Featured Post

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় ৪৫ ।।আগস্ট, ২০২৫

ছবি
সম্পাদকীয় প্রিয় বন্ধুরা, আবার এল আগস্ট মাস। ছাতা মাথায় বৃষ্টি ভেজা দিন, স্কুলে দেরি, আর খেলার মাঠে কাদামাটি—সব মিলিয়ে একেবারে অ্যাডভেঞ্চারের মরশুম! তবে আগস্ট মানে শুধু বৃষ্টির দুষ্টুমি নয়, স্বাধীনতারও মাস। ভাবো তো, যদি আমাদের দেশ স্বাধীন না হতো, তবে কি আজ আমরা এত মজা করে খেলাধুলা, গান, পড়াশোনা করতে পারতাম? স্বাধীনতা মানেই সুযোগ—যে সুযোগ দিয়ে তোমরা নিজেদের স্বপ্ন গড়ে তুলতে পারো। কিন্তু সেই স্বাধীনতার পথে কত আত্মত্যাগ, কত রক্ত, কত অশ্রু লুকিয়ে আছে—তা ভোলা যায় না। আজকের কিশোররা যদি সেই ত্যাগের ইতিহাস মনে রাখে, তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কখনো পথ হারাবে না। তোমাদের হাতে আজকের কলমই আগামী দিনের অস্ত্র—যা দিয়ে গড়ে উঠবে বিজ্ঞান, সাহিত্য, শিল্প আর মানবিকতার এক নতুন পৃথিবী।  এই সংখ্যায় পাবে ভ্রমণের উপন্যাস, নিবন্ধ, গল্প  আর তোমাদের জন্য লেখা দারুণ সব ছড়া আর কবিতা। পড়ে দেখো, আর তোমাদেরও লেখা বা আঁকা আমাদের পাঠিয়ে দিও—আগামী সংখ্যায় প্রকাশের জন্য।   সকলে ভালো থেকো, আনন্দে থেকো।       শুভকামনাসহ-- প্রিয়ব্রত দত্ত ও কার্তিক চন্দ্র পাল। কার্যনির...

ভ্রমণকাহিনি ।। সাগর দেখার স্বপ্ন ।। মিঠুন মুখার্জী


সাগর দেখার স্বপ্ন

মিঠুন মুখার্জী


ছোট্ট রনি নদী-পাহাড়-জঙ্গল সবকিছু দেখেছে, দেখে নি শুধু সাগর। এগারো বছর বয়সের এই বালকটি বাবা-মার সঙ্গে অনেক জায়গায় গিয়েছে কিন্তু সমুদ্রে যাওয়া হয়নি। যশোর জেলায় জন্ম। বাবা-মা দুজনেই স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা। কর্মব্যস্ততার রনিকে দেখান সময়  কম পান।তাই তাকে দেখার জন্য লোক রাখা‌। তবে বিভিন্ন ছুটিতে তাদের নিজস্ব গাড়ি করে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যান তারা। ঢাকা,খুলনা,সিলেট নোয়াখালী, আরো অনেক জায়গায় সে গেছে, কিন্তু সাগরে যায়নি। তাই তার দু-'চোখ ভরা স্বপ্ন সাগর দেখার।
           সিলেটের অসাধারণ পাহাড় ও চা বাগান দেখে মুগ্ধ সে। আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেছে। পদ্মার উথাল-পাথাল ঢেউ দেখে খুবই আনন্দ পেয়েছে সে। পদ্মার বুকে লঞ্চে করে যেতে গিয়ে ভয়ও পেয়েছে। জঙ্গলের অ্যাডভেঞ্চার তার শরীরে শিহরন জাগিয়েছে। কিন্তু সমুদ্র না দেখার আফসোস করে প্রায়। চট্টগ্রামের কক্সবাজারে যাওয়ার জন্য অনেকবার তারা আয়োজন করেছিল, কিন্তু ভাগ্য সহায় হয়নি। প্রত্যেকবার একটা সমস্যা এসে যাওয়ায় তাদের যাওয়া বাতিল হয়ে গেছে। কথায় বলে ভাগ্যে না থাকলে হয় না।
          এই বছরই প্রাইমারি স্কুলের পাঠ শেষ করে পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তি হয়েছে রনি। এগারো বছর বয়স হলেও বুদ্ধিতে অনেক মপরিপক্ক সে। পড়াশোনায় খুবই ভালো। প্রাইমারি স্কুলে প্রথম হয়ে এ পর্যন্ত সমস্ত শ্রেণীতে উঠেছে। পঞ্চম শ্রেণীতেও এক রোল নাম্বার। নিজের কাজ নিজে করে নেয়। কাউকে বলতে হয়না। কথাই বলে--- 'শিক্ষকের ছেলে শিক্ষকই হয়'। কিন্তু রনির ক্ষেত্রে এই কথাটি সত্য নয়। সে শিক্ষক হতে চাইত না। সে একজন বিজ্ঞানী হওয়ার স্বপ্ন দেখতো। খেতে খুবই ভালোবাসে সে। বিশেষ করে ভাজা ইলিশের গন্ধ তার মনকে উতলা করে তোলে। সমুদ্রের পাড় থেকে ভাজা ইলিশ খাওয়ার স্বপ্ন দেখত সে।
         'মেঘ না চাইতে জল'-এর মতো রনির ভাগ্যে একদিন সমুদ্র দর্শনের সৌভাগ্যের উদয় হয়। ঢাকা থেকে তার বাবার ছোটভাই অর্থাৎ ছোট কাকা ঘুরতে আসেন তাদের বাড়ি। কথায় কথায় কাকা তার কাছে জানতে চান--- এমন কোন জায়গা আছে তার যেতে ইচ্ছা হয়। এই সুযোগ হাতছাড়া করেনি রনি। কাকা সুভাষ নস্করকে সে জানায় --- 'অনেক দিনের ইচ্ছা সমুদ্রে যাবে, কিন্তু বাবা-মার ব্যস্ততায় তার সে স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে না।' কাকা তার স্বপ্ন পূরণ করে দেয়। পরদিন ছিল মঙ্গলবার। সেদিন খুব ভোরে  রনিদের গাড়ি নিয়ে তারা দুজন চট্টগ্রামের কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। রনির মনের মধ্যে যেন আনন্দ ধরছিল না। কয়েক ঘন্টা পর তারা কক্সবাজারে পৌঁছায়। জীবনে প্রথম নিজের চোখে সমুদ্র দেখে আনন্দে নাচতে লাগলো রনি। সমুদ্রের অসাধারণ সৌন্দর্যে মন ভরে গেল তার। বিকেলবেলা হোটেল থেকে সমুদ্রের পাড়ে এসে বসলো তারা দুজন। সমুদ্রের ঢেউ ও হাওয়ায় মন ভরে গেল ছোট্ট রানীর। সন্ধ্যাবেলা মাছ ভাজার দোকান থেকে দুটি ইলিশ মাছ ও দুটি চিংড়ি মাছ ভাজা খেলো তারা। রনির মনের সাধ পূরণ হলো কাকার দৌলতে। সমুদ্রপাড়ের দোকানগুলো থেকে বিভিন্ন ধরনের শঙ্খের খেলনা ও ঘর সাজানোর জিনিস কিনল সে। কাকা দুই হাত দিয়ে টাকা খরচ করলেন। রনির সব আবদার পূরণ করলেন তিনি। রাত্রি নটার সময় হোটেলে ফিরে গিয়ে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ল তারা।
              পরদিন ভোর পাঁচটা নাগাদ তারা সমুদ্র বিচে যায়।  সূর্যোদয় দেখে। রনি ঘোড়ায় চড়ে ও কাকার মোবাইলে প্রচুর ছবি তোলে। সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ টিফিন সেড়ে হোটেলে যায়। কাকাও রনিকে আজ সমুদ্রস্নান করাবে বলে কথা দিয়েছিল। সেই অনুযায়ী তারা দুজন টাওয়াল নিয়ে সমুদ্রে যায় সকাল দশটায়। অসংখ্য মানুষকে স্নান করতে দেখে আনন্দে কাকার হাত ধরে দৌড়ে গিয়ে সমুদ্রের তটে দাঁড়ায় রনি। সমুদ্রের ঢেউ এসে তাদের দুজনকে ভিজিয়ে দেয়। সমুদ্রের জল গায়ে লাগতেই তার সমস্ত শরীরে শিহরণ জাগে। এই স্নান তার জীবনে স্মরণীয় হয়ে থাকবে বলে কাকাকে জানায় সে। এরপর রনি সমুদ্রের ফেনা তুলে কাকার মাথায় দিতে থাকে  ও নিজের সারা শরীরে মাখতে থাকে। প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে তারা স্নান করে। এই দুটি দিন রনির জীবনের সবচেয়ে আনন্দের দিন ছিল। 
             বিকেল বেলায় সমুদ্রের পাশের একটি পার্কে ঘুরতে যায় তারা। সন্ধ্যেবেলা বাকি কেনাকাটা সেরে হোটেলে ফিরে আসে। পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে মনটা ভারাক্রান্ত হয়ে যায় রনির। কাকা সান্ত্বনা দিয়ে বলেন --- "মন খারাপ করিস না। আমি তোকে কথা দিলাম, পরের বছর তোর মা-বাবাকে সঙ্গে নিয়ে আমি আবার তোকে সমুদ্র দর্শনে নিয়ে আসবো।" সকালের খাবার খেয়ে শেষবারের মতো সমুদ্রপাড়ে একটু ঘুরতে যায় তারা। সকাল দশটা নাগাদ গাড়ি করে তারা বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। বিষাদে ভরা মনটা নিয়ে গাড়ির পিছনের কাঁচটা দিয়ে সমুদ্রের দিকে অপলক নেত্রে তাকিয়ে থাকে রনি। সে মনে মনে সমুদ্রকে বলে --- "আবার ফিরে আসবো। ফিরে আসবই। তোমার সৌন্দর্যে আমি অভিভূত।"
_____________________________________________
মিঠুন মুখার্জী
গোবর ডাঙ্গা
উত্তর ২৪- পরগণা।
 [ছবি: ইন্টারনেট মাধ্যম থেকে সংগৃহীত]

মন্তব্যসমূহ

সপ্তাহের পছন্দ

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় ৪৫ ।।আগস্ট, ২০২৫

ছড়া ।। গ্রামের হাট ।। গোবিন্দ মোদক

ছড়া ।। আয় বৃষ্টি আয় ।। হারান চন্দ্র মিস্ত্রী

কবিতা ।। প্রত্যয় ।। শৈবাল কর্মকার

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় - ১১ ।। আগস্ট ২০২২

ছড়া।। পাখপাখালির মেলা ।। চন্দন মিত্র

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় ৪৪ ।। জুলাই ২০২৫

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় ৪২ ।। মে ২০২৫

ছড়া ।। ছড়া ফুল ।। বদ্রীনাথ পাল

ছোটদের আঁকিবুঁকি ।। কিশলয় মাসিক পত্রিকা ।। পঞ্চচত্বারিংশ সংখ্যা ।। আগস্ট ২০২৫

মাসের পছন্দ

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় ৪৫ ।।আগস্ট, ২০২৫

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় ৪৪ ।। জুলাই ২০২৫

ছড়া ।। গ্রামের হাট ।। গোবিন্দ মোদক

ছড়া ।। আয় বৃষ্টি আয় ।। হারান চন্দ্র মিস্ত্রী

ছড়া।। পাখপাখালির মেলা ।। চন্দন মিত্র

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় - ১১ ।। আগস্ট ২০২২

কবিতা ।। প্রত্যয় ।। শৈবাল কর্মকার

শব্দখেলা, ক্যুইজ, ধাঁধা ।। 4th issue: January 2022

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় ৪৩ ।। জুন ২০২৫

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় ৪২ ।। মে ২০২৫

বছরের পছন্দ

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় ৪০ ।। মার্চ ২০২৫

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় ৪৪ ।। জুলাই ২০২৫

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 38th issue: January 2025

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সুচিপত্র ।। 37th issue: December 2024

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় ৪১ ।। এপ্রিল ২০২৫

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় ৪২ ।। মে ২০২৫

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। ,39th issue: February 2025

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। পঞ্চত্রিংশ সংখ্যা ।। আগষ্ট ২০২৪

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় ৪৩ ।। জুন ২০২৫

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। ষড়ত্রিংশ সংখ্যা ।। সেপ্টেম্বর ২০২৪

অতি প্রিয়

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। আত্মপ্রকাশ সংখ্যা ।। অক্টোবর ২০২১

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। দ্বিতীয় সংখ্যা ।। নভেম্বর ২০২১

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 4th issue: January 2022,

নিবন্ধ ।। শিশু-কিশোর সাহিত্যবলয়ে শিশুরাই যেন ব্রাত‍্য না থাকে ।। অরবিন্দ পুরকাইত

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 7th issue: April 2022

নিবন্ধ ।। দেশীয় উদ্ভিদ কেন গুরুত্বপূর্ণ ? ।। ডঃ চিত্তরঞ্জন দাস

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় - ১১ ।। আগস্ট ২০২২

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় - ১০ ।। জুলাই ২০২২

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র : 8th issue: May 2022

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় - ১২ ।। সেপ্টেম্বর ২০২২