[ছবি: ইন্টারনেট মাধ্যম থেকে সংগৃহীত]
মহাকাশে ময়লা
ডঃ রমলা মুখার্জী
মানুষ পৃথিবীকে দূষিত তো প্রতিনিয়তই করে চলেছে মানবসভ্যতা বিকাশের সাথে সাথে, কিন্তু ১৯৫৭ সালের ৪ঠা অক্টোবর স্পুটনিক উৎক্ষেপণের পর থেকে যেমনি মহাকাশযুগ শুরু হয়ে গেল অমনি শুরু হয়ে গেল মহাকাশেরও দূষণ। প্রতিবারই যখন মহাকাশে যান পাঠানো বা স্যাটেলাইট স্থাপন করা হয়েছে তখনই মহাকাশে কিছু না কিছু বস্তু থেকে যাওয়ার ফলে ক্রমশই সেখানে জমে উঠেছে পরিত্যক্ত আবর্জনার স্তূপ। বায়ুমণ্ডলের ক্ষতিকর গ্যাস ও ভাসমান কণাকে মেঘ ও বৃষ্টি বেশ কিছুটা কমিয়ে দিতে পারে, দূষকগুলি নিয়ে বৃষ্টি মাটিতে পড়ে ফলে বায়ুমণ্ডল পরিশুদ্ধ হয়। কিন্তু মহাকাশের জমা জঞ্জাল তো বৃষ্টির ধারা দিয়ে নামানো যাবে না, তাই মহাকাশের ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার আমাদের কাছে এক সমাধানহীন সমস্যা।
মহাকাশের কৃত্রিম আবর্জনার মধ্যে পাঁচ শতাংশ হল সক্রিয় উপগ্রহ এবং ষাট শতাংশের বেশি হল ১০সেমি অধিক মাপের নানা আবর্জনা। ভরবেগ ধর্মটির জন্য মহাকাশে আধ কিমি ব্যাসের একটি ধাতুকণা ঘণ্টায় যদি ৩০,০০০ কিমি বেগে ছোটে তো সেটি মহাকাশচারীর স্পেস সুট ভেদ করে প্রাণহানিও ঘটাতে পারে অনায়াসেই।
মহাকাশে জঞ্জাল সৃষ্টির জন্যে দায়ী প্রধাণত উন্নত দেশগুলি। এই দেশগুলি ছয় হাজারের বেশি কৃত্রিম উপগ্রহ কক্ষপথে পাঠিয়েছে। একসময় তো মহাকাশ মহাশূন্যই ছিল কিন্তু এখন সেখানে পাঁচ লাখের বেশি যন্ত্রপাতির টুকরো ঘুরছে প্রচণ্ডগতিতে। এই আবর্জনাগুলি বর্তমানে উৎক্ষিপ্ত স্যাটেলাইটগুলির খুবই মারাত্মক বিপদ ডেকে আনতে পারে। সচল স্যাটেলাইটগুলি বিকল হয়ে পড়ছে, একটি স্যাটেলাইটের সঙ্গে অপর স্যাটালাইটের ধাক্কা লেগে যাচ্ছে। বৈজ্ঞানিকরা তাই বাতিল স্যাটেলাইটগুলিকে আবার কাজে লাগানো যায় কিনা তার জন্য গবেষণা করছেন এবং কিভাবে একেবারেই অকেজোগুলিকে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা যায় তার জন্যও চেষ্টা চালাচ্ছেন।
জার্মান বিজ্ঞানী আডলফ গিনেস একটি নতুন ধরণের লেজারের ব্যবস্থা করার জন্য গবেষণা চালাচ্ছেন। তিনি ও তাঁর সহকর্মীরা লেজার কামান নিয়ে কাজ করছেন। বিজ্ঞানী গিনসের মতে মহাকাশে যে ছোট ছোট ধাতব টুকরো ঘোরে তা একমাত্র লেজার দিয়েই ধ্বংস করা সম্ভব। কিন্তু এই লেজার তৈরী বেশ সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। বিজ্ঞানীরা তাই খুবই উদ্বিগ্ন কারণ উপগ্রহের এইসব ধ্বংসাবশেষ আবার পৃথিবীতে ফিরেও আসতে পারে, আবার অচল উপগ্রহ বা যন্ত্রপাতি অংশের সঙ্গে যদি সচল উপগ্রহের ধাক্কা লাগে তো সচল উপগ্রহটি তৎক্ষণাৎ ধ্বংস হয়ে যাবে। প্রথম মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার দুটি উপগ্রহের মধ্যে। ১৯৫৭ সাল থেকে এখন অবধি ছয় হাজারের বেশি কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠানো হলেও মাত্র এক হাজার এখন সচল আছে এবং গবেষণা, সামরিক, টেলিযোগাযোগসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে।
সচল উপগ্রহগুলিতে নিরাপদে রাখতে অন্যান্য দেশগুলিও সচেষ্ট হচ্ছেন এবং মহাকাশে ভেসে বেড়ানো অকেজো বস্তুগুলির ওপর নজরদারি বাড়ানোর চিন্তাভাবনা করছেন। কিন্তু কাজটি খুবই কঠিন এবং এই মুহূর্তে তা কখনই সম্ভব নয়। কিন্তু আমরা আশা রাখবো অদূর ভবিষ্যতে হয় তো মহাকাশকে কিছুটা ময়লামুক্ত করতে সক্ষম হবোআমরা। তবে ভবিষ্যতে আমাদের মহাকাশে যে খুব সাবধানে পদক্ষেপ রাখতে হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
_____________________________________________
ডঃ রমলা মুখার্জী
বৈঁচী, বিবেকানন্দপল্লী,
জেলা হুগলী, পিন 712134
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন