Featured Post

ছড়া ।। আকাশটাকে খোঁজে ।। দীনেশ সরকার

ছবি
আকাশটাকে খোঁজে দীনেশ সরকার            পড়তে বসলে জানলা দিয়ে মন ছুটে যায় দূরে গাইছে পাখি ওই যে গাছে মিষ্টি-মধুর সুরে। কিংবা যখন হাত বাড়িয়ে আকাশ আমায় ডাকে পড়ার পাতায় মন আমার কি বাঁধা তখন থাকে?   পূবের হাওয়া কড়া নাড়ে যখন আমার দোরে কিংবা অলি গুনগুনিয়ে চতুর্দিকে ঘোরে প্রজাপতি পাখা মেলে ওড়ে ফুলের মেলায় কখন যেন অবুঝ এ মন যায় হারিয়ে হেলায়।   কাঠবেড়ালি কাটুস্‌-কুটুস্‌ আমার দিকে তাকায় মন তখন কি আটকে থাকে পড়ার বইয়ের পাতায়? টুনটুনিটা তিড়িং-বিড়িং পুচ্ছ নাচায় গাছে মনটা বাঁধা তখন কি আর অঙ্কখাতায় আছে?   অঙ্ক কষতে ভুল হয়ে যায়, পড়া যাই যে ভুলে স্যারের বকা মাঝে মাঝেই খাই আমি ইস্কুলে। মনকে আমি কত্ত বোঝাই, মন তবু কি বোঝে সুযোগ পেলেই জানলা দিয়ে আকাশটাকে খোঁজে।   ******************************************** দীনেশ সরকার ১৪০ ডি, হিজলি কো-অপারেটিভ সোসাইটি, প্রেমবাজার, খড়্গপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর---- ৭২১৩০৬

ভ্রমণকাহিনি ।। সাগর দেখার স্বপ্ন ।। মিঠুন মুখার্জী


সাগর দেখার স্বপ্ন

মিঠুন মুখার্জী


ছোট্ট রনি নদী-পাহাড়-জঙ্গল সবকিছু দেখেছে, দেখে নি শুধু সাগর। এগারো বছর বয়সের এই বালকটি বাবা-মার সঙ্গে অনেক জায়গায় গিয়েছে কিন্তু সমুদ্রে যাওয়া হয়নি। যশোর জেলায় জন্ম। বাবা-মা দুজনেই স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা। কর্মব্যস্ততার রনিকে দেখান সময়  কম পান।তাই তাকে দেখার জন্য লোক রাখা‌। তবে বিভিন্ন ছুটিতে তাদের নিজস্ব গাড়ি করে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যান তারা। ঢাকা,খুলনা,সিলেট নোয়াখালী, আরো অনেক জায়গায় সে গেছে, কিন্তু সাগরে যায়নি। তাই তার দু-'চোখ ভরা স্বপ্ন সাগর দেখার।
           সিলেটের অসাধারণ পাহাড় ও চা বাগান দেখে মুগ্ধ সে। আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেছে। পদ্মার উথাল-পাথাল ঢেউ দেখে খুবই আনন্দ পেয়েছে সে। পদ্মার বুকে লঞ্চে করে যেতে গিয়ে ভয়ও পেয়েছে। জঙ্গলের অ্যাডভেঞ্চার তার শরীরে শিহরন জাগিয়েছে। কিন্তু সমুদ্র না দেখার আফসোস করে প্রায়। চট্টগ্রামের কক্সবাজারে যাওয়ার জন্য অনেকবার তারা আয়োজন করেছিল, কিন্তু ভাগ্য সহায় হয়নি। প্রত্যেকবার একটা সমস্যা এসে যাওয়ায় তাদের যাওয়া বাতিল হয়ে গেছে। কথায় বলে ভাগ্যে না থাকলে হয় না।
          এই বছরই প্রাইমারি স্কুলের পাঠ শেষ করে পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তি হয়েছে রনি। এগারো বছর বয়স হলেও বুদ্ধিতে অনেক মপরিপক্ক সে। পড়াশোনায় খুবই ভালো। প্রাইমারি স্কুলে প্রথম হয়ে এ পর্যন্ত সমস্ত শ্রেণীতে উঠেছে। পঞ্চম শ্রেণীতেও এক রোল নাম্বার। নিজের কাজ নিজে করে নেয়। কাউকে বলতে হয়না। কথাই বলে--- 'শিক্ষকের ছেলে শিক্ষকই হয়'। কিন্তু রনির ক্ষেত্রে এই কথাটি সত্য নয়। সে শিক্ষক হতে চাইত না। সে একজন বিজ্ঞানী হওয়ার স্বপ্ন দেখতো। খেতে খুবই ভালোবাসে সে। বিশেষ করে ভাজা ইলিশের গন্ধ তার মনকে উতলা করে তোলে। সমুদ্রের পাড় থেকে ভাজা ইলিশ খাওয়ার স্বপ্ন দেখত সে।
         'মেঘ না চাইতে জল'-এর মতো রনির ভাগ্যে একদিন সমুদ্র দর্শনের সৌভাগ্যের উদয় হয়। ঢাকা থেকে তার বাবার ছোটভাই অর্থাৎ ছোট কাকা ঘুরতে আসেন তাদের বাড়ি। কথায় কথায় কাকা তার কাছে জানতে চান--- এমন কোন জায়গা আছে তার যেতে ইচ্ছা হয়। এই সুযোগ হাতছাড়া করেনি রনি। কাকা সুভাষ নস্করকে সে জানায় --- 'অনেক দিনের ইচ্ছা সমুদ্রে যাবে, কিন্তু বাবা-মার ব্যস্ততায় তার সে স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে না।' কাকা তার স্বপ্ন পূরণ করে দেয়। পরদিন ছিল মঙ্গলবার। সেদিন খুব ভোরে  রনিদের গাড়ি নিয়ে তারা দুজন চট্টগ্রামের কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। রনির মনের মধ্যে যেন আনন্দ ধরছিল না। কয়েক ঘন্টা পর তারা কক্সবাজারে পৌঁছায়। জীবনে প্রথম নিজের চোখে সমুদ্র দেখে আনন্দে নাচতে লাগলো রনি। সমুদ্রের অসাধারণ সৌন্দর্যে মন ভরে গেল তার। বিকেলবেলা হোটেল থেকে সমুদ্রের পাড়ে এসে বসলো তারা দুজন। সমুদ্রের ঢেউ ও হাওয়ায় মন ভরে গেল ছোট্ট রানীর। সন্ধ্যাবেলা মাছ ভাজার দোকান থেকে দুটি ইলিশ মাছ ও দুটি চিংড়ি মাছ ভাজা খেলো তারা। রনির মনের সাধ পূরণ হলো কাকার দৌলতে। সমুদ্রপাড়ের দোকানগুলো থেকে বিভিন্ন ধরনের শঙ্খের খেলনা ও ঘর সাজানোর জিনিস কিনল সে। কাকা দুই হাত দিয়ে টাকা খরচ করলেন। রনির সব আবদার পূরণ করলেন তিনি। রাত্রি নটার সময় হোটেলে ফিরে গিয়ে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ল তারা।
              পরদিন ভোর পাঁচটা নাগাদ তারা সমুদ্র বিচে যায়।  সূর্যোদয় দেখে। রনি ঘোড়ায় চড়ে ও কাকার মোবাইলে প্রচুর ছবি তোলে। সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ টিফিন সেড়ে হোটেলে যায়। কাকাও রনিকে আজ সমুদ্রস্নান করাবে বলে কথা দিয়েছিল। সেই অনুযায়ী তারা দুজন টাওয়াল নিয়ে সমুদ্রে যায় সকাল দশটায়। অসংখ্য মানুষকে স্নান করতে দেখে আনন্দে কাকার হাত ধরে দৌড়ে গিয়ে সমুদ্রের তটে দাঁড়ায় রনি। সমুদ্রের ঢেউ এসে তাদের দুজনকে ভিজিয়ে দেয়। সমুদ্রের জল গায়ে লাগতেই তার সমস্ত শরীরে শিহরণ জাগে। এই স্নান তার জীবনে স্মরণীয় হয়ে থাকবে বলে কাকাকে জানায় সে। এরপর রনি সমুদ্রের ফেনা তুলে কাকার মাথায় দিতে থাকে  ও নিজের সারা শরীরে মাখতে থাকে। প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে তারা স্নান করে। এই দুটি দিন রনির জীবনের সবচেয়ে আনন্দের দিন ছিল। 
             বিকেল বেলায় সমুদ্রের পাশের একটি পার্কে ঘুরতে যায় তারা। সন্ধ্যেবেলা বাকি কেনাকাটা সেরে হোটেলে ফিরে আসে। পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে মনটা ভারাক্রান্ত হয়ে যায় রনির। কাকা সান্ত্বনা দিয়ে বলেন --- "মন খারাপ করিস না। আমি তোকে কথা দিলাম, পরের বছর তোর মা-বাবাকে সঙ্গে নিয়ে আমি আবার তোকে সমুদ্র দর্শনে নিয়ে আসবো।" সকালের খাবার খেয়ে শেষবারের মতো সমুদ্রপাড়ে একটু ঘুরতে যায় তারা। সকাল দশটা নাগাদ গাড়ি করে তারা বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। বিষাদে ভরা মনটা নিয়ে গাড়ির পিছনের কাঁচটা দিয়ে সমুদ্রের দিকে অপলক নেত্রে তাকিয়ে থাকে রনি। সে মনে মনে সমুদ্রকে বলে --- "আবার ফিরে আসবো। ফিরে আসবই। তোমার সৌন্দর্যে আমি অভিভূত।"
_____________________________________________
মিঠুন মুখার্জী
গোবর ডাঙ্গা
উত্তর ২৪- পরগণা।
 [ছবি: ইন্টারনেট মাধ্যম থেকে সংগৃহীত]

মন্তব্যসমূহ

সপ্তাহের পছন্দ

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 38th issue: January 2025

কবিতা ।। আকাশ-সাগর ।। শান্তনু আচার্য

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সুচিপত্র ।। 37th issue: December 2024

কবিতা ।। নতুন বছর ।। জীবন সরখেল

চোখের ভাষা ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত

ছড়া ।। শীতের দু'টি মাসে ।। গোবিন্দ মোদক

প্রচ্ছদ ও সূচীপত্র ।। 24th issue: September 2023

ছোটদের আঁকিবুঁকি ।। কিশলয় - ২২ ।। জুলাই ২০২৩

ছড়া ।। দৃষ্টিকাড়া বৃষ্টি ।। শচীন্দ্র নাথ গাইন

ছড়া ।। অদ্ভূতুড়ে ।। প্রবোধ কুমার মৃধা

মাসের পছন্দ

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 38th issue: January 2025

কবিতা ।। আকাশ-সাগর ।। শান্তনু আচার্য

ছড়া ।। শৈশবের রথ ।। ইয়াসমিন বানু

কবিতা ।। নতুন বছর ।। জীবন সরখেল

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সুচিপত্র ।। 37th issue: December 2024

অণুগল্প ।। ঝুমুক ঝুমুক ।। ব্রজ গোপাল চ্যাটার্জি

ছোটগল্প ।। হেমন্ত দাদার সাথে ।। দীপক পাল

ছড়া ।। আকাশটাকে খোঁজে ।। দীনেশ সরকার

ছড়া ।। শীতবুড়িটা ।। প্রবোধ কুমার মৃধা

কবিতা ।। খুকির বায়না ।। খগেশ্বর দেব দাস

বছরের পছন্দ

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। ত্রয়োত্রিংশ সংখ্যা ।। জুন ২০২৪

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 38th issue: January 2025

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সুচিপত্র ।। 37th issue: December 2024

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। চতুর্ত্রিংশ সংখ্যা ।। জুলাই ২০২৪

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচীপত্র ।। 29th Issue: February

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 31st issue: April 2024

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 32nd issue: May 2024

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 30th issue : March 2024

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। পঞ্চত্রিংশ সংখ্যা ।। আগষ্ট ২০২৪

অতি প্রিয়

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। আত্মপ্রকাশ সংখ্যা ।। অক্টোবর ২০২১

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। দ্বিতীয় সংখ্যা ।। নভেম্বর ২০২১

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 4th issue: January 2022,

নিবন্ধ ।। শিশু-কিশোর সাহিত্যবলয়ে শিশুরাই যেন ব্রাত‍্য না থাকে ।। অরবিন্দ পুরকাইত

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 7th issue: April 2022

নিবন্ধ ।। দেশীয় উদ্ভিদ কেন গুরুত্বপূর্ণ ? ।। ডঃ চিত্তরঞ্জন দাস

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় - ১০ ।। জুলাই ২০২২

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় - ১১ ।। আগস্ট ২০২২

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র : 8th issue: May 2022

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় - ১২ ।। সেপ্টেম্বর ২০২২