
বিশ্ব বেতার দিবসের গুরুত্ব ও প্রাসঙ্গিকতা
পাভেল আমান
প্রতিবছর ১৩ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব বেতার দিবস। সারা পৃথিবীব্যাপী বেতার নিয়ে সাধারণ মানুষের উৎসাহ উদ্দীপনা ভালোলাগা একরাশ উচ্ছ্বাস এই দিবসে প্রতিভাত হয়। শতাব্দীকাল পেরিয়ে তারহীন এই সম্প্রচার বার্তার গুরুত্ব ও প্রাসঙ্গিকতা এখনো বেতার স্রোতাদের মননে বজায় আছে।বেতার নিয়ে মানুষের আজও বহু মানুষের কাছে উন্মাদনার শেষ নেই। আজও প্রত্যন্ত এলাকার মানুষ রেডিওর নানা অনুষ্ঠান শুনে খুশি থাকেন। বিনোদন, আবহাওয়ার খবর, কৃষিকাজের খবর, বিভিন্ন শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান, চিকিৎসা সংক্রান্ত আপডেট পেয়ে থাকে মানুষ। টেলিভিশনের রমরমার দুনিয়ায় আজও নির্ভরযোগ্য মাধ্যম রেডিও।বেতার নিয়ে মানুষের প্রশ্নের শেষ নেই। দূর থেকে বেতারতরঙ্গে ভেসে আসা সংবাদ শোনা আজও মানুষের কাছে অপার বিস্ময়ের জগৎ। কেবল বিনোদন নয়, তার বাইরেও রেডিওর দুনিয়া আরও অনেক কিছু। রেডিও আমাদের বৈচিত্র্যের মধ্যে শিক্ষা দেয়। মানুষের প্রতি, বিভিন্ন ভাষার প্রতি, নানা সংস্কৃতির প্রতি সহনশীলতা তৈরি করে। রেডিও তো শিক্ষা, সংস্কৃতি, সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে আসছে।ঊনিশ শতকের মধ্যভাগ থেকেই রেডিও তরঙ্গ নিয়ে ভাবনা চিন্তা শুরু। তবে রেডিও পৌঁছাতে আরও বেশ কয়েক বছর অপেক্ষা করতে হয়। বিশ শতকের শুরু থেকেই রেডিও চলে আসে। যদিও প্রথম দিকে এত জনপ্রিয় ছিল না রেডিও। পরবর্তীকালে রেডিও গণমাধ্যমের অন্যতম মাধ্যম হয়ে ওঠে। একটা সময় রেডিও এতটাই জনপ্রিয় ছিল যে মানুষ রেডিওর বিকল্প কিছু চিন্তা করতে পারেনি। যদিও পরবর্তীকালে গণমাধ্যমের আরও কিছু বিকল্প মাধ্যম চলে আসে, কিন্তু রেডিওর জনপ্রিয়তা আজও তুঙ্গে।ইউনেস্কো প্রথম এই দিনটি ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০১২ বিশ্ব রেডিও দিবস হিসাবে পালন করে। তার পর থেকে বিশ্ব বেতার দিবসটি সারা বিশ্বে পালিত হতে শুরু করে। প্রকৃত পক্ষে ১৩ ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘ রেডিওর বার্ষিকীও। এটি ১৯৪৬ সালে একই দিনে শুরু হয়েছিল। প্রতি বছর ইউনেস্কো সারা বিশ্বের সম্প্রচারক, সংস্থা এবং সম্প্রদায়ের সহযোগিতায় রেডিও দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এছাড়াও এই দিনে যোগাযোগের মাধ্যম হিসাবে রেডিওর গুরুত্ব আলোচনা করা হয় এবং সচেতনতা ছড়িয়ে পড়ে। এটি আরও অবহিত করা হয় যে রেডিও এমন একটি পরিষেবা যার মাধ্যমে কেবল রেডিও ফ্রিকোয়েন্সিই বলা যায় না। বরং, দুর্যোগের সময় যোগাযোগের অন্যান্য মাধ্যমগুলি ব্যাহত হলে ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তিদেরও সহায়তা করা যেতে পারে। আমাদের দেশের কথা বলতে গেলে ১৯৩৬ সালে ভারতে অফিসিয়াল 'ইম্পেরিয়াল রেডিও' শুরু হয়েছিল। যা স্বাধীনতার পরে অল ইন্ডিয়া রেডিও নামে পরিণতি পায়। আজ রেডিও এর তার পরসর বৃদ্ধি করেছে। বেতার সম্প্রসারণে ভারতীয় বিজ্ঞানী ডঃ জগদীশ চন্দ্র বসুর অবদানও গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তিনিই প্রথম বিজ্ঞানী যিনি রেডিও এবং মাইক্রো ওয়েভসের অপটিক্সে কাজ করেছিলেন।সারা বিশ্বজুড়েই শ্রোতাদের সঙ্গে যোগাযোগের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ মাধ্যম বেতার। এখনও বেতারই অন্যায়ের বিরুদ্ধে সর্বস্তরের কন্ঠস্বর তুলে ধরে গণতন্ত্রগুলির সুদৃঢ়করণের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত মাধ্যম। এই দিনটিতে রেডিওর গুরুত্ব তুলে ধরার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সময় জরুরি যোগাযোগ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বেতারের গুরুত্বও তুলে ধরা হয়। এভাবে যোগাযোগের এই গুরুত্বপূর্ণ ও সহজলভ্য মাধ্যমের গুরুত্ব উপলব্ধির ক্ষেত্রে এই দিবস উদযাপনের বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। বর্তমান ইন্টারনেট মোবাইলের যুগেও এখনো বেশ কিছু মানুষ সংবাদ নাটক আলোচনা সংগীত ও বিভিন্ন অনুষ্ঠান শোনার জন্য বেতারের উপর নির্ভরশীল। শতাব্দীকাল ব্যাপী এভাবেই বেতার মানুষের মননকে রুচিবোধকে পরিতৃপ্ত বিকশিত করেছে। কত স্মৃতি আবেগ অনুভূতি উচ্ছাস বেতার বা রেডিও কে কেন্দ্র করে।বিশ্ব বেতার দিবসে সাধারণ মানুষের মধ্যে বেতারকে নিয়ে আরো আলোচনা চর্চা গুরুত্ব ও প্রাসঙ্গিকতা অনুভূত হোক। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যেকোনো নির্ভুল বস্তুনিষ্ঠ ও নিরপেক্ষ সংবাদ ও তথ্য জানার একমাত্র মাধ্যম বেতার বা রেডিও। দিন বদলের সঙ্গে সঙ্গে এখনো বেতার বা রেডিও একশ্রেণীর মানুষের বেঁচে থাকার মনন সঙ্গী।
======================
পাভেল আমান হরিহরপাড়া মুর্শিদাবাদ
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন