Featured Post
গল্প ।। বাঁক ।। পূর্রিতা পুরকায়স্থ
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
বাঁক
পূর্রিতা পুরকায়স্থ
গ্রীষ্মের এক অতি সাধারন সন্ধ্যায় ট্রেনটা প্রান্তিক ষ্টেশনে এসে থামতেই প্ল্যাটফর্মের টিমটিমে হলুদ আলো আমার মনে ছড়িয়ে পড়ল। বুঝতে পারছিলাম একটা কষ্ট জেগে উঠছিল এবং ক্রমশঃ তা আমার মনকে ঢেকে ফেলছিল । তবে সেদিন আমার সঙ্গে যারা ছিল তারা আমার মত কষ্ট পাচ্ছে কি না তা আমি বুঝতে পারছিলাম না। তাই আমার তখন কারো সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছিল না। মনে হচ্ছিল সাগর থেকে তুলে এনে কেউ আমাকে কূয়োর মধ্যে ফেলে দিয়েছে। ঐ মূহুর্তে বাবা ও মায়ের ওপর আমার খুব রাগ হচ্ছিল। ওঁরা আমাকে এখানে নিয়ে এসে একদম একা করে দিল! ওঁরা একা একা থাকতে এত ভালবাসে! এই অভিমানে বেশ কিছুদিন আমি বাবা মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে কথা বলি নি। সেদিন ষ্টেশন থেকে বেরিয়ে আমরা রিক্সোতে উঠে বসলাম । আগে থেকে ঠিক করে রাখা ভাড়া বাড়িতে যাবার জন্যে। ছোট শহরের স্বল্প আলোর ছোট ছোট রাস্তাঘাট ও রাস্তার দু'ধারের ছোট ছোট দোকান দেখে আমার মনটা বিমর্ষ হয়ে পড়ছিল। আমার মনে হচ্ছিল প্ল্যাটফর্মের সেই হলুদ আলোর দৈন্যতা বোধহয় পুরো শহরটাকেই ঢেকে রেখেছে। সবচাইতে কষ্ট হচ্ছিল এই দেখে যে এই ছোট্ট শহরে কোন পাহাড় নেই। পাহাড় ছাড়া তো আমি নিজেকে ভাবতেই পারতাম না। জ্ঞান হবার পর থেকেই আমার জীবন আবর্তিত হোত নীলাচল পাহাড়কে ঘিরে! যাকে দেখলে মনে হত এক ধ্যানমগ্ন তাপস। অসীম জ্ঞান যাকে স্তিতধী করেছে। পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে থাকতে আমার কি যে ভাল লাগত! মন খারাপ হলে আমি পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে কাঁদতাম। কিছুক্ষণ পর মনে হোত কেউ যেন আমার মাথায় স্নেহ ভরা হাত রেখেছে। আর আমি যেন তক্ষুনি ডুব দিয়ে স্নান করে উঠলাম তার শান্ত শীতল জলে ।
ঐ পাহাড়ের উপরের মন্দির থেকে প্রতিদিন ভোর ও সন্ধ্যায় হাওয়ায় কেঁপে কেঁপে ভেসে আসত যে আরতির গান, তার আবহ আমাকে সারাটা দিন ধরে ভরিয়ে রাখত। মনে হত ঐ তরঙ্গায়িত সঙ্গীত যেন হাজার হাজার যুগের ওপার হতে ভেসে আসছে সেই সব দিনের স্পন্দন বুকে নিয়ে । তা ছাড়া বর্ষাকালে ঘর থেকে দেখা পাহাড়ের বুকে নেমে আসা অঝোর বৃষ্টি যেন পাহাড়ের বুকে মেঘের প্রেম ধারা । আর কোনদিন এসব দেখতে পাব না ভেবেই আমার চোখ জল এসে গিয়েছিল। সেই কষ্টের কথা জানানোর জন্য আমি মনে মনে পাহাড়কে ডাকছিলাম। বলছিলাম, আমি তোমাকে না দেখে কি করে থাকব ? শুনতে পেলাম পাহাড় বলছে, চোখ বুজলেই আমাকে দেখতে পাবে। আমি তোমার মনের ভেতরেই আছি। এই শুনে আমার মনটা তখন কানায় কানায় ভরে গেল । মনে হচ্ছিল পাহাড় তাহলে আমাকে ভালবাসে ! পাহাড়ের সেই ভালবাসাকে আমি এতটা বছর ধরে বুকের বাঁ পাশে সযত্নে রেখে দিয়েছি। যখনি মন দূর্বল হয় চোখ বুজে সেই আনন্দ ধারায় স্নান করি আর চলার পথের যত দূর্গম পথ অবলীলায় পেরিয়ে আসি।
যখন গৌহাটীতে একান্নবর্তী পরিবারের সবাইকে ছেড়ে বাবা, মা, ভাই, এক পিসি ও এক পিসতুতো দাদার সাথে আমি এই ছোট্ট শহর শিলচরে পাকাপাকি ভাবে থাকার জন্য রওয়ানা দিলাম তখন কিছুই বুঝি নি। কোথায় যাচ্ছি ওখানে গিয়ে কেমন লাগবে এসব কিছুই মাথায় আসেনি। তখন আসন্ন ট্রেন যাত্রার আনন্দে আমি ডুবে ছিলাম। ট্রেনে ওঠে জানালার ধারের সীটটা পেয়ে যেতেই, ব্যস, আমাকে আর পায় কে! সেই মূহুর্ত থেকে আমার যাত্রা শুরু। দেখছিলাম প্ল্যাটফর্মে মালপত্র হাতে কত লোক! কি ব্যস্ত সমস্ত হয়ে তারা হাঁটছে। তারা কোথায় যাবে? কাজে না বেড়াতে? প্রত্যেকটা লোককে নিয়ে আমার অজস্র প্রশ্ন এবং তাকে ঘিরে একটা করে রোমাঞ্চের বলয় তৈরী হচ্ছিল। ট্রেনের জানালা দিয়ে যতদূর দেখা যায় আমি চলমান লোকেদের অনুসরন করছিলাম। তাদের সাথে হাঁটছিলাম । একদল দৃষ্টির বাইরে চলে গেলে আরেকদলের সাথে….।
মনে পড়ে তখনকার দিনে স্যুটকেসের এত বৈচিত্র্য ছিল না। বেশিরভাগ লোকের হাতে থাকত টিনের ট্রাঙ্ক আর বেডিং। তা ছাড়া বিছানা নিয়ে যাতায়াত করার একটা চল ছিল। আমি লোকজনের হাতের জিনিসপত্র দেখে ও একে ওপরের সাথে তাদের কথাবার্তা শুনে তাদের জীবনযাপন অনুমান করার চেষ্টা করছিলাম। আমার ইচ্ছে করছিল তাদের কাছে যাবার। তাদের জীবনের আঁচ পাবার ! কিন্তু তা তো সম্ভব নয়। তাই মনে হচ্ছিল, যদি পাখী হতাম তাহলে চারদিকে ছড়ানো সব জীবনের টুকরো ঠোঁট দিয়ে জড়ো করে জীবনের এক বিশাল কোলাজ বানাতাম।
বরাবরই আমার কাছে প্ল্যাটফর্মের সবচেয়ে বড় আকর্ষন হল বইয়ের স্টল। কতরকমের বই ও ম্যাগাজিন থাকে ঐসব স্টলে। সেদিনও আমি হাঁ করে বই গুলো দেখছিলাম। শুধু ভাবছিলাম কবে এইসব বই পড়তে পারব !
এদিকে ট্রেনটা যেই প্ল্যাটফর্ম ছাড়ালো, প্রকৃতি একটু একটু করে তার রহস্যে ঘেরা সৌন্দর্যের ডালা খুলতে শুরু করল। দেখে দেখে যেন আমার আশ মেটে না। একবার এই জানালা দিয়ে দেখি তো আরেকবার ঐ জানালা দিয়ে। যদি কিছু চোখ এড়িয়ে যায় সেই আশঙ্কায়। ট্রেনের জানালা দিয়ে যতদূর চোখ যায় শুধু সবুজ আর সবুজ। গালিচার ওপর দিয়ে চোখ হেঁটে যায় দূর দূর অব্দি। প্রান্তর যেখানে দিগন্তকে ছোঁয় সেই দিকচক্রবালে মনে হয় জগতের সমস্ত রহস্য লুকিয়ে আছে। নক্ষত্রেরা যেন আমাকে বলেছিল, কোন একদিন ওখানে জীবনের তপস্যা ও মৃত্যুর আরতি দুই হয়েছিল। তাই ওখানে জীবন ও মরন প্রতিদ্বন্দ্বী নয় বরং চিরসখা।
দুদিকের সবুজ মাঠের মাঝে মাঝে ছোট ছোট কুঁড়ে ঘর। মহিলারা ঘরের ভেতর কিংবা পুকুরঘাটে ব্যস্ত গৃহস্থালীর কাজে। কেউ কেউ আবার বাচ্চা কোলে দাঁড়িয়ে ট্রেন দেখছে। এভাবে অবাক হয়ে কেউ ট্রেন দেখছে দেখলে আমার অপু ও দূর্গার কথা মনে পড়ে যায়। সেই সব ঘরের ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা কেউ গরু চড়াচ্ছে, কেউ দল বেঁধে বেঁধে খেলছে। ওখানে সবাই রাজা। কি অনাড়ম্বর জীবন অথচ চোখে মুখে কত প্রশান্তি! ওদের দেখে আমারও খুব ইচ্ছে করত ওদের মত খোলা আকাশের নীচে খেলতে ও ঘুরে বেড়াতে। মনে হত ওদের জীবনে কোন বাধা নিষেধ নেই। কোন চোখরাঙানি নেই। ওরাই যেন প্রকৃতির সত্যিকারের সন্তান। তাই প্রকৃতির সাথে মিলে মিশে আছে। গৌহাটী থেকে ছয় সাত ঘন্টার দূরত্বে লামডিং ষ্টেশন। সেখান থেকে বদরপুর অব্দি পাহাড়লাাইনে বত্রিশটা টানেল আছে। টানেলের ভেতরে দিনেরবেলাতেও ঘুটঘুটে অন্ধকার। ভেতরটায় টিমটিম আলো।টানেল পেরোলে দুদিকে নীচু নীচু পাহাড় । মেঘেরা গা এলিয়ে শুয়ে আছে ওদের মাথায়। রেললাইনের পাশে অজস্র ছোট ছোট বুনো ফুল।তার ঝিম ধরানো বুনো গন্ধ। পাহাড়ের নীচে নির্জন র্উপত্যকায় পাহাড়ি লোকেদের বাড়ি। এইসব দেখতে দেখতে মনে হচ্ছিল কত গল্প কত মুগ্ধতা ছড়িয়ে আছে পাহাড়ের গায়ে, ওর আনাচে কানাচে। এ যেন একটা সুন্দর মলাটের বন্ধ বই। আমার কাছে বন্ধ ই কি থেকে যাবে না কি কোনদিন খুলবে।
-----
একটা লেখা পাঠালাম।
নীচে ঠিকানা, মোবাইল নং ও ছবি পাঠালাম।
নমস্কার
পূর্বিতা পুরকায়স্থ
B 39/1 Narkelbagan Road
Garia,Kolkata 700084
9477774954
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
সূচিপত্র
সূচিপত্র
-
-
-
-
-
-
-
-
-
- প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় ৪০ ।। মার্চ...
- ছড়া ।। শরৎ মানে ।। সায়েমা চৌধুরী
- গল্প ।। ভূত দাদু ডিডিং হো ।। আরজু মুন জারিন
- গল্প ।। বাঁক ।। পূর্রিতা পুরকায়স্থ
- ছড়া ।। গন্ডারের গণ্ডগোল ।। মৌসুমী চট্টোপাধ্যায় দাস
- কিশোর গল্প ।। এসো হে বৈশাখ ।। তপন তরফদার
- থ্রিলার গল্প ।। লাশ কাটার ঘর ।। ইয়াছিন ইবনে ফিরোজ
- গোয়েন্দা গল্প ।। চতুর বিড়ালের কীর্তি ।। ইয়াছিন ইব...
- গল্প ।। কঙ্কাল হাত ।। শ্যামল হুদাতী
- ছোটগল্প ।। সাদর ভালবাসা ।। শংকর ব্রহ্ম
- গল্প ।। সূর্যোদয় ।। দীপক পাল
- ভৌতিক গল্প ।। ভূতাবিষ্ট চরিত্রের সন্ধানে ।। সমীর ক...
- কবিতা ।। মোদের ছোট্র গাঁ ।। খগেশ্বর দেব দাস
- ছড়া ।। ছবি ।। বদ্রীনাথ পাল
- ছড়া ।। চৈতালি সুর ।। দুর্গা চরণ ঘোষ
- কবিতা ।। ছুটির দেশ ।। প্রভাত ভট্টাচার্য
- ছড়া ।। ফুলের সাজ ।। প্রদীপকুমার সামন্ত
- কবিতা ।। খুকুর খুশি ।। দীনেশ সরকার
- ছড়া ।। বই ।। সুব্রত চৌধুরী
- ছড়া ।। বসন্ত এখন ।। অজিত কুমার জানা
- শৈশবের রবিবারের স্মৃতি ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত
- কবিতা ।। মায়ের আদর ।। সমর আচার্য্য
- ছড়া ।। মাছ ধরতে ।। আজিজ উন নেসা
- ছড়া ।। মামার বাড়ি ।। আসগার আলি মণ্ডল
- কবিতা ।। ফাগুন বেলা ।। তপন মাইতি
- ছড়া ।। হোলি ।। অনীশ দাস
- কবিতা ।। বর্ণমালার বীণ ।। বিবেকানন্দ নস্কর
- ছড়া ।। অচিন খুড়ো ।। বিপ্লব নসিপুরী
- কবিতা ।। রূপকথার জগৎ ।। আরতি মিত্র
- ফাগুনের ছড়া ।। অমিত কুমার রায়
- ছড়া ।। পাখির কথা ।। সৌমিত্র মজুমদার
- কবিতা ।। জন্মদিনের বাঁশি ।। দীপঙ্কর বৈদ্য
- ছড়া ।। আজব পিঠেপুলি ।। রমলা মুখার্জী
- ছড়া ।। বুদ্ধি কত ।। তূয়া নূর
- ছড়া ।। মন্ডা মিঠাই ।। পলাশ পাল
- ছড়া ।। খাপছাড়া ।। পার্থ প্রতিম দাস
- প্রতিবেদন ।। বিশ্ব বেতার দিবসের গুরুত্ব ও প্রাসঙ্গ...
- দুটি ছড়া ।। তীর্থঙ্কর সুমিত
- কবিতা ।। খেলার চাই অধিকার ।। সুমিতা চৌধুরী
- ছড়া ।। ঐক্যতান ।। সুদানকৃষ্ণ মন্ডল
- ছড়া ।। অদ্ভূত জগৎ।। দেবদাস কুণ্ডু
- ছড়া ।। লখিপুরের লোকটা ।। মহা রফিক শেখ
- কবিতা ।। ইচ্ছে ।। সান্ত্বনা ব্যানার্জী
- কবিতা ।। মনে পড়ে ।। আশীষ কুমার চক্রবর্তী
- কবিতা ।। বসন্ত ।। জীবন সরখেল
- কবিতা ।। বাঁচিয়ে দিল ঠাকু্মা ।। সঞ্জয় কুমার নন্দী
- ছড়া ।। খাঁদুর যাদু ।। মিহির পাল
- কবিতা ।। কৃষ্ণনাথ কলেজ ।। কেতাবুর সেখ
- ছোটর কলম ।। মামারবাড়িতে দুপুরবেলা ।। অনমিতা মুখার্জি
- গল্প ।। দিন বদলায় ।। চন্দন দাশগুপ্ত
- ছড়া ।। ঝগড়া নিয়ে ছড়া ।। অরবিন্দ পুরকাইত
- ডালমুটের ছড়া ।। গোবিন্দ মোদক
- ছড়া ।। বানরের বাঁদরামি ।। শেখ মোমতাজুল করিম শিপলু
- ফাগুন এলো ।। বিশ্বনাথ পাল
- কবিতা ।। একুশে ফেব্রুয়ারি ।। অশেষ মাজি
- ছোটদের অঙ্কন ।। তৃষা দাস, সিমিকা বৈরাগ্য, প্রবাহনী...
-
-
-
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন