Featured Post

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় ৪৩ ।। জুন ২০২৫

ছবি
    সম্পাদকীয় গরম পড়েছে বেশ। মাঝে মাঝে বৃষ্টিও হচ্ছে বেশ। এবার বর্ষা যেন আগে আগে হাজির। তিস্তা তো ফুঁসছে এখন। এরকম কেন হচ্ছে বলো তো? আসলে আমরা পরিবেশের কোনো খেয়াল রাখছি না। যেমন খুশি গাছপালা কেটে কলকারখানা তৈরি করছি ইচ্ছেমতো। যার ফলে আবহাওয়ার বদল, বন্যা, খরা এইসব হচ্ছে।    পরিবেশ নিয়ে তাই সকলের একটা ভাবনা থাকা দরকার। ৫ই জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবসে বিশ্বপ্রকৃতিকে রক্ষার অঙ্গীকার নিয়েছে সকলে। তোমাদের মনে হতে পারে মানুষের কি ক্ষমতা আছে প্রকৃতিকে রক্ষা করার? আসলে রক্ষা করা মানে প্রাকৃতিক সম্পদকে যথেচ্ছ ভাবে ব্যবহার না করা, গাছপালা যা নষ্ট হয়েছে তার কিছুটা অন্তত পূরণ করা। মানুষই একমাত্র জীব যারা প্রাকৃতিক সম্পদকে নিজের সুবিধার্থে ইচ্ছেমত ব্যবহার করে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট করছে। তোমাদেরও বিশ্ব পরিবেশ দিবসে একটা ভার নিতে হবে। প্রত্যেকে একটা করে বৃক্ষ জাতীয় গাছ বসিয়ে পরিচর্যা করে বড় করে তুলতে হবে। আম, জাম, কাঁঠাল সবই বৃক্ষ জাতীয় গাছ। তাই ফল খেয়ে বীজগুলো বাড়ির উঠোন, পুকুর পাড় বা রাস্তার ধারে যত্ন করে পুঁতে দাও। শিক্ষকের অনুমতি নিয়ে স্কুলেও রোপণ করতে পারো। ব...

গল্প ।। মৎস্য কন্যা ।। রমলা মুখার্জী

 

মৎস্য কন্যা

 রমলা মুখার্জী


চিত্রাদেবী কখন থেকে মোবাইলে চেষ্টা করছেন তাঁর মেয়ের স্কুলের রেজাল্ট কি হল জানার জন্যে, কিন্তু কিছুতেই লাইন পাচ্ছেন না। সকাল থেকে তিনি কেবল টেনশন করছেন, যেন পরীক্ষার রেজাল্টা স্নেহার বেরোবে না, চিত্রাদেবীরই বেরোবে। এমন সময় স্নেহা লাফাতে লাফাতে ঘরে ঢুকলো, "মা আমি ফার্স্ট হয়েছি, মা আমি ফার্স্ট হয়েছি।" চিত্রাদেবী তো আনন্দে অধীর হয়ে উঠলেন মেয়ের বার্ষিক পরীক্ষার ফল শুনে। স্নেহা তো নাচতে লাগল, কারণ এখন তো বাবাকে কথা রাখতেই হবে, অ্যাকুয়ারিয়াম কিনে দিতেই হবে। কবে থেকেই স্নেহার অ্যাকুয়ারিয়ামের শখ, কিন্তু স্নেহার বাবা সরোজবাবু বলেই দিয়েছিলেন, "পরীক্ষায় যদি ফার্স্ট হতে পার, তবেই তোমাকে অ্যাকুয়ারিয়াম কিনে দেবো, নইলে পাবে না।" আর তাই তো মহা ফাঁকিবাজ স্নেহা একেবারে আদাজল খেয়ে লেগে পড়েছিল। বুদ্ধিতে তুখোড় হলে কি হবে, স্নেহা অসম্ভব ফাঁকিবাজ। তা মাস আটেকের অদম্য চেষ্টায় অসাধ্য সাধন ঘটালো বাপু মেয়েটা। দেখিয়ে তো দিলো যে কষ্ট করলে তবেই কেষ্ট মেলে।

    স্নেহার পীড়াপীড়িতে পরদিনই সরোজবাবু স্নেহাকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন অ্যাকুয়ারিয়াম কেনার উদ্দেশ্যে। চিত্রাদেবী অবশ্য গজ গজ করছিলেন,"খাবার দাও, এটা কর, সেটা কর- ছেলেমেয়েদের সেবা করতেই হিমশিম খেয়ে যাচ্ছি- তো আবার মাছেদের সেবা- যত উটকো ঝামেলা, তার চেয়ে একটা বরং বড় দেখে ডল নে, খেতে পরতে দিতে হবে না, যখন মন হবে খেলা করবি, না হয় সাজিয়ে রাখবি।" কিন্তু স্নেহা নাছোড়বান্দা- সে অ্যাকুয়ারিয়ামই নেবে- তার বলে কত দিনের শখ।

      অনেক খুঁজে পেতে খুব সুন্দর একটা অ্যাকুয়ারিয়াম সরোজবাবু নিয়ে এলেন- মেয়ের কৃতিত্বে তিনিও ভারি খুশি হয়েছেন। স্নেহার কি আজ পড়ায় মন বসে! তার বাবা তাকে বুঝিয়ে দিচ্ছেন; "জানিস স্নেহা অ্যাকুয়ারিয়াম হল ছোট্ট একটা পুকুর। মাছ, জলজ উদ্ভিদ, জলজ কিছু জীব, জল, আলো, মাটি, বাতাস এসব নিয়েই অ্যাকুয়ারিয়ামের পরিবেশ, ঠিক যেমন জলাশয়ে থাকে। স্নেহা অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে- কত সুন্দর সুন্দর মাছ খেলা করছে। ঠিক ডিসকাসের মত দেখতে ডিসকাস মাছ, শুঁড়ওয়ালা ক্যাটফিস, হীরের কণার মত ডায়মণ্ডফিস, কাঁচের মত স্বচ্ছ গ্লাস ফিস, সোনার রঙের সোনালী মাছ, লাল-নীল-সবুজ রঙের ফাইটিং ফিসগুলো কেবল তেড়ে তেড়ে যাচ্ছে- খুব দুষ্টু।

       সারাদিন লাফালাফি, ঝাঁপাঝাঁপি করে স্নেহা সন্ধ্যেবেলা দাদার মৎসবিজ্ঞান বইটা নিয়ে বসেছে, বাবা বলে দিয়েছেন এবার থেকে স্নেহাকে মাছ সম্বন্ধে অনেক কিছু জানতে হবে। সে পড়ছে মাছেদেরও নানান জাত আছে, ছোট আর বড় জাত, আমিষভোজী আর নিরামিষভোজী মাছ, মিষ্টি আর নোনাজলের মাছ; তারপর জিওল মাছ, রাক্ষুসে মাছ কত কি! পড়তে পড়তে কখন যেন সে পৌঁছে গেল মাছেদের দেশে। 

         খুব শাঁখ বাজছে, উলুধ্বনি হচ্ছে। স্নেহা হাতে একবাক্স 'ফিসমিল' নিয়ে চলেছে মাছেদের বিয়ের ভোজ খেতে। ঐ তো পুঁটিসোনা ওড়না মাথায় দিয়ে সেজেছে- ওর আজ বিয়ে- সব মাছেরা মিলে খুব মজা করছে। গুগলি, জল শামুক, কাঁকড়া সবাই এসেছে। কুচো চিংড়ির কি লাফালাফি। কই মাছ কল কল করে কত কথাই কইছে। কিন্তু রুই, কাতলা, মৃগেল, কালবোস এরা তো আসে নি। ট্যাংরা চোখ টেরিয়ে বলছে, "রাক্ষুসে বোয়ালটা আসেনি খুব ভাল হয়েছে, ও এলে আমাদের আর রক্ষে থাকত।" বাটা মাছ বাটা ভরে পান সাজতে সাজতে বলল, "বিয়ের আসরে আসবে কেন বল? সুযোগ বুঝে পেছন থেকে আমাদের খাওয়াই তো ওর কাজ।" শিঙি শাঁখ বাজানো থামিয়ে বলে, "রুই মামী, কাতলা কাকা, কালবোস জ্যাঠা, মৃগেল মাসি কেউ তো এল না।" ফলুই উলু দিচ্ছিল, ঠোঁট উল্টে বলল, "তা আসবে কেন বল? ছোট জাতের বাড়িতে পা দিলে ওদের প্রেস্টিজ একেবারে পাংচার হয়ে যাবে না?"

         মৌরলা ছুটতে ছুটতে এসে খবর দিল, "বর এসেছে, বর এসেছে। দেখবে এসো কি সুন্দর চাঁদের মত চাঁদা বর।" আনন্দে তেলাপিয়া "পিয়া পিয়া" করে গান জুড়ে দিল। গরীব পুঁটির বিয়েতে তো বাদ্যি-বাজনা কিছুই করা যায় নি। তবে আনন্দের কিছু ঘাটতি নেই। ল্যাটা বরকে বরণ করে নিয়ে গিয়ে বরাসনে বসালো। ছাদনাতলায় যখন বরকে নিয়ে আসা হল নাপিত খলসের কি ছড়া কাটার ধুম- ওর বুদ্ধিটা যে বরাবরই বেশ খোলসা- 

পুঁটি মাছের বিয়া আজ ঘোমটা মাথায় দিয়া
বর এসেছে যাত্রী লইয়া নৌকাতে চাপিয়া।
ফলুই শিঙি উলু-শঙ্খে বরকে বরণ করে-
তেলাপিয়া গান ধরে আর খলসে ছড়া পড়ে।

           মাগুর পুরুত বিয়ের মন্ত্র পড়তে লাগল। মিষ্টি ঝিনুকও এসেছে। মাছেদের মধ্যেও মানুষের মত উন্নাসিকতা দেখে স্নেহার মনটা বেশ খারাপ হয়ে গেল। কিন্তু আর তো সে যুগ নেই। এখন তো মাগুর, শিঙি, কই, বাটা, ট্যাংরার খুব কদর। স্নেহার বাবার আমলে নাকি এসব মাছ গরীব দুঃখিরাই খেত। তবে বইতে স্নেহা পড়েছে অনেক প্রজাতির মাছ নাকি হারিয়ে যাচ্ছে জল দূষণের জন্যে। কীটনাশকের অপব্যবহার, কলকারখানার ময়লা আবর্জনা ফেলার জন্যে মাছেদের খুব নাকি ক্ষতি হচ্ছে। এসব অভিযোগ কিছু মাছ স্নেহাকে জানালেও আর সব মাছেরা মিলে স্নেহাকে খুব খাতির যত্ন করল, কত চপ, কাটলেট খাওয়াল। হঠাৎ ঘটল সাংঘাতিক এক কাণ্ড। কারা যেন এসে হুড়মুড় করে এক বিষাক্ত আবর্জনা জলে ফেলে দিল। ফেলবি তো ফেল একেবারে ছাদনাতলায়। বেশির ভাগ মাছই এই বিষাক্ত পদার্থের দ্বারা জল দূষণের ফলে মরে গেল। কেউ কেউ এদিক সেদিক পালিয়ে বাঁচল। স্নেহা কোনরকমে ডাঙায় উঠে এল। যে কাঁকড়াগুলো ডাঙায় উঠতে পেরেছিল তারা তো তেড়ে এল স্নেহার দিকে- তাদের শক্ত দাঁড়া দিয়ে সাঁড়াশির মত তার পায়ের আঙ্গুল আঁকড়ে ধরল- ব্যথায় পা টনটন করতে লাগল স্নেহার- সে আর পালাতে পারছে না। শিঙি, মাগুর, ল্যাটা এরা জিওল মাছ, ডাঙায় কিছুক্ষণ বেঁচে থাকতে পারে এদের অতিরিক্ত শ্বাসযন্ত্র আছে বলে- তাই এরা কিছু কিছু ডাঙায় উঠে চলে এসেছে। শিঙি তো স্নেহার গায়ে কাঁটা ফোটাতে ফোটাতে বলতে লাগল, "আমাদের সবচেয়ে বড় শত্রু এই মানুষ জাতটা, এরা বড় পাজি, এদের জন্যেই আজ আমাদের এত কষ্ট, এত দুঃখ। এসো সবাই যারা বেঁচে গেছি- তারা একে ধরে মারি।" কি অসহ্য যন্ত্রণা শিঙি মাছের কাঁটায়- স্নেহা চিৎকার করে কাঁদতে লাগল। মেয়ের কান্না শুনে চিত্রা দেবী ছুটে এলেন, "এই স্নেহা কাঁদছিস কেন? উঠে পড়, মাছগুলো কি সুন্দর খেলা করছে।
___________________________________________

ডঃ রমলা মুখার্জী
বৈঁচি, বিবেকানন্দ পল্লী
হুগলী, ৭১২১৩৪
 
  [ছবি: ইন্টারনেট মাধ্যম থেকে সংগৃহীত]
 

মন্তব্যসমূহ

সপ্তাহের পছন্দ

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় ৪২ ।। মে ২০২৫

গল্প ।। মামা বাড়ি ভারি মজা ।। মিঠুন মুখার্জী

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় ৪৩ ।। জুন ২০২৫

ছড়া ।। ফিরে দেখা ।। প্রবোধ কুমার মৃধা

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। ষড়ত্রিংশ সংখ্যা ।। সেপ্টেম্বর ২০২৪

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় ৪০ ।। মার্চ ২০২৫

টুকরো কথা ।। প্রকৃতির হৃদয় – উদ্ভিদ ।। চন্দ্রমা মুখার্জী

ছড়া ।। ভূতের পাঁচ পা ।। নজমুল ইসলাম খসরু

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় ৪১ ।। এপ্রিল ২০২৫

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় - ১২ ।। সেপ্টেম্বর ২০২২

মাসের পছন্দ

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় ৪২ ।। মে ২০২৫

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় ৪৩ ।। জুন ২০২৫

কবিতা ।। মনে পড়ে ।। আশীষ কুমার চক্রবর্তী

কবিতা।। মেঘলা দিন।। শ্রেয়া বেজ

কবিতা ।। মিষ্টি দিনের ছবি ।। সুমিতা চৌধুরী

ছোটদের আঁকিবুঁকি ।। ত্রিত্বারিংশ সংখ্যা ।। জুন, ২০২৫

থ্রিলার গল্প ।। আলোয় ঢাকা অন্ধকার ।। ইয়াছিন ইবনে ফিরোজ

ছড়া ।। ফিরে দেখা ।। প্রবোধ কুমার মৃধা

ছড়া ।। রামধাক্কা ।। অরবিন্দ পুরকাইত

ছড়া ।। ভ্রমণ! ভ্রমণ!! ।। গোবিন্দ মোদক

বছরের পছন্দ

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় ৪০ ।। মার্চ ২০২৫

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 38th issue: January 2025

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সুচিপত্র ।। 37th issue: December 2024

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় ৪১ ।। এপ্রিল ২০২৫

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। চতুর্ত্রিংশ সংখ্যা ।। জুলাই ২০২৪

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। ,39th issue: February 2025

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় ৪২ ।। মে ২০২৫

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। পঞ্চত্রিংশ সংখ্যা ।। আগষ্ট ২০২৪

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। ষড়ত্রিংশ সংখ্যা ।। সেপ্টেম্বর ২০২৪

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় ৪৩ ।। জুন ২০২৫

অতি প্রিয়

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। আত্মপ্রকাশ সংখ্যা ।। অক্টোবর ২০২১

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। দ্বিতীয় সংখ্যা ।। নভেম্বর ২০২১

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 4th issue: January 2022,

নিবন্ধ ।। শিশু-কিশোর সাহিত্যবলয়ে শিশুরাই যেন ব্রাত‍্য না থাকে ।। অরবিন্দ পুরকাইত

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 7th issue: April 2022

নিবন্ধ ।। দেশীয় উদ্ভিদ কেন গুরুত্বপূর্ণ ? ।। ডঃ চিত্তরঞ্জন দাস

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় - ১০ ।। জুলাই ২০২২

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় - ১১ ।। আগস্ট ২০২২

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র : 8th issue: May 2022

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় - ১২ ।। সেপ্টেম্বর ২০২২