Featured Post

ছড়া ।। আকাশটাকে খোঁজে ।। দীনেশ সরকার

ছবি
আকাশটাকে খোঁজে দীনেশ সরকার            পড়তে বসলে জানলা দিয়ে মন ছুটে যায় দূরে গাইছে পাখি ওই যে গাছে মিষ্টি-মধুর সুরে। কিংবা যখন হাত বাড়িয়ে আকাশ আমায় ডাকে পড়ার পাতায় মন আমার কি বাঁধা তখন থাকে?   পূবের হাওয়া কড়া নাড়ে যখন আমার দোরে কিংবা অলি গুনগুনিয়ে চতুর্দিকে ঘোরে প্রজাপতি পাখা মেলে ওড়ে ফুলের মেলায় কখন যেন অবুঝ এ মন যায় হারিয়ে হেলায়।   কাঠবেড়ালি কাটুস্‌-কুটুস্‌ আমার দিকে তাকায় মন তখন কি আটকে থাকে পড়ার বইয়ের পাতায়? টুনটুনিটা তিড়িং-বিড়িং পুচ্ছ নাচায় গাছে মনটা বাঁধা তখন কি আর অঙ্কখাতায় আছে?   অঙ্ক কষতে ভুল হয়ে যায়, পড়া যাই যে ভুলে স্যারের বকা মাঝে মাঝেই খাই আমি ইস্কুলে। মনকে আমি কত্ত বোঝাই, মন তবু কি বোঝে সুযোগ পেলেই জানলা দিয়ে আকাশটাকে খোঁজে।   ******************************************** দীনেশ সরকার ১৪০ ডি, হিজলি কো-অপারেটিভ সোসাইটি, প্রেমবাজার, খড়্গপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর---- ৭২১৩০৬

গল্প ।। হালুম মেলা ।। সুব্রত দাস

 
    [ছবি: ইন্টারনেট মাধ্যম থেকে সংগৃহীত]
 

হালুম মেলা

সুব্রত দাস


          "তোমরা কি জানো সুন্দরবনের ভেতরে, অনেক গভীরে প্রতিবছর একটা মেলা হয় ?" চাদরটা বেশ ভালো ক'রে গায়ে জড়িয়ে নিয়ে একমুখ পান চিবোতে চিবোতে বললো লালদিদা।

          লালদিদা। ওদের মানে চম্পা, দোলা, টাবলু ভোলা, পাখি, রানা সবার লালদিদা। কী মিষ্টি দেখতে! একমাথা দুর্গা মায়ের মতন কুচকুচে কালো কোঁকড়া চুল, টুকটুকে ফর্সা গায়ের রঙ ব'লে কচিকাঁচার কাছে উনি লালদিদা। 

          নৈহাটি জংশন থেকে রেলগাড়ি চেপে ব্যান্ডেল যাওয়ার পথে গরিফা স্টেশন পড়ে। সেই গরিফার বৈষ্ণবপাড়ায় লালদিদার বাড়ি। অনেক বড় পরিবার। দু'চার ঘর ভাড়াটিয়াও আছে। মোট কথা সব মিলিয়ে এ বাড়িতে কচিকাঁচার সংখ্যা কম নয়। 

          শীতের এক সন্ধ্যায় কচিকাঁচার দল ধরলো লালদিদাকে। গল্প শোনাতে হবে। দিন দুই আগে জলপাইগুড়ি থেকে ঘুরে এসেছেন। সেখানে তার ভাইয়ের বাড়ি। খুব খুশি মনে, তিন বছরের ছোট্ট সোনা দোলাকে কোলে বসিয়ে গল্প বলা শুরু করলো লালদিদা।

          "ওদের মেলা কিন্তু আমাদের মতন নয়। পাঁপড় ভাজা, বাদাম, জিলিপ, নাগরদোলা, রকমারি খেলনা এসব পাওয়া যায় না ওদের মেলায়..."

          "এ মা! এমন মেলা কেমন মেলা!" চটপটে চম্পা খুব অবাক হয়ে বললো। "বেলুন ফাটানোর খেলাও নেই?", গোল গোল চোখ রসগোল্লার আকারে বড় ক'রে বললো রানা।

          লালদিদা এবার খিলখিল ক'রে হেসে ফেললো। "না, ওসব কিচ্ছুটি মেলে না সেখানে।সে মেলার মজা অন্যরকম। তোমরা সবাই চুপটি ক'রে শুনে যাও।" 

          বনদেবী"বনবিবি"র সামনে পর পর তিনবার ডিগবাজি খেয়ে চশমা চোখে শেয়াল পন্ডিত সকাল দশটার সময় মেলার উদ্বোধন করলো। বনের রাজা হালুম কত্তাও হাজির। বনের সকল পশুপাখি সকলেই জটলা করেছে মেলায়। আরো কেউ কেউ আসছে। ছড়া-গানে ময়না পাখি উদ্বোধনী সংগীত গাইলো -
আমাদের সোঁদরবনে
বসেছে মজার মেলা,
পশুদের হুড়োহুড়ি,
পাখিদের ওড়াউড়ি
এভাবেই চলবে জেনো
তিনটি দিনের বেলা।
এসো ভাই সদলবলে
ডাঙা আর নদীর জলে-
আর যারা হাওয়ায় থাকো
বাতাসি স্বপ্ন আঁকো,
তারাও এসো, ক'রোনা হেলাফেলা
বসেছে সোঁদরবনে আমাদের হালুম মেলা।

          "কী মজা! কী মজা!" ব'লে জোরে জোরে হাততালি দিয়ে উঠলো টাবলু। "এখনও মজার অনেক বাকি। সবে তো শুরু হলো" হাসতে হাসতে আবার গল্প শুরু করলো লালদিদা। ঘ্রড়াম শব্দে হাকডাক ছেড়ে হালুম মামা জানান দিলো অনুষ্ঠান খুব ভালো হচ্ছে। তিনবার মাথার ওপর লেজটাকে ঘুরিয়ে পরের অনুষ্ঠান শুরু করবার ইঙ্গিত দিলেন।

          এরপর বাঁদর আর হনুমান তাদের কসরত দেখাতে লাগলো। এ গাছ থেকে ও গাছে লাফালাফি, ঝাপাঝাপি করে, দোল খেয়ে, খানিক মাথা নিচু করে ঝুলে থাকলো। খেলার চোটে আর একটু হলেই একটা বাঁদরছানা বাঘ মানে সেই হালুম কত্তার খুব কাছাকাছি চলে গিয়েছিল। ভাগ্যিস এক হনুমান একলাফে ঝপ ক'রে লুফে নিয়ে পালিয়ে এসেছিলো। বলা তো যায়না হঠাৎ ক'রে যদি বাঘের খিদে পেয়ে যায়!

           কিন্তু হালুম কত্তা কিছুই বুঝতে পারলো না। সে তো আর শেয়ালের মতন চালাক চতুর নয়, উপরন্তু হনুমানের কেরমতি দেখে খুশি হয়ে পা-তালি দিলো বেশ কয়েকবার! ওরা তো আমাদের মতন হাততালি দিতে জানে না!

          এরপর হাতির দল এলো। তার বনবিবিকে পুজো দিলো। ওদের মধ্যে এক মাতব্বর হাতি এক সার্কাস কোম্পানি থেকে পালিয়ে এসেছিলো। সার্কাস থেকে শেখা ছিলো তো! ঠিক তেমনটি করেই পুজো দেওয়া দেখালো।


       হরিণের দল বাঘ মামা তাড়া করলে কীভাবে পালাতে হয়, দেখালো। ওদিকে ভালুকমামা মেলায় আসা ইস্তক সেই যে জ্বরে পড়েছে, কিছুতেই জ্বর ছাড়ছে না! আড়ালে আবডালে এই নিয়ে একটু হাসাহাসি হয়ে গেল পশুপাখির দঙ্গলে। একে একে সবাই কত কিছু যে করে দেখালো সে সব বলতে গেলে রাত ভোর হয়ে যাবে।" চোখ বড় বড় ক'রে বললো লালদিদা।

          "ওরা বুঝি ওখানে আমাদের যেতে দেয় না", ভারি চিন্তিত হয়ে বললো ভোলা। লালদিদা বললো, "না। মানুষের ওখানে যাওয়া মানা। তবে ওরাও কিন্তু আমাদের আর আগের মতন হিংসা করে না। এখন ওরাও একটু একটু জানতে পেরেছে মানুষেরা তাদের ভালোর জন্য অনেক চিন্তাভাবনা করে তো, তাই। সেটাই শেয়াল পন্ডিত চশমাটা একটু নাকের ওপর উঠিয়ে লম্বা একটা ফর্দ ঝুলিয়ে বলতে শুরু করলো - এবারে
আমাদের জন্য দোপেয়েগুলো কী কী করলো তার ফিরিস্তি দিতিছি - আমাদের হালুম কত্তা বাঘ রাজাকে নিয়ে অনেক অনেক গল্প, ছড়া লেখা হয়েছে, ছবিও আঁকা হয়েছে বিস্তর। তার নামে হেড অফিস হয়েছে বাগবাজারে। ছোট অফিস হয়েছে বাগমোড়ে। 

          এমন কথা শুনে তো হালুম কত্তা খুব খুশি। তিন চক্বড় ঘুরপাক খেয়ে নিলো আর আনন্দে একবার ঘ্রাউম করে ডাক ছাড়লো।"


            "জেব্রা ভাইয়ের গায়ের সাদা কালো ডোরা দাগ জেব্রা ক্রসিং এ দেওয়া হয়েছে। কুমির ও বাদ যায়নি। ছোটদের খেলার ছড়ায় তাকে জোর করে ঢোকানো হয়েছে যার নাম হয়েছে "কুমির তোমার জলকে নেমেছি।"

          শেয়াল পন্ডিত একে একে ব'লে যাচ্ছে আর পটাপট হাততালি, থুড়ি পা-তালি পড়ছে। একটু গলা খাকরি দিয়ে আবার বলতে শুরু করলো, হরিণঘাটা, বকখালি, গরুমারা, পাখিপুর, কাকতাড়ুয়া, ভালুকডাঙা, সিংহবাড়ি, হাঁসখালি ইত্যাদি নানা জায়গার নাম আমাদের পশুপাখির নামে রেখেছে মানুষেরা। আর, আর আমার নামেও তারা একটা ইয়াব্বড় ইশ্টিশানের নাম রেখেছে" কেমন যেন আমতা আমতা করে বললো শেয়াল। নিজের সম্পক্বে কথা তো! তাই শেয়ালের ভারি লজ্জা লজ্জা লাগছিলো। হালুম কত্তা ব্যাপার স্যাপার বুঝতে পেরে বললো, "লজ্জা কি! বলেই ফেলো।" শেয়াল পন্ডিত তখন বুক ফুলিয়ে, শরীরটা টানটান করে বললো, "শেয়ালদা।"

          চারিদিক থেকে সে কী হই হুল্লোর! কত পশুপাখির কত রকম হাঁকডাকে গমগম করে উঠোলো সোঁদরবনের "হালুম মেলা"।
________________________________________________
 

 

 
 
 
 
 
 
 
 
 

সুব্রত দাস 
কেশবপল্লী, 
পোঃ রামঘাট, সূচকঃ ৭৪৩১৬৬,
উওর ২৪ পরগণা, পশ্চিমবঙ্গ।
ইমেইলঃ sd8069837@gmail.com
------------------------------------------------------------

মন্তব্যসমূহ

সপ্তাহের পছন্দ

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 38th issue: January 2025

কবিতা ।। আকাশ-সাগর ।। শান্তনু আচার্য

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সুচিপত্র ।। 37th issue: December 2024

কবিতা ।। নতুন বছর ।। জীবন সরখেল

চোখের ভাষা ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত

ছড়া ।। শীতের দু'টি মাসে ।। গোবিন্দ মোদক

প্রচ্ছদ ও সূচীপত্র ।। 24th issue: September 2023

ছোটদের আঁকিবুঁকি ।। কিশলয় - ২২ ।। জুলাই ২০২৩

ছড়া ।। দৃষ্টিকাড়া বৃষ্টি ।। শচীন্দ্র নাথ গাইন

ছড়া ।। অদ্ভূতুড়ে ।। প্রবোধ কুমার মৃধা

মাসের পছন্দ

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 38th issue: January 2025

কবিতা ।। আকাশ-সাগর ।। শান্তনু আচার্য

ছড়া ।। শৈশবের রথ ।। ইয়াসমিন বানু

কবিতা ।। নতুন বছর ।। জীবন সরখেল

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সুচিপত্র ।। 37th issue: December 2024

অণুগল্প ।। ঝুমুক ঝুমুক ।। ব্রজ গোপাল চ্যাটার্জি

ছোটগল্প ।। হেমন্ত দাদার সাথে ।। দীপক পাল

ছড়া ।। আকাশটাকে খোঁজে ।। দীনেশ সরকার

ছড়া ।। শীতবুড়িটা ।। প্রবোধ কুমার মৃধা

কবিতা ।। খুকির বায়না ।। খগেশ্বর দেব দাস

বছরের পছন্দ

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। ত্রয়োত্রিংশ সংখ্যা ।। জুন ২০২৪

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 38th issue: January 2025

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সুচিপত্র ।। 37th issue: December 2024

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। চতুর্ত্রিংশ সংখ্যা ।। জুলাই ২০২৪

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচীপত্র ।। 29th Issue: February

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 31st issue: April 2024

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 32nd issue: May 2024

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 30th issue : March 2024

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। পঞ্চত্রিংশ সংখ্যা ।। আগষ্ট ২০২৪

অতি প্রিয়

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। আত্মপ্রকাশ সংখ্যা ।। অক্টোবর ২০২১

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। দ্বিতীয় সংখ্যা ।। নভেম্বর ২০২১

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 4th issue: January 2022,

নিবন্ধ ।। শিশু-কিশোর সাহিত্যবলয়ে শিশুরাই যেন ব্রাত‍্য না থাকে ।। অরবিন্দ পুরকাইত

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 7th issue: April 2022

নিবন্ধ ।। দেশীয় উদ্ভিদ কেন গুরুত্বপূর্ণ ? ।। ডঃ চিত্তরঞ্জন দাস

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় - ১০ ।। জুলাই ২০২২

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় - ১১ ।। আগস্ট ২০২২

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র : 8th issue: May 2022

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় - ১২ ।। সেপ্টেম্বর ২০২২