বড়দিনে বড়কাজে সান্তা
শুভ্রা ভট্টাচার্য
আজ বড়দিনের সকালে অনেক দিনের চাওয়া একটা স্বপ্ন পূরণের খুশিতে ডগমগ ছোট্ট আট বছরের রাইমা। সে সান্তাক্লজ সেজে মা মাসীমণি ও দুই ভাই সহ টোটো চেপে চলেছে একটু দূরে কিশলয় অনাথাশ্রমে। সেখানে তারা সবাই মিলে প্রায় ষাট জন তারই বয়সী বা তার থেকে ছোট বাচ্চাদের সাথে একসাথে পিকনিক করবে আজ। রোজ স্কুল থেকে মা রিনিতার সাথে ফেরার পথে ওই অসহায় বাচ্চা গুলোকে তারা শুধু দূর থেকেই করুন চোখে দেখত। মায়ের কাছেই ঐ বাচ্চাদের মা বাবা না থাকার গল্প শুনেছিলো পিতৃহারা রাইমা। ওর ভীষণ ইচ্ছে করতো ওদের কিছু খাওয়াতে আর নিজের থেকে নানা জিনিসের ভাগ দিতে।
বড়দিনের আগের রাতে মা যখন তাকে বললো কাল তারা সেই আশ্রমে যাবে, আনন্দে আত্মহারা রাইমা রাতে ভাল করে ঘুমাতেই পারল না। শুধু ভাবনা কখন সকাল আসবে, কখন যাবে! মা ওদের জন্য অনেক চকলেট টফি বিস্কুট কেক খেলার সামগ্রী আঁকার বই রং বাক্স কিনেছে। আর সেগুলো সে আজ সান্তা সেজে ওদের উপহার দেবে। সুন্দর লাল টুকটুকে পোষাক পাকা গোঁফ দাড়ি লাল টুপি ও ঝোলা দিয়ে সাজানো রাইমা একদম রিয়েল সান্তাক্লজ আজ।
আশ্রমের বাচ্চারা তো সান্তাক্লজের গল্প অনেক শুনেছে। আজ কাছ থেকে তাকে দেখে বিস্ময়ে হতবাক! নানারকম মনোলোভা উপহার পেয়ে শিশুদের হৈচৈ-এ মুখর কলতানে ভরে উঠল আশ্রম। আর মাঝেমাঝে সান্তার প্রতি তারা খুব ভালবাসা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে লাগলো। রাইমা এতো ভালবাসা সম্মান পেয়ে আনন্দে উৎফুল্ল। কিন্তু প্রকাশের উপায় নেই। সে যে এখন গুরু গম্ভীর সত্তরের বুড়ো।
সবাই মিলে একসাথে মাংস ভাত মিষ্টি আইসক্রিম খাওয়ার মজাই আলাদা। এ আনন্দের কোনো ভাগ হবে না। বাচ্চা গুলো যত চেটেপুটে খায়, রাইমার ততই তৃপ্তি ও সুখানুভুতি মনেতে।
খাওয়ার শেষে সব বাচ্চারা উপহার পাওয়া বল বেলুন ফ্লাইং ডিস নিয়ে খেলতে শুরু করল বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে খোলা আকাশের নিচে। সান্তা সাজা রাইমার তো সে উপায় নেই। সে বুড়ো তাই খেলবে কি করে আজ! যদিও মন উথাল পাথাল খোলা মাঠের ডাকে। অগত্যা এক গাছের নিচে বসে ওদের খেলা উপভোগ করতে লাগলো।
হঠাৎ সে অনুভব করল তার টুপি ও জামায় কি একটা নরম জিনিস উপর থেকে পড়ল। তাকিয়ে দেখে একটি কাক বিষ্ঠাত্যাগ করে উড়ে যাচ্ছে। সে তৎক্ষণাৎ "মা, পটি পটি" বলে আর্তনাদ করে উঠল ও সান্তার পোশাক টেনে খুলে ফেলতে লাগলো। তার চিৎকারে সব বাচ্চারা ছুটে এসে তাকে ঘিরে ধরল। খোলসবিহীন সান্তাকে দেখে তো সবাই হেসেই খুন। এ যে তাদেরই সমবয়সী বন্ধু!
হঠাৎ পটির প্রতি বিরূপতা কমতেই রাইমা ভাবে "যাহ! একি করলাম আমি পোশাক খুলে!" এরপর সে লজ্জায় কাঁদো কাঁদো হয়ে মায়ের কোলে দৌড়ে গিয়ে মুখ লুকায়। কিন্তু সরল নিষ্পাপ বাচ্চারা সান্তার মতো অমন একজন ভাল বন্ধু পেয়ে খুশিতে হাত ধরে তাকে টেনে নিয়ে যায় সোজা খেলার মাঠে। একসাথে এতজন খেলার সাথী ও খেলার সরঞ্জাম পেয়ে রাইমা ভাবে ভাগ্যিস পোশাকে কাক পটি করল, তা না হলে যে সারাদিনের সব আনন্দের মাঝে এই নির্মল অনাবিল আনন্দটুকু ফাঁকি থেকে যেতো।।
______________________________________________
শুভ্রা ভট্টাচার্য
চুঁচুড়া, হুগলী
চিত্রাঙ্কন: অদ্রিজা পাল , ষষ্ঠ শ্রেণী
জাফরপুর,
পোঃ-- চম্পাহাটি
পিন - ৭৪৩৩৩০
থানা -- সোনারপুর,
জেলা -- দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন