জীবন পাইক
বেশ কয়েক মাস পরে পটল মামাকে হাতে লাঠি নিয়ে চলতে দেখা যায় ৷এখন পটলমামার মনে সাইনবোর্ড সাঁটা -"কাক থেকে সাবধান "
রাস্তায় চলতে গেলেই কাকেরা তাকে ঠোকরায় ৷নাহ্,আর পটলমামার পক্ষে তো সহ্য
করার নয় ৷কাকেরা কি তবে তার জন্মান্তরের শত্রু হয়ে গেল নাকি! সব সময় লাঠি নিয়ে কাক
তাড়ানো খুব মুশকিলের হয় ৷পথে-ঘাটে হাজারো
রকমের মানুষ চলাচল করে ৷কেউ তো তার মতো লাঠি নিয়ে ঘোরে না ৷এ ভাবে লাঠি নিয়ে পথে হাঁটা হাঁটি করলে লোকে কি বলবে!কেউ তো তার মতো এমন ভাবে লাঠি নিয়ে হাঁটে না ৷সে কানা নয়,খোঁড়া ও নয় ৷সে বুড়োদের দলে পড়ে ও না ৷দিন দিন লাঠি হাতে ঘুরলে পাড়ার ছেলে বুড়ো তাকে খ্যাপাবে ৷কি করবে পটল মামা ভেবে পায় না ৷
পটল মামার বাড়ির উঠোন জুড়ে ছিল বিশাল এক আম গাছ ৷পাতায় পাতায় সারা বাড়িখানা দিনের বেলাতে ও জমাটি অন্ধকার
করে রাখে ৷মাটির ঘর খানার খোড়ো চালে পাতা পড়ে বিছিয়ে থাকে বর্ষার জলে সে সব পচে ঘর এর চাল নষ্ট করে ৷উঠোনে বিছিয়ে থাকে বাঁজা
আম গাছটির পাতা ৷ডাল ক'টা একটু কাটতে
পারলে এ দূর্ভোগটা একটু হলে কমতে পারে ৷
ক'দিন ধরে মামি পই পই করে পটল মামাকে বলেছে ডাল কাটার জন্যে ৷
না,আর তো গিন্নির কথা ফেললে চলবে না ৷মামি আজ সকাল থেকে বেশ রেগে ছিল ৷বুঝেই মামা কাটারি হাতে আম
গাছের মগ ডালের দিকে এগোলেই কা- কা-
করে উড়ে এসে জোর আঁচড় বসায় পটল মামার
পিঠে ৷গায়ে তার কোন জামা ছিল না ৷কাকের আঁচড় টা বড্ড চেপে বসেছিল পিঠে রক্ত গড়িয়ে
পড়ছিল সারা পিঠ বেয়ে ৷
এই ভয়টা ছিল পটল মামার ৷
পটলমামা নিজের উঠোনে বড়ো করছে আম গাছটা ৷অথচ যত রাজ্যের পাখির বাসা সেখানে
৷পাখিদের কিচিমিচিতে তার আপত্তি নেই ৷তার
আপত্তি কাকে ৷দশ-বারোটা কাকের বাসা তার আম গাছে ৷সারা উঠোনে সকাল সাঁঝে কাকের জ্বালায় পা দেওয়ার উপায় থাকে না ৷সারা উঠোন জুড়ে শুধু কাকের পায়খানা ৷পটলমামা কিছু করতে পারে না ৷কারো কাছে তাদের বিষয়ে নালিশ জানাতে ও পারে না ৷কাকের
বিরুদ্ধে নালিশ!লোকে তাকে পাগল বলবে ৷ কাক তার গাছে থাকবে৷ সেখানে বাসা করবে ৷
ডিম ফুটিয়ে বাচ্চা মানুষ করবে ৷উঠোনে পাতা
ফেলবে ,নোংরা করবে পটল মামার কিচ্ছু বলার
নেই ৷পাড়ার ছেলে ছোকরাদের চাঁদার জোর-জুলুম অনুনয়-বিনয়ে তবু দমানো যায়,কিন্তু কাকেদের এ জুলুম কি করে সামাল দেবে
পটলমামা ৷উপায় না পেয়ে তাই একদিন মামা
কাকের বাসায় ধরিয়ে দেয় আগুন ৷
এখন কাক প্রতিনিয়ত তাকে তাড়া করে বেড়ায় ৷একটা নয় দুটো নয় ৷ঝাঁকে
ঝাঁকে কাক তাকে তাড়া করে ৷মানুষের বিপদে মানুষ কম আসে ৷মানুষের দুঃখের শরিক মানুষ কম হয় ৷কিন্তু কাকেদের মধ্যে সংঘবদ্ধতা আমাদের থেকে অনেক বেশি ৷
কাকের বাসায় আগুন লাগিয়ে দেওয়ার
পর পটলমামা পথে বেরোতে পারে না ৷সে কারণে লাঠি হাতে তাকে পথে চলতে হয় ৷
সে দিন সকালবেলায় পাড়ার বটতলার মোড়ে চায়ের দোকানে লাঠি হাতে পটলমামা পাড়ার রঘুদার সঙ্গে চা খেতে খেতে
খোশ মেজাজে গল্প করছিল ৷সে গল্প কাকেদের
যেন সহ্য হল না ৷গাছের ডালে বসে একটা কাক
তাক করে পটল মামার চকচকে টাকে টপ করে
ফেলে দিল গরম বস্তু ৷
গল্পের চটকা কাটল পটলমামার ৷এত
গরম কি এটা? মাথায় হাত দিয়ে বলে উঠল-ইস!
কাগের বিষ্ঠা৷ একটা ঢিল তুলতেই দু তিনটে কাক
উড়ে গেল--কা-কা-কা---
এ ডাক যেন পটল মামাকে খ্যাপানোর জন্যে ৷
রাগে ক্ষোভে পটলমামা মুখ ভেংচে বলে ওঠে
--কা-কা-কা-----
_____________________________________
জীবন পাইক
আর.এন.সি রোড,সুভাষগ্রাম,
থানা-সোনারপুর,
জেলা-দক্ষিণ ২৪পরগণা।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন