Featured Post
নিবন্ধ ।। সুকান্তাবলি ।। আবদুস সালাম
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
সুকান্তাবলি
আবদুস সালাম
মাত্র নয় কিংবা দশ বছরের একটি বালক যার পড়াশোনা কেবল শুরু হয়েছে ।সেই বালক তখন থেকেই লিখতে শুরু করলেন ছড়া ।সাহিত্যের আকাশে ধুমকেতুর মতো তাঁর আবির্ভাব । মার্কসবাদী ভাবধারায় বিশ্বাসী ও নতুন প্রগতিশীল মনের অধিকারী এক বিষ্ময় বালক কে আমরা খুঁজে পেলাম । আমরা খুঁজে পেলাম হত দরিদ্র মানুষের দুঃখের সাথী এক মননশীল বালক কে ।
পাঠশালায় পড়তে পড়তে লিখতেন মানুষের দৈনন্দিন সমস্যা নিয়ে মুখে মুখে ছড়া বানাতে পারতেন । অল্প বয়সের লেখাগুলো দেখে সকলে প্রশংসায় পঞ্চমুখ । মামা বাড়ির লোকজন তাকে উৎসাহ যোগাতেন। আত্মহারা কৃষক-শ্রমিকের কথা ভাবতেন তখন থেকেই । ভাবতেন যারা দুমুঠো খেতে পায়না তাদের কথা। আপনারা বুঝতেই পারছেন এই ক্ষণজন্মা বিষ্ময় বালকের নাম সুকান্ত ভট্টাচার্য । তিনি আমাদের সকলের প্রিয় "কিশোর কবি "।
জন্ম ১৫ ই আগস্ট ১৯২৬ । পিতা নিবারণ চন্দ্র ভট্টাচার্য ,মাতা সুনীতি দেবী । ইনাদের কোল আলো করে আসে এই বিস্ময় বালক। জন্মস্থান কলকাতার কালীঘাটের মাতামহের বাড়িতে।
নিবারণ চন্দ্র ভট্টাচার্য ও মাতা সুনীতি দেবী বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার কোটালীপাড়ার উনিশিয়া গ্রামে বাস করতেন ।পারিবারিক বৃত্তি ছিল যাজন । স্বাধীনতার অনেক আগেই কাজের সন্ধানে চলে আসেন আমাদের তিলোত্তমা কলকাতার বুকে । পারিবারিক পেশা ছিল যজম্যান গিরি । কলকাতায় শৈশবে বেলেঘাটার কলামন্দির নামে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হলে অচিরেই তিনি মেধাবী ছাত্র হিসেবে সকলের প্রিয় হয়ে ওঠেন ।
মামার বাড়ির পরিবেশ , লেখা পড়ার প্রতি আগ্রহ , দরিদ্র মানুষের প্রতি ভালোবাসা এসব বালক সুকান্ত কে আলাদা হিসেবে চিহ্নিত করতে সাহায্য করে। ১৯৩৭ সা্লে মা পরলোকগমন করেন । অনেক টা অসহায় হয়ে পড়েন। এই প্রাথমিক বিদ্যালয়েরই প্রধান শিক্ষকের সহায়তা একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন যার নাম "সঞ্জয়" ।এই সময় তাঁর লিখিত ছড়াগুলো
এই পত্রিকায় নিয়মিত ভাবে প্রকাশিত হতো । পরবর্তীকালে একটি মুদ্রিত পত্রিকা "শিখা " তে লেখাগুলি আস্তে আস্তে প্রকাশিত হতে শুরু করে । ছাপার অক্ষরে প্রথম গ্রন্থ প্রকাশিত হয় "..…বিবেকানন্দের জীবনী"। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়া শেষ করে বেলেঘাটা দেশবন্ধু হাই স্কুলে ভর্তি হন। সেখানে সপ্তম শ্রেণীতে পড়ার সময় হাতে লেখা একটি প্রতীক পত্রিকা প্রকাশ করেন যার নাম "সপ্তমী"। অল্পদিনেই প্রতিটি শিক্ষক মহাশয়ের স্নেহভাজন হয়ে উঠেন ।সকল মাস্টার মশায়গণ তার এই সাহিত্যসাধনা কে উৎসাহিত করতে শুরু করেন। ছাত্র সমাজ সেবামূলক কাজে জড়িয়ে পড়ুক এটা তিনি মনে প্রা্ণে চাইতেন।
তখন দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় ।বিভীষিকা ছড়িয়ে পড়ছে চারিদিকে। তিনি এই সময় জনগণকে সতর্ক করার জন্য অনেক গান রচনা করেন।
অতি কিশোরের ছড়া
তোমরা আমায় নিন্দে করে দাও না যতই গালি আমি ঠিক মাখছি আমার গালেতে চুনকালী কোন কাজটাই পারিনাকো বলতে পারি ছড়া পাশের পড়া পড়ি না চায় পরী হেলে পড়া সোজাসুজি যা হয় বুঝি হাই অদৃষ্ট আমার কথা বোঝে না কেউ পৃথিবীটাই বক্র
আবার ভেজাল কবিতায় লেখেন
""ভেজাল ভেজাল ভেজাল রে ভাই ,
ভেজাল সারাদেশটায়
ভেজাল ছাড়া খাঁটি জিনিস
মিলবে না কো চেষ্টায়--
ভেজাল তেল , ভেজাল চাল,ভেজাল ঘি আর ময়দা
কৌন ছোড়েগা ভেজাল ভইয়া, ভেজাল সে হয় ফয়দা"
এই এই ক্ষণজন্মা বালক /পুরুষটি মাত্র 21 বছর বয়সে বাংলা সাহিত্যে অসামান্য অবদান রেখে গেছেন। যা আমাদের বোধের দুয়ারে আঘাত হানে । আপামর বাঙালি প্রিয় কবিকে কিশোর কবি বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি স্বচোখে দেখেছেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, মন্বন্তর ,ফ্যাসিবাদী আগ্রসন এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা । সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছেন বারবার ।
বাল্যকাল থেকেই তিনি ছিলেন সাম্যবাদী ধারণার একনিষ্ঠ সঙ্গী। অল্প বয়সেই প্রকাশিত হয়েছে তার গ্রন্থ "ছাড়পত্র " "ঘুম নেই " "মিঠে কড়া"। এছাড়াও তিনি প্রবন্ধ জগতেও অসামান্য প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে গেছেন। তিনি প্রগতিশীল লেখক শিল্পী সংঘের কমিউনিস্ট দলের সর্বক্ষণের সঙ্গী ।
এ সময় তিনি কমিউনিস্ট পার্টির কাগজ বিক্রয়ের কাজ নেন।
১৯৪২ সালে কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের এবং রাজনীতিতে অন্নদাশংকর ভট্টাচার্যের অনুগামী হয়ে ওঠেন। একজন পূর্ণ কমিউনিস্ট হিসেবে নিজেকে ভাবতে শুরু করেন ।পঞ্চাশের মন্বন্তর কবিকে মানুষের দুর্দশা কে একেবারে কাছ থেকে দেখার সুযোগ করে দেয়। প্রথম থেকেই তার মানুষের প্রতি আস্থা এবং দেশের প্রতি ভালোবাসা কবিকে স্বতন্ত্রতা এনে দেয়।
তিনি লিখলেন:-
" অবাক পৃথিবী অবাক করলে তুমি
জন্মেই দেখি ক্ষুব্ধ স্বদেশভূমি।।
------
এদেশে জন্মে পদাঘাতই শুধু পেলাম
অবাক পৃথিবী ! সেলাম তোমাকে সেলাম।।"
মেয়েদের পদবী
মেয়েদের পদবীতে গোলমাল ভারী
অনেকের নামে তাই দেখি বাড়াবাড়ি
আ কারান্ত দিয়ে মহিলা করার
চেষ্টা হাসির, তাই ভূমিকা ছড়ার
গুপ্ত গুপ্তা হয় মেয়েদের নামে
দেখেছি অনেক চিঠি ,পোস্টকার্ডে খামে ---
এখানে বলতে পারে বড় মানুষ মোটর কেন চড়বে গরীব কেন সেই মোটরের তলায় চাপা পড়ে বড় মানুষ বজ্রপাতে
শুধু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধই নয় স্থানীয় ধনী ও মহাজন শ্রেণি চাটুকারদের দল মানুষের জীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছিল ।তার সাথে যোগ হয়েছিল বন্যা ,ঝড় , মহামারী ।হাজার হাজার অসহায় মানুষ রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে।
চলমান শতাব্দীর প্রচুর খিদে
সামনে-পেছনে যা দেখে সবই গিলে নিচ্ছে অকাতরে ।।
তিনি আমাদের পরম প্রিয় কিশোর কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য।
তিনি বড়োদের জন্য যেমন জ্বালাময়ী কবিতা লিখেছেন তেমনি ছোটদের জন্য ও অনেক ছড়া লিখেছেন।
আমরা তাকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি।
_____________________________________________
[ছবি: ইন্টারনেট মাধ্যম থেকে সংগৃহীত]
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন