাবা মা আর সে এই তিনজনে বেশ ঘুরত। বেশ মজা হত। সঙ্গে আরও অনেক হাতি থাকত। আবার কখনও বা থাকত না। কিন্তু বেশ ছিল জীবনটা।

এখন বেচারি একা একা ঘোরে বাবা মানে তিতলিদের হাতিদাদার সঙ্গে। বাবার মনেও খুব দুঃখ। তাই দলের সঙ্গে আর ঘুরতে চায় না। আপ্পুকে নিয়ে জঙ্গলে খাওয়া দাওয়া করে দুজনে মায়ের জন্যে পিঠে বয়ে নিয়ে আসে। কখনও বড় বড় কলাগাছ। কখনও কলার কাঁদি আবার কখনও টাটকা তাজা ঘাসের রাজা সবুজ ঘাসের বড় বড় আঁটি।

এই সেদিন দেখা হয়ে গেল এই দুই বোনের সঙ্গে। আপ্পুকে দেখে পুচকি দৌড়ে গেল সেদিকে। আর হাতিদাদার দিকে গেল তিতলি। কিন্তু ওদের বড় মন খারাপ বেশ বোঝা যাচ্ছে। আপ্পুর চোখ দিয়ে আবার জল গড়াচ্ছে।

আপ্পুকে পুচকি জিজ্ঞেস করল, আপ্পুসোনা কাঁদছ কেন কী হয়েছে গো তোমার?

আপ্পু আর কি বলবে। ঘাস খাওয়া বন্ধ করে মাটি থেকে মুখ তুলে শুধু কাঁদতেই থাকে। পুচকি ভাবল ইস একটা নদী না বয়ে যায়। শুঁড়ে হাত বোলাতে বোলাতে বলতে লাগল, আপ্পুসোনা কাঁদে না। আমরা সব ঠিক করে দেব। আমরা দুজনে না পারি গল্পদাদুকে খবর দিলেই সে এসে হাজির হবে এখানে। গল্পদাদুর ঝুলিতে শুধু গল্প নয়, সমাধানও থাকে বিস্তর। 

তিতলিকে শুঁড়ে করে নিজের পিঠে তুলে নিল হাতিদাদা। আর আপ্পুসোনার পিঠে আলতো করে উঠে বসল পুচকি। সে আবার আপ্পুর পিঠে বসতেই বেশ পছন্দ করে। সেই বনের মধ্যে দিয়ে তারা ধীরে ধীরে চলতে লাগল। তিতলির শুধু মনে হতে লাগল হাতিদাদা কখন নীরবতা ভেঙ্গে বলবে আসল কথা। আর যে ধৈর্য ধরে না।

যেতে যেতে সব বলল হাতিদাদা। তিতলি বলল, আরে ছোঃ। তুমি এর জন্যে ভাবছ? আমাদের দাদুর ঝুলিতে সব সময় একটা করে সাঁড়াশি থাকে। দাদুকে বললেই দাদু কাঁটা বার করে দেবে।

পুচকি বলল, আমি বাড়ী থেকে ভাল মলম নিয়ে আসব। বেশ করে মাখিয়ে দিলেই ব্যথা সব চলে যাবে।

অতএব সেদিন দুজনকে বনের মুখ পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে গেল হাতিদাদা আর আপ্পু। আসার সময় পুচকি দেখল আপ্পুর চোখের জল থেমে গেছে। সেও বেশ খুশি মনে বাড়ী ফিরতে পারল।

পরের দিন দাদু গিয়ে হাতিনীর পায়ের সেই কাঁটা বার করে মলম লাগিয়ে দিলহাতিনী মানে আপ্পুর মা  তো খুব খুশি দাদুর ওপর। বলল, আমার যে কি ভাল লাগছে কি বলব দাদু। কি আর দিই আমাদের তো এই ফলমূল ছাড়া আর তো কিছু নেই দাদু। তা নাহয় এক কাঁদি কলাই খাও।

বেশ পাকা পাকা পুরুষ্টু কলা। কি মিষ্টি। কাছেই একটা বাগানে হয়। মাঝে মাঝেই হাতি আর হাতিনী গাছ থেকে পেড়ে খেয়ে আবার নিয়ে আসে। কে জানে রাত দুপুরে যদি খিদে পেয়ে যায় তো আবার কি জঙ্গলে যাবে নাকি?

হাতিদাদাই বলল, তাহলে স্কুলে তো গরমের ছুটি পড়ল। এবার আবার বিশ্বভ্রমণে বেরোন যাক নাকি বল গো দাদু?

তিতলি আর পুচকি তো দু’হাত তুলে নাচতে লাগল। আপ্পু বায়না ধরল সেও যাবে। হাতিদাদা ধমকে বলল, না তুমি এখনও বাচ্চা। তুমি থাকবে মায়ের কাছে। দুষ্টুমী একদম করবে না। 

দাদু একটু ভেবে বলল, হ্যাঁ তা যাওয়া যেতে পারে।

হাতিদাদা বলল, আমার দেশ কেরলে যাচ্ছ তো দাদু আগে?

দাদু হাসল, তা তোমার দেশে তো যেতেই হবে কিন্তু তার আগে আমাদের তো বাঘুভাগ্নার কথাটা ভাবতে হবে?

সবাই তো অবাক। সোদরবনের বাঘুমামা আবার কি বললএকমাত্র তিতলিই মুখ টিপে হেসে বলল, আমি কিন্তু জানি।

পুচকি বলল, কি জানিস রে দিদি?

--ওই যে বাঘুমামা বলল না নন্দন কাননে তার এক বোন মানে আমাদের এক পিসি থাকে? বাঘুপিসি? একেবারে গুলে মেরে দিয়েছিস নাকি রে পুচু?

পুচকি একটু লজ্জা পেয়ে মুখ লুকোল। হাতিদাদা বলল, তা নাহয় তাই চল। নন্দন কানন হয়েই কেরালা যাওয়া যাবে।

দাদু একটু মুচকি হেসে বলল, সে বড় কম কম্ম নয় হাতিভাই। এ তো আর ডিমাপুর থেকে সোদরবন নয়। এ যে সেই দক্ষিণের কেরল। তাও আবার উড়িষ্যার নন্দন কানন হয়ে। পৌঁছতে কতদিন লাগবে জান? তাছাড়া সব জায়গায় তো রাস্তাও নেই তোমার চলার মত। খাওয়ার মত কলার কাঁদি বা কলাগাছ কি আর পাওয়া যাবে সর্বত্র?

মুখ চুন হয়ে গেল হাতিদাদার। সঙ্গে তিতলি-পুচকিরও। এই রে যাওয়া কি তবে হবে না? নাকি পৌঁছতে পৌঁছতেই ছুটি শেষ হয়ে যাবে? কিন্তু দাদুর ঝোলায় নাকি অনেক জিনিস থাকে। অনেক গল্পের মত অনেক সমাধান। মুচকি হেসে বলল, হাতিভাই, যদি পিঠে দুটো ডানা পাও তবে কেমন হবে? উড়ে উড়ে যেতে আপত্তি আছে নাকি?

আপত্তি? আপত্তি করবে হাতিদাদা? বলে উড়ে উড়ে যেতে কত সময় কম লাগবে তাছাড়া কত পরিশ্রম বাঁচবে। আর তাতে কি মজা। পাখিদের তো দেখেছে। মেওন মজায় ডানা মেলে ওড়াউড়ি করছে দিব্বি। কিন্তু কে দেবে এমন ডানা? মন্ত্র জানা আছে নাকি দাদুর?

হ্যাঁ আছেই তো জানা। দাদু হেসে বলল। দাদুকে তার এক গুরু নাকি একটা মন্ত্র দিয়েছে। সেই মন্ত্র মনে মনে জপে দাদু যা আঁকবে সেটা জীবন্ত হয়ে উঠবে। পুচকি আর তিতলির তো চোখ কপালে উঠল।

--দাদু তুমি যা আঁকবে তাই জীবন হয়ে উঠবে? মানে সত্যি?

পুচকি বলল, দাদু তুমি যদি কাটলেট কি এগরোল এঁকে দাও তো—

দাদু বলল, না না ওসব নয়। টাকাকড়ি বা খাবার দাবার নয়। খুব দরকারি কোনও জিনিস। তাও যখন সেই জিনিসটা সত্যিকারের খুব দরকার হবে তবেই চেয়ে নিয়ে ফেলে রাখলে হবে না। ব্যবহার করতে হবে।

মাথামুন্ডু কিছুই বুঝল না দুই বোন। হাতিদাদার মাথা আর মুন্ডু দুইই ঘুরে গেল তবু সে কিছু বুঝল না। সে শুধু দুই বোন আর দাদুকে পৌঁছে দিয়ে গেল বনের সীমানায়। দুই বোনকে তাদের বাড়ী দিয়ে এসে দাদু চলে গেল নিজের ঠিকানায়।  

তার আগে অবশ্য যাত্রার দিন নির্ধারিত হল। সব প্রস্তুতি নিয়ে বনের এই সীমানায় অপেক্ষা করবে দাদু আর তার দুই নাতনি। হাতিদাদা তো সবাইকে পিঠে নিয়ে যাবে। কিন্তু এতদূর যে পা ব্যথা করবে। দাদুর ঝোলায় কিসের চমক অপেক্ষা করছে এখন সেটাই শুধু দেখার।

দুই

হাতি হল পক্ষীরাজ

নির্দিষ্ট দিনে সবাই এসেছে। হাতিদাদাও। শুঁড়ে করে করে সে সব জিনিস তার পিঠে তুলে নিয়েছে। তারপর চোখ বড় বড় করে দাদুর দিকে তাকিয়েছে।

দাদু ঝোলা থেকে বার করেছে একটা আঁকার খাতা। বার করেছে তার স্কেচ পেন। তারপরই খ্যাচ খ্যাচ করে আঁকছে একটা ছবি। যে আঁকা নাকি বিশেষ এক পরিস্থিতিতে জীবন্ত হয়ে যায়। কিন্তু কী এমন সেই আঁকা? কৌতূহলী দুই বোন ঝুঁকে পড়ল সেই আঁকার দিকে। আরে বাহ। এ যে তার হাতিদাদার ছবি। কিন্তু পিঠে ও দুটো কী?

দাদু ঝট করে ছিঁড়ে ফেলল পাতাটা। মানে সেই হাতিদাদার পিঠের দুই দিকে দুটো ডানাওয়ালা হাতিদাদার ছবি। হাতিদাদার দুই চোখের মাঝে ধরে বলল, হাতিদাদা, বেশ মন দিয়ে লক্ষ কর তো ছবিটা। একদম অন্যমনা হবে না কিন্তু।

তা দাদুর নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছে হাতিদাদা। আর মাত্র দু দুটো মিনিট পরেই ঘটল সেই অসম্ভবটা। হাতিদাদার পিঠের দুই প্রান্তে গজিয়ে উঠল দুটো ডানা। তারা নড়তে শুরু করেছে। মানে উড়তে প্রস্তুত।

হাঁটু মুড়ে বসল হাতিদাদা। সবাই উঠে বসল তার পিঠে। ঠিকঠাক সাজিয়ে নেওয়া হল সব জিনিস পত্তর। খাবার দাবার জামা কাপড় আর জলের বোতল এই সব। দাদু এই সময় একটা কাজের মত কাজ করেছে। একটা সোলার ওয়াটার ট্রিটমেন্ট বোতল বানিয়ে ফেলেছে। মানে খারাপ জল থেকে পরিষ্কার জল পাওয়ার একটা বোতল। পথেঘাটে, জলে-জঙ্গলে সর্বদা কি আর ভাল খাবার জল পাওয়া যায়? কিন্তু জল খারাপ খেলে সঙ্গে সঙ্গে অসুখ করে যায়। তাই দাদুর এই ব্যবস্থা। এতে বিদ্যুৎ বা ব্যাটারি কিছুই লাগে না। চলে সৌরবিদ্যুতে। মানে সূর্যের আলোয়। 

সব দেখে নেওয়া হলদাদুর দিকে তাকাল তিতলি। সেই তো একেবারে সামনে বসে আছে। দাদু ইঙ্গিতে বললেন, সব ঠিক আছে। তিতলি হাতিদাদার মাথায় হালকা হাতের ছোঁয়া রাখল। হাতিদাদা বুঝল এবার যাত্রা করতে হবে শুরু। তবু দাদুই তো এই যাত্রার অভিভাবক। তাই সে শুঁড় ঠেকিয়ে দিল দাদুর গায়ে। দাদু সে শুঁড়ে হাত ছুঁইয়ে অনুমতি দিয়ে দিল।

জঙ্গলের এইখান বেশ চওড়া মাঠের মত। হাতিদাদা হাঁটতে শুরু করল। তিতলিরা ভাবল তাহলে আর দাদু এত কষ্ট করে ডানাদুটো আঁকল কেন? দাদুর দিকে তাকাল সে। দাদু সামনে দিকে তাকিয়ে শুধু মুচকি মুচকি হাসছে।

হাতিদাদা এবার বেশ জোরে হাঁটছে। তারপর ছুটছে। পুচকি ফিসফিস করে তিতলির কানে কানে বলল, হাতিদাদা কি তবে ছুটে ছুটেই যাবে নাকি রে দিদি?

তিতলিও ফিসফিস করে বলল, বুঝেছি বুঝেছি কিভাবে যাবে।

--বল না দিদি কি করে যাবে?

--একটু পরেই দেখতে পাবি। এখন চুপ করে বস তো।

একটুঁ পরেই অবশ্য জানা গেল ব্যাপারটা। যত জোরে দৌড়চ্ছে হাতিদাদা তত জোরে নড়ছে তার ডানাদুটো। তারপর এক সময় এই যা হুস। মানে মাটি ছেড়ে আকাশে উড়ে গেল হাতিদাদা। কি সুন্দর কি মজার। দুই বোন একেবারে আত্মহারা।

-হুর রে! সবাই একেবারে আনন্দে কলরব করে উঠল। তিতলি আর পুচকি হাততালি দিয়ে নেচে উঠল। পাশের বাড়ির কাকিমার মিউরাণী মিয়াও মিয়াও করে উঠল। রাস্তার ওপাশে ঘৌদাদা কোথা থেকে তার একপাল বন্ধু জুটিয়ে ঘৌ ঘৌ করে আনন্দে চেঁচিয়ে উঠল। কাকেরা কা কা করে গেয়ে উঠল। হাওয়া বইতে লাগল আনন্দে। সব গাছের পাতাগুলো সর সর করে মাথা নাড়াতে লাগল। আশপাশের পুকুরের জলে ঢেউ উঠে গেল। কেউ এমন মজার আর এমন সুন্দর আজব দৃশ্য দেখে নি।

দাদু হেসে বলল, ব্যাপারটা বুঝেছিস দিদিভাই?

পুচকি চুপ করে থাকে। তার মাথায় এখনও কিছু ঢোকে নি। তিতলি বলল, বুঝেছি দাদু। এরোপ্লেন ঠিক এই রকম করেই ওড়ে তাই না? রানওয়ে দিয়ে খানিকটা গড়িয়ে তারপর দৌড়ে আর সব শেষে উড়ে। তার মানে আমাদের হাতিদাদা এখন একটা এরোপ্লেন।

দাদুর মাথা নড়ে উঠল, ঠিক ঠিক।

তিন

নন্দন কানন

এখন ঠিক জঙ্গলের মাথায় তারা। নীচে সমস্ত বনটা মিলিয়ে যেন একটা শুধু ঝোপের মত লাগছে। প্রচন্ড গরমেও কি সুন্দর ঠান্ডা হাওয়া বইছে। নীল আকাশে সাদা মেঘের মেলা। তিতলি তখন বোনকে বোঝাচ্ছে কেমন করে এরোপ্লেন ওড়ে। কিন্তু হাতিদাদা যে এরোপ্লেন হতে পারে এটা কিছুতেই বোঝান যাচ্ছে না পুচকিকে।

--এটা কি তবে এরোপ্লেন? এরোপ্লেন কি তবে ফাঁকা হয়? সে তো দরজা বন্ধ হয়ে যায়। ভেতরে কী ঝকঝকে গদি আঁটা সীট।

পুচকির কথায় মুচকি হেসে দাদু বলল, এটা এরোপ্লেন নয়। এটা পক্ষীরাজ।

নীচে দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে কত কিছু। এত ওপরে তারা উঠে গেছে যে কিছুই স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে না। এমন সময় তারা মেঘের ভেতর ঢুকে পড়ল। তারপর আবার বেরিয়েও এল। নীচে দিয়ে পাহাড়গুলোকে সব ঢিবির মত আর নদীগুলোকে সরু নর্দমার মত লাগছে। তিতলি আর পুচকি হাততালি দিয়ে উঠল।

দাদুর হাতে একটা যন্ত্র। দাদু বলেছে এই যন্ত্র আসলে একটা ম্যাপ। যে কোনও জায়গার অক্ষাংশ আর দ্রাঘিমাংশ হচ্ছে সেই জায়গাটার ভৌগোলিক অবস্থান।

-অক্ষাংশ কি দাদু? তিতলির প্রশ্ন।

-দ্রাঘিমাংশটাই বা কি? পুচকি প্রশ্নটা করে বসল তড়াক করে।

দাদু বলল, পরে বড় হয়ে ভূগোলে তোমরা ভাল করে পড়বে। এখন শুধু বলে রাখি তোমরা গ্লোব দেখেছ?

দুজনেই সমস্বরে বলে উঠল, হ্যাঁ হ্যাঁ আমরা দেখেছি।

-এই গ্লোবে পশ্চিম থেকে পূর্বে যে কতগুলি লম্বা লম্বা রেখা টানা থাকে সেগুলোকে বলে অক্ষাংশ আর উত্তর থেকে দক্ষিণে সে কতগুলো লম্বা লম্বা রেখা টানা থাকে তাদের বলে দ্রাঘিমাংশ। কোনও একটা জায়গার একটা নির্দিষ্ট অক্ষাংশ আর নির্দিষ্ট দ্রাঘিমাংশ থাকে। নন্দনেরও তাই। এই যন্ত্র প্রতি মুহূর্তে বলে দিচ্ছে যে জায়গার মাথার ওপর দিয়ে আমরা চলেছি তার অক্ষাংশ আর দ্রাঘিমাংশ কত।

তিতলি ঘাড় নেড়ে বলল, ঠিক ঠিক। মানে রাস্তার ম্যাপের মত তাই তো দাদু?

দাদু তার পিঠে হাত রেখে আদরের স্পর্শ করে বলল, একেবারে ঠিক বুঝেছ দিদি।

হাতিদাদার মাথাতেও একটা যন্ত্র বসিয়ে রেখেছে দাদু। তার হাতের রিমোটের সাহায্যে সেই যন্ত্রে সে নির্দেশ দিয়ে হাতিদাদার মুখ ঘুরিয়ে সেদিকে চালিত করছে। পুচকি মজা পেয়ে জিজ্ঞেস করেছে এটা কি এরোপ্লেনের স্টিয়ারিং দাদু?

তিতলি হেসে উঠেছে হো হো করে, এরোপ্লেনের কি স্টিয়ারিং থাকে পুচু?

দাদু বলল, থাকে থাকে তিতলি দিদিভাই। তাতে করে যাওয়ার দিক পালটায় সে।

নদীনালা, ঘরবাড়ি, বনজঙ্গল কত কিছু পেরিয়ে এবার চলে এল সমুদ্র। চারিপাশে শুধু জল। দাদু বলল, এবার আমরা পুরীতে এসে পৌঁছেছি। কিন্তু এখানে আমাদের নামা হবে না।

পুচকি আর তিতলি দুজনেই সমস্বরে বলে উঠল, কেন দাদু?

দাদু বলল, আমাদের সামনে এখন বিরাট এক পথ। বিশ্বভ্রমণে বেরিয়েছি আমরা। আর এই তো তার শুরু। তাছাড়া পুরীতে তো তোমরা কতবার এসেছ বল? পুরীর সব কিছুই তোমরা দেখেছ।

তিতলি বলল, আমরা নন্দনে যাব তাই না দাদু?

পুচকি কিছুতেই মানবে না। মুখ ভার করে বলল, সে তো পুরী বেড়াবার সময় নন্দনেও এসেছি কতবার।

দাদু বলল, তা দেখেছ। কিন্তু তোমার বাঘুমামার বোন তোমার বাঘুমাসির সঙ্গে কথা বলতে পেরেছ কি বল?

না না তা নয়। তেমন হলে তো মন্দ হয় না। পুচকি আনন্দে মনে মনে লাফিয়ে উঠল।

দেখতে দেখতে তারা আর সমুদ্র দেখতে পেল না। পক্ষীরাজ হাতিদাদা তখন অনেক নীচে নেমে এসেছে। দূর থেকে দেখা যাচ্ছে বেশ বড় একটা গেট। হাতের যন্ত্র দেখে দাদু বলল, এই দেখ আমরা নন্দন কাননে এসে পড়েছি।

হাতিদাদা বলল, আমরা পেছন দিয়ে ঢুকব। নাহলে লোকে আমাদের বিরক্ত করতে পারেবুঝতেই তো পারছ আমার পিঠে গল্পদাদুর কৃপায় তৈরি করা ডানা। লোকে এমন অদ্ভুত জিনিস একালে কেউ দেখে নি। তারা সব হুমড়ি খেয়ে পড়বে আর তোমাদের আসল কাজে ব্যাঘাত ঘটবে।

পুচকি তো পড়ল মহা চিন্তায়, তবে উপায় কী রে দিদি?

তিতলি দেখল মামা মুচকি মুচকি হাসছে। সে অভয় দিয়ে বোনকে বলল, তুই থাম তো বোন। হাতিদাদাই যা করার করবে। তার ওপর ভরসা রাখ।

হাতিদাদা বলল, আমি বাইরে একটা ঝোপের কাছে নামছি। তোমাদের নামিয়ে দিয়ে সেখানে আমি ঘাপটি মেরে থাকব। তোমরা সামনে দিয়ে দর্শক সেজে টিকিট কেটে ঢুক করে ঢুকে পড়বে কাজ সেরে তোমরা এখানে চলে আসবে। তারপর আমিও চলে যাব উড়ে জব্বর ডানাদুটো তুমি আমায় দিয়েছিলে বটে দাদু। যুগ যুগ জিয়ো। 

তাই হল। সামনে দিয়ে টিকিট কেটে ঢুকে পড়ল সবাই। নানা রকম পাখী, কত পশু। এদের অনেককেই কলকাতার চিঁড়িয়াখানায় দেখেছে তিতলিরা। একেবারে এক কোণে এক বাঘিনী চুপ করে শুয়ে ছিল। সবাই বলাবলি করছে, কেন সে শুয়ে। দর্শকেরা নানা ভাবে চেষ্টা করছে যাতে সে দর্শকদের সামনে আসে।

পুচকি বলল, দেখ দিদি, বাঘটার মনে হয় মন খারাপ। তাই কিছু খায়ও নি।

তিতলি বলল, হ্যাঁ তাই তো। আহা রে বেচারা। আর দাদু দর্শকগুলো কী বিরক্ত করছে দেখ।

দাদু বলল, বাঘ নয় বাঘিনী।

তিতলির মাথায় অমনি কী যেন চিড়িক দিয়ে উঠল। চুপ করে কী ভাবছে। মাথায় যেন কিসের এক চিন্তা। শেষে ঝট করে বলে বসল, দাদু এ সেই বাঘুপিসি নয় তো গো?

পুচকিও বলে উঠল, হতে পারে দাদু হতে পারে।

দাদু মুচকি হেসে বলল, সে আমি অনেক আগেই বুঝতে পেরেছি। আমার হাতের এই যন্ত্র দিয়ে আমি সিগন্যাল পাঠিয়ে বুঝেছি অনেক আগে। তোদের বাঘুপিসিও সিগন্যাল পেয়ে আমাকে আবার ফিরিয়ে দিয়েছে। ঐ দেখ আমাদের ওদিকে যেতে বলছে।

সবাই একটু ওদিকে গেল। এদিকে দর্শকদের ভীড় একটু কম। বাঘুপিসি অতিকষ্টে মাথা তুলে কি বলছে তাদের। দাদু দুই বোনকে ছোট্ট ছোট্ট দুটো যন্ত্র দিয়ে বলল, এই দিয়ে তোরা কথা বল। তাহলে আর আমাদের কথা অন্য কেউ শুনতে পাবে না। শুনলেও বুঝতে পারবে না।

ওরা সবাই শুনল বাঘুপিসি বলছে, আমার দাদার খবর পাইনি বলে এতদিন আমি কিছু খাই নি। ভাগ্যি তোমরা খবর এনে দিলে। তোমাদের অনেক ভালবাসা বাছারা।

পুচকি বলল, বাঘুপিসি তোমাকে দেখতেই আমরা এসেছি।

তিতলি বলল, হ্যাঁ শুধু তোমাকে দেখতেই। নাহলে আমাদের তো হাতিদাদার দেশ কেরল চলে যাওয়ার কথা ছিল। কেরল দেখে আমরা বিশ্বভ্রমণে যাব।

বাঘুপিসি তো খুব খুশি। বলল, সত্যি রে আমার ভাইঝিরা। সব মানুষ খারাপ হয় না। কিছু মানুষ তোদের মত ভালও আছে।

পুচকি প্রায় লাফিয়ে বলে উঠল, আমরা ভাল আর হাতিদাদাও খুব ভাল।

পুচকি সমান তালে বলে উঠল, আর হবে নাই বা কেন? আমাদের দাদু কত ভাল তা তো দেখতে হবে? আমরা সবাই তার সঙ্গে আছি কিনা।

তারপর বাঘুপিসির তো অনেক কথা হল। বাঘুপিসি খুব দুর্বল শরীরে উঠে এল খাঁচার কাছে। পুচকি আর তিতলি তার গায়ে হাত বুলিয়ে দিতে গেল। কিন্তু দাদু বারণ করল। বলল, তাহলে অন্যরাও হাত দিতে যাবে। খুব বিপজ্জনক ব্যাপার হবে।

তিতলি বলল, ও বাঘুপিসি অনেকদিন তো কিছু খাও নি। এবার তো তোমার দাদার খবর পেয়ে গেলে। এবার খেয়ে নাও।

পুচকি বলল, হ্যাঁ গো পিসি। এবার খেয়ে নাও।

বাঘুপিসি এবার তার খাবারের জায়গায় দেওয়া খাবার খেতে লাগল। সবাই ছুটে এল হৈ হৈ করে। বলল, দেখ দেখ বাঘটা উঠে বসেছে।

চিঁড়িয়াখানার এক কর্মচারী তো অবাক। বলল, এতদিন ধরে এত সাধ্যসাধনা তবু খাওয়ানো যায় নি। আজ কি এমন ঘটল রে বাবা। কি জানি কোন মন্ত্রে এমন হল।

পুচকি কী বলতে গেল। তিতলি হাত দিয়ে তার মুখ চেপে ধরে বলল, খবরদার পুচু। তুই বললেও কেউ বিশ্বাস করবে না। চেপে যা।

দাদু মনে মনে ভাবল মেয়েটার বেশ বুদ্ধি আছে। কিছু বলল না। শুধু মুচকি মুচকি হাসতে লাগল।    

চার

কেরলের পথে

এবার তারা চলেছে কেরলের পথে। হাতি চলল ডানা মেলে উড়ে। এদিকে হয়েছে কী উড়িষ্যা, অন্ধ্র, তামিলনাড়ু ছেড়ে কেরলের দিকে যাবার সময়ই রাডারের নজরে এল তারা। কোচিন এয়ারপোর্টের এ-টি-সি মানে এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোলার তো হাঁ। এটা কী উড়ছে রে বাবা ছোট্ট পোকার মত? ড্রোন বলেও তো মনে হচ্ছে না। তার থেকেও আকারে বেশ বড়। তিতলিরা শুনেছে ড্রোন হল খুব ছোট মাপের পাখাওলা প্লেনের মত। দূর থেকে লাগে পোকার মত। খুব নীচু দিয়ে ওড়ে। আর এতে কোনও মানুষ থাকে না। এর ভেতর ক্যামেরা থাকে আর তাতে ছবি তোলা হয়।

এ-টি-সি হল আমাদের রাস্তায় ট্র্যাফিক পুলিশের মত। মানে আকাশের ট্র্যাফিক পুলিশ। রাস্তায় যেমন গাড়ীর ভীড় হয় তেমনি আকাশেও হয় উড়োজাহাজের ভীড়। রোজ কত কত উড়োজাহাজ আকাশ দিয়ে বিভিন্ন দেশে তো বটেই এমন কী আমাদের দেশেরও বিভিন্ন শহরে যাচ্ছে।  দাদুর মুখে এটা শুনে তো দুই বোন খুব অবাক। তিতলি বলল, আকাশেও ভীড় দাদু? সেখানেও ট্র্যাফিক জ্যাম হয়? কেন ওপর নীচ করে পাশ কাটিয়ে নিয়ে যেতে পারে না।

দাদু বলল, প্রথম দিকটায় হয়ত তাই হত। কিন্তু ক্রমশ উড়োজাহাজ বাড়তে লাগল। খুব ভীড় হতে লাগল আকাশে। শেষে যদি সত্যি সত্যি ধাক্কাধাক্কি হয় তো আগুন জ্বলে প্লেনগুলো সব ছাই হয়ে যাবে। কত মানুষ মারা যাবে। তাই এই ব্যবস্থা। যেমন রাস্তায় ট্র্যাফিক পুলিশ কাউকে দাঁড় করিয়ে আর কাউকে যেতে দেয় তেমনি এ-টিসি। সে ছাড়পত্র না দিলে কোনও বিমান কোনওদিকে যেতে পারবে না। এমন কী বিমান বন্দর থেকে উড়তে বা সেখানে নামতেও পারবে না।

পুচকি চিবুকে আঙ্গুল দিয়ে একমনে সব শুনছিল। তারপর বলল, দাদু কত জানে বল দিদি তাই না?

তিতলি অমনি বলে উঠল, জানবেই তো। জানিস দাদু আমাদের থেকে কত বড়? আমাদের দাদু জিনিয়াস। সে হাতিকে করে দিয়েছে পক্ষীরাজ।

পুচকি চুপ করে গেল। সেই সময় দাদুর হাতের যন্ত্রে মেসেজ এল, হু আর ইউ পাসিং বাই? হোয়ার আর ইউ গোইং? ফ্রেন্ড অর হস্টাইল?

মানে তোমরা কারা যাচ্ছ? আর কোথায় যাচ্ছ? বন্ধু না শত্রু?

দাদু বেশ মোলায়েম করে জবাব দিল, ফ্রেন্ড স্যার। নো হস্টাইল। ভেরি ইনোসেন্ট। টু চিলড্রেন এন্ড ওয়ান ওল্ড ফেলো স্যার। আই অ্যাম ভেরি পপুলার টু দিজ চিলড্রেন অ্যান্ড এনিম্যাল।

মানে হল আমরা বন্ধু শত্রু নয়। খুব নিরীহ দুই বাচ্চা আর এক বৃদ্ধ। আমি এই সব বাচ্চা আর পশুপাখী সকলের প্রিয় দাদু।

মেসেজঃ বাট হাউ আর ইউ ফ্লাইং? ইজ ইট এ ভেরি স্মল প্লেন অর ভেরি বিগ ড্রোন?

মানে কী করে তোমরা উড়ছ? এটা কি খুব ছোট প্লেন অথবা খুব বড় ড্রোন?

দাদু মুচকি হেসে বলল, একচুয়ালি উই আর ফ্লাইং অন দি ব্যাক অফ এন এলিফ্যান্ট স্যার।

মানে আসলে আমরা একটা হাতির পিঠে বসে উড়ছি স্যার।

--হোয়াট! আর ইউ টেলিং ননসেন্স? ক্যান অ্যান এলিফ্যান্ট ফ্লাই?

মানে হল, কী বাজে বকছ? হাতি আবার উড়তে পারে নাকি?

চোখ তো কপালে উঠল এ-টি-সির। বলে কী রে বাবা? হাতিও যদি আকাশে ওড়ে তো এবার ঘোড়াও উড়তে চাইবে। গরু-গাধা-উট এরাই বা পড়ে থাকে কেন? তাহলে তো ওদের জন্যে আবার অন্য ধরণের একটা এ-টি-সি করতে হবে।

তখন সংক্ষেপে ভাল করে ব্যাপারটা বুঝিয়েও দিল। আর নিজের পরিচতি দিল রাইটার বলে। সেই যে রাইটার কল্পবিজ্ঞানের গল্প লেখে। দাদুর লেখা কল্প বিজ্ঞানের বেশ কিছু গল্প তারা দুই বোন শুনেছে মন দিয়ে দাদুর কাছে। সেই যে বিজ্ঞানী সব কিছুর সমাধান করে দেন মাত্র ছমাসের মধ্যে। সেই সঙ্গে আরও বলল, আই অ্যাম দি গ্রেট দাদু অফ অল দিজ চিলড্রেন আর ইনোসেন্ট অ্যানিম্যাল স্যার।

এ-টি-সি তখন তো বিনয়ে বিগলিত, ওহ ইউ আর দি ক্রিয়েটর অফ দ্যা ভেরি সায়েন্টিস্ট ডক্টর গৌতম? এ সিরিজ অফ রিমার্কেবল সায়েন্স ফিকশন?

মানে আপনিই সেই বিখ্যাত বিজ্ঞানী চরিত্র ডাঃ গৌতমের সৃষ্টিকর্তা যিনি বহু নামকরা কল্পবিজ্ঞানের গল্প উপহার দিয়েছেন? 

দাদু বিনয়ে বিগলিত হয়ে বলল, নট ফেমাস স্যার বাট বিলাভেড।

মানে বিখ্যাত নয় তবে সকলের ভালবাসার।

এটিসিও অমনি গদগদ হয়ে বলল, স্যালুট টু ইউ স্যার।

মানে আপনাকে অভিবাদন জানাই।

এরপর বেশ কিছুক্ষণ ধরে এ-টি-সির সঙ্গে আলাপ-সালাপ হতে লাগল দাদুর। তিতলিরা এখনও অত ইংরিজি পড়ে নি। কথাবার্তা শেষ হলে দাদুর কাছ থেকে জেনে নেবে। তবে মনে হচ্ছে এ-টি-সি খুব খুশি দাদুর পরিচয় পেয়ে। দাদু অবশ্য এর আগে তাদের বার বার বলেছে, দেখ দিদিভাই বড় হয়ে সবাই ভাল করে পড়াশোনা করবি। জানিস তো রাজাকে কেবল তার দেশের প্রজারাই ভক্তি করে। কিন্তু একজন পন্ডিত সারা বিশ্বের যেখানেই যান তিনি সম্মান পাবেন। আজ এরা সবাই সে কথাটা মিলিয়ে নিল। সত্যি তো দাদু এত কিছু জানে তাই এই এ-টি-সি ভদ্রলোক কেমন দাদুকে খাতির করতে লাগল।

এবার এটিসি ভদ্রলোক বললেন তাঁর নাম মিঃ শেখর কোহলি। পাঞ্জাবী ভদ্রলোক। তিনি  বললেন এরপর দাদু এই হাতি-প্লেন নিয়ে যেখানে খুশি যেতে পারেন। কোনও প্লেনের সঙ্গে যাতে ধাক্কা না হয়ে যায় তারা দেখবে। যেকোনও সময় কোনও কিছুর দরকার হলে যেন তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।

খুব খুশি হয়ে হাতি নামল কেরলের মাটিতে সমুদ্রের ঠিক পাশে।

আহা হা কী সুন্দর জায়গা। হাতিদাদা বলল, দাদু জান তো এই জায়গার নাম—

তাকে শেষ করতে না দিয়ে দাদু বলল, তিরুবন্তপুরম।

হাতিদাদা তো অবাক। বলল, কেমন করে জানলে দাদু? আমি তো আগে বলি নি?

--তিরুবন্তপুরম হল কেরালার সবচেয়ে দক্ষিণ দিক। এর মজা হচ্ছে এর দুই পাশেই সমুদ্র। একদিকে ভারত মহাসাগর আর একদিকে আরব সাগর। কি ঠিক বলেছি তো হাতিভাই?

হাতিদাদা আর বলবে কী সে তো হাঁ। তার নিজের দেশ বলে একটা গর্ব ছিল যে সে বেশ তারিয়ে তারিয়ে এদের দুই বোন আর দাদুকে নিজের দেশের সব দেখাবে আর চেনাবে। দাদু বুঝতে পেরে তাড়াতাড়ি সামলে নিয়ে বলল, না মানে এই দু’একটা জায়গা একটু চিনি আর কী আর নাম তো ভূগোলেই পাওয়া যায় হাতিদাদু।

হাতিদাদাকে দাদু মাঝেমাঝেই হাতিদাদু বলে ফেলে। তিতলি জিজ্ঞেস করতে জবাব দিয়েছিল। আসলে কি জানিস দাদু কথাটা শুনতে আমার বেশ ভাল লাগে।

--কেরালা হল হাতির দেশ বুঝলি রে তিতলি? দাদু বলল, আসাম, পশ্চিমবঙ্গ, বিহার সব জায়গায় হাতি থাকলেও কেরালার হাতিই হল দেশের সেরা। এখানে হাতির সংখ্যা সারা দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশী।

হাতিদাদা উৎসাহের সঙ্গে বলে উঠল, আর সেটা বললে না দাদু? সেই যে দেশের মধ্যে হাতিকে এখানে কত সম্মান করা হয়। হাতিকে পুজোয় লাগে। আর কত গয়না দিয়ে সাজান হয়।

হাতিদাদা সমুদ্রের পাড়ে এসেছিল। আর শত শত হাতি নানা ধরণের বাচ্চা বুড়ো সব। সমুদ্রে নেমে চান করছে। শুঁড়ে করে জল ছিটিয়ে ছিটিয়ে খেলা করছে। হাতি, হাতি আর হাতি। হাতির রাজত্ব যেন। পুচকি আর তিতলি তো অবাক। পুচকি তিতলিকে বলল, এই দিদি আমাকে ক’ষে একটা চিমটি কাট তো

--চিমটি? কেন রে? খামোখা তোকে চিমটি কাটব কেন?

--দেখব আমি জেগে আছি নাকি স্বপ্ন দেখছি।

হাতিদাদা মুচকি হেসে বলল, স্বপ্ন নয় সত্যি গো দিদিরা। চল আমাদের নিয়ে মন্দিরে কেমন উৎসব হয় দেখিয়ে আনি। 

সবাই তো খুব খুশি। তিতলি জিজ্ঞেস করল, আচ্ছা হাতিদাদা শুনেছি এই কেরালায় নাকি তোমাদের নিয়ে খুব সাজিয়ে উৎসব হয়?

খুব উৎসাহের সংগে হাতিদাদা বলল, হয়ই তো। আচ্ছা দাদু এটা তো মে মাসের মাঝামাঝি তাই না?

দাদু বলল, হ্যাঁ বটেই তো। দেখছ না দিদিভাইদের ইস্কুলে ছুটি পড়ে গেছে? 

--ভালই হয়েছে দাদু এই সময়ে বেরিয়ে। এখন আমাদের কেরালায় মন্দিরে মন্দিরে হাতিদের নিয়ে উৎসবে হাতিদের সাজের ঘটা একবার দেখবে চল।

হাতি উড়তে লাগল। দিক নির্দেশের কোনও অসুবিধে হচ্ছে না। দাদুর সেই এ-টি-সির ফ্যান মেসেজ পাঠিয়ে দিক নির্দেশ করে যাচ্ছে। হাতিদাদা বলল, কিন্তু দাদু, আমাদের আকাশেই থাকতে হবে।

দাদু জিজ্ঞেস করল, কেন ভাই?

তিতলি আর পুচকি একসঙ্গে বলে উঠল, কেন গো হাতিদাদা?

--দেখ এই উৎসবে খুব ভীড় হয়। মাটিতে দাঁড়িয়ে ভাল করে দেখা যাবে না। কিন্তু আমরা যদি আকাশ থেকে দেখি তো সব বেশ ভাল করে দেখা যায়।

দাদুর বলল, তা নাহয় হল। কিন্তু আকাশ থেকে দেখলে ওখানে পুলিশে যদি গুলি ছুঁড়ে দেয়? বিরাট উৎসব নিরাপত্তাও তো বিরাট হবে। তাই খুব কাছাকাছি তো যাওয়া যাবে না।

পুচকি বলল, এ মা কিন্তু এত ওপর থেকে কি করে দেখব?

দাদু বলল, কেন হাতিদাদা তোমার আত্মীয়রা তো সব এদেশে থাকে। ওরা সাহায্য করবে না?

হাতিদাদা মুখ চুন করে বলল, না গো দাদু। আমি আসলে বিদেশে থাকি কিনা। আমার কোন এক পূর্বপুরুষকে আসাম থেকে একজন কিনে নিয়ে গিয়েছিল অনেক বছর আগে। আমাদের সৃষ্টি তো তাঁর থেকেই। তাছাড়া ওদের সঙ্গে আমার কথাবার্তা নেই। দেখাসাক্ষাৎ নেই কতদিন। কি করেই বা থাকবে বল? আমি কি আর হেঁটে হেঁটে এতদূর আসতে পারি? ভাগ্যি দাদু এই ডানাজোড়া দিয়েছিল তাই তো আমার পিতা-পিতামহের দেশ দেখতে পাচ্ছি গো দিদিরা।

সে না হয় বোঝা গেল কিন্তু এখন কি হবে? দাদুর ঝোলায় আছে সমাধান। দাদু বার করল আঁকার খাতা আর পেন। সযত্নে কি একটা এঁকে দিল। দেখতে দেখতে আঁকার সেই পাতাটা একটা করে দূরবীন হয়ে গেলমোট চারটে। সবাইকে দিয়ে তিতলিকে বলল হাতিদাদার চোখে বেঁধে দিতে। সেটা পরে হাতিদাদা তো অবাক। বলল, একি জিনিস গো দাদু। এত দূরের ছবি এক্কেবারে মনে হচ্ছে যেন একেবারে পাশেই আছে। 

দাদু বলল, খুব শক্তিশালী এই দূরবীন। এটাও ছবি এঁকেই পেয়েছি তোমার ডানার মত হাতিদাদা।

সবাই তো অবাক। আরও অবাক হল যখন দাদুকে বলতে শুনল, এগুলো কিন্তু সব ভ্যানিস হয়ে যাবে দরকার মিটে গেলেই।

পুচকি বলল, আর আমাদের হাতিদাদার ডানা?

দাদু উত্তর দেওয়ার আগেই হাতিদাদা চীৎকার করে উঠল, ঐ দেখ দাদু মন্দিরের উৎসবে কেমন দলে দলে সাজানো হাতি বেরিয়েছে। আর কত লোক।

সবাই দেখল অবাক হয়ে। কী সুন্দর সাজে সেজেছে হাতিগুলো। কত গয়না। মোট ত্রিশটি হাতিকে সাজানো হাতি। এরা মন্দিরেরই পোষা হাতি। এই গয়নার সাজকে নাকি নেটিপট্টন বলে। হাতির ঘাড় থেকে শুঁড় পর্যন্ত। কত লোকের জমায়েত। এই উৎসবকে বলে  ‘ত্রিশূরপুরামউৎসব।  সারা পৃথিবীতে বিখ্যাত এই উৎসব। ঢাক ঢোল বাঁশি বাজে। প্রতিটি হাতির মাথায় থাকে বিরাট উঁচু সুসজ্জিত ছাতা। 

দশটি মন্দিরের দশটি বিগ্রহ মানে ঠাকুর নিয়ে বেরোয় এই শোভাযাত্রা। ভক্তদের মধ্যে দিয়ে পথ করে নিয়ে চলে এই শোভাযাত্রা। আর কত বাজী পুড়ছে। মালায়লাম বর্ষপঞ্জির নবম মাসে সাধারণত এই উৎসবটি পালিত হয়। এই উৎসব উপলক্ষে দুই দিনের জন্য মেতে ওঠে ত্রিশূর।

উৎসব আর শোভাযাত্রা তো অনেকক্ষণ ধরে চলবে।

অনেকক্ষণ ধরে মুগ্ধ হয়ে দেখতে লাগল তারা। এদিকে কিছু খেতে তো হবেই। দুই বোন আর দাদুর খাবার আছে। মিষ্টি ফলমূল এইসব। আর হাতিদাদার জন্যেও ব্যবস্থা আছে বিরাট দু দুটো কলার কাঁদি। এগুলো নন্দন থেকে আনা হয়েছে। একটা বড় দড়িতে বেঁধে তার গলায় ঝুলিয়ে দেওয়া হল। দিব্বি খেতে লাগল সে। 

খাওয়া শেষ হল এবার যাওয়ার পালা।

--কেমন লাগল গো দিদিরা আমার দেশ?

হাতিদাদার কথায় তিতলির আগেই পুচকি লাফিয়ে উঠে বলল, দারুন দারুণ। একেবারে ফাটাফাটি।

তিতলি বলল, যা বলেছিস পুচু। খুব ঠিক কথা। এমন জিনিস দেখানোর জন্যে তোমায় অনেক ভালবাসা গো হাতিদাদা।

পাঁচ

চল যাই গির অরণ্যে।

কেরালা দেখা হল। তিতলি বলল, এবার কোথায় গো দাদু?

দাদু মুচকি হেসে বলল, সে তো আমাদের হাতিদাদা জানে গো দিদিভাই। সেই যে আমাদের নিয়ে যাচ্ছে।

পুচকি বলল, তা বলে এত তাড়াতাড়ি বাড়ী ফিরতে পারব না কিন্তু। গরমের ছুটি এখনও অনেক আছে আমাদের।

তিতলি বলল, ও হাতিদাদা বল না গো এবার আমরা কোথায় যাব?

হাতিদাদার চোখ কিন্তু অন্যদিকে। একটা বাজপাখী তার ওপর অনেকক্ষণ ধরে চক্কর কাটছে। কিছুতেই উড়ে পালাচ্ছে না। হাতিদাদা জোরে জোরে মাথা নাড়ল, শুঁড় নাড়ল। ওর গলায় বাঁধা ঘন্টাটা ঢং ঢং করে বেজে উঠল। কিন্তু বাজ চক্কোর কেটেই যেতে লাগল মাথার ওপর।

তিতলি আর পুচকিরা একটু ভয় পেল। তারা শুনেছে বাজের ঠোঁট খুব ধারাল হয়। এই সেরেছে মাথা যদি ফুটো করে দেয়? কিন্তু বাজ অবশ্য সেটা করল না। সে শুধু চক্কোর কেটেই যেতে লাগল মাথার ওপর।

হাতিদাদা বিরক্ত হয়ে বলল, কী ব্যাপার বাজ ভাই? কেন বিরক্ত করছ আমায় শুধু শুধু?

বাজ বলল, কিছু মনে কর না হাতিদাদা। আমি শুধু অবাক হয়ে দেখছিলুম এতক্ষণ।

হাতিদাদা শুঁড় এপাশ ওপাশ দুলিয়ে হাসল। তারপর জিজ্ঞেস করল, কী দেখলে?

--আমি তো ভাবতেই পারছি না এতবড় দেহটা নিয়ে এত উঁচু আকাশে তুমি উড়ছ কী করে? আর ডানা দুটোই বা পেলে কোথায়? আমাদের মত ডানা মেলে তুমি উড়ছ আমার হিংসে হবে কি না বল?

হাতিদাদা তখন তিতলিদের সব কথা বলল। তাদের সঙ্গে আলাপ হওয়া থেকে শুরু করে দাদুর সেই ডানা তৈরি করে দেবার গল্প। আর সবাইকে পিঠে নিয়ে বিশ্বভ্রমণের কথাও। বাজ তো এমন একটা দল পেয়ে খুব খুশি। খ্যারখ্যারে গলায় বলল, আমি ছোটদের খুব ভালবাসি। আর এমন দাদুর কথা শুনে আমি তো ভাবতে পারছি না। দাদু কিছু মনে করবেন না। প্রণাম করতে পারছি না। আমার শক্ত ঠোঁট লেগে পাছে আপনার পা কেটে ছড়ে যায় তাই।

দাদু হেসে বলল, বাজভাই তুমি আমার খুব শক্তপোক্ত নাতি। এত উঁচুতে তো আর কেউ উড়তে পারে না। এতদিন তো এমন ভাবে তোমাকে কাছে পাই নি। তুমি দূর আকাশের প্রাণী। আমাদের নাগালের বাইরেই ধরতে গেলে। খুব ভাল লাগল তোমাকে সঙ্গে পেয়ে।

হাতিদাদা জিজ্ঞেস করল, এবার কোন দেশে যেতে হবে বলে দাও দাদু।

বাজ বলল, আমি বলতে পারি।

সবাই লাফিয়ে উঠল, বল বল।

--কেরল থেকে এবার এই আরব সাগর ঘেঁষে উত্তর পশ্চিমে যাও। চলে যাবে গুজরাট। সেখানে—

--গির অরণ্য। উৎসাহে লাফিয়ে উঠে বলল তিতলি।

--হ্যাঁ, আমাদের সিংহমামার আবাস। হাতিদাদা বলল।

--আসলে আমাদের বাংলা্র সুন্দরবন যেমন বাঘের ভূমি তেমনি গুজরাটের গির অরণ্য হল সিংহের জন্মভূমি। তবে পার্থক্য একটা তো আছেই—

ইতিমধ্যে দাদু কখন বলতে শুরু করেছে এরা খেয়াল করে নি। দাদু থামতেই পুচকি হঠাৎ মাঝখানে বলে উঠল, কী পার্থক্য গো দাদু?

তিতলি বলল, ওহ পুচু থাম না। দাদু তো বলবেই।

দাদু হেসে বলল, হ্যা বলব তো বটেই। না বললে আর তোরা জানবি কী করে বল? হ্যাঁ শোন। বাঘ মানে সুন্দরবনের বাঘ অর্থাৎ রয়েল বেঙ্গল টাইগার ছাড়াও বাঘ ভারতে পাওয়া যায় আরও অনেক জায়গায়। কুমায়ুনের মানুষখেকো বাঘের কথা তোরা নিশ্চয় শুনে থাকবি—

বাধা দিল পুচকি, ওই যে সেই জিম জিম—

--হ্যাঁ হ্যাঁ  জিম করবেট। তুই ঠিক জানিস পুচকি দিদি।

তিতলি চোখ বড় বড় করে বলল, সেই যে সেই বিখ্যাত শিকারী যে ভয়ংকর মানুষখেকো বাঘেদের শিকার করত। জেঠুর মুখে আমরা জিম করবেটের অনেক গল্প শুনেছি দাদু।

--হ্যাঁ তা তো শুনবিই। জিম করবেট কি কম নামকরা শিকারী ছিলেন নাকি? জগৎজোড়া নাম ছিল তাঁর। তার কথা নাহয় অন্য আর একদিন বলব। আজ বলি বাঘ ভারতে আর কোথায় কোথায় পাওয়া যায় তার কথা।

পুচকি আর তিতলি দুজনে হাঁ করে দাদুর মুখের দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইল মহা কৌতূহলে। আসলে বাঘ তাদের এত ভাল লাগে যে সে কথা আর কেউ জানে না। কিন্তু এতদিন জানত সুন্দরবনই হল একমাত্র জায়গা যেখানে বাঘ পাওয়া যায়। কিন্তু আজ দাদু বলছে অন্য কথা। শোনাই যাক দাদুর কথা।

পুচকির আর ধৈর্য বাঁধ মানে না। পট করে বলে উঠল, কোথায় কোথায় গো দাদু?

দাদু শুরু করল,  সুন্দরবন ছাড়াও বাঘ পাওয়া যায় মধ্যপ্রদেশ, কর্নাটক, উত্তরাখন্ড, মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, উড়িষ্যার সিমলিপাল, উত্তর-পূর্ব ভারতের কাজিরাঙ্গা, পশ্চিমবঙ্গের বক্সায় আগে কিছু পাওয়া গেলেও এখন পাওয়া যায় না। আর বিহারের পালামৌ জঙ্গলেও পাওয়া যেত তবে এখন পাওয়া যায় না।

চোখ কপালে উঠল যেন দুই বোনের। সবিস্ময়ে বলে উঠল, বল কি গো দাদু যা পাওয়া যায় তাই তো অনেক অনেক জায়গায়

পুচকি চোখ বড় বড় করে বলল, আমাদের বাঘুমামা তবে সারা ভারতেই পাওয়া যায়?

তিতলি বলল, অবাক কথা দাদু।

দাদু বলল, হ্যাঁ অবাক কথাই বটে। বাঘ বড় সুন্দরবাঘ বড় বলশালী আর বাঘ সারা ভারতে শুধু কেন সারা পৃথিবীর বহু জায়গায় পাওয়া যায়। সেইজন্যেই তো বাঘ হল বনের রাজা।

তিতলি আর পুচকি দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে দুলে দুলে গাইতে লাগলঃ

বাঘ বাঘ বাঘ

তুমি মহারাজ,

গায়ে কাল ডোরা দাগ

কি সুন্দর সাজ।

দাদু বললেন, হ্যাঁ তা যা বলেছিস দিদিরা। বাঘ রাজা হবারই উপযুক্ত। তবে বাঘের মত সিংহ কিন্তু এত জায়গায় পাওয়া যায় না। মাত্র এক জায়গাতেই পাওয়া যায়। সে হল এই গির অরণ্যে। এটা ভারতের গুজরাট প্রদেশের সৌরাষ্ট্র অঞ্চলে।

দুই বোন ধেই ধেই করে নাচতে নাচতে বায়না ধরল, চল দাদু চল। আমরা সিংহ দেখব। সিংহ তো আমাদেরও মামা হয়। দেখা করবে না আমাদের সঙ্গে?

দাদু হাসলেন। বললেন, শোন শোন তোরা ব্যস্ত হোস না। সোদরবন থেকে তোদের বাঘুমামা টেলিপ্যাথিতে খবর পাঠিয়েছে সে নাকি গির অরণ্যে তোদের সিংহ মামার কাছে আমাদের সেখানে যাওয়ার খবর দিয়ে দিয়েছে। আসলে সিংহ মামা তো আবার বাঘুমামার বড় ভাই হয় কিনা।

আনন্দে হৈ হৈ করে উঠল দুই বোন। সেটা একটু থামলে তিতলি প্রশ্ন করল, আচ্ছা দাদু টেলিপ্যাথি কি গো? টেলিফোন শুনেছি কিন্তু টেলিপ্যাথি—এটা কি নেট জাতীয় কিছু?

তিতলি একটু বিরক্ত হল, এক প্রশ্ন বারবার করিস নি পুচু। দাদু তো সেবার বুঝিয়ে দিয়েছে কত করে আবার কেন?

দাদু কিন্তু বিরক্ত হয় নি। পুচকির বুদ্ধিমত্তায় খুশিই হল। পুচকির পিঠ চাপড়ে বলে উঠল, তা তুই কাছাকাছিই ধরেছিস বটে। তবে এটা মনের মধ্যে দিয়ে চলাচল করে। এই যেমন ধর তোর মন থেকে পুচকির মন। সেখান থেকে আমার মন-

--আর সেখান থেকে হাতিদাদার মন। এইসব নাকি গো দাদু? পুচকি জিজ্ঞেস করল।

--তবে কি বাঘুমামা আর সিংহমামা তাদের মনে মনে খবর চালাচালি করেছে?

--এক্কেবারে ঠিক। দাদু বলল, এবার বরং কিছু খেয়ে নেওয়া যাক। তোদের খিদে পায় নি নাকি? 

--পেয়েছে পেয়েছে। সবাই হৈ হৈ করে উঠল। তিতলি বার প্যাকেট থেকে বার করল লুচি তরকারি আর মিষ্টি। পুচকি খেতে খেতে বলল, ইস ঠান্ডা হয়ে গেছে রে দিদি।

তিতলি খেতে খেতে একবার দাদুর দিকে তাকাল। কিন্তু কিছু বলল না। পুচকি কিন্তু বায়না ধরল, দাদু তোমার ম্যাজিক পেন দিয়ে তুমি কী গরম এগোরোল এঁকে দিতে পার না? অন্তত গরম গরম স্যান্ডউইচ?

দাদু মৃদু হেসে বলল, না দিদিভায়েরা আমি তা পারি না। শর্তে বলাই আছে এমন জিনিস আমি এঁকে তৈরি করব যা মোটেই কোথাও পাওয়া যায় না।

--কিন্তু ডানা তো পাওয়া যায়? পুচকি বলল, তুমি যে হাতিদাদার ডানা এঁকে দিলে দাদু?

--আরে না না দাদু ডানা আঁকে নি। তিতলি বলল, দাদু এঁকেছে ডানাওলা হাতিদাদাকে। বল তুই পুচু ডানাওলা হাতিদাদা কোথাও পাওয়া যায়? 

-সাবাস তিতলিদিদি! দাদু যেন লাফিয়ে উঠল, তোমার উপস্থিত বুদ্ধির তারিফ করতে হয়। ঠিক ঠিক আমি শুধু ডানা আঁকলে তো তা ফিট করত না হাতিদাদার পিঠে। আমি তো ডানা সমেত হাতিদাদাকেই এঁকেছি।

দাদু তো হাতিদাদার গলায় একটা বাইনোকুলার ফিট করে দিয়েছে। উড়তে উড়তেই সেটা দিয়ে সে নীচের সব কিছু ভালভাবে দেখতে পাচ্ছে। খানিক পরেই আনন্দে চেঁচিয়ে উঠল, আমরা এসে পড়েছি দাদু। আমাদের ঠিক নিচেই কিন্তু সিংহমামার দেশ।

দাদুও চেঁচিয়ে বলে উঠল, সাবাস হাতিদাদা। তোমার তো দারুন এলেম। এর মধ্যেই কেরল থেকে গুজরাটে এসে গেলে? তাও একেবারে গির ফরেস্টের মাথার ওপর?

বলে সে বাইনোকুলার চোখে ফিট করে দেখতে দেখতে বলল, এসে গেছি দিদিভায়েরা। সব গুছিয়ে গাছিয়ে নে

গোছাবে কি। পুচকি আর তিতলি তাড়াতাড়ি ঝুলি থেকে নিজেদের দূরবীন বার করতেই ব্যস্ত হয়ে পড়ল।  এতক্ষণ দরকার পড়ে নি তাই ঝুলিতে ছিল।

ছয়

সিংহ মামার ডেরায়

কিন্তু বাইনোকুলার বার করার আগেই তারা একেবারে গির অরণ্যের ভেতরে নেমে পড়ল। গভীর এক অরণ্য। দিনের বেলাতেও গা ছমছম অন্ধকার। চারিদিকে শুধু গাছ আর গাছ। আর সে গাছ খুব একটা ছোট যে তা নয়। বেশ উঁচু উঁচু।

পুচকি বেশ একটু ভয় পেয়ে গেল। বলল, দিদি আমার কিন্তু বেশ ভয় করছে। কী ঘন জঙ্গল দেখেছিস?

তিতলি মিষ্টি ধমকে উঠল বোনকে, বোকা কোথাকার। জঙ্গল ঘন না হলে সিংহের মত প্রাণী বাঁচবে কী করে শুনি? ওরা কি আমাদের মত শহরে বাস করে নাকি?

হো হো করে হেসে উঠল হাতিদাদা, ঠিক তো দিদিরা। আমরা কি আর শহরে বাঁচতে পারি? আমরা যে গভীর জঙ্গলের প্রাণী। নেহাত তোমরা হলে আমাদের বন্ধু তাই। আর তাই বুঝেছি মানুষের মধ্যে সবাই খারাপ নয়। তোমাদের মত মিষ্টি বাচ্চা যেমন আছে দাদুর মত সহানুভূতিশীল বয়স্ক মানুষ তেমনি আছে। পশু আর মানুষের মধ্যে তোমরাই ঠিক একদিন গড়ে দেবে সুখের সেতুবন্ধন।

পুচকি অল্পস্বল্প ঘাড় নেড়ে বুঝিয়ে দিল সে বুঝেছে। আর ভেবে দেখল ঘন জঙ্গলকে তার এত ভয় কেন? সে জঙ্গলের সেরা জঙ্গল সুন্দরবন দেখেছে। আর শুধু দেখেই নি বাঘুমামা, কাজলনয়না আর বানুভাইয়ের সঙ্গে বেশ কটা দিন আনন্দ করে কাটিয়েই এসেছে। তবে তারা তো খুব চেনা ছিল। বাঘুমামা নিজেই তো মেসেজ করে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল তাদের।

তবু ভয়ে ভয়ে বলল, সিংহ মামা যদি আমাদের চিনতে না পারে?

হাতিদাদা বলল, তুমি এত ভয় পাচ্ছ কেন দিদি? আমি তো আছি। আমি টেলিপ্যাথিতে সব বলে রেখেছি মামাকে। তোমাদের যেমন আমারও তো সে মামাই হয় নাকি? আর সত্যি বলতে কি ভারতে হাতি বাঘে অনেক দেখা হলেও হাতি সিংহতে চিঁড়িয়াখানা ছাড়া আর কোথায় দেখা হয় বল ভাই? কাজেই সেও যে আমার খুব কাছের লোক তা তো নয়। তবে একটা সুবিধে হল তোমরা আছ। তোমাদের সামনে সে আমার বন্ধু।

তা ঠিক। দাদু এদিকে মিটিমিটি হাসছে তার দিকে চেয়ে। ইস দাদুর কথাটা ভাবা হয় নি। দাদুর কত ক্ষমতা। যেমন জ্ঞানবুদ্ধি তেমনি ক্ষমতা। সত্যি কথা বলতে গেলে দাদু না থাকলে মানে দাদু তাদের হাতিদাদার পিঠে ডানা এঁকে না দিলে হত তাদের এই বিশ্বভ্রমণ। বেশ লজ্জা পেয়ে গেল সে। দাদুর কোলের কাছে সরে এসে বলল, ইস দাদুর কথা আমি ভুলেই গিয়েছিলুম।

-তাই ভুলে যা পুচু। তিতলি অমনি ঝাঁঝিয়ে উঠল, দাদুই আমাদের কাছে সব। দাদু না থাকলে এত কম সময়ে আমাদের সেই ডিমাপুর থেকে আজ গুজরাটে এসে পৌঁছতাম এত তাড়াতাড়ি? তাও আবার কেরলে হাতিদাদার দেশ আর নন্দনে বাঘুপিসির বাড়ি দেখার পর?

--চল এবার নামা যাক। হাতিদাদা বলল, আমি তবে এখানেই থাকি কী বল দাদু?

দাদু বলল, আপাতত তাই থাক। আমরা একটু খুঁজে আসি ওদের সিংহ মামাকে। সরাসরি আলাপ পরিচয় তো হোক।

হাতিদাদার পিঠে পড়ে রইল সব কিছু। ওদের তিনজনের কাছে রইল শুধু তিনটে বাইনোকুলার। দাদুর কাছে কথা বলা যন্ত্র আর সেই ম্যাজিক পেন আর খাতা। এগোতে এগোতে তারা গিয়ে পৌঁছল একটা জায়গায়। সেখানে একটা চক চক চক করে শব্দ হচ্ছে। দাদু কান পেতে শুনে একটু দাঁড়িয়ে পড়ল। দাঁড়াল দুই বোনও।

--দাদু ও কীসের শব্দ গো?

তিতলির প্রশ্নে একটু ভেবে নিয়ে দাদু বলল, মনে হচ্ছে এর ওপাশে রয়েছে কোনও জলাশয়। সিংহরা সব দল বেঁধে জল খেতে এসেছে।

পুচকি অমনি বলে উঠল, ঠিক যেমন সুন্দরবনে বাঘেরা জল খায়?

--হ্যাঁ দিদি ঠিক তেমনই। চল একটু এগিয়েই দেখা যাক।

জঙ্গল ভেদ করে তারা এগোল। গাছের ফাঁক দিয়ে দেখল তাতে পুচকি বেশ ভয় পেয়ে গেল। তিতলির বুকও বেশ গুড় গুড় করে উঠল। বাঘের থেকে সিংহ আকারে অনেক বড় হয়। আর তাদের ডাক আরও গমগমে।

হ্যাঁ একটা বড় জলাশয়ে পাশাপাশি সাত আটটা সিংহ জল খাচ্ছে বেশ আরাম করে। শব্দ উঠেছে চক চক চক। তিতলি ফিসফিস করে দাদুকে বলল, দাদু কী সুন্দর গো!

পুচকির ভয় কমেছে। সেও আনন্দে বলে উঠল, সত্যি খুব সুন্দর রে দিদি। এত কাছ থেকে এতগুলো সিংহ দেখতে পাব ভাবতেই পারি নি।

--তোরা আর এগোস নি। বরং একটা গাছের আড়ালে থাকআমি একটু টেলিপ্যাথিতে কথা বলে নিই। বলে দাদু যন্ত্রটা বার করে একটু কিছুক্ষণ সব খুটখাট করে বলল, হ্যাঁ এখানেই আছে তোদের সিংহ মামা। ওই যে সবচেয়ে বড়টা। সেই হল এদের রাজা।

তিতলি আর পুচকির দুই চোখ আনন্দে চকচক করে উঠল। পুচকি জিজ্ঞেস করল, কথা হল দাদু তোমার সঙ্গে?

--হ্যাঁ হল। ওরা জল খেয়েই যাবে এই পথ দিয়ে।

বেশ কিছুক্ষণ সবাই চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল। অপেক্ষার যেন আর শেষ নেই। পুচকি ফিসফিস করে তিতলির কানে কানে বলল, এতক্ষণ ধরে এত জল খায় নাকি রে দিদি?

--আরে বাবা ওরা কি আমাদের মত ঘন্টায় ঘন্টায় জল খায় নাকি? সারাদিনে একবার মাত্র খায়। তাই একবারে অনেক জল খেয়ে নেয়। একটু তো সময় লাগবেই।

সাত

ভাগ্নীদের সঙ্গে মোলাকাত

অবশেষে অপেক্ষার অবসান। এক দঙ্গল সিংহ পাশাপাশি হেঁটে আসতে লাগল তাদের দিকে। বেশ গদাই লস্করি চালে। একেবারে তাদের পাশে এসে উপস্থিত। বড়টা বাদ দিয়ে বাকিগুলো হুংকার করে উঠল।

--ওরে থাম থাম। এরা আমার খুব পরিচিত মানুষজন।

দাদুর যন্ত্রটা গমগম করে উঠল দলের নেতা সিংহের গলার স্বরে।

--তাই নাকি? বাকিরা বলল।

--ওরে এরা হল আমার ভাগ্নীরা আর দাদু। আমাকে কত ভালবাসে। আর তাই সেই পূর্ব থেকে এই পশ্চিমে ছুটে এসেছে।

বড় সিংহই যে তাদের সিংহ মামা তা এতক্ষণে তিতলিরা বুঝতে পেরেছে বিলক্ষণ। মামা এগিয়ে এসে দাদুর হাত জড়িয়ে ধরে বলল, তোরা সব চিনে রাখ ইনি হলেন আমার জ্যাঠামশাই। আর এদের দাদু।

এবার তিতলি পুচকির কাছে এসে তাদের জামা ধরে বলল, এরা আমার আদরের দুই ভাগ্নী। নে নে চল কত দূর থেকে এরা এসেছে আমাদের এখানে। এদের বিশ্রাম দরকার। আচ্ছা জ্যাঠামশাই আমার হাতি ভাগ্নাকে তো দেখছি না? সে নাকি তোমার তৈরি ডানায় ভর করে উড়ে উড়ে এসেছে এখানে।

দাদু হেসে বলল, হ্যাঁ হাতিদাদা জঙ্গলে রয়েছে। ওকে টেলিপ্যাথিতে ডাকছি।

দাদুর ডাকে হাতিদাদা এসে হাজির। তার পিঠের ডানা দেখে তো একেবারে তাজ্জব সিংহ মামা। বলল, সত্যি জ্যাঠামশাই আপনার তুলনা নেই। হাতি ভাগ্না সেও কিনা উড়ল আকাশে!

এরপর সবাই মিলে চলে এল সিংহদের আসল ডেরায়। টানা দুদিন ধরে মামা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখাল গির অরণ্যে তারা কেমন আর কত সুখে আছে।

--আমাদের এখানে মোট সিংহ এখন পাঁচশর সামান্য কিছু বেশিসব ঘুরিয়ে দেখাতে দেখাতে বলতে লাগল মামা, ভারি সুন্দর জায়গা গো ভাগ্নীরা। পাহাড়ের ওপর চমৎকার এক বন। কি সুন্দর পরিবেশ। কত গাছ, কত ফুল। আবার রাস্তাও আছে। মানুষের সঙ্গেও আমরা দিব্বি মিশে আছি গো ভাগ্নীরা। এখানে ফাঁকা জায়গায় আমাদের নিত্য সভা বসে। আর আমাদের গর্ব একমাত্র এই গির অরণ্যেই আমরা আছি। সারা ভারতে কিন্তু আর কোথাও আমাদের দেখা পাবে না তোমরা।

এখানের জঙ্গলেও মধু পাওয়া যায়।

জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে রয়েছে বিস্তৃত রাস্তা। এটা সিংহদের অভয়ারণ্য। এই অভয়ারণ্য দেখতে পর্যটকেরা আসে। তাদের জীপে করে ঘুরিয়ে দেখানো হয়। একেবারে কাছ থেকে সিংহ দেখতে পায় তারা।

দেখতে দেখতে ফেরার দিন এসে গেল। মন খুব ভারাক্রান্ত দুই বোনের। আর দাদুর তো বটেই। হাতিদাদার পিঠে সবাই উঠে বসেছে। সব সিংহরা এসে হাজির তাদের বিদায় জানাতে।

পুচকি বলল, দাদু দেখ ওরা কাঁদছে সব। বলতে বলতে সেও কেঁদে ফেলল।

তিতলির চোখেও জল। সে বলল, কাঁদবে না বল? আমরা যে ওদের আদরের দুই ভাগ্নী হই। আর আমাদের মত সব ছোট ছোট ছেলেমেয়েরাও হয়ত ওদের কাছে তাই। দেখ পুচু মানুষ আর পশুতে শুধু প্রভেদ কিছু বুদ্ধিতে। কিন্তু মনের আবেগে ওরা সব আমাদেরই সমান।

দাদু বলল, সাবাস তিতলি দিদি সাবাস। মানুষ পশুর এত সুন্দর পার্থক্য আমিও বোধহয় ব্যাখ্যা করতে পারতুম না।

হাতিদাদা এবার ডানা নাড়ল। যাবার জন্যে প্রস্তুত। সিংহেরা সব হুংকার করে উঠল। দাদুর টেলিপ্যাথি যন্ত্রে সেই হুংকার মানুষের কথা হয়ে দাঁড়াল। ওরা বলছে, আবার এস গো ভাগ্নীর দল। আবার এস জ্যাঠামশাই। আর হাতিদাদা তুমিও। এই পৃথিবীতে আমরা মানুষ পশু সবাই কিন্তু একে অন্যের জন্যে। মনে রেখ কিন্তু কথাটা।

তিতলি হাত নাড়তে নাড়তে বলল, মনে রাখব গো মামা মামিরা।

পুচকি বলল, আমিও মনে রাখব। আমরা সবাই যেন চিরকাল একে অন্যের জন্যে থাকতে পারি।

দাদু ভাবছিল, পুচকিটা সত্যি তো আর পুচকি নেই। সে যে সত্যি এখন বড় হয়ে গেছে।

আট

মরুভূমির জাহাজ

হাতিদাদা এবার উড়তে শুরু করেছে। গির অরণ্যে সিঙ্ঘিমামা, মামি, মামাতো ভাই বোন সকলের সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎ তো হল। তিতলি বলল, এবার সব দেখা হল নাকি গো হাতিদাদা?

হাতিদাদা হেসে বলল, কই আর সব হল গো দিদি? এখনও তো অনেক বাকি এদেশে।

-তাই নাকি?

-এই তো গুজরাটের পাশেই রাজস্থান। এখানেও আছে তোমাদের কিছু বন্ধু।

লাফিয়ে উঠল পুচকি, ওহ দারুন। রাজস্থান মানেই তো সেই সোনার কেল্লা তাই না দাদু?

দাদু বলল, রাজস্থান মানে মরুভূমি। আর এখানে থাকে মরুভূমির জাহাজ।

পুচকি বলে উঠল, জাহাজ তো সমুদ্রে থাকে দাদু? জল ছাড়া জাহাজ যেতে পারে নাকি?

দাদু মুচকি হেসে বলল, পারে পারে। জল ছাড়া স্থলেও পারে।

-সে কেমন জাহাজ গো দাদু?

-সে জাহাজ খুব বড় আর উঁচু। বালির ওপর দিয়ে সে ছাড়া আর তো কোনও গতি নেই দিদিভাই।

-মানে? পুচকির প্রশ্ন।

-মানে জলে যেমন এক পার থেকে অন্য পারে যেতে জাহাজ ছাড়া আর কিছু গতি নেই তেমনি বালির দেশে যে উট ছাড়া আর কোনও গতি নেই। এই রাজস্থানের মরুভূমি আসলে যে বালিরই সমুদ্র।

তিতলি জিজ্ঞেস করল, হ্যাঁ উটের ছবি তো সোনার কেল্লায় দেখেছি।

-আমিও আমিও। পুচকিও অমনি লাফিয়ে উঠল।

তিতলি অমনি লাফিয়ে তালে তাল দিয়ে বলে যেতে লাগল, আমাদের মত ছোটদের জন্যে কি সুন্দর  বই করেছেন আমাদের সত্যজিত দাদু। ফেলুদা, তোপসে, জটায়ু আর আমাদের বাচ্চা ভাইটি মুকুল।

পুচকি বলল, কি সুন্দর সোনার মত রঙ বল কেল্লাটার?

-আরে সেই জন্যেই তো সোনার কেল্লা নাম। তাই না দাদু?

দাদু শুধু মিটি মিটি হাসছে আর ঘাড় নেড়ে ওদের সমর্থন করছে।

জোরে জোরে ঘাড় নেড়ে গলার ঘন্টা বাজিয়ে হাতিদাদা অমনি বলে উঠল, আমাদের উটুদাদা গো দিদিরা। আর আমাদের দাদুর সেই অদ্ভুত নাতি। পিঠে রয়েছে বড় বড় কুঁজ। লম্বা লম্বা সরু সরু পা। উটুদাদার বড় দুঃখ জান?

তিতলি বলল, কিসের দুঃখ গো হাতিদাদা?

পুচকি বলল, কেমন দুঃখ?

হাতিদাদা বলল, আহা বেচারা সেই মরুর দেশে পড়ে আছে। চারিদিকে শুধু ধুধু বালি আর বালি। খায় শুধু কাঁটাগাছ। জল খায় অনেক পরে পরে-

পুচকি চোখ বড় বড় করে শুনছিল। প্রশ্ন করল, কেন কেন?

তিতলি সবজান্তার ভাব নিয়ে বলল, ওমা তুই এটাও জানিস না পুচু? ওরা একসঙ্গে অনেক জল খেয়ে নেয়। তাই ওরা অনেকক্ষণ জল না খেয়েও থাকতে পারে।

পুচকি তাড়াতাড়ি বলে উঠল, তুই কিচ্ছু জানিস না দিদি। ওই যে পিঠের বিরাট কুঁজ আছে না তাতেই জল জমা থাকে।

এতক্ষণ দাদু সব শুনতে শুনতে মুচকি মুচকি হাসছিল। এখন বলে উঠল, না না এটা ঠিক নয় দিদিরা। উটের কুঁজ খুব বড় হয় কারণ সেখানে প্রচুর চর্বি জমা থাকে। এই কারণে উট অনেকক্ষণ না খেয়ে দিব্বি থাকতে পারে। এই চর্বি তাকে খাদ্য জোগায়। আবার খাবার সময় উট কিন্তু প্রচুর খায়। সেই খাদ্য চর্বি হয়ে উটের কুঁজে জমা হয়। আর জলও সে প্রচুর খায়। দেহের অনুপাতে তার পেটের থলিও অনেক বড়। উট খুব তাপ সহ্য করতে পারে আর উটের শরীরে তাই ঘাম খুব কম হয়।

তিতলি বলল, বুঝেছি।

পুচকি বলে উঠল, অমনি যে বললি বুঝেছিস তা কি বুঝেছিস শুনি?

-ঘাম হলে আমাদের শরীর থেকে জল বেরিয়ে যায়। কিন্তু ঘাম কম হওয়ায় উটের শরীর থেকে জল বেরিয়ে যায় না। তাই না দাদু?

দাদু খুশি হয়ে বলল, একেবারে ঠিক দিদিভাই। একেবারে ঠিক।

পুচকি অমনি বায়না ধরল, আমাদের এমন এক দাদাকে তো দেখতেই হবে দাদু।

হাতিদাদা বলল, তাছাড়া তাদের দেশের মাথার ওপর যাচ্ছি যখন তখন তো একবার নামতেই হয় দিদিরা। না হলে আমাদের মিষ্টি উটুভাই যদি রাগ করে?

নয়

ফড়ফড়ে ময়ূর দাদা

হাতিদাদা এবার আস্তে আস্তে নিচের দিকে নামতে শুরু করেছে। এবার নিচেটা বেশ পরিষ্কার হচ্ছে তাদের কাছে। চারিদিকটা কেমন ধোঁয়া ধোঁয়া। নিচের মাটি এবড়ো খেবড়ো। রঙ সোনালী হলুদ। কোথাও এতটুকু গাছের চিহ্ন নেই।

-কি মজা মি মজা। ওই দেখ দাদু পিঁপড়ের সারির মত কি চলেছে।

পুচকির চেঁচানিতে তিতলিও চেঁচিয়ে উঠল, ওগুলো কি দাদু? ওই যে পিঁপড়ের সারির মত চলেছে মাঠের ওপর দিয়ে?

হাতিদাদা ততক্ষণে নেমে এসেছে আরও নিচে। পিঠের কুঁজগুলো বেশ পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে।

দাদু বলল, আরে এ তো ক্যারাভ্যান।

তিতলি বলল, মানে উটের সারি তাই তো দাদু? আমি জেঠুর কাছে শিখেছি।

দাদু তার পিঠে আলতো স্নেহের চাপড় বসিয়ে বলল, তুমি ঠিক জান দিদিভাই। যার এমন জেঠু আছে তার আবার ভাবনা কিসের?

ততক্ষণে হাতিদাদা আর নিচে নেমেছে। উটগুলো বেশ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। একসার উট চলেছে মরুভূমির ওপর দিয়ে। পিঠে তাদের বোঝা। দাদু বলল, কিন্তু একটা কথা শোন দিদিরা। আমরা কিন্তু নিচে গিয়ে উটুভাইদের সঙ্গে দেখা করতে পারব না।

-সে কি কেন কেন? তিতলির আর পুচকি চেঁচিয়ে উঠল একসঙ্গে।

-এখন ওরা সার দিয়ে চলেছে মরুভূমির একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। ওদের পিঠে যারা ব্যবসায়ীর মালপত্র নিয়ে যাচ্ছেতাছাড়া মরুভূমিতে শুধু বালি ছাড়া আর কিছু নেই। সেই বালি প্রচন্ড গরম।

পুচকি বলল, আমাদের কেন গরম লাগছে না দাদু?

-আমরা যে আকাশের অনেক ওপরে আছি। জান তো আকাশের অনেক ওপর ঠান্ডা হয়। যত আমরা ওপরে উঠব ঠান্ডা কিন্তু তত বাড়বে।

পুচকির অমনি মুখভার হয়ে গেল। দাদু হেসে বলল, তবে চিন্তার কিছু নেই হাতিদাদা তোমাদের কথা সব ওদের কাছে পৌছে দেবে আমার যন্ত্রের মাধ্যমে। যেমন অন্যান্য জায়গায় দিয়েছিল। তোমরা তোমাদের উটুদাদাদের সঙ্গে অনায়াসে কথা বলতে পারবে। সকলের কানেই তো যন্ত্র। সবাই শুনল উটুভাই বলছে, আমাদের দিদিরা এসেছে আমরা খুব খুশি। আর দাদুর কথা আমরা সবাই জানি। দাদুই তো তিতলি পুচকি আর আমাদের অন্যান্য পশুভাইদের কাহিনী লিখে জানাচ্ছে সবাইকে। আমরা সবাই খুব খুশি। আমরা সব পশুপাখি একসঙ্গে কথা বলতে পারছি। ভাব ভালবাসা জানাতে পারছি। খবর নিতে পারছি একে অন্যের।

তিতলিরা তো বেজায় খুশি। অনেক কথাবার্তা হল উটুভাইদের সঙ্গে। কিন্তু তাদের আক্ষেপ একদম কাছ থেকে তাদের দেখতে পারছে না তারা। সমাধান করে দিল দাদুই। বলল, আমি এখনি ব্যবস্থা করছি।

হাতের যন্ত্র সামনে আকাশের দিকে নিঃক্ষেপ করতেই সামনে একটা পর্দায় ক্যারাভ্যানটার স্পষ্ট ছবি আকাশে ফুটে উঠল। একেবারে চোখের সামনে থেকে।

তিতলি আর পুচকি বলে উঠল, আমাদের দাদু গ্রেট দাদু। দাদুর হাতে যাদু আছে।

ক্যারাভ্যান নিজের পথে চলে গেল। তাদের আর সময় নষ্ট করার মত সময় নেই। দাদু বলল, এখানে কিন্তু তোমাদের আর এক দাদা থাকে। যাদের সুন্দর পেখম আছে আর সেটা ছড়িয়ে তারা নাচে।

-ময়ূর দাদা ময়ূর দাদা।

-হ্যাঁ তাই।

হাতিদাদা বলল, টেলিপ্যাথিতে আমি খবর পাঠিয়েছি দাদু। আমাদের কিন্তু এবার উঠতেই হবে উঁচুতে। চিন্তার কিছু নেই। দাদু তোমার ম্যাজিক টর্চ দিয়ে আকাশেই দেখিয়ে দিয়ো নাহয়।

একটু পরেই আকাশে ডাক এল ময়ূর ভাইদের। কিন্তু বড় কর্কশ সে ডাক। পুচকিরা তো ভেবেই পায় না এমন সুন্দর পাখিদের এত বাজে ডাক কি করে হয়।

-এরা কি খায় দাদু?

পুচকির প্রশ্নে দাদু বলল, এরা সাধারণত ঘাস, ঘাসের বীজ, আবার অনেক পোকামাকড় খায়। সাপ এদের শত্রু। এরা সাপেদের একদম সহ্য করতে পারে না। সাপ দেখলেই আক্রমণ করে।

আকাশের এই ঝাঁক ময়ূরের সঙ্গে দেখাময়ূরের যে রাণী তার তো অমন সুন্দর পেখম নেই। হেসে বলল, তিতলিদিদি নাকি? পুচকিও দেখছি।

দাদুর কথাটা কি ভুলে গেল ময়ূর দিদি? বেজায় রাগ হল পুচকির। ভাবল এরপর আর ময়ূরদিদির সঙ্গে কথাই বলবে না। কিন্তু পারল না। মুখ ভার করে বলল, শুধু আমি আর দিদিই নয় দাদুও আছে। আর আছে হাতিদাদা।

ময়ূর দাদা বলল, আমাদের বড় ভুল হয়ে গেছে। আসলে তোমরা দুই বোন এত ফেমাস যে আগে তোমাদেরই নাম মনে আসে।

ময়ূর দাদা মুচকি হেসে বলল, ভুলে যাওয়ার আর দোষ কি বল? হাতিদাদার পিঠে আমাদের মত বড় পাখা। সে দিব্বি উড়ছে। কোনোদিন কেউ দেখেছে এ দৃশ্য?

-এই ডানাও তো দাদুর তৈরি করে দেওয়া। পুচকি বলে ফেলল, আমাদের দাদুর কলমে যাদু আছে। যা আঁকবে তাই সত্যিকারের তাই হয়ে যাবে।

চোখ বড় বড় ময়ূর দাদা আর ময়ূর দিদির। তিতলি বলল, জানি তোমাদের বিশ্বাস হচ্ছে না। বিশ্বাস হয় নি আমাদেরও। সবাই যখন ভেবে মরছি সারা বিশ্ব আমরা ঘুরব কি করে দাদু তখন খাতায় ছবি এঁকেই চলেছে।

ময়ূর ময়ূরী দুজনেরই খুব কৌতূহল। একসঙ্গে চেঁচিয়ে উঠল, তারপর তারপর?

তিতলি কিছু বলার আগেই তার মুখের কথা কেড়ে নিয়ে পুচকি ফড়ফড় করে বলে উঠল, তারপর কি আর? হাতিদাদাকে খাতায় এঁকে ফেলল দাদু। আবার পিঠে দুটো চমৎকার ডানা। অমনি হল ম্যাজিক। আমাদের হাতিদাদার পিঠেও অমনি এসে গেল দুটো ডানা আর অমনি সে আমাদের সকলকে নিয়ে উড়তে লাগল।

-এবার তোমারা আমাদের পেছন পেছন নেমে এস। তোমাদের উটুভাই ক্যারাভ্যানে আজ যায় নি। ওর শরীরটা তেমন ভাল যাচ্ছে না। এস আমাদের পেছন পেছন উড়ে এস।

ময়ূরের পিঠে

হাতিদাদা যত নিচে নামছে ততই গরম বাড়ছে। মরুভূমির আকাশে তো নেই মেঘের ছিটেফোঁটা। দাদু বলল, দিদিভায়েরা দেখ আমি একটা ছাতা তৈরি করে দিতে পারি তবে-

পুচকি অধীর হয়ে বলল, তবে দাও না।

তিতলি বলল, তবে কি দাদু?

-দেখ দিদিভায়েরা। প্রকৃতিকে আমাদের জানতে হবে বুঝতে হবে। বুঝতে হবে ভূগোলকেও-

পুচকির চোখ কপালে, ও দাদু আমাদের কি এখন ভূগোল পড়তে হবে? কিন্তু বই যে বাড়িতে?

তিতলি হেসে উঠে বলল, তুই কি ছেলেমানুষ রে বনু? ভূগোল বলতে কি শুধু বইয়ের ভূগোল বোঝায়?

পুচকির মাথায় তবু ঢোকে না। কিন্তু কিছু বলে না পাছে দিদি তাকে আবার বকে। দাদু বলল, আসলে কি জান পুচকি দিদিভাই। ভূগোলের আসল মানে হল পৃথিবীর ওপরের এক একটা অঞ্চল। যেমন সব মানুষ সমান হয় না তেমনি সব অঞ্চলও সমান হয় না। এক একটা অঞ্চলের বাতাসের তাপমাত্রা, জলবায়ুর প্রকৃতি, মানুষের আচার আচরণ, ভাষা, অভ্যাস এই সব বোঝায়। কোনও মানুষকে বুঝতে যেমন তার সঙ্গে ভাল করে মিশতে হয় তেমনি কোনও অঞ্চল ভাল ভাবে বুঝতে গেলে সেই অঞ্চলের আবহাওয়া আর জলবায়ুকে মানিয়ে নিতে হয়। আমরা ছবি ছাতায় মুড়ে থাকি তবে মরুভূমির এই তপ্ত আবহাওয়া ঠিক ভাবে বুঝতে পারব কি করে?

হাতিদাদা ধীরে ধীরে নেমে পড়ল। কিন্তু বালিতে গেঁথে যাবার ভয়ে দাদু তাকে নামতে দিল না। তাকে একটু উঁচুতে ধীরে ধীরে ডানা নেড়ে বাতাসে ভাসিয়ে রাখতে বলল। ময়ূর বলল, তোমরা কেন আমার পিঠে বস না গো দিদিরা?

ময়ূরী বলল, আমি তবে দাদুকে পিঠে নিই। ভয় নেই গো। আমাদের পিঠ খুব চওড়া।

তিতলি আর পুচকির মজা আর দেখে কে। এ এক নতুন অভিজ্ঞতা। ময়ূরকে তারা কখনও নিজের চোখে উড়তে দেখে নি। তাতে আবার তার পিঠে চড়ে আকাশে উড়তে হবে এটা ভাবতেও পারে নি। সবাই খুব খুশি। খুশি এই ভেবে যে তাদের সঙ্গে দাদুর পরিচয় না হলে তাদের এই সব অভিজ্ঞতা একেবারেই হত না।

ময়ূর দাদা আর ময়ূরী দিদি দুজনেই খুব খুশি। বাংলার ময়ূররেরা নাকি জানিয়েছিল যে তিতলি দিদিরা আসতে পারে। ওদের বিশ্বভ্রমণের খবর এখন সারা বিশ্বেই রটে গেছে। বিশ্বের নানা দেশের সব পশুপাখীরা আগ্রহে অপেক্ষা করছে কবে আসবে তাদের ভালবাসার এই দুই দিদি আর সকলের ভালবাসার গল্পদাদু। 

উটুভাইয়ের সঙ্গে আলাপ

মরুভূমি থই থই করছে শুধু বালি আর বালি। যেমন মহাসাগরে থাকে। কোথাও নেই এতটুকু ছায়া। কারণ গাছ নেই একটাও। এদিক ওদিক সেদিক যেদিকে তাকাও সেদিকে শুধু বালির পাহাড়।

সিমলায় গিয়ে স্নো পয়েন্টে গিয়েছিল তারা। সেখানে অবাক হয়ে দেখেছে চারিদিকে বরফ বরফ আর বরফ। এ যেন অনেকটা সেই রকম মনে হল তাদের। এদিকে ময়ূর দাদারা আকাশের একটু উঁচু দিয়ে চক্কোর কাটতে কাটতে কাকে যেন খুঁজছে। একটু পরেই দূর থেকে কিছু একটা দেখতে পেয়ে সাঁ সাঁ করে বালির ওপর নেমে এল। দাদু বলল, ময়ূরদের বালিতে চরে বেড়াতে অসুবিধে হয় না।

তিতলিদের ভারি মজা লাগছে। ময়ূরগুলো নেমে এল যেন দুটো উড়োজাহাজ রানওয়েতে ল্যান্ড করল। তবে যে জায়গাটায় নামল সেখানে উঁচু বালির পাহাড়। সেই পাহাড়ে রোদ ঢেকে যাওয়ায় যে ছায়া সৃষ্টি হয়েছে তাতে গরম অনেকটাই কম লাগছে। ময়ূরদের পিঠ থেকে তারা নেমে পড়ল। ময়ূররা উড়ে চলে গেল। আর দাদুকে বলে গেল যখন দরকার হবে তখনই যেন তাদের ডাক দেয়।

তাদের উটুভাই বালির মেঝেতে শুয়েবিশাল রকমের প্রাণী এত কাছ থেকে তো দেখে নিঅবাক হয়ে তারা দেখতে লাগল। উটুভাই চোখ বুজে ছিল। সেই ভাবেই বলল, তিতলিদিদিরা এসেছ? আমি খুব খুশি হয়েছি।

পুচকি বলল, শুধু আমরা নয় দাদু এসেছে আমাদের সঙ্গে। এসেছে হাতিদাদাও। কিন্তু সে তো বালির এত গরম সহ্য করতে পারবে না তাই আকাশের ভেসে রয়েছে।

চেহারা খানা দারুন মজার। আর সবচেয়ে মজার হল তার পিঠের বিরাট কুঁজটাভয়ে ভয়ে দুই বোন উটুভাইয়ের গায়ে হাত বোলাচ্ছিল। আরামে চোখ বুজে উটুভাই বলল, ভয় পেতে হবে না গো দিদিরা। তোমাদের আদর আমার বেশ লাগছে।

তিতলি জিজ্ঞেস করল, আজ নাকি তোমার অসুখ ক্যারাভ্যানে যাওনি?

-একটু গা ম্যাজম্যাজ করছিল। তা এবেলা ঠিক হয়ে গেছে। চল পিঠে বসবে আমার? তোমাদের একটু ওয়েসিসে ঘুরিয়ে নিয়ে আসি।

দুজনেই সমস্বরে বলে উঠল, কোথায় গো উটুভাই? ওয়েসিস মানে তো মরূদ্যান। এই বালির দেশে আবার বাগান হয় নাকি?

-এই তো একটু দূরে। দেখলে তোমাদের চোখ জুড়িয়ে যাবে।

দাদু মিটিমিটি হেসে বলল, ঠিক ঠিক দিদিভাই ঠিক। ওয়েসিস মানে মরূদ্যান বটে। চল চল আমাদের উটুভাইয়ের নিমন্ত্রণ রক্ষা করে আসি।

ধড়মড় করে উঠে বসল উটুভাই। বলল, নমস্কার দাদু। তোমাকে অনেক প্রণাম। তুমি না থাকলে তো আর আমার দিদিদের এমন করে পেতাম না।

তিতলি বলল, সত্যি। ছবিতে যা দেখেছি তার চেয়ে কত সুন্দর গো তুমি উটুভাই।

উটুভাই হাসল, আসলে তোমরা যে সুন্দর দিদিভাই। তোমাদের মন যে বড় সুন্দর। তোমাদের মনের চোখ বড় সুন্দর। সেই চোখ যা দেখে তা সব সুন্দর। সব পশুরা তোমাদের দুই বোনকে খুব ভালবাসে

পুচকি ঠোঁট ফুলিয়ে বলল, আর দাদুকে বুঝি ভালবাসে না?

-না। উটুভাইয়ের এই উত্তরে পুচকি তো রেগে লাল, না মানে?

-আহা রাগ কর কেন? আমরা সব পশুরা দাদুকে শুধু ভালবাসি তাই নয়। করি অনেক শ্রদ্ধা। যে ছবি এঁকে হাতিদাদার পিঠে ডানা বানিয়ে দেয় তোমাদের বিশ্বভ্রমণের পথ করে দেয় তাকে যে আমরা মাথায় করে রাখি গো দিদিরা। যার আঁকা ছবি সত্যি হয়ে যায় তার মুখের কথা যে একেবারে বেদবাক্য।

তিতলি আর পুচকির একমুখ হাসি দাদুর প্রশংসায়। সত্যিই তো এই দাদু না থাকলে আজ কি তারা এতদূর আসতে পারত? এত সহজে আর এত অল্প সময়ে? দাদুকে সবাই ভরসা করে, বিশ্বাস করে বলেই তো দাদুর হাতে নিজেদের দুই বাচ্চা মেয়েকে তুলে দিতে পেরেছে তাদের বাবা, জেঠু আর মা-কাকিমা-জেঠিমারা।

দামাল মরুঝড়

সবাই উঠে পড়ল উঠের পিঠে। উটুভাই আস্তে আস্তে উঠে পড়ল ওপরে। উটুভাইকে আর বলতে হল না কিছুকিভাবে উটের পিঠে উঠতে হয়, বসতে হয় বা নামতে হয় সব কিছু তিতলি আর পুচকি সোনার কেল্লা বইটা থেকে শিখে গেছে। উটুদাদা প্রশংসা করে বলল, তোমরা তো সব কায়দা জান দেখছি দিদিরা।

দাদু মুচকি হেসে বলল, ওরা সব জানে। তবে জটায়ু একটু যা বেগড়বাঁই করেছিল।

-সে এক কান্ড তাই না দাদু? পুচকির এই কথায় তিতলিও হেসে উঠল হো হো করে। উটুভাই বলল, একটু সাবধান থেক। বেশি হাসাহাসি করতে গিয়ে আবার যেন গরম বালিতে পড়ে যেয়ো না।

এই সময় উটুভাই হঠাৎ থেমে গেল। কে যেন তার রাশ টেনে ধরল। পুচকি তিতলি দুজনেই অবাক হয়ে তাকাল দাদুর দিকে। কই এখানে ওয়েসিস কোথায়? কোনও বাগান তো নেই। তবে উটুভাই থামল কেন।

দাদু মৃদু মৃদু ঘাড় দোলাচ্ছে। তার মানে উটুভাই যখন থেমেছে তখন নিশ্চয় একটা কারণ আছে। মুহূর্তে তৎপর হল উটুভাই। সবাইকে বলল, আকাশের দিকে দেখ সবাই। সাবধান সবাই চোখ বুজে ফেল। নইলে বিপদ হবে কিন্তু।

সবাই দেখল সারা আকাশ কালো করে কি যেন ঘুরতে ঘুরতে ছুটে আসছে। মেঘ নাকি? না না মেঘ কি এত কাছে থাকে? ঠিক এমন ধূলোবালির ঘূর্ণিপাক পুচকিরা দেখেছে সাইক্লোন, আমপান এমন ঘূর্ণিঝড়ের সময়। কিন্তু সে সব ঝড়ের ইঙ্গিতে আগে দেওয়া থাকত। রেডিও টিভি কাগজে আগে থেকে দেওয়া থাকত পূর্বাভাষ। ঝড়ের সময় সবাই বাড়ির ভেতর থাকত দরজা জানলা বন্ধ করে। দুষ্টুমী করে তিতলি একবার ঘরের জানলা খুলে দিয়েছিল। ব্যস অমনি ঘরে ঢুকে পড়েছিল দামাল ঝড়টা। ঘরে তখন ধুলোর এমন এক মেঘ। সারা ঘর ধুলোয় ধুলো। তিতলি পুচকি দুজন মিলে দাঁতে দাঁত চেপেও খোলা জানলাটা বন্ধ করতে পারছে না এমন ভীষণ অবস্থা। 

আর এখন তো তারা খোলা আকাশের নিচে। চারিদিকে শুধু বালি, বালি আর বালি। দাদু হেঁকে উঠল, মরুভূমির সাংঘাতিক বালিঝড়। সবাই চোখ বুজে দুই হাতের আঙ্গুল দিয়ে কানের ফুটো চেপে ধর। সামনে ঝুঁকে থাকবে সবাই। পেছনে একটুও না।

এদিকে তিতলিদের কথাটা বলেই উটুভাই মুখ নামিয়ে লাগিয়েছে দৌড়। থেমেছে গিয়ে বিরাট এক বালির স্তূপের কাছে। মুখটা গুঁজে দিল বালির সেই ডেলার ভেতর। আর দাঁড়িয়ে নয় একেবারে শুয়ে পড়েছে মাটিতে মানে বালিতে।

সে কি বিষম আওয়াজ। গায়ের ওপর যেন গরম পাথর ছুঁড়ে মারছে কারা। প্রতি মুহূর্তে তাদের মনে হচ্ছে যেন টাল খেতে খেতে তারা মাটিতে পড়ে যাবে। মাটি তো নেই কোথাও সে তো সব বালি।

এক সময় অবশ্য থামল সে ঝড়। শব্দটা গেছে। গায়ে আর গরম পাথরের টুকরো ছুঁড়ে মারছে না কেউ। দাদু বলল, এখন চোখ খুলতে পার দিদিভায়েরা।

সবাই চোখ খুলতে দেখল এক অবাক কান্ড। সে যেন এক বিরাট লন্ডভন্ড কান্ড হয়ে গেছে। এখানে ওখানে সেখানে বড় বড় নতুন বালির পাহাড় তৈরি হয়ে গেছে। আবার যেখানে পাহাড় ছিল সেখানে হয়ে গেছে খাল। দাদু বলেছে মরুর ঝড়ে এমনি হয়।

তিতলি বলল, কই দীঘার বিচে তো ঝড়ে বালি ওড়ে না দাদু।

পুচকি একটু ভেবে ঘাড় দোলাতে দোলাতে বলল, আমার মনে হয় দীঘা পুরীতেও বালি ওড়ে রে দিদি। মনে হয় আমি যেন দেখেছি।

কথাটা বলে দাদুর মুখের দিকে তাকাল। হয়ত দাদুর সমর্থনের আশায়। দাদু বলল, হ্যাঁ পুচকির কথা যে একেবারে বেঠিক তা নয়। তবে ভেবে দেখ এই মরুভূমি কি বিশাল। এখানে কত বাতাস। সে বাতাসে ঝড় উঠলে এমন সাংঘাতিক হবে না?

তিতলি বলল, ঠিক ঠিক। কথাটা আগে আমার মাথায় আসে নি।

এবার একটা বিপদ হল। কোথা থেকে সর সর করে তীব্র গতিতে একটা বিরাট সরু সাপ এঁকেবেঁকে ছুটে আসতে লাগল। দাদু চেঁচিয়ে উঠল, উটুভাই সাবধান। সাপটা কিন্তু এদিকেই আসছে।

তিতলি আর পুচকি সভয়ে সিঁটকে গেল। পুচকি বলল, এখানে সাপ! মরুভূমিতে সাপ থাকে দাদু?

তিতলি বলল, সাপ তো জলা জায়গায় বা বনজঙ্গলে থাকে গো দাদু। মরুভূমি তো শুকনো খটখটে।

দাদু বলল, থাকে থাকে। বেশ ভাল রকম থাকে। শুধু সাপ নয় বিছে বা অন্য পোকামাকড় পর্যন্ত থাকে।

পুচকি বলল, ধ্যেত এগুলো বিষাক্ত নয়।

দাদু বলল, খুব বিষাক্ত হয়। ভয়ঙ্কর বিষাক্ত। উটুভাই ও কিন্তু অনেক কাছে এসে গেল। আগে ভেবেছিলুম ওপাশ দিয়ে বেরিয়ে যাবে। কিন্তু-

সবাই উটুভাইয়ের দিকে তাকাল। তার ছোট ছোট চোখ ভয়ে যেন আরও কুতকুতে হয়ে গেছে। বিষম বিপদ উপস্থিত। সাপটা যে দ্রুত গতিতে এগিয়ে আসছে তাতে এঁকেবেঁকে না এসে সোজা এলে এতক্ষণে ধরে ফেলত নির্ঘাত।

সামনে সমূহ বিপদ। এখন কি হবে?

ফড় ফড় করে শব্দ। আকাশে একটা ছায়া। সেটা ক্রমশ বড় হচ্ছে। কিছু একটা উড়ে আসছে দূর থেকে। মাটির কাছাকাছি এসে গেছে।

বিপদ থেকে উদ্ধার

মুহূর্তে এক মজার কান্ড দেখা গেল। বিষাক্ত সেই বালির সাপটা ঝুলছে আকাশ থেকে। ঝুলছে ময়ূরদাদার ঠোঁট থেকে। কিন্তু শুধু ঝুলছে নয় একেবারে লাফিয়ে লাফিয়ে উঠছে। লেজ পাকিয়ে পাকিয়ে ওপরে উঠছে। লেজের পাকে জড়িয়ে ধরতে চেষ্টা করছে ময়ূরদাদার গলাটা। আবার ময়ূর দাদাও ডানা ঝাপটে ঝাপটে সে লেজ ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। আকাশের মধ্যে সে এক দারুণ লড়াই। কেউ ছাড়বে না এক ইঞ্চি জমি।

সবাই তো আকাশের দিকে তাকিয়ে। তিতলি আর পুচকি চোখ গোল্লা গোল্লা করে দেখছে। এমন সাংঘাতিক লড়াই তারা কখনও দেখেনি। বিশেষ আকাশের বুকে। বিশাল আকারের ময়ূরের মুখে পুঁচকে একটা সাপ। তবে আকারে নেহাত ছোট নয়। লেজ ধরে তো বিরাট লম্বা। রঙ গাঢ় বাদামী বা হলুদ। নানা রকম খাঁজ কাটা কাটা

তিতলির পলক যেন আর পড়ে না। এখন ভয় একটু কমেছে ভরসা বেড়েছে বলে। ভরসা শুধু ময়ূর দাদার জন্যে। চোখের সামনে দেখতে পারছে কি বিরাট লড়াইটা হচ্ছে। কি ভীষণ ধারালো ঠোঁট।

পুচকি বলল, সাপের গায়ের রঙটা যেন কেমন। হলুদ হলুদ।

তিতলি জিজ্ঞেস করল, কেন গো দাদু? কেন এমন রঙ?

দাদু বলল, এই জগতে প্রকৃতি সব প্রাণীদের প্রাণ রক্ষার ব্যবস্থা করে রেখেছেন। টিয়াপাখীর কেমন ঘোর সবুজ রঙ হয়। কারণ সে সবুজ গাছের আড়ালে বসে ফল খায়। তাকে কেউ দেখতে পায় না। চড়াই পাখীর রঙ ধুসর হয় কারণ এরা বেশির ভাগ ধুসর বা হলুদ খড় বা শুকনো কাঠি কুটির মধ্যে থাকে। লাউডগা সাপকে দেখতে ঠিক লাউগাছের ডগার মত ঘোর সবুজ সরু আর লম্বা হয়।

-বুঝেছি-

আচমকা দাদুর কথার মাঝে কথা বলায় পুচকি বেশ রেগে গেল। আসলে দাদুর কথা সে মন দিয়ে শুনছিলশুনতে বেশ ভাল লাগছিল। একটু রেগে গিয়ে বলে উ্যঠল, অমনি বললি বুঝেছি? কি বুঝেছিস শুনি? দাদুর থেকে বেশি জানিস নাকি?

তিতলি রাগ করল না বোনের কথায়। বেশ যেন মজা পেল। মজা পেয়ে বলল, ওরে পুচু এই মরুভূমির রঙ দেখ। এটা হলদে ওপরের দিকে আর ভেতরের দিকে গাঢ় বাদামী-

দাদু একটু বাধা দিল, আসলে ভেতরে রোদ তেমন পড়ে না। শুকনো বালির রঙ হলুদ কিন্তু ঠাসা জমাট বাঁধা বালি হয় গাঢ় বাদামী।

দাদু থামতেই তিতলি বলল, আত্মরক্ষার জন্যেই প্রকৃতি মরুভূমির সাপেদের রঙ এমন বালির রঙের সঙ্গে মিলিয়ে দিয়েছে। যাতে তারা বালির মধ্যে দিব্বি থেকে আত্মরক্ষা করতে পারে। কেউ বুঝতেও পারবে না। তাই না দাদু?

দাদু খুব খুশি হয়ে বলল, একেবারে ঠিক কথা বলেছ দিদিভাই। ঠিক এমনটাই এর কারণ।

তিতলি বলল, আমি আর নতুন কি বলব দাদু। এ তো সব তোমার কাছ থেকেই শেখা।

এদিকে আকাশের লড়াইটা তেমন জমে নি বোধহয়। সাপটাকে মুখে করে নিচে বালির ওপর নামল ময়ূর। তার গলা পেঁচিয়ে ধরেছে সাপের লেজ। একটা ডানাও ধরেছে পাকিয়ে পাকিয়ে। ময়ূরের ঠোঁট তো জোড়া। সেখানে চেপে রাখা আছে সাপের মুন্ডুটা। কিন্তু সে অবস্থাতেই সে মাথা ঝাঁকিয়ে ঝাঁকিয়ে সাপটাকে ক্ষতবিক্ষত করার চেষ্টা করছে মাটি মানে বালির সঙ্গে ঘষে ঘষে।

বেশ কিছুক্ষণ ধরে এই প্রচন্ড লড়াই চলতে চলতে সাপটা একসময় দুর্বল হয়ে পড়ল। তার লেজটা ক্রমে আলগা হয়ে পড়তে লাগল ময়ূরের গা থেকে। গলার প্যাঁচ আলগা হল। ডানা আবার নাড়তে পারল।

অবশেষে সাপটাকে ছেড়ে দিল ময়ূরদাদা। সাপটা কোনোমতে পালাতে পারলে যেন বাঁচে। আক্রমণ করার ক্ষমতা আর তেমন নেই তার শরীরে। প্রচন্ড গতিতে এঁকেবেঁকে দৌড় লাগাল।

তিতলি আর পুচকি হাততালি দিয়ে নেচে উঠল। পুচকি বলল, ময়ূরদাদা যুগ যুগ জিয়ো।

তিতলিদিদি তার গলা জড়িয়ে ধরে বলল, সত্যি তুমি না থাকলে যে কি হত।

ময়ূর দাদা একটু লজ্জা পেল। বলল, আমি যা দরকার তাই করব দিদিরা। তোমরা আমাদের পশু সমাজের কত প্রিয়। আর তোমাদের আমি রক্ষা করতে এগিয়ে আসব না বল কি? তাছাড়া-

-তাছাড়া?

পুচকিরা তো অবাক। এ ছাড়াও আরও কারণ আছে নাকি?

-দেখ দিদিরা তোমরা হলে আমাদের রাজার অতিথি।

-রাজ অতিথি? কোন রাজা গো?

পুচকি না জিজ্ঞেস করে পারল না।

-তোমরা যে আমাদের মরুভূমির রাজার অতিথি গো।

দাদু ফিসফিস করে তিতলির কানে কানে বলল, তোমাদের উটুভাই হচ্ছে মরুভূমির রাজা। বাঘুমামা যেমন সোদরবনের রাজা, সিংহমামা যেমন গির অরণ্যের রাজা তেমনি উটুভাই এখানের।

তিতলি সে কথা পুচকির কানে কানে বলতেই সে গর্বের হাসি হাসল। হ্যাঁ ঠিকই তো। রাজা হ্যায় তো এয়সা। যেমন বিশাল তেমনি উঁচু। রাজকীয় চেহারা বটে।

ময়ূর দাদা জিজ্ঞেস করল, তা তোমরা কোথাও যাচ্ছিলে বুঝি?

জবাব দিল দাদু, আমরা ওয়েসিস যাবার পরিকল্পনা করেছিলুম ময়ূর ভাই। আমাদের উটুভাই নিজে নিয়ে যাচ্ছিল।

-তা বেশ তো চল না।  আমি সামনে দিয়ে উড়ে উড়ে তোমাদের সঙ্গে যাচ্ছি।

সে আকাশে একটু উঁচুতে উড়তে লাগল। এমন সময় ময়ূর দিদি কোথা থেকে এসে যোগ দিল ময়ূর দাদার পাশে। সে এক দারুণ দৃশ্য।

মরুভূমির বাগিচা

উটুভাইয়ের পিঠে চেপে যেতে তাদের যে খুব অসুবিধে হচ্ছিল না বা খুব ভাল লাগছিল তা নয়। তবে সেটা একেবারে প্রথম দিকে। এরপর ব্যাপারটা একটু সয়ে যেতেই দারুণ মজা লাগল। কি সুন্দর যাত্রাপথ। তবে তাদের লটবহর তো সব এখন হাতিদাদার পিঠে। সে সেই অবস্থাতেই আকাশে শূন্যে ভেসে আছেসে কথা মনে হঠাৎ এসে গেল পুচকির। ম্লান মুখে বলে উঠল, আমাদের হাতিদাদার জন্যে বড় কষ্ট হচ্ছে গো দাদু। বেচারি এই মরুভূমির বাগান দেখতে পাচ্ছে না।

তিতলিও জুড়ল, সত্যি তো আমরা কত মজা করছি আর সে বেচারি।

দাদু বলল, মন খারাপ কর না সোনারা। ওর সঙ্গে যে দূরবীন আছে আমি টেলিপ্যাথিতে তার শক্তি বাড়িয়ে দেব। সেখান থেকেই সে সব দেখতে পাবে।

উটের সঙ্গে এই যাত্রা তাদের বেশ ভাল লাগছে। এমন দৃশ্য একমাত্র সিনেমায় দেখেছে তারা। সেই সোনার কেল্লা বইতে। কিন্তু তারা যে নিজেরা এমন ভাবে ভ্রমণ করতে পারবে ভাবা যায়?

ময়ূর দাদা আর ময়ূর দিদি তাদের দুই পাশে মাথার ওপর ডানা মেলে উড়ে যাচ্ছে। সেই ডানাতে ছায়া পড়ছে। রোদের কষ্ট আর হচ্ছে না।

মাঝে মাঝেই আগুনের মত হাওয়া বিঁধছে তাদের গায়ে। এ কথা অবশ্য রাজস্থানে ঢোকার আগে এক খাবারের দোকানে বেশ কয়েকজন বলেছিল। তিতলিদের বিশ্বভ্রমণ শুরু হয়ে গেছে। এর মধ্যেই কেটে গেছে সাত সাতটা দিন। যা খাবার বাড়ি থেকে দিয়েছিল তা কি আর থাকে? অতএব খাবারের সন্ধানে দোকানে যাওয়া ছাড়া উপায় কি? তবে দাদু কিন্তু ফলটল বা মিষ্টি খাওয়ার পক্ষপাতি। ভারতবর্ষে ফলের অভাব নেই। কিন্তু ভাত রুটি চাপাটি তো একেবারে না খেলে চলে না। তবে সেখানেও নিরামিষ খেতেই পছন্দ করে দাদু। নাতনিদের বলেছে, মাছ মাংস কি যে থাকবে সর্বদা বোঝা যায় না। কিন্তু যেমন ধর সয়াবিন দিয়ে তরকারি বা টক দই চিনি মিশিয়ে নিলে বেশ ভাল পুষ্টিকর খাবার হয়। মিষ্টির ক্ষেত্রে একটা অসুবিধে অবশ্য আছে। মিষ্টির আসল দেশ হল আমাদের এই সোনার বাংলা।

-কেন দাদু?

-আমাদের এই বাংলায় এত সুস্বাদু, মুখরোচক আর রসে ভরা মিষ্টি পাওয়া যায় যা কিন্তু পাওয়া যায় না অন্য কোনও দেশে।

পুচকি মুখভার করে বলল, রসগোল্লা পাওয়া যায় না দাদু?

তিতলিও যোগ দিয়েছে, পান্তুয়া, ছানার গজা, জিলিপি আর ল্যাংচা?

-না না ওসব কিচ্ছু নয়। এখানে সব ক্ষীরের মিষ্টি। রসের কিছু নয় সব শুকনো।

সকলের মুখও তাই শুকনো। দাদু বলেছে চিন্তার কি আছে দিদিভাই? আমরা কত রকমের ফল খাব। আঙুর, লেবু, পেঁপে, পেয়ারা, কলা তো আছেই। আরও নানা প্রদেশে নানা বিশেষ বিশেষ ফল।

তিতলি বলেছে, ছেড়ে দাও তো দাদু। আমাদের তো আর বেশি দিন লাগবে না ঘুরতে। গরমের ছুটির মধ্যেই হয়ে যাবে কি বল?

-হ্যাঁ তা তো বটেই। আর আমাদের হাতিদাদা উড়ছে তো মন্দ নয়।

-আচ্ছা দাদু সারা বিশ্ব ঘুরতে কত দিন সময় লাগার কথা?

-অনেক অনেক দিন সোনারা। আর দিন নয় মাস। বছরও গড়িয়ে যেতে পারে। তবে একজনের কথা জানিস দিদিভাই তিনি কিন্তু সারা বিশ্ব ঘুরেছিলেন মাত্র আশি দিনেই।

এরা সব বিস্ময়ে হাঁ হয়ে গেল।

-সে কি? তিতলি প্রশ্ন করার সঙ্গে সঙ্গে পুচকির মুখ দিয়ে বেরিয়ে এল, কি নাম দাদু ওনার?

-উনি একজন বিখ্যাত লেখক। নাম জুল ভার্ণ।

লাফিয়ে উঠল তিতলি, শুনেছি জেঠুর মুখে। উনি কল্পবিজ্ঞানের লেখক ছিলেন।

পুচকি প্রশ্ন করল, কল্পবিজ্ঞান কি দাদু?

দাদুকে একটু হোঁচট খেতে হল। বলল, ব্যাপারটা তোদের একটু বোঝানো শক্ত আছে। আরও বড় হলে ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে পারবি।

তিতলি মুখ চুন করে বলল, কিছুই কি বলা যায় না দাদু?

-তা যায় হয়ত। এই যেমন ধর বিজ্ঞান তো প্রমাণিত জিনিস। মানে নানা ভাবে বিজ্ঞানের তত্ত্ব সত্যি বলে প্রমাণ করা যায়। কিন্তু সেই বিজ্ঞানের ওপর আরও বেশি করে এগিয়ে গিয়ে সুন্দর করে মজার গল্প লেখা। সুন্দর সেই গল্পে বিজ্ঞানের যে আবিষ্কারগুলি লেখা হবে তা এখন প্রমাণ করা না গেলেও পরে প্রমাণ করা যেতে পারে।

তিতলি বলল, খুব ভাল করে তুমি বোঝালে দাদু। এই যে টেলিপ্যাথিতে নানা প্রাণীর সঙ্গে আমরা কথা বলছি সেগুলো সব বিজ্ঞান। আমার বিজ্ঞান খুব ভাল লাগে। কল্পবিজ্ঞান সেই বিজ্ঞানকেই আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে তাই না দাদু?

-একেবারে ঠিক। দাদু আনন্দে চেঁচিয়ে উঠল।

চেঁচিয়ে উঠল পুচকিও, তার মানে কল্পবিজ্ঞান সুন্দর আর মজার গল্প কি বল দাদু? হুররে! তোমার কাছে আমরা এবার থেকে কল্পবিজ্ঞানের গল্প শুনব রোজ।

-তা শুনবে। কিন্তু এখন একটু শোন জুল ভার্ণের কথা। তিনি সুন্দর একটি কল্পবিজ্ঞানের বই লিখেছিলেন। সেই বইয়ের নাম হল আশি দিনে বিশ্বভ্রমণ। তিনি নিজে অবশ্য বিশ্বভ্রমণে যান নি। পাঠিয়েছিলেন তাঁর গল্পের নায়ককে। এই নায়ক মাত্র আশি দিনে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে গিয়ে আবার আগের প্রান্তে ফিরে এসেছিলেন। তবে জুল ভার্ণ সেই বইতে কিন্তু আশি দিনের মধ্যে বিশ্বভ্রমণের হিসেব মিলিয়ে দিয়েছিলেন।

যাক এবার অন্য কথায় আসা যাক। দোকানে খেতে টাকা লাগে। কিন্তু দাদুই বা আর কত টাকা আনবে সঙ্গে। তবে দাদুর সঙ্গে আছে ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড। দাদু বলেছে এই কার্ড থাকলে দাদুর ব্যাংকের টাকা আপনি এসে পড়বে এখানে। শুধু এখানে কেন যেখানেই যাক না কেন।

দোকানে একজন শুনেছে তারা নাকি রাজস্থান যাবার পরিকল্পনা করেছে। একজন পরামর্শ দিয়েছে দাদুকে বড় সাদা চাদর কিনতে। সেই চাদর আপাদমস্তক তারা ঢেকে রেখেছে। তিতলি পুচকিরা অবশ্য প্রথমে জিজ্ঞেস করেছিল কেন এমন করতে হয়। দাদু বলেছে তাহলে গরম হাওয়া আর ঢুকতে পারে না শরীরে। সাদা হওয়ার কারণে এগুলো মরুভূমির তাপকে দূরে ঠেলে সরিয়ে দেয়।

বেশ কিছুক্ষণ হাঁটার পর যেন গরমের ভাব একটু কমল। উটুভাই বলল, এবার চাদর খুলে ফেলা যাবে।

চাদর খুলে সামনে তাকাল তারা। আর যেন মোহিত হয়ে গেল। সামনে বেশ কিছু কাঁটা গাছওয়ালা ঘেরা জায়গা। আর সেই ঘেরা জায়গার মধ্যে সুন্দর একটা পুকুর। স্বচ্ছ জল টলটল করছে।

-এই হল ওয়েসিস বা মরূদ্যান। এখানে গরম কম। তোমরা সব নামতে পার।

মরুভূমির পান্থনিবাস

এই কথা বলে উটুভাই হাঁটু মুড়ে বসল। এক এক করে নামল তিতলি আর পুচকি। শেষে দাদু। তিতলিদের মজা দেখে কে। কি সুন্দর সরোবর। কি পরিষ্কার তার জল। বেশ ঠান্ডা ঠান্ডা হাওয়া বইছে। দাদু বলেছে, এখানে সব বালি থাকার কারণে জল এত পরিষ্কার এত স্বচ্ছ।

একটা কলা গাছের মত অদ্ভুত গাছ নজরে পড়ল তিতলিদের। পুচকি চেঁচিয়ে উঠল, কি সুন্দর কলাগাছ। দেখ দিদি দেখ।

দেখে তিতলিও অবাক। দাদুর দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল, কলাগাছ এমন কেন দাদু?

দাদু হেসে বলল, এগুলো কলাগাছ নয়।  

-তবে?

-এগুলো মরুভূমির এক অদ্ভুত গাছ এর নাম পান্থনিবাসএকে ইংরেজিতে বলে ট্র্যাভেলার্স ট্রি। গোড়ার দিকটা বেশ চওড়া। আর ওপরে গিয়ে ভাগে ভাগ হয়ে গেছে। প্রত্যেকটি ভাগের ওপরে বসে আছে এক একটি কলাপাতা।

ময়ূর দাদা এগিয়ে গিয়ে গাছের গোড়ার দিকে চওড়া জায়গাটায় তার শক্ত ঠোঁট দিয়ে আঘাত করতে তো এরা অবাক। ফোয়ারার মত পরিষ্কার জল বেরিয়ে এল। দাদু বলল, এই জল কিন্তু খাওয়া যায়। তবে আমাদের সঙ্গে যখন জল আছে তখন আর খাবার দরকার নেই। এখন সারা পৃথিবীতে দূষণ বেড়ে গেছে।

পুচকি মোহিত হয়ে দেখছিল গাছটা। বলল, কি সুন্দর।

দাদু বলল, সত্যি সুন্দর। প্রায় সব দেশেই পাওয়া যায় এই গাছ। মরু অঞ্চলের গাছ হলেও পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই কৃত্রিম ভাবে তৈরি করা যায়। গাছটা এত সুন্দর দেখতে বলে নানা জায়গায় সাজানোর উপকরণ হিসেবে বসান হয় এই গাছ।

-আচ্ছা দাদু গাছের গোড়া এত মোটা কেন হয়?

তিতলির প্রশ্নে দাদু বলল, গাছ তার গোড়ায় প্রচুর জল জমিয়ে রাখে। মরুভূমিতে মরূদ্যান ছাড়াও কিছু কিছু জায়গায় এই গাছ হয়। তৃষ্ণার্ত পথিকেরা এর গোড়া থেকেই জল পায়। সেই জন্যেই তো একে পান্থপাদপ বলে। পান্থ মানে হল-

পুচকি ঝট করে বলল, পথিক। যারা ভ্রমণ করে। এই যেমন আমরা।

দাদু তার পিঠ চাপড়ে বলল, একেবারে ঠিক দিদিভাই। এখানে আরও অনেক কিছু আছে দেখার। দেখতে হবে তো?

-এখানে এত কাঁটা গাছ কেন দাদু? তিতলির প্রশ্ন।

-মরু অঞ্চলে জল পাওয়া যায় না। তাই এমন কাঁটা হয়ে যায়।

এবার ঘুরতে ঘুরতে একটা জায়গায় এসে পড়ে। কাঁটা গাছে ভর্তি বটে। কিন্তু ওপরে তাকিয়ে তিতলি বলে, পুচু দেখ দেখ।

পুচকি অবাক হয়ে দেখে গাছের ওপর থেকে থোকা থোকা ঝুলছে। এক একটা থোকায় শয়ে শয়ে ছোট ছোট বাদামী রঙের ফল।

পুচকি লাফিয়ে উঠল, খেজুর খেজুর।

দাদু বলল, হ্যাঁ মরুভূমির এটা বৈশিষ্ট। পথিকেরা জল পায় আবার খাদ্য পায়।

ময়ূর দাদা তার তীক্ষ্ণ ঠোঁট দিয়ে একটা বেশ বড় থোকা এনে হাজির করল। খেয়ে দেখল দুজন। পুচকি বলল, কি মিষ্টি দেখ রে দিদি।

দুজনের বেশ খিদে পেয়ে গিয়েছিল। পেট ভরে খেল তারা। ময়ূর দাদা আর ময়ূরী দিদি দাদুর জন্যেও এনে দিয়েছে একটা বড় খেজুরের ঝাড়। দাদুও বেশ মজা করে খেতে লাগল। বলল, সত্যি দিদিভায়েরা। এমন মিষ্টি খেজুর আমি কখনও খাই নি।

উটুভাই একটু পান্থপাদপের ছায়ায় বিশ্রাম নিচ্ছিল। এখন এসে বলল, এবার তো আমাদের যেতে হবে দিদিরা। চল দাদু এবার আমরা যাই।

উটুদাদাকে আর কষ্ট দিল না কেউ। দাদুকে পিঠে নিল ময়ূর দিদি। আর তিতলি পুচকিকে ময়ূরী দিদি। উটুভাইকে বাই জানিয়ে ফর ফর করে উড়তে লাগল। আকাশে যেখানে হাতিদাদা আছে সেখানে।

হাতিদাদা হাসিমুখে গলার ঘন্টা নাড়িয়ে স্বাগত জানাল তাদের। বলল, এবার এই মরুর দেশ ছাড়ার সময় এসে গেছে দিদিভায়েরা।

ময়ূর দাদা আর ময়ূর দিদির চোখে জল। দাদু সান্ত্বনা দিয়ে বলল, আবার দেখা যে হবে তা বলতে পারি না। তবে টেলিপ্যাথিতে কথা নিশ্চয় হবে দিদিদের সঙ্গে বা আমার সঙ্গে। ভাল থেক ময়ূর ভাই দিদি। বিদায়।

তুষারের ডাক

বিশ্বভ্রমণের দুটো পর্ব মানে বাংলা ভ্রমণ আর ভারত ভ্রমণ শেষ হবার মুখেএবার শুরু হবে বহির্বিশ্বে মানে ভারতের বাইরে ভ্রমণ। কিন্তু তার আগে তো পেরোতে হবে ভারতের উত্তরের শেষ সীমানা মানে দীর্ঘ আর বিরাট পর্বতমালা। হাতিদাদা বলল সে কথা। বলল, বিশ্বে বেরোতে গেলে পেরোতে হবে গিরিরাজটাকে তা জান তো?

-গিরিরাজ কি গো দাদু? পুচকির প্রশ্নে খুব একচোট হেসে নিয়ে তিতলি বলল, গিরিদের রাজা হল গিরিরাজ রে পুচু।

-বুঝলুম কিন্তু সেই রাজাটা কে শুনি? সে কি তলোয়ার দিয়ে যুদ্ধ করে নাকি বন্দুক কামান দিয়ে?

দাদু হাসল, গিরি মানে কি পুচকি?

পুচকি বেশ একটু ভেবে বলল, পাহাড় তাই না দাদু?

-পাহাড়ই যদি হয় তো সে মানুষ হবে কি করে? আর মানুষই যদি না হয় তো সে যুদ্ধ করবে কি করে?

পুচকি গালে আঙ্গুল দিয়ে ভাবতে লাগল। সেই অবসরে দাদু বলল, আমাদের হাতিদাদার গিরিরাজ মানে হল হিমালয় পর্বতমালা। অনেক পাহাড় মিলে আর সারি সারি দাঁড়িয়ে একটা বিরাট মালার মত করে আছে বলে বলে পর্বতমালা। ভারতের উত্তর দিকে পূর্ব থেকে পশ্চিমদিক পর্যন্ত বিরাট এই মালা প্রায় আড়াই হাজার কিলোমিটার বা দেড় হাজার মেইল লম্বা

-একেবারে সবচেয়ে উঁচু চুড়ো তো এভারেস্ট তাই না দাদু?

-তা বটে তবে এটা কিন্তু নেপালে অবস্থিত ভারতে নয়।

পুচকি বলল, হিমালয়ের একেবারে ওপরে সব বরফ জমে থাকে তাই না দাদু?

তিতলি বলল, ধ্যেত পুচু তুই কিচ্ছু জানিস না। জমেও থাকে আবার গলেও যায়।

দাদু বলল, হ্যাঁ ঠিক কথা। এই সব বরফ গলে গিয়ে অনেক নদীর সৃষ্টি হয়। নদী ছাড়াও হয় হ্রদ মানে যেখানে বরফ গলা জল জমে থাকে।

পুচকির প্রশ্ন, গঙ্গানদী এখান থেকেই হয়েছে দাদু?

তিতলি বলল, শুধু গঙ্গা কেন যমুনা ব্রহ্মপুত্র তিস্তা তোর্সা আরও কত।

দাদু বলল, হ্যাঁ তা বটে। সব বড় হয়ে ভূগোলে পড়বে।  

এরপর হাতিদাদা ক্রমশ উড়তেই থাকে আর উড়তেই থাকে আর ওপরে উঠতে থাকে তাদের নিচে পাহাড়। আর সে পাহাড়ে ঘন জঙ্গল। জঙ্গল ক্রমশ কমতে থাকে যত উচ্চতা বাড়তে থাকে। পাহাড়ের চুড়োয় চুড়োয় কি সব যেন চকচকে জিনিস দিয়ে ঢাকা। তিতলি আর পুচকি অবাক হয়ে চেয়ে থাকে।

-পুচু দেখ দেখ কেমন পাহাড়ের মাথায় বরফ।

তিতলি চেঁচিয়ে উঠতেই পুচকি দাদুকে জিজ্ঞেস করল, সত্যি এগুলো বরফ নাকি গো দাদু?

দাদু বলল, সত্যি গো দিদিভাই। এগুলো বরফ।

-আচ্ছা পাহাড়ের মাথায় বরফ জমে কেন? কই আমাদের বাড়ির উঠোনে বা ছাদে তো জমে না।

-আসলে কি জান দিদিভাই। এই যে সূর্য থেকে রোজ পৃথিবীতে আলো পড়ে তা কিন্তু মাটিতেই পড়ে আর মাটি সেই তাপ ফিরিয়ে দেয় আমরা গরম হয়ে যাই। সেখানে যা গরম তাতে বরফ জমতে পারে না।

-কিন্তু এখানে কেন জমে?

-এখানে মানে পাহাড়ের অনেক উঁচুতে মাটিতে পড়া তাপ বাতাসের মধ্যে দিয়ে আসতে আসতে অনেক কমে যায়। তাই পাহাড়ের ওপরটা ঠান্ডা। যত ওপরে যাবে ততই ঠান্ডা।

তিতলির মনে একটা চমৎকার প্রশ্ন এল। সেটা সে না বলে পারল না।

-দাদু সূর্যের তাপ তো আমাদের এখান দিয়েই যাচ্ছে মাটিতে। তবে আমাদের এখানেই তো আগে গরম হওয়া উচিত ছিল কি বল?

-তা ছিল। কিন্তু তা হয় না কারণ তাপ আগে মাটিকে গরম করে বাতাসকে তারপর। এটা মাটির ধর্ম। তাই পাহাড়ের যত ওপরে উঠবে ততই ঠান্ডা।

এরপর তারা শুধু অবাক হয়ে দেখে আর দেখে। চুড়োয় চূড়োয় শুধুই সাদা বরফ। যেন সাদা চাদর দিয়ে ঢেকে দিয়েছে সারা পাহাড়টাকে। তিতলির মাথায় হঠাৎ এল একটা জিনিস। কে যেন কানে কানে বলল, এখানে বরফ কি করে এল তা দাদুর কাছ থেকে জেনে নে।

দাদু বলল, বরফ এল জল থেকে।

পুচকি ঝট করে বলে বসল, জল তো নিজে গড়ায় দাদু। তা জল কি করে পাহাড়ের এত ওপরে উঠবে?

কথাটা বলেই মনে মনে লজ্জায় জিভ কাড়ল সে। ইস দাদু যদি তাকে বোকা ভাবে? কিন্তু তা ভাবল না দাদু। পুচকির দিকে প্রশংসার দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, বেশ বুদ্ধিমানের মত প্রশ্ন করেছিস দিদি। এটা তো একেবারে ঠিক। জল সর্বদা নিচে গড়ায়। তাই তো নদীও গড়ায় পাহাড়ের চুড়ো থেকে।

দাদু চুপ করে রইল খানিক। পুচকিও নিজের প্রশ্ন ভুলে মুগ্ধ হয়ে পাহাড়ের বরফ দেখছে। আর তিতলি তো হাঁ হয়েই আছে।

-জল নিচে যেতে পারে না কিন্তু জলের বাষ্প তো যেতে পারে?

দুই বোন ভেবে দেখল কথাটা তো দারুণ ঠিক। তবু তারা চুপ করে রইল। দাদুর দিকে চেয়ে রইল দাদু এরপর কি বলে তা শোনার জন্যে।

-রোদের তাপে সব জলাশয়ের জল বাষ্প হয়ে ওপরে ওঠে। তবে শুধুমাত্র বাষ্প ওঠে জলের ওপরের পিঠ থেকে। নাহলে সব পুকুর নদী শুকিয়ে কাঠ হয়ে যেত। সেই বাষ্প আকাশে উড়ে গিয়ে ঠান্ডায় মেঘে হয়। আর ভেঙ্গে পড়ে পাহাড়ের মাথায়। কিন্তু সেখানে প্রচন্ড ঠান্ডার কারণে তা বরফ হয়ে যায়।

-তবে নদী হয় কি করে দাদু? এই বরফ না গললে তো জল হয় না।

পুচকির এই কথার পিঠে তিতলি বলল, শুধু নদী নয় ঝরণাও।

-হ্যাঁ ঝরণাও। দাদু বলল, রোদ যখন ওঠে বেড়ে ওঠে তার তাপ আর সেই তাপে এই বরফ গলে জল হয়। পাহাড়ের ওপরে নদী বা ঝরণার জল বরফের মত ঠাণ্ডা।

বেশ কিছুক্ষণ ধরে দাদুর এই সুন্দর কথাটা মাথার মধ্যে ভাল করে ঢুকিয়ে নিল দুই বোন। তারপর তিতলি বলল, তোমার কাছ থেকে অনেক কিছু জানা গেল দাদু।

কিন্তু জানার অনেক কিছু বাকি ছিল বুঝি। পুচকি চেঁচিয়ে উঠল, বেড়াল বেড়াল। দিদি দেখ বরফের মধ্যে বেড়াল।

এ কোন বেড়াল?

তিতলি বলল, ইস বেড়ালরা যা সুখের প্রাণী এই ঠান্ডায় ওরা বরফে ঘুরতে ওদের বয়ে গেছে পুচু। কি দেখতে কি দেখেছিস।

কিন্তু হাতিদাদা আর একটু নামতেই দেখা গেল কয়েকটা বেড়াল ঘুরে বেড়াচ্ছে বরফের ওপরে। দাদু ভাল করে দেখে বলল, পুচকি ভুল বলে নি তিতলি দিদিভাই। তবে এগুলো বেড়ালের মত হলেও ঠিক বেড়াল নয়। এরা আকারে কিন্তু বেড়ালের থেকে বেশ বড় হয় আবার চিতাবাঘের থেকে আকারে বেশ ছোটও। চিতাবাঘের মত দেখতে বা প্রজাতির হলেও এদের গায়ের রঙ সাদা হয় আর চিতার মত ছোপ ছোপ থাকে না।

হাতিদাদা বলল, এ জন্তুদের ব্যাপারে আমি কিন্তু কিছু জানি না। এরা পাহাড়ের এত ওপরে থাকে তাই আমাদের সঙ্গে তেমন আলাপ নেই। 

-এদের বলে পাহাড়ি চিতা বা স্নো লেপার্ড। এরা পাহাড়ে প্রায় নয় দশ হাজার ফুট ওপরে থাকে গো দিদিভাই। আমাদের হিমালয়ের সারা উত্তর জুড়ে মানে ধর পূর্বের সেই অরুণাচল থেকে শুরু করে একদম পশ্চিমের লাদাখ আর মাঝে হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখন্ড সিকিমের পাহাড়ের বরফ অঞ্চলে বাস করে। এদের আকার যেমন বাঘ বা চিতাবাঘের থেকে অনেক কম তেমনি ওজনেও এরা বাঘের তুলনায় অনেক কম। এই ধর পঞ্চাশ থেকে পঁচাত্তর কেজি হবে।

ততক্ষণে আরও নিচে নেমে এসেছে তারা। এখানে সামান্য গাছপালা আছে। সেই গাছপালার ছায়ায় আর পাথরের আড়ালে দেখা গেল একজনকে বেশ আরাম করে হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে থাকতে। পেটের ভেতর দিকটা সাদা। ঘাড় মাথা আর পায়ের ওপরের দিক হালকা ছাই ছাই বাদামী। চিতার মত গোল গোল দাগ আছে তবে তুলনায় অনেক কম কিন্তু অনেক বড় মাপের। এই ছোপে কালোর ভাগটাই বেশি। আবার লেজ জুড়ে আছে এই কালো ফোঁটা। মুখখানাও বাঘের মত তেমন বড় নয়।

পুচকি দেখল একজন একটা পাথরের ওপর মুখটা বসিয়ে যেন কি ভাবছে। তিতলির গা ঠেলে সে বলল, দেখ দেখ দিদি বেড়ালটা কি যেন ভাবছে।

-আরে না না ওটা বেড়াল নয়। দাদুর মুখে শুনলি না ওটা হল পাহাড়ি চিতা।

আবার উঁচুতে উঠে এগোল তারা। নিচে দেখল আর এক প্রজাতির পাহাড়ি চিতা বা স্নো লেপার্ড। তিতলি লাফিয়ে উঠে বলল, এ মা কি সুন্দর দেখ পুচু।

নিচে তিন তিনটে পাহাড়ি চিতার বাচ্চা একসঙ্গে মাখামাখি করে শুয়ে আছে। ঠিক যেন তিন তিনটে ফুটফুটে বেড়াল বাচ্চা জড়াজড়ি করে শুয়ে আছে। তবে একেবারে বেড়ালের মত সাদামাঠা গা নয়। বাঘের মত গাঁট্টা গোট্টা আর বেশ ছোপ আছে।

পুচকি বলল, দাদু এই বাচ্চাগুলো আমার চাই।

তিতলিও বায়না করল, আমারও চাই।

দাদু বলল, নিতে যাও না একবার দেখবে কেমন ওদের বাবা মা তেড়ে আসে।

-ওমা আমাদের হাতিদাদা আছে কি করতে শুনি? পুচকি বড় বড় চোখ করে বলল, আমি আর দিদি দুজনে মিলে কোলে তুলেই নিয়ে আসব। আর হাতদাদা সাঁ সাঁ করে উড়ে যাবে।

দাদু বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে বলল, আচ্ছা দিদিভাই, ধর তোমাদের পাড়ায় ঢুকে কেউ যদি তোমাদের দুজনকে তুলে নিয়ে চলে যায়? তোমরাও তো তোমাদের বাবা মায়ের ফুটফুটে দুই সন্তান। কত সুন্দর দেখতে তোমাদের?

মুখ চুন হয়ে গেল দুই বোনের। কল্পনায় দেখতে লাগল মুর্শিদাবাদ আর ডিমাপুরে তখন বেধে যাবে শোকযজ্ঞ। কি ব্যথা যে পাবে তাদের দুই পরিবার বা অন্য আত্মীয়স্বজন এটা ভাবতে গিয়ে চোখে জল চলে এল। তিতলি সামলে নিয়ে বলল, না গো দাদু। আমি এমনি বলছিলুম।

পুচকি বলল, আমিও।

একটু পরেই আবার এক মজার দৃশ্য। নিচে আবার একটা। নিচের চিতাটা তখন আরামে হাই তুলছে। চোখ তার বোজা। বিরাট হাঁ-এর ভেতর সামনের দিকের দুটো দাঁত লম্বা আর বাকিগুলো ছোট। দাদু বলেছে এগুলোকে স্বদন্ত বলে বা ইনসাইজার। এগুলো দিয়ে মাংস ছিঁড়ে খায়। লম্বা হওয়ার দরুণ এগুলো মাংসের অনেক গভীরে ঢুকে যেতে পারে।

দাঁতের কথা মনে পড়তেই শিকারের কথা মনে এসে গেল তিতলির। জিজ্ঞেস করল, এমন ধারাল দাঁত দিয়ে কি শিকার করে দাদু? এরা কি খায়? এখানে তো কোনও জন্তু তেমন দেখলুম না?

পুচকি বলল, ঠিক বটে। এখানে তো তেমন গভীর জঙ্গল নেই। এখানে তো হরিণ পাওয়া যায় না দাদু? বাঁদর এসব?

-না তা পাওয়া যায় না বটে। তবে এরা বিশেষ খুব ভোরে অথবা বিকেল থেকে সন্ধ্যে পর্যন্ত ঘুরে ঘুরে  পড়ে থাকা মরা পশুপাখী খুঁজে খুঁজে খায়। এরা কিন্তু মাংসাশী প্রাণী।

-শুধুই মরা জীবজন্তু বা পশুপাখী? কই জীবজন্তু আর কই?

কিছু না বলে হাতিদাদাকে আর একটু নিচে নামতে বলল দাদু। এখানে বরফ কিছুটা কমসামান্য গাছপালাও নেইধুসর জায়গাটা। পুচকি চেঁচিয়ে উঠল, ছাগল ছাগল বলে।

দাদু বলল, হ্যাঁ ঠিক তবে এরা হিমালয়ের ছাগল এদের বলে হিমালয়ান গোট। লক্ষ করে দেখেছ এদের রঙ সব ধুসর।

তিতলি বলল, আশপাশের পাথরের সঙ্গে রঙ মিলিয়ে-

পুচকি চিৎকার করে উঠল, ক্যামোফ্লেজ ক্যামোফ্লেজ।

কোথা থেকে এই শব্দটা সে শুনেছে। দাদু একদিন বলেছিল মিলিটারিরা নাকি এই শব্দটা বেশি ব্যবহার করে শত্রুর হাত থেকে নিজেকে লুকিয়ে রাখার জন্যে। কথাটা আজ মনে পড়ে গেল। দাদু বলল, ঠিক বলেছ পুচকি দিদি। এ হল প্রকৃতির ক্যামোফ্লেজ। সে যাই হোক এই প্রাণীরা এই সব ছাগল, বরফের দেশে পাওয়া যায় এমন কিছু শূকর, কাক বা বানর জাতীয় প্রাণী। এরা জীবিত মানে সঙ্গে সঙ্গে শিকার করা হোক বা পড়ে থাকা মরা জীবজন্তুই হোক সব খেতে অভ্যস্ত।

তিতলি বলল, এখানে এই বরফের দেশে না এলে তো এদের দেখাই যেত না।

-তা ঠিক তবে এরা সারা পৃথিবীর দশ বারটা দেশেই পাওয়া যায়। চীনে পাহাড়ি চিতার সংখ্যা হচ্ছে সর্বাধিক। তারপর মঙ্গোলিয়া। তৃতীয় স্থানটা কিন্তু আমাদের এই ভারতবর্ষ। আমাদের ভারতীয় পাহাড়ি চিতার সংখ্যা চারশ ছাড়িয়ে গেছে।

একটা কথা বলার জন্যে পুচকি খুব উসখুস করছিল। দাদু হেসে জিজ্ঞেস করল, পুচকি দিদি কি কিছু বলতে চাও?

-দাদু আমরা এই পাহাড়ি চিতাদের সঙ্গে কথা বলতে পারি না টেলিপ্যাথিতে।

-বোধহয় না। এরা সব শীতের দেশের বাসিন্দা। তোমরা দুই বোন শীতকে খুব ভয় পাও। তাই টেলিপ্যাথি করা চলবে না। আচ্ছা দিদিভাই এবার তো আমাদের এগিয়ে যেতেই হবেএতবড় হিমালয় পাহাড়টা না ডিঙ্গোলে তো আর ওপারের দেশগুলোতে পৌঁছতে পারব না।  

হাতিদাদা বলল, এ যে অনেক বড় প্রোগ্রাম দিদিরা। চল এবার উড়ি তবে। 

বাঘ, ভালুক, হাতি, গন্ডার বলতে তিতলিদের প্রথমেই মনে পড়ল আফ্রিকার কথা। তিতলি পুচকির দিকে চাইল। চোখে চোখে কী যেন কথা হল। দুজনে চাইল দাদুর দিকে। দাদু তো টেলিপ্যাথিতে সব জেনে ফেলেছে তাদের মনের গভীরে লুকিয়ে থাকা প্রশ্নের কথা।

মুচকি হেসে বলল, আমরা এখন চলেছি আফ্রিকার দিকে। নানা জন্তুজানোয়ারের সেটাই তো মস্ত আবাস।

হাতিদাদা বলল, হ্যাঁ  গো আমার ছোট্ট ছোট্ট দিদিভায়েরা। আমি তোমাদের নিয়ে চলেছি এখন সেই দিকেই। হিমালয় পাহাড়টা এখন পেরোতে হবে এই যা কথা।

[দ্বিতীয় পর্ব শেষ] 

_______________________________________________________________________________

 

ড. অরুণ চট্টোপাধ্যায়

181/44 জিটি রোড

পোস্ট-  বৈদ্যবাটি

জেলা- হুগলি 

পশ্চিমবঙ্গ

[চিত্রঃ: ইন্টারনেট মাধ্যম থেকে সংগৃহীত]

মন্তব্যসমূহ

সপ্তাহের পছন্দ

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় ৪৫ ।।আগস্ট, ২০২৫

ছড়া ।। গ্রামের হাট ।। গোবিন্দ মোদক

ছোটদের আঁকিবুঁকি ।। কিশলয় মাসিক পত্রিকা ।। পঞ্চচত্বারিংশ সংখ্যা ।। আগস্ট ২০২৫

কবিতা ।। প্রত্যয় ।। শৈবাল কর্মকার

ছড়া ।। আয় বৃষ্টি আয় ।। হারান চন্দ্র মিস্ত্রী

গল্প ।। মেজমামার অদ্ভুত কান্ড ।। অঞ্জনা মজুমদার

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় - ১১ ।। আগস্ট ২০২২

ছড়া।। পাখপাখালির মেলা ।। চন্দন মিত্র

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় ৪৪ ।। জুলাই ২০২৫

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় ৪২ ।। মে ২০২৫

মাসের পছন্দ

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় ৪৫ ।।আগস্ট, ২০২৫

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় ৪৪ ।। জুলাই ২০২৫

ছড়া ।। গ্রামের হাট ।। গোবিন্দ মোদক

ছড়া ।। আয় বৃষ্টি আয় ।। হারান চন্দ্র মিস্ত্রী

ছোটদের আঁকিবুঁকি ।। কিশলয় মাসিক পত্রিকা ।। পঞ্চচত্বারিংশ সংখ্যা ।। আগস্ট ২০২৫

কবিতা ।। প্রত্যয় ।। শৈবাল কর্মকার

গল্প ।। মেজমামার অদ্ভুত কান্ড ।। অঞ্জনা মজুমদার

ছড়া।। পাখপাখালির মেলা ।। চন্দন মিত্র

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় - ১১ ।। আগস্ট ২০২২

শব্দখেলা, ক্যুইজ, ধাঁধা ।। 4th issue: January 2022

বছরের পছন্দ

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় ৪০ ।। মার্চ ২০২৫

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় ৪৪ ।। জুলাই ২০২৫

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 38th issue: January 2025

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সুচিপত্র ।। 37th issue: December 2024

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় ৪১ ।। এপ্রিল ২০২৫

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় ৪২ ।। মে ২০২৫

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। ,39th issue: February 2025

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। পঞ্চত্রিংশ সংখ্যা ।। আগষ্ট ২০২৪

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় ৪৩ ।। জুন ২০২৫

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। ষড়ত্রিংশ সংখ্যা ।। সেপ্টেম্বর ২০২৪

অতি প্রিয়

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। আত্মপ্রকাশ সংখ্যা ।। অক্টোবর ২০২১

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। দ্বিতীয় সংখ্যা ।। নভেম্বর ২০২১

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 4th issue: January 2022,

নিবন্ধ ।। শিশু-কিশোর সাহিত্যবলয়ে শিশুরাই যেন ব্রাত‍্য না থাকে ।। অরবিন্দ পুরকাইত

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 7th issue: April 2022

নিবন্ধ ।। দেশীয় উদ্ভিদ কেন গুরুত্বপূর্ণ ? ।। ডঃ চিত্তরঞ্জন দাস

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় - ১১ ।। আগস্ট ২০২২

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় - ১০ ।। জুলাই ২০২২

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র : 8th issue: May 2022

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় - ১২ ।। সেপ্টেম্বর ২০২২