ভুলো মনের কাণ্ড
সান্ত্বনা ব্যানার্জী
"প্রতিদিন রোববার" পত্রিকায় নবনীতা দেব সেন-এর ভুলভুলাইয়া পড়ে খুব হেসেছিলাম,আর তারপরই মনে হলো , আরে!আমি নিজেই তো তার একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ! ভুলো মনের সে সব কাণ্ড কারখানা দিয়ে একটা মজার পাতা তো ভরা যেতেই পারে!এই কঠোর কঠিন সময়ে যদি একটু হাসির বাতাস বইয়ে দেওয়া যায় তো ভালো হয় না?
আমি তখন ক্লাস নাইনের ছাত্রী। শক্তিগরে আমার ছোটো কাকার বাড়ী। ওখানে প্রায়ই ভালো ভালো যাত্রা থিয়েটার হতো। কত নামকরা যাত্রা যে দেখেছি ওখানে, বীনা দাশগুপ্তর নটি বিনোদিনী, শান্তি গোপালের আমি সুভাষ বলছি, ক্রীতদাস,অরুণ বরুণ কিরণবালা ,থিয়েটার... মারিচ সংবাদ,সিংহগর, বেকার,সে সব আজও যেন চোখ বুজলে দেখতে পাই!যাইহোক,এমনই এক যাত্রাপালা দেখার জন্য কাকুর আমন্ত্রণ পেলাম।সকাল বেলাতেই বাস ধরে কাকুর বাড়ী চলে এলাম। দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর কাকু আমায় টিকিট টা দিয়ে বললো...সন্ধ্যেবেলা যাত্রা তলায় চলে যাস কাকিমার সঙ্গে। আমি টিকিটটা হাতে নিয়েই দুপুর বেলা খাটে উঠলাম শরৎচন্দ্রের ছোটো গল্পের সংকলন টা নিয়ে। ব্যাস, গল্পে ডুব! পড়ছি লালুর পাঁঠা বলি দেওয়ার গল্প,আর ক্রমশঃ সোজা হয়ে বসছি,আর কখন যে ভুলো মনে...!
সন্ধ্যেবেলা কাকীমা বললো... কিরে ওঠ এবার, তৈরী হয়ে নে,না হলে জায়গা পাওয়া যাবে না। আমাদের দেরী দেখে কাকুও এসে হাজির।আর এসেই আমায় বকুনি....এখনো তৈরী হোসনি?
আমি বললাম...শরীর টা খারাপ লাগছে,যাবো না। কাকু আরও দুচার বার জোর করলো যাবার জন্য,তারপর বললো...কি আর হবে, যাবিই না যখন টিকিট টা দে,অন্য কেউ একজন যেতে পারবে।তখন কেঁদে ফেললাম!গল্প পড়তে পড়তে কখন যে টিকিট টা দাঁত দিয়ে কুচিয়ে ফেলেছি..! খুব রেগে গিয়েও কেন জানিনা কাকু বেশি কিছু বললো না,আবার টিকিট কেটে যাত্রা দেখা হলো আরো কয়েক বছর পর,ওই স্টেশনেই বসে আছি ট্রেন ধরবো বলে।একজন সাদা কাপড় পরা বিধবা মহিলা গুটি গুটি আমার কাছে এসে
বললো....ও মা!বুলা যে!ভালো আছো মা? আমিও এক গাল হেসে বললাম .....ভালো আছি, তুমি কেমন আছো ছবি মাসী?দাদু দিদা,মামা সবাই ভালো আছে?....ও কেমন অবাক হয়ে বললো...
দাদু দিদা মামা কি সব বলছো! আমি তো মানু পিসী,তোমার পিসিমার বাড়ীর বাঁধা নোক!....
এ মা!সত্যি তো ! এতো মানু পিসিমা!মামার বাড়ির ছবি মাসী নয়! চ্ছিঃ!ছি!কি গেরো!
পরের টা ঘটেছে খুব সম্প্রতি। সব রান্না হয়ে গেছে,ভাত টা গরম গরম খাওয়া হবে। কুকারে ভাত বসিয়ে একটা সিটি দিয়ে চান করতে গেলাম।চান করে বেরিয়ে ডেকচিতে উপুড় দিয়ে সব তরি তরকারি খাবার টেবিলে নিয়ে গেলাম।শেষে গরম ভাতের কুকার তুলতেই দেখি হালকা!খালি কুকার! চালই দিই নি!কপালে জুটলো গৃহকর্তার বকুনি।শেষে সবাই হেসে নিল খুব।
তবে গৃহকর্তা ও কিছু কম যান না। একদিন স্কুলে যাওয়ার জন্য তৈরী হয়েছি। তিনি আমাকে স্টেশনে পৌঁছে দেওয়ার জন্য গেটের বাইরে স্কুটার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। আমি গেট খুলে , শাড়ীর আঁচল টা কোমরে জড়িয়ে বসতে যাবো, তিনি স্কুটার চালিয়ে চলে গেলেন আমাকে পৌঁছে দিতে!আমি পিছন পিছন ছুটে জোরে জোরে হেঁকে ও তাকে থামাতে পারলাম না! যথারীতি ট্রেন মিস হলো,স্কুলে যাওয়া হলো না।
আর এক দিনের কথা! স্কুল থেকে বাসে ট্রেনে,তারপর হেঁটে,প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা পথ যুদ্ধ করে ক্লান্ত অবসন্ন দেহে বাড়ী ফিরে খাটের ওপর বসেছি, কর্তা তাড়াতাড়ি ফ্যান টা চালিয়ে দিলেন।বললাম, এক গ্লাস জল দেবে?...উনি জলের জালারকাছে গেলেন,এক গ্লাস জল আনলেন,দাঁড়িয়ে আমার সঙ্গে কি সব যেন কথা বলতে বলতে জলটা খেয়ে নিলেন,কিছুক্ষন পর খালি গ্লাস টার দিকে চোখ পড়তেই আমায় জিজ্ঞেস করলেন....আর জল নেবে?
এবার আমারএক জ্যাঠামশাই এর কথা বলে ভুলো মনের গল্পের ইতি টানবো। একদিন জ্যাঠামশাই চান খাওয়া করে অফিস চলে গেলেন। জ্যাঠাইমার কাজ তার ছাড়া জামা কাপড়,গামছা কেচে দেওয়া। তো কাচতে গিয়ে কোথাও গামছা টা খুঁজে পেলেন না। বিকেলে ফিরলে জ্যাঠাইমা গামছার কথা জিজ্ঞেস করতে ঘরে ঢুকে দেখেন তিনি ইতি মধ্যেই জামা প্যান্ট খুলে ফেলেছেন আর তার আন্ডার ওয়্যার এর তলা দিয়ে লাল গামছাটা ঝুলছে!জ্যাঠাইমা বলতেই তিনি কেমন থতমত খেয়ে বললেন.....তাই তো! একি কাণ্ড! তাই সারাদিন পিছন টা কেমন ভিজে ভিজে লাগছিল!আর একদিন!জ্যাঠাইমা তার কাচ ভাঙা চশমার ফ্রেম টা ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন সমেত জ্যাঠামশাইকে দিয়ে বললেন নতুন কাচ লাগিয়ে আনতে।বিকেলে অফিস থেকে ফেরার পর চশমার কথা জিজ্ঞেস করতে গিয়ে ওনার দিকে তাকিয়ে চক্ষুস্থির!সেই কাচ ছাড়া চশমার
ফ্রেম টা জ্যাঠামশাই এর চোখে!এবারও বললেন.....তাই আজ অফিসে কাজ করতে কেমন অসুবিধে হচ্ছিল!আর বাসে ওই কলেজের মেয়েটা কেমন ফিক্ ফিক করে হাসছিলো!!
__________________________________________________________________________
[ছবি: ইন্টারনেট মাধ্যম থেকে সংগৃহীত]
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন