বর্ষার দিনে
প্রমা কর্মকার
ভোরের থেকে বৃষ্টি হচ্ছে। চারিদিক অন্ধকার, হালকা ঠান্ডা একটা বাতাস বইছে। তাতেই বাড়ির পিছনের বাঁশ গাছগুলো সর্ সর্ করে উঠছে। জানালার পাশে বসে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছি। মাটির একটা সোঁদা গন্ধ নাকে আসছে। শুকনো মাটিতে বৃষ্টির জল পড়ার পর এই যে গন্ধটা ওঠে এই গন্ধটা বেশ ভালো লাগে আমার। এখন যদি কেউ আমাদের বাড়ি থেকে একটু দূরের মাটিতে যাও গেলেই দেখতে পাবে কেউ ছাতা মাথায় কেউ বা ভিজে ভিজেই ধান রুইছে। মাঠের ছোটো বড়ো নালা গুলো দিয়ে কল্ কল্ শব্দে জল বয়ে যাচ্ছে। আগে এই নালা গুলোতে ও জমিতে ছোটো মাছ, কাঁকড়া পাওয়া যেত। এখনও পাওয়া যায় তবে বেশি না। আগে আমাদের বাড়িতে যে কাকিমা কাজ করতে আসত। সে আমাদের কাঁকড়া,গড়ুইমাছ, কৈ মাছ আরও অনেক রকম মাছ এনে দিত।
আমি এবার জানালার কাছ থেকে উঠে রান্নাঘরের দিকে একবার উঁকি মারতে গেলাম। দেখি রান্নাঘরে কেউ নেই। পা টিপে টিপে ভিতরে গেলাম। একটা প্লেটের উপর ঢাকাটা সরাতেই দেখি গরম গরম আলুর পকোড়া রাখা আছে। 'পকোড়া' আনন্দে আপনিই মুখ থেকে বেরিয়ে গেল শব্দটা। কিন্তু তখনই ভারি রাগ হল, মা পকোড়া ভেজেছে এখনো আমাকে দেয়নি। এটা খুবই অন্যায় হয়েছে। মা তো জানে যে আমি পকোড়া খেতে কতটা ভালোবাসি। তাও এইরকম একটা দিনে। যাক গে আমি তাড়াতাড়ি পকোড়া গুলো নিতে গেলাম। যেই না হাত দিয়েছি ওমনি পিছন থেকে কার ডাক শোনা গেল। পিছন ফিরে দেখি ঠাম্মি দাঁড়িয়ে। ইস্ যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়। ঘুরে দাঁড়ালাম। ঠাম্মা বললো- এখানে কী করছিস? আমি আমতা আমতা করে বলে উঠলাম -এই আরকি।' হঠাৎ আমার মথায় একটা বুদ্ধি খেলে গেল। বললাম-' ওই যে ঠাম্মী , একটা বেড়াল রান্নাঘরে ঢুকেছিল সেটাকেই তাড়াতে এলাম।' যাক্ বাবা বেঁচে গেলাম। আমিও চুপচাপ ঘরে চলে এলাম। পকোড়া গুলো রান্নাঘরেই রয়ে গেল। তোমাদের মধ্যে কারোর না কারোর এরকম অভিজ্ঞতা একবার হলেও হয়েছে। এখন চুপচাপ বসে থাকতে একদম ভালো লাগছে না। তাই বসার ঘরে চলে এলাম। সেখানে বাবা টিভিতে খবর দেখছিল। কিসের খবর! কিসের আবার বন্যার খবর। এখন এই বর্ষাকালে প্রতিদিন কোনো না কোনো জায়গায় বন্যা হচ্ছেই। এখন যেখানে বন্যা হওয়ার খবর দেখাচ্ছিল সেটা হল গন্ধেশ্বরী। কি দুরন্ত স্রোত! কত গাছের ভাঙা ডাল গুড়ি ভেসে যাচ্ছে। এখন তো বন্যা আগের থেকে বেশি হয়। যত রাজ্যের আবর্জনা সব তো মানুষ নদীতেই ফেলে। তার জন্য নদীর গভীরতা কমে যায় আর নদী বেশি জল বয়ে নিয়ে যেতে পারে না। ফলে বন্যা দেখা যায়। মানুষ তো নিজের ক্ষতি নিজেই করে।
যাইহোক এটা যেমন বর্ষাকালে একটি অসুবিধা তেমন একটি সুবিধাও আছে, বেশি জল হলে স্কুল বন্ধ। আর সবচেয়ে মজার জিনিস হল স্কুল থেকে বেরোনোর পর বৃষ্টি নামানো আর সেই জলে ভিজতে ভিজতে বাড়ি ফেরার।
ভালো খারাপ মিশিয়ে বর্ষাকাল কারোর কাছে ভালো কারোর কাছে খারাপ।
_____________________________________________________________________________________
নাম - প্রমা কর্মকার
শ্রেণী - ষষ্ঠ
স্কুলের নাম- পুরন্দরপুর উচ্চ বিদ্যালয়
বয়স- ১১
ঠিকানাঃ-
গ্রাম - তিলাবেদ্যা, পোস্ট- পুরন্দরপুর, জেলা- বাঁকুড়া, পিন- ৭২২১৫৫,
[চিত্রঃ: ইন্টারনেট মাধ্যম থেকে সংগৃহীত]
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন