Featured Post
গল্প ।। লোভী বোয়ালের শাস্তি ।। রফিকুল নাজিম
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
নদীর নাম সোনাই। সাপের মত এঁকেবেকে চলে গেছে অনেকদূর। স্বচ্ছ তার জল। জলের উপরিভাগ যতটা শান্ত, জলের ভেতরের অংশ ঠিক ততটা অশান্ত। আর এই অশান্তির মূল কারণ হলো দুষ্টু বোয়াল।
একটা সময় সোনাই নদীর জলেও শান্তি ছিল। ছোটবড় সব মাছের মধ্যে ভালো একটা ভাব ছিল। মায়া ছিল। সম্মান ছিল। কিন্তু যেদিন থেকে এই নদীতে গোঁফওয়ালা বোয়ালটা এলো, সেদিন থেকেই জলের নিচে আর শান্তি নেই। অথচ বোয়ালটা যখন অন্য নদী থেকে সোনাই নদীতে আসে। তখন সে ছিল বেশ রোগাপটকা। পুষ্টিহীনতায় তার প্রাণ যায় যায় করছিল। অথচ সেই বোয়াল এখন বেশ নাদুসনুদুস। রাজকীয় ঢঙে জলে চলাফেরা করে সে। কাউকে কেয়ার করে না। হাবভাব এমন যেন সে সোনাই নদীর অঘোষিত রাজা!
বোয়ালটা খুব পেটুক ও বদরাগী। ক্ষুধা পেলে সামনে যাকে পায় তাই ধরে ধরে খায়। কৈ, টেংরা, শিং ও পুঁটিমাছকে ধরে গাপ্পুসগুপ্পুস করে গিলে। সে কাউকে ছাড় দেয় না। না কোনো জুনিয়র, না কোনো সিনিয়র। পেটভরা না থাকলেও বোয়াল হা করে থাকে- কখন কাকে ধপাস করে ধরে? গাল ভরে খায়। কচকচ করে খায়। আর খাবার না পেলে দুষ্টু বোয়ালটি সবাইকে খুব বিরক্ত করে। তার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় আজেবাজে মন্তব্য করে! মাঝেমধ্যে লেজ দিয়ে বাড়ি মারে। বোয়ালের লেজের আঘাতে অনেক মাছ আহত হয়। কেউ কেউ নিহতও নাকি হয়েছে!
এই যেমন আজ বোয়ালের পাশ দিয়ে একটা তরুণ কৈ মাছ যাচ্ছিল। বোয়ালের লেজের আঘাতে কৈ মাছটি বেশ আহত হয়। রাগে গজগজ করতে থাকে কৈ মাছটি। সে বুদ্ধি করে আরো কিছু মাছকে নিয়ে প্রবীন কৈ মাছের কাছে গেল। এই প্রবীন কৈ মাছকে সব মাছ সমীহ করে চলে। বোয়াল আসার আগে বিচার-আচার সব কিছু করতো এই কালচে কৈ মাছটা। তার পিঠে যে পরিমাণ কাঁটা, তা দিয়ে কাউকে আঘাত করলে নির্ঘাত তার জীবন শেষ। আগে পরে আরো অনেক মাছ তার কাছে নালিশ করেছে। বোয়ালকে শায়েস্তা করার দাবী করেছে। তাই প্রবীণ কৈ মাছ রাতে সব মাছকে ডাকলো।
রাতে সব মাছের উপস্থিতিতে সভা শুরু হলো। সবচেয়ে খেপে আছে শিং মাছের সর্দার। টেংরারাও রাগে ফুঁসছে। প্রবীণ কৈ মাছটা একটা বুদ্ধি দিলো সবাইকে। আগামীকাল বোয়ালের সকালের নাস্তার সময় কাজটা করতে হবে। সবাই একজোট হলো। বোয়ালকে আচ্ছামত শায়েস্তা করবে।
সকাল সকাল বোয়ালটা গোঁফে তা দিতে দিতে তার ঘর থেকে বের হলো। শিকার খুঁজছে। নাস্তা করার জন্য। সকালে রাজকীয় নাস্তা লাগে তার। রাণী পুঁটিমাছের একটা ঝাঁক বোয়ালের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। আর অমনি লোভী বোয়ালটা খাওয়ার জন্য হাঁ করে আসতে লাগলো। সাথে সাথে চারদিক থেকে শিং, মাগুর, টেংরা, ভেটকি, আইড়, শোল, পাবদা, চিংড়িসহ- সকল মাছ একসাথে বোয়ালকে আক্রমণ করলো। শিং মাছের সর্দার প্রথম আঘাত করলো। যে যার মত বোয়ালের নাদুসনুদুস শরীরে হূল ফুটাচ্ছে। আহ উহ আহ উহ করতে করতে বোয়ালটা পালাতে শুরু করলো। বোয়ালটা সব মাছের কাছে মাফ চাইলো। অবশেষে লোভী ও বদরাগী বোয়ালকে এই নদী ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য বলা হলো। আহত বোয়ালটা নদী ছেড়ে চলে গেল। অবশেষে সোনাই নদীর গভীর জলে আবার শান্তি ফিরে এলো।
_________________________________________________
রফিকুল নাজিম
মাধবপুর,হবিগঞ্জ।
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন