পরিবেশ দূষণ:কারণ ও প্রতিকার
অভিজিৎ দত্ত
আমাদের সৌরজগতের সবচেয়ে প্রিয় গ্রহ পৃথিবী।কেননা এখানেই একমাত্র প্রাণের স্পন্দন রয়েছে।আমাদের প্রাণপ্রিয় এই পৃথিবী আজ সংকটাপন্ন। পৃথিবীর এই সংকটের জন্য দায়ী তার শ্রেষ্ঠ জীব মানুষ। মানুষের চিন্তাহীন কাজ শুধু মানবসভ্যতাকে নয়,পৃথিবীর প্রাণীকুলকে সঙ্কটে ফেলে দিয়েছে।বৈদিক সভ্যতার সূচনায় আমরা যে সুন্দর প্রকৃতির বর্ণনা পাই (নির্মল আকাশ, পরিস্রুত বাতাস,স্বচ্ছ জল, পুষ্টিযুক্ত খাবার)।সেই প্রকৃতি আজ আমাদের উপর বিরূপ। মানুষের নির্বিচারে বৃক্ষছেদন, যত্রতত্র কলকারখানা স্হাপন, বিপুল পরিমাণ যানবাহনের আধিক্য দিনকে,দিন পৃথিবীর প্রাণীকুলের অস্তিত্বকে নষ্ট করে দিচ্ছি।অনেকে হয়তো পত্র পত্রিকা বা ম্যাগাজিনে দেখে থাকবেন পৃথিবীতে যে জৈব বৈচিত্র্য বিরাজ করতো (অর্থাৎ নানারকম জীবজন্তু)তার অনেকটাই নষ্ট হয়ে গিয়েছে(অর্থাৎ অনেক প্রজাতির প্রাণী নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে)।আজকে মানবসভ্যতার সবচেয়ে বড় বিপদ দূষণ। জল দূষণ, বায়ু দূষণ, শব্দ দূষণ, দৃশ্য দূষণ ইত্যাদি কতরকম দূষণই না আমাদেরকে প্রতিনিয়ত বিব্রত করছে।অথচ এইসব দূষণের হাত থেকে আমরা খুব সহজেই রক্ষা পেতে পারি।এরজন্য দরকার একটু সচেতনতা। হ্যাঁ পাঁচ অক্ষরের শব্দ সচেতনতা।এই শব্দটির আজ এতই গুরুত্ব রয়েছে যে এর উপর মানবসভ্যতার তথা জীবকুলের অস্তিত্ব নির্ভর করছে।
বর্তমান শিল্প বা কলকারখানার প্রয়োজন বর্ধিত মানুষের কর্মসংস্থানের জন্য। কিন্ত সেই শিল্প বা কলকারখানা এমনভাবে স্হাপন করতে হবে যাতে পরিবেশের ক্ষতি না হয় অর্থাৎ শিল্প বা কলকারখানা হবে পরিবেশ বান্ধব। পরিবেশ বান্ধব, সাত অক্ষরের এই শব্দটি আজ খুবই প্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে।গাড়ি বা যানবাহনের প্রয়োজন যতদিন যাচ্ছে তত বেশি করে অনুভূত হচ্ছে।তবে সেই যানবাহনের ক্ষেত্রেও দেখতে হবে তা যেন পরিবেশ বান্ধব হয়।কলকারখানার ধোঁয়া হোক কিংবা যানবাহনের তাকে পরিশোধন করতে হবে। পরিবেশের বিপদ কম হবে এমন জ্বালানী ব্যবহার করতে হবে।বর্তমানে বিদেশে এ ব্যাপারে পরীক্ষা-নিরীক্ষা অনেক আগে থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে।সেখানে বিদ্যুৎ চালিত গাড়ি,সৌরশক্তি নির্ভর গাড়ি বেরিয়ে গেছে।বর্তমানে আমাদের দেশেও ইউরো বিধি (পরিবেশ অনুকূল ব্যবস্থা) মানার চেষ্টা শুরু হয়ে গেছে।তবে এ ব্যাপারে বেশীরভাগ মানুষই উদাসীন বা অজ্ঞ। তাদের এই উদাসীনতাই আমার বহু নির্দোষ মানুষ তথা জীবকুলকে সঙ্কটের মুখে ঠেলে দিয়েছে।
হে প্রাজ্ঞ মানুষ, একটু চিন্তা করলেই আমার কথার গূঢ় অর্থ বুঝতে পারবেন। আজকে এই যে পরিবেশের খামখেয়ালীপনা, বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিচ্ছে এর মূলে মানুষের উদাসীন কাজকর্ম বা অজ্ঞতা।তাই মানুষকে আজ প্রাজ্ঞ ও সচেতন হতে হবে।জমির ফলন বাড়ানোর জন্য যে কীটনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে তাই আমাদের শরীরে বিভিন্ন উপসর্গের সৃষ্টি করছে।পাশাপাশি জমির ধোয়া জল পুকুরে পড়ে জলজ প্রাণীদের অস্তিত্ব বিপন্ন করছে।বিকল্প চাষ বা জৈব চাষই (অর্থাৎ গোবর সার,পাতাপচা)ভালো ছিল। বিদেশে জৈব চাষ ব্যাপকভাবে শুরু হয়ে গিয়েছে।
মূল কথা অতীত থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে।ভারতের প্রাচীনতম সমৃদ্ধ নগর সভ্যতা হরপ্পা পরিবেশগত কারণেই নষ্ট হয়ে গিয়েছিল বলে অনেকে মনে করেন(পাকা ইট তৈরীর জন্য ব্যাপক বৃক্ষছেদন, ফল স্বরূপ অনাবৃষ্টি, মরুভূমির বৃদ্ধি ইত্যাদি)।বৃক্ষছেদনের পাশাপাশি বৃক্ষরোপণ ও করতে হবে।বলা হচ্ছে একটি গাছ কাটলে দশটি গাছ লাগাতে হবে।এইভাবেই মানুষ তার জ্ঞান ও সচেতনতার মাধ্যমেই পরিবেশের সঙ্কটের হাত থেকে বাঁচতে পারে কিংবা আগামী প্রজন্মের জন্য এক উজ্জ্বল পৃথিবী গড়ে তুলতে পারে।কিন্ত উল্টোটা ঘটলে মানবসভ্যতার সঙ্কট অনিবার্য।
______________________________________________________________________________________
অভিজিৎ দত্ত
মহাজনপট্টি, জিয়াগঞ্জ,
মুর্শিদাবাদ,পশ্চিমবঙ্গ।
[ছবি: ইন্টারনেট মাধ্যম থেকে সংগৃহীত]
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন