Featured Post
গল্প ।। ভূত দাদু ডিডিং হো ।। আরজু মুন জারিন
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
ভূত দাদু ডিডিং হো
আরজু মুন জারিন
১ আয়েশা ভেসে আছে আজ আকাশে মেঘের ভেলায়। মেঘ দাদু ও আছে ওর সাথে। দুজনে খাচ্ছে মজাদার মেঘের কুলফি আইসক্রিম। আকাশ নীল, সবুজ, হলুদ, কমলা, বেগুনী, লাল, নীল রঙধনু রঙের সব আইসক্রিম। ঘুরে ঘুরে ভাসছে ওদের চারিপাশে। একটা আইসক্রিম এক কামড় দিয়ে ফেলে আরেকটা আইসক্রিমের দিকে হাত বাড়াতে এবার মেঘ দাদু একটু গর্জনের স্বরে বললো
"উহহু দাদু এরকম করেনা ! হাতেরটা শেষ করলে আরেকটা পাবে" শাসনের ভঙ্গিতে কথা বলে এবার একটু হেসে দেন তিনি। আয়েশা প্রথমে একটু গাল ফুলিয়ে তাকিয়ে থাকে। পরে ও ও হেসে ফেললো দাদুর সাথে একই ভঙ্গীতে। তারপর ও বড় বড় গ্রাসে হাতের আইসক্রিম শেষ করে প্রিয় রঙ কমলা রঙের কুলফির দিকে হাত বাড়ায়। হাসতে হাসতে ঘুম ভেঙ্গে যায় ওর। কোথায় মেঘের ভেলা? কোথায় ওর প্রিয় কুলফি আইসক্রিম? কোথায় মেঘ দাদু? ওর কান্না পেতে লাগলো। কিন্তু কান্নার বদলে এখন হাসি পেতে লাগলো দুষ্ট মামনিটার জন্য। সুড়সুড়ি দিতে লাগলো ওর পায়ের নীচে ঘুম ভাঙ্গানোর জন্য।
মাম্মি না না ।
ঘুমের মধ্যে আয়েশা হো হো করে হাসছে।মাম্মিটা কি পাজি।ঘুমুতে দেয়না।
পায়ে সূড়সূড়ি দিয়ে যাচ্ছে।এবার চুল ধরে টান দিচ্ছে।আয়েশার পণ হল আজকে সে ঘুম থেকে উঠবেনা ক্ষানিকক্ষন।
আবার ও সূড়সূড়ি দিচ্ছে মামি টা।আর চোখ বন্ধ রাখতে পারলনা।চোখ খুলতে মামিকে আর দেখতে পেলনা।পায়ে এখন ও সূড়সূড়ি অনুভূতি।
মা আত্মচিৎকার দিয়ে বিছানা থেকে লাপ দিয়ে নামল।
কিচেন থেকে পড়িমড়ি করে ছুটে এল মা।
মাকে জড়িয়ে ধরে ফোঁপাতে শুরু করল ও।
ভূত দেখেছি মা কঁাদতে কাঁদতে বলল ।
মা হেঁসে ফেলল।
কি রে আমার মাটা।এখন তো সকাল।এখন তো ভূত ওর বাড়ীতে চলে গিয়েছে।মা আবার ও হাসল।
মেয়ে তবু ও মুখ তুলছেনা দেখে মা মাথা নেড়ে দিল
বলল ভয় পায়না কাল রাত আমি ও দেখেছি।আমাকে সালাম দিল কৌতুকের স্বরে এবার বলে মা।বলল আয়েশার জন্য চিন্তা করবেন না মা।আমি পাহারা দিচ্ছি ওকে।
ও তোমার পাহারাদার ভূত দাদু ডিডিং হো মজার ভঙ্গিতে বললেন।
এবার আয়েশা ও হেসে ফেলল। বুঝল বোকামী হয়ে গেছে।
আসলে তো ভূত বলে কিছু নাই।হয়ত মনের ভুলে সে ভেবেছে তাকে কেউ সূড়সূড়ি দিচ্ছে।
২ পুরানো ষ্টোর রুম টাকে বেছে নিয়েছেন তিনি তার ঘুমের জায়গা হিসাবে।সকাল হতে তড়িঘড়ি করে রুমে এসে ঢোকে।আসার আগে বাচ্চা মেয়েটাকে চিমটি কেটে এসেছে।বাচ্চাটা একেবারে সোনার টুকরা।ভয় দেখাতে মায়া লাগছিল ওনার।তবু ও দেখাচ্ছিলেন।এটা ওনার একধরনের খেলা।না হলে উনি একঘেয়ে বোধ করেন।তবে উনি বিপদজনক খেলা পছন্দ করেন না। ছোটখাট ভয় পাওয়ানাতে উনি আনন্দবোধ করেন।
তবে মানুষ এখন আর ভয় পায়না কেন?
আমার চেহারা কি যথেষ্ট ভয়ানক হয় নি।পুরানা একটা আয়না আছে এখানে।সোজা করে বিভিন্ন পোজে দাত মুখ খিঁচিয়ে দেখতে লাগলেন তিনি।
ভয়ে নিজের আঙ্গুল নিজে কামড় দিয়ে বসলেন নিজেকে দেখে।।
পড়তে লাগলেন আয়াতুল কুরসী আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লাহুয়াল হাইয়্যূল কাইয়্যূম।
তওবা তওবা বলে দিলেন চিৎকার।কেননা দোয়ায় ওনার শরীরে আগুন লেগে গিয়েছে।
দৌড় দিয়ে বাথরুমে ঝর্নার নিচে দাড়িয়ে পড়লেন।
রাগে কিড়মিড় করতে লাগলেন বেটা দারোয়ানের উপর।আয়াতুল কুরসী পড়া শিখেছিলেন দারোয়ান বেটা থেকে।উনি যখন দারোয়ানের দিকে তাকিয়ে ভেঁচকি কাটলেন রাত তিনটার সময় তখন দারোয়ানের বেটা মাথায় টুপি দিয়ে বলল চিৎকার করে আল্লাহু আকবার।
মানুষের সাহস দেখ।আর আমি কিনা লুকিয়ে থাকি আবর্জনার ঘরে।
৩ আয়েশার সবচেয়ে প্রিয় স্থান হল এ ঘরের বারান্দা।তার প্রিয় কিছু গাছ মা লাগিয়েছে এখানে।দুপুরে কিছুটা সময় সে গাছগুলির সাথে কাটায়।কাউকে গান গেয়ে শোনায় কার ও সাথে গল্প করে।কাউকে ঘুম পাড়াতে চেষ্টা করে।
এই শোন আজ না একটা মজার ব্যাপার হয়েছে জান।আজ না আমি ভূত দেখেছি বলে নিজে হাসতে থাকে।না না সত্যি না মিথ্যে ভূত।
না খুকি সত্যি ভূত ।আমি সেই ভূত।আমি তোমাকে সূড়সূড়ি দিচ্ছিলাম দাদু।
দেখা গেল এবার ভূত দাদুকে বারান্দায়।
আয়েশা চিৎকার দিয়ে দৌড় দিল ভিতরের রুমে।
একটু পরে আস্তে মুখটা বের করে দেখার চেষ্টা করল।
টা টা হাই হাই
হায় হায়
আয়েশা কোথায়
বাই বাই
আবার যেন দেখতে পাই বলে ভূত দাদু হেসে।
এবার আয়েশা ও হেসে ফেলল আস্তে আস্তে এসে দাড়াল আবার বারান্দায়।
চকলেট খাবে ভূত দাদু?
মায়ের ডাক শোনা গেল এসময়।
আয়েশা মা কোথায় তুমি? বারান্দায় কি করছ? খেতে আস
যাও দাদু তোমার আম্মু ডাকছে।
যাবনা। আম্মু ইয়া্কী এগ খাওয়াবে জোর করে। আমার বমি পায়।
ওমা দাদু বল কি? এগ তো অনেক ইয়ামী। আমরা তোমার বয়সে ঝগড়া করতাম ডিম খাওয়ার জন্য।গরীব বাবা কিনতে পারতনা।আমাকে খাইয়ে দাও তাহলে।
ওকে দাদু তুমি বস। আমি লুকিয়ে তোমার জন্য ডিম নিয়ে আসছি।
মা খাইয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। আয়েশা জোর করে মায়ের হাত থেকে নিয়ে নিল আমি সেল্ফ খেতে চাই মামনি। মা কিচেনে বাবার জন্য চা বানাতে গেল সে দৌড়ে ডিমের প্লেট নিয়ে বারান্দায় চলে এল।
সাবাশ হাততালি দিতে শুরু করল খুশীতে ভূত দাদু এবার।
আয়েশা আয়েশা মায়ের ডাক শোনা গেল এবার।
তাড়াতাড়ি খাও দাদু। জোর করে পুরো ডিম একসঙ্গে ঢুকিয়ে দিল সে। কিছু ওনার দাড়িতে লাগল আর কিছু মাটিতে পড়ে গেল।
মা বারান্দা এসে দাড়িয়েছে এবার। আয়েশা মা তুমি আবার গাছের মধ্যে ডিম ফেলেছ।তোমাকে না বলেছি খাওয়ার ফেলতে হয়না। তুমি না খেতে পারলে বুয়াকে দিয়ে দিবে। পৃথিবীতে অনেক মানুষের খাওয়ার নাই আর মা তুমি খাওয়ার নষ্ট করছ আয়েশা মা অনুযোগের সুরে বলে।
আমি নষ্ট করছিনা মাম্মী। ভূত দাদু খাচ্ছে।
বারান্দার চারিদিকে ডিম ছড়িয়ে ছিটিয়ে নষ্ট করছ মা।
বুয়া এসে বারান্দা ঝাট দিয়ে পরিস্কার করছে। ঝাটায় দাদুর মাথায় একবার বাড়ি লাগল।
বুয়া আর্তচিৎকার করে উঠল ও। তুমি দাদুকে ব্যাথা দিয়েছ।
বুয়া হাসে আয়েশার পাগলামী কথায়।
ছোট পরিস্কার টাওয়েল দিয়ে দাদুর মাথা মুখ মুছিয়ে দিচ্ছে আস্তে আস্তে।
মা বারান্দায় এসে হাসেন মেয়ের কান্ড দেখে। টাওয়েল দিয়ে বড় গাছটি মুছছে আয়েশা আর কথা বলছে আপন মনে।
রেডী হও। স্কুলে যাবেনা ? বলে মনে হল
আজ শুক্রবার। আয়েশার স্কুল নাই।
কিছুক্ষন পরে আবার উকি দিলেন মা। দেখছেন তখন ও আপন মনে কথা বলে যাচ্ছে মেয়ে তার দোলনা চেয়ারে বসে।
শীতের দিন বিকালটা তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যায়। সন্ধ্যা নেমে আসছে প্রকৃতিতে।
মা দেখেন আয়েশা এখন ও দোলনা চেয়ারটিতে বসে আছে।
ভিতরে এস মা। ঠান্ডা লেগে যাবে।
ভূত দাদু বাই।আয়েশা ভিতরে চলে আসল। দরজা আটকাতে গিয়ে চমকে উঠল ভয়ে !!
এ কি আল্লাহ ! মনে হল কি একটা অস্বাভাবিক জিনিস দেখল। ও মাগো বলে উঠল। পরক্ষনে আবার ভালভাবে তাকাতে আর কিছু নজরে পড়লনা।
ওহ হো তার কালো চাদর আর রাস্তার আলো মিলে এক ভৌতিক ছায়ার চেহারা দেখা যাচ্ছিল ওয়ালে।তা দেখে সে ভয় পেয়েছিল।
রাতের খাওয়া শেষ করে মা বিছানায় এসে দেখে আয়েশা এখন ও ঘুমায়নি। ড্রইংরুমে এসে দেখে জানালায় মুখ লাগিয়ে গান গাচ্ছে আয়েশা।
টুইংকেল টুইংকেল লিটল ষ্টার।
কি মা আদর করে মেয়েকে জড়িয়ে ধরে।
হুশ মা। ঘুম পাড়াচ্ছি ভূত দাদুকে।
মা হাসেন মেয়ের কথায়।
হুম আয়েশা ব্রেভ গার্ল নাউ।ভূত ভয় পায়না।
হ্যা ভূত তো দাদু ।ভয় পাব কেন? আয়েশার সরল উত্তর।
বিছানায় শোয়া মাত্র গভীর ঘুমে তলিয়ে পড়ল সে।
পরের দিন স্কুল যাওয়ার আগে যথারীতি বারান্দায় এসে দাড়াল । ভূত দাদুকে দেখতে পেলনা।
স্কুল শেষে বিকাল, বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা,রাত হয়ে যাওয়ার পরে ও যখন দেখতে পেলনা ফুঁফিয়ে ফুঁফিয়ে কাঁদতে শুরু করল।
ভূত দাদু ভূত দাদু বলে ফোফাতে থাকল।
মা অসহায়ের মত জড়িয়ে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করল।
রাতে স্বপ্ন দেখল । সে আর ভূত দাদু কোথায় যেন যাচ্ছে মেঘের ভেলায় করে।
একসময়ে বলে উঠল দাদু বিদায় দাও।
সে জোরে ধরে রাখতে চাইল কিন্তু পারলনা। একসময় দাদু মেঘের ভিতরে হারিয়ে গেল।
পরিশিষ্ট: আয়েশাদের ষ্টোর রুমটা মা দুইজন লোকদিয়ে ভালভাবে পরিস্কার করল। আয়েশার বাবার দোকানের সব মালপত্র ঠাই পেল তাতে। দারোয়ান চাচা কিছুতে এই ঘরে যেতে রাজী ছিলনা প্রথমে। আল্লাহর কিরে কেটে বলে এই ঘরে ভূত থাকে।আয়েশা দৌড়ে চলে এল ষ্টোররুমে এই কথা শুনে।দোকানের কর্মচারীরা অবাক বিষ্ময়ে বলে খুকী তোমার তো খুব সাহস। শুনে আনন্দে হাসে ও । সত্যি সে এখন অনেক সাহসী। কেননা সে আর ভূত ভয় পায়না। ঘরের প্রতিটি কোনা ভালভাবে দেখার চেষ্টা করে যদি আরেকবার তার ভূত দাদু ডিডিংহো কে দেখতে পেত।
=================
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন