Featured Post

ছড়া ।। আকাশটাকে খোঁজে ।। দীনেশ সরকার

ছবি
আকাশটাকে খোঁজে দীনেশ সরকার            পড়তে বসলে জানলা দিয়ে মন ছুটে যায় দূরে গাইছে পাখি ওই যে গাছে মিষ্টি-মধুর সুরে। কিংবা যখন হাত বাড়িয়ে আকাশ আমায় ডাকে পড়ার পাতায় মন আমার কি বাঁধা তখন থাকে?   পূবের হাওয়া কড়া নাড়ে যখন আমার দোরে কিংবা অলি গুনগুনিয়ে চতুর্দিকে ঘোরে প্রজাপতি পাখা মেলে ওড়ে ফুলের মেলায় কখন যেন অবুঝ এ মন যায় হারিয়ে হেলায়।   কাঠবেড়ালি কাটুস্‌-কুটুস্‌ আমার দিকে তাকায় মন তখন কি আটকে থাকে পড়ার বইয়ের পাতায়? টুনটুনিটা তিড়িং-বিড়িং পুচ্ছ নাচায় গাছে মনটা বাঁধা তখন কি আর অঙ্কখাতায় আছে?   অঙ্ক কষতে ভুল হয়ে যায়, পড়া যাই যে ভুলে স্যারের বকা মাঝে মাঝেই খাই আমি ইস্কুলে। মনকে আমি কত্ত বোঝাই, মন তবু কি বোঝে সুযোগ পেলেই জানলা দিয়ে আকাশটাকে খোঁজে।   ******************************************** দীনেশ সরকার ১৪০ ডি, হিজলি কো-অপারেটিভ সোসাইটি, প্রেমবাজার, খড়্গপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর---- ৭২১৩০৬

গল্প ।। আজগুবি গ্রামের চাঁদড়া উৎসব ।। প্রদীপ কুমার দে

আজগুবি গ্রামের চাঁদড়া উৎসব 
প্রদীপ কুমার দে 


আঙুরের সরু আঙুলটা ধরে ছিলাম। পাশ দিয়ে সরু ফালি সবুজ জলের 'বাজে নদী' বয়ে চলেছে যে -- ও যদি পা হড়কে পড়ে যায় তাই।

নদী এখানে তার মধুর ভাষায় কলরব করে এক কুমারী বালিকার ন্যায় হুল্লোড় জুড়ে তার অতল গভীর অঞ্চলটিকে এক নাচঘর বানিয়ে তুলেছে। যদি তার গভীরতা অন্বেষণ করা যায় দেখা যাবে সেখানে সবসময়ই জলরাশি সূর্যের সাতরঙ মেখে এক মায়াবী বিমূর্ততায় প্রকান্ড ঘাগড়ার ন্যায় আবর্তিত হচ্ছে।

আকাশ লাল হয়ে রয়েছে আর তার বুকে ভাসমান  হলুদাভ মেঘেরা ওই নদীর জলকে যেন চুম্বন করতে চাইছে। আকাশ তাই তার নীল রঙ হারিয়ে রক্তমাখা চাদরে নিজেকে মুড়ে নিয়ে এক নতুন স্বপ্নে বিভোর হয়ে যাওয়া মেঘেদের রক্তচক্ষু বিতরণ করছিল হয়তোবা খানিকটা হিংসাত্মক ভঙ্গিমায়। 

বৃক্ষেরা লম্বালম্বি আকাশসীমা লঙ্ঘনের আশায় উজ্জীবিত। সবুজাভ ত্যাগে তার ইচ্ছাপূরণ - নীলাম্বরী পর্বতের ন্যায়। শাখাসমূহ তলোয়ারবাজ যুবকের অবয়বে মূর্তিমান হয়ে পাতায় পাতায় সখ্যতায় আচ্ছাদিত! ফুল ফল নিজ নিজ ভূমিকায় সূচিত।

দূরে দৃশ্যমান পাহাড়। একেবারেই সফেদ বরফহীন শীতল স্নিগ্ধতা মাখিয়ে জলপ্রপাত উদিগরণ করছে। যার ছন্দে জলরঙের জলরাশি  সর্পিলাকারে ধাবমান। এ যেন এক কন্যে, যে নারী নদীর সাথে মিলনে আগ্রহী।

" আজগুবি " এই গ্রামের নাম। আজগুবি সমস্তই ব্যাপার- স্যাপার।

আঙুর ওর আঙুল দিয়ে আমায় টান মারলে,
-- কাকু ওই দেখো কাকের রঙ কেমন সাদা?  কোনদিন দেখেছো?

আমি ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলাম হ্যাঁ তা বটে,
-- ওটা বক নয় তো?

--  বক কি 'কা- কা' করে ডাকে?

তা বটে কাক'ই হবে। এখানে সব কেমন যেন নিয়মছাড়া,  ছন্নছাড়া।

দুটি বিড়াল এসে আঙুর কে হাই করে লাফিয়ে উঠলো, বোধহয় খেতে চাইছে। আঙুর পকেট থেকে একটা ক্যাডবেরি বার করে দুটুকরো করে দিতেই বিড়াল দুটি তা তুলে নিয়ে দৌড়ে গাছে চড়ে পড়লো।

বড় বড় গাছেদের ফাঁকফোকর ভেদ করে অজান্তেই সূর্যালোক আমাদের ছুঁয়ে এক মূর্ছনায় মটিতে খসে পড়া শুকনো পাতায় নিজেকে প্রলম্বিত করছিল। সূর্যদেব এখানে সবসময়ই তার সাতটি রঙ বিলিয়ে দেয় -আজগুবি গ্রামের নাম মহিমাকে উজ্জ্বল করতেই।

আঙুর এই গ্রামের একমাত্র বালিকা। এই গ্রামে বালকের দেখা পাওয়া গেলেও বালিকা অমিল। 
বালিকা সেই একাই।

আমাকে গ্রাম দেখানোই তার ইচ্ছে। আমি ভাগ্যবান এই সুযোগের সদ্ব্যবহারে। গ্রামটা ঘুরেফিরে দেখেই চমকে চমকে উঠছি নানান অজানারে দেখে। সেটা আবার পুরো অজানাই যে সেটাও ঠিক নয় ।আমরা সচরাচর যা দেখে অভ্যস্ত। এগুলি ঠিল তার উল্টো। গতানুগতিকতা কে এড়িয়েই।

আঙুরের বন্ধু ঠিক বছর দশের এক বালক আমার সামনে চলে এল। মাথায় তার এক ঝাঁকড়া হলুদ চুল যা আমার নজরে প্রথমেই চলে এল। গায়ের রঙ তামাটে। বয়স আন্দাজ বারোর আশেপাশে। ভালোই লম্বা। দেখলেই নজরে আসে। ভালো হলেও অদ্ভুত।

অবাক হওয়ার ভঙ্গিমা দেখেই আঙুর জানান দিল,
--  ওর নাম রৌদ্র।

আমি সস্নেহে ওর মাথার চুলে আঙুল চালিয়ে দিলাম। ও আদর খেয়ে নিল।

-- আজ তোমার নিমন্ত্রণ
বালক রৌদ্র আমাকে আমন্ত্রণ জানালো।

--  আজ কি?

--  চাঁদড়া উৎসব

--  তাই নাকি? কিন্তু আমার যে সব অজানা।

--  চাঁদের সকল কিছুই তো অজানা।

কোন কথার মানে পাচ্ছি না। তাই কথা এগিয়ে কি লাভ? সবই গোলমেলে ।

সন্ধ্যা হতেই আজগুবি গ্রাম উদ্ভাসিত হল এক রঙিন স্বপ্নাদেশে যা দেখেও বোঝার দায় নেই এ জগৎ কোন সীমান্তের।

শ - খানেক বালক এই গ্রামেরই এসে হাজির। রৌদ্র তো ছিলই সঙ্গে এল তাপু, রনো, শমি, রৌপ্য রৌমো, জনাই প্রভৃতি নামের সবাই-আরো কত সুন্দর সুন্দর নামের বালকেরা উপস্থিত হল
সকলের হাতে এক‌টি করে গোলাপ। নানান প্রজাতির নানান রঙের, নানান বর্ণের। 

মঞ্চ বানানো হয়েছে গ্রামের বড় মাঠে -লাঙল তোলা মাটির স্তুপে আর পালতোলা নৌকার মিলকরণে -বাহারি বৃক্ষের সজ্জায়।

বয়স্কদের জন্য বিচালি বিছানো পথে এক রোমাঞ্চকর পরিবেশ পরিস্থিতি। চাঁদের হাটে চাঁদড়া উৎসব। 

হঠাৎই সমস্ত কিছু পরিবর্তন হয়ে গেল বাজখাই এক তীব্র হুঙ্কারে। অন্ধকার নেমে এল। আলোরা সব নিভে চুপসে গেল। আকশে থেকে বজ্রপাত হতে থাকল। মেঘ তার রঙ বদলিয়ে বৃষ্টির মধ্যে প্রবেশ করলো।

পদধ্বনি শোনা গেল গুমগুম শব্দে মাটি কাঁপিয়ে।
বিরাট এক দানব এসে দাপাতে লাগলো মঞ্চ।
কি তার ভয়ংকর চেহারা। সবুজ দেহে লাল চক্ষুগোলকের আগুনঘেরা জ্যোতির্বলয়। মাথা কাটা কিন্তু পেটে মুন্ডু। হাত পা কালো নিকষ। তার পায়ের নখের তীক্ষ ধারে মাটি কেটেকুটে ধসিয়ে দিচ্ছে। প্রচন্ড আওয়াজ তার গতিতে। বুঝিবা আজগুবি গ্রাম লন্ডভন্ড করে তছনছ করে দেবে সে। 

সব্বাই দিগ্বিদিক জ্ঞান শূন্য হয়ে পলায়ন মুখী প্রায়। নিমিষেই বদলে গেল পরিবেশ!
আর ঠিক সেই মুহূর্তেই সকলকে অবাক করে দিয়ে আঙুর তার কচিপনা আঙুল দিয়ে টোকা মারলো আগত শয়তান দানব রাণখের হাঁটুতে।
রাণখ সেই টুসকিতেই উল্টি খেয়ে আছাড় মেরে মাটিতে নিপাতিত হল। সঙ্গে সঙ্গে শ খানেক বালক তাদের হাতের বহুবিচিত্র গোলাপ দিয়ে তার সারা অঙ্গে থাপ্পড় বসালো। শয়তান কাতরে উঠে ভুমি গ্রহন করলো তার আগুন লাগা চোখ মুদ্রিত করে।

পরিবেশ পাল্টে গেল। মাটি তার রঙ ফিরে পেল।আকাশ আবার নীল হল, বৃক্ষ হল সবুজ, বাজে নদী তার উজ্জ্বলতা দিরে পেয়ে ঝর্ণা পাহাড়কে আলিঙ্গন করলো।

নীলাম্বরী আকাশে চাঁদ পূর্ণ মাত্রায় উঁকিঝুঁকি দিয়ে ছোটদের অণুপ্রেরণা জোগালো - চাঁদড়া উৎসব কে স্বাগত জানিয়ে।

প্রকৃতির রূপ ফিরে এল। আজগুবি নাম রয়ে গেল কিন্তু কর্মকাণ্ডে ব্যাপক রদবদল হয়ে গেল। শয়তানের মৃত্যুই সমস্ত অঘটন বিলোপনের কারণ। 

প্রতিবছরই এই আজগুবি গ্রামে এই কৃষ্ণ একাদশীর নিশিতে এই চাঁদড়া উৎসব পালন করা হয়। শয়তান আসে এবং তারা দাপিয়ে বেড়ায়। তাদের অত্যাচারে গ্রাম তছনছ করে দেয়। এযেন অমোঘ এক ভবিষ্যৎ। কিন্তু তাদের নিঃশেষ অবলুপ্তি ঘটে না।

এক ভবিষ্যৎবানী ছিল যদি এই গ্রামের  বারো বছরের কোন বালিকা ওই শয়তানের অঙ্গ স্পর্শ করে তাহলেই ওই শয়তানের বিলুপ্তি ঘটবে চিরকালের জন্য। কিন্তু সমস্যা ছিল বারো বছরের বালিকা কোথায় পাওয়া যাবে? উপরন্তু যখন গ্রামে বালিকার অস্তিত্বই সন্দেহজনক।

আঙুর জন্ম হওয়ার বারো বছর পর আজই সে সুযোগ এসে  হাজির হয়েছিল। আর সেই সুযোগের যথার্থই সদ্ব্যবহার করেছে এই সময়!

রৌদ্র এসে ততক্ষণে আঙুরের হাত ধরে ফেলেছে। অন্য বন্ধুরাও  মিলিয়েছে। উজ্জ্বল চন্দ্রাবতী রঙিন আলোয় ওদের রাঙিয়ে দিচ্ছে। গানের  পাখিরা সুর ধরেছে।

আঙুর ওদের হাত ধরে নেচে চলেছে। প্রকৃতির সকল প্রানের মধুর কণ্ঠস্বর আজগুবি গ্রামকে  মাতিয়ে দিয়েছে।

আমিতো আঙুরকে ছোট্ট ভেবে ভুল বুঝেছিলাম। তাই ভুল ভাঙ্গতেই নিজেকে বোকা ভেবে চাঁদড়া উৎসবের অনেক আগেই আমার আঙুল দিয়ে ধরে রাখা আঙুরের আঙুল ছেড়ে দিয়েছিলাম।
______________________________________________________________________________________


প্রদীপ কুমার দে
বিরাটী আবাসন
এল আই জি -৯
এম বি রোড
নিমতা
কোলকাতা।
 [ছবি: ইন্টারনেট মাধ্যম থেকে সংগৃহীত]


মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সপ্তাহের পছন্দ

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 38th issue: January 2025

কবিতা ।। আকাশ-সাগর ।। শান্তনু আচার্য

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সুচিপত্র ।। 37th issue: December 2024

কবিতা ।। নতুন বছর ।। জীবন সরখেল

চোখের ভাষা ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত

ছড়া ।। শীতের দু'টি মাসে ।। গোবিন্দ মোদক

প্রচ্ছদ ও সূচীপত্র ।। 24th issue: September 2023

ছোটদের আঁকিবুঁকি ।। কিশলয় - ২২ ।। জুলাই ২০২৩

ছড়া ।। দৃষ্টিকাড়া বৃষ্টি ।। শচীন্দ্র নাথ গাইন

ছড়া ।। অদ্ভূতুড়ে ।। প্রবোধ কুমার মৃধা

মাসের পছন্দ

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 38th issue: January 2025

কবিতা ।। আকাশ-সাগর ।। শান্তনু আচার্য

ছড়া ।। শৈশবের রথ ।। ইয়াসমিন বানু

কবিতা ।। নতুন বছর ।। জীবন সরখেল

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সুচিপত্র ।। 37th issue: December 2024

অণুগল্প ।। ঝুমুক ঝুমুক ।। ব্রজ গোপাল চ্যাটার্জি

ছোটগল্প ।। হেমন্ত দাদার সাথে ।। দীপক পাল

ছড়া ।। আকাশটাকে খোঁজে ।। দীনেশ সরকার

ছড়া ।। শীতবুড়িটা ।। প্রবোধ কুমার মৃধা

কবিতা ।। খুকির বায়না ।। খগেশ্বর দেব দাস

বছরের পছন্দ

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। ত্রয়োত্রিংশ সংখ্যা ।। জুন ২০২৪

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 38th issue: January 2025

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সুচিপত্র ।। 37th issue: December 2024

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। চতুর্ত্রিংশ সংখ্যা ।। জুলাই ২০২৪

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচীপত্র ।। 29th Issue: February

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 31st issue: April 2024

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 32nd issue: May 2024

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 30th issue : March 2024

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। পঞ্চত্রিংশ সংখ্যা ।। আগষ্ট ২০২৪

অতি প্রিয়

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। আত্মপ্রকাশ সংখ্যা ।। অক্টোবর ২০২১

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। দ্বিতীয় সংখ্যা ।। নভেম্বর ২০২১

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 4th issue: January 2022,

নিবন্ধ ।। শিশু-কিশোর সাহিত্যবলয়ে শিশুরাই যেন ব্রাত‍্য না থাকে ।। অরবিন্দ পুরকাইত

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 7th issue: April 2022

নিবন্ধ ।। দেশীয় উদ্ভিদ কেন গুরুত্বপূর্ণ ? ।। ডঃ চিত্তরঞ্জন দাস

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় - ১০ ।। জুলাই ২০২২

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় - ১১ ।। আগস্ট ২০২২

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র : 8th issue: May 2022

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় - ১২ ।। সেপ্টেম্বর ২০২২