Featured Post
বিশেষ রচনা ।। শিশুর মানসিক বিকাশে মায়ের ভূমিকা ।। আবদুস সালাম
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
শিশুর মানসিক বিকাশে মায়ের ভূমিকা
আবদুস সালাম
শিশুর বিকাশ বলতে গ্রোথ এবং ডেভেলপমেন্ট উভয়কেই বোঝায়। গ্রোথ হল আকারগত পরিবর্তন বা পরিমাণগত পরিবর্তন যা কিনা শিশুর ওজন, উচ্চতার মাঝে ধরা পড়ে। অপর দিকে ডেভেলপমেন্ট হল গুনগত পরিবর্তন যা কিনা আচরণের মাঝে ধরা পড়ে। অর্থাৎ একটি শিশুর গ্রোথ এবং ডেভেলপমেন্ট এর উপর ধরা পড়ে তার সার্বিক বিকাশ। এই বিকাশ কালীন সময়ে মায়ের সান্নিধ্যর ভূমিকা অপরিসীম।
সাধারণভাবে একটি শিশুকে আমরা ভূমিষ্ঠ হবার পর দেখতে পাই এবং তার বয়স গণনা করি। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ভূমিষ্ঠ হবার ৯ মাস বা ২৮০ দিন পূর্বেই তার জন্মের সূচনা হয়েছে। একটি শিশুর জন্মের সূচনা থেকেই শুরু হয় তার বর্ধন ও বিকাশ । সে কারণে মাতৃগর্ভে থাকাকালীন সময়ে মায়ের খাদ্য, যত পরিচর্যা, মায়ের মনোভাব, মানসিকতা প্রভৃতি শিশুর সুষ্ঠু বিকাশে গুরুত্বপূণ ভূমিকা রাখে। গর্ভাবস্থায় মা যদি পুষ্টিহীন থাকে তবে সন্তান অপুষ্ট, রুগ্ন ও কম ওজন, উচ্চতা নিয়ে জন্মাবে। সর্বোপরি তার বিকাশ ব্যাহত হবে। যেমন-আয়োডিনের অভাবে শিশু শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী হয়ে জন্ম নিবে। অনেক সময় বোবা-কালা, হাবা-গোবা, বামুনও হয়ে থাকে। ভিটামিন 'এ' এর অভাব হলে অন্ধ, লৌহের অভাবে রক্তস্বল্পতায় ভোগে।
মূলত শৈশবে শিশুর সার্বিক বিকাশের উপর নির্ভর করে- তার পরবর্তী জীবনের সুখ ও স্বাভাবিকতা। এ কারণে শত ব্যস্তাতার মাঝেও মা-বাবাকে কিছুটা সময় বের করে নিতে হবে শিশুর সান্নিধ্যে থাকার জন্য।
অনেক পরিবারে স্বামী-স্ত্রী কলহের চাপে অনেক শিশুর স্বাভাবিক জীবনই অস্বাভাবিক হয়ে পড়ছে। পিতামাতার বচসা-ভুল বোঝাবুঝির ঘটনায় শিশুদের মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। যেসব শিশু মা-বাবার মনোমালিন্য দেখতে দেখতে বেড়ে ওঠে, তার হতাশ অসামাজিক ও সহিংস হয়ে ওঠে। না অনিশ্চয়তায় ভুগতে থাকে। তাদের মধ্যে এক অস্থিরতা তৈরি হয়। ফলে মনোসংযোগের ঘাটতিও দেখা দেয়। প্রতিদিন পিতা-মাতার বিবাদের প্রত্যক্ষদর্শী বহু শিশুর মধ্যে পরবর্তীকালে ব্যক্তিত্বের অস্বাভাবিকতাও দেখা যায়। সমাজে মানিয়ে চলতে অসুবিধা হয় তাদের। গর্ভকালে যেসব মাতা নির্যাতনের শিকার কিংবা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত থাকেন, তাদের সন্তানও জন্মের পর নানা প্রতিকূলতায় ভোগে।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য এক জরিপে দেশে পাঁচ থেকে ১৭ বছর বয়সি শিশুদের ১৮ দশমিক ৩৫ শতাংশ মানসিক রোগে আক্রান্ত। এমন ঘটনা আবার মেয়েশিশুর তুলনায় ছেলেশিশুর মধ্যে বেশি। মেয়েশিশুদের ১৭ দশমিক ৪৭ শতাংশের পাশাপাশি ১৯ দশমিক ২১ শতাংশ ছেলেশিশু মানসিক রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
শিশুর বিকাশে শিক্ষকের ভূমিকার বিকল্প নেই। শিক্ষক ছাড়া শিশুর বিকাশ সম্ভব নয়। শিক্ষকগণ হচ্ছেন মানুষ গড়ার কারিগর। একজন শিক্ষক শিশুর বিকাশে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখতে পারেন। শিশুরা সেই শিক্ষকদের থেকেই বিকশিত হবে। শিক্ষকগণ হচ্ছেন দেশ ও জাতির আলো। শিশুরা সেই শিক্ষকদের থেকে আলোকিত হবে, বিকশিত হবে। এজন্য প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য কী? এর জবাবে বলা হয়েছে শিশুর শারীরিক, মানসিক, সামাজিক, নৈতিক, মানবিক, নান্দনিক, আধ্যাত্মিক ও আবেগিক বিকাশ সাধন এবং তাদের দেশাত্মবোধে, বিজ্ঞান মনস্কতায়, ও উন্নত জীবনের স্বপ্নদর্শনে উদ্বুদ্ধ করা। শিশুর এসব ধরনের বিকাশ সাধনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে শিক্ষকদেরকেই।
শিক্ষককে হতে হবে মেধাবী, সুশিক্ষিত, সুদক্ষ, সুযোগ্য, কর্মঠ, ধার্মিক, সৎ ও মহৎ। কারণ উক্ত গুণাবলী ছাড়া একজন লোক প্রকৃত শিক্ষক হতে পারেন না। আর প্রকৃত গুণের শিক্ষক ছাড়া সেই শিশুরা বিকশিত হতে পারবে না। একজন শিক্ষক মেধাবী হলে ছাত্রও মেধাবী হবে, একজন শিক্ষক সুদক্ষ, সৎ ও মহৎ হলে ছাত্রও সুদক্ষ, সৎ ও মহৎ হবেই। এক কথায় শিক্ষক হচ্ছেন শিশুর বিকাশের অনন্য চাবিকাঠি। শিক্ষকদের থেকেই শিশুরা উন্নত জীবন গঠনের প্রকৃত দিক নির্দেশনা পেয়ে থাকে।
কবির ভাষায় ' মানব কোলে জন্মে কি সবাই মানুষ হয়/ আদর্শ মানুষ জন্ম দেয় আমাদের বিদ্যালয়।'
আদর্শ মানুষ সোনার মানুষ হতে হলে জীবনকে বিকশিত করতে হলে বিদ্যালয়ে যেতে হবে, শিক্ষকের সাহচর্য একান্ত জরুরী। একজন শিশুর বিকাশে মাতাপিতা যেসব পদ্ধতি উপস্থাপন করতে পারেন এর চেয়ে বেশি আকর্ষণীয় ও মূল্যবান পদ্ধতি উপস্থাপন করতে পারেন একজন শিক্ষক। কেননা সাধারণত অনেক সময় একজন শিক্ষক জ্ঞান দক্ষতায় মাতাপিতার চেয়ে অনেক উচ্চ মানের হয়ে থাকেন। যেসব ক্ষেত্রে শিশুর বিকাশ মাতাপিতার দ্বারা করা সম্ভব হয় না সেসব ক্ষেত্রে শিশুর বিকাশ ঘটানো সম্ভব হয় একমাত্র শিক্ষকের মাধ্যমেই। এজন্য প্রয়োজন বিদ্যালয়ের প্রতিটি শিশুর প্রতি শিক্ষকদের আন্তরিক হওয়া। বিদ্যালয়ে প্রতিটি শিশুকে শিক্ষকগণ আন্তরিকভাবে পাঠদান করাননা বলেই অনেক ক্ষেত্রে শিশুরা পিছিয়ে পড়ে। ফলে এসব শিশুরা জীবনে বিকশিত হতে পারে না।
বিদ্যালয়ের শিশুর বিকাশে এগিয়ে আসা সকল শিক্ষকের মহান দায়িত্ব। শিশুরাই দেশ ও জাতির ভবিষ্যত কর্ণধার। সেই শিশুদের বাদ দিয়ে পরিবার, সমাজ, দেশ ওজাতির অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না। তাই সর্বাগ্রে শিশুর বিকাশে এগিয়ে আসা আমাদের সকলের উচিত।
আমরা আজ গ্লোবাল ভিলেজে বাস করছি। বিশ্বায়নের প্রভাবে আজ আমরা সবাই প্রভাবিত। মোবাইল ফোনে আমরা বিশ্বের সমগ্র সংবাদ পেয়ে থাকি। ইন্টারনেটের মাধ্যমে দুনিয়ার সব তথ্য আমরা সংগ্রহ করে থাকি। ডিস লাইন যুক্ত টিভির সাহায্যে আমরা বিশ্বের শত শত দেশের নাগরিকদের চাল-চলন, আচার-আচরণ, খাদ্যাভাস পোশাক পরিচ্ছদ, কৃষ্টি, কালচার তাৎক্ষণিকভাবে দেখি বা জানতে পারি। কোমলমতি শিশুরা ভিন্ন কৃষ্টি, কালচারেও অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছে। এদের আচার আচরণ অস্বাভাবিক হওয়ার সামাজিক সমস্যাও সৃষ্টি হচ্ছে। এসব সমস্যা দূরীকরণে মেধা নিয়ন্ত্রণের বিকল্প নেই।
টিভির চাকচিক্যময় প্রচার প্রপাগান্ডা আজ আমাদেরকে প্রভাবিত করছে। বহুজাতিক কোম্পানীগুলির মার্কেটিং এর প্রভাব আজ বিত্তহীন বিত্তবান সব পর্যায়ের পরিবারকে প্রভাবিত করছে।
পোশাক পরিচ্ছেদেও দেখা যাচ্ছে পরিবর্তন। ভাল সুন্দর প্যান্ট শার্ট পরিত্যাগ করে জোড়া তালি দেওয়া জিনসের প্যান্ট শার্ট পরছে আমাদের কিশোর যুবকেরা। আবার একটু ভাল করে লক্ষ্য করলে দেখবেন সবার কারনে এয়ারফোন আর পকেটে ওয়াকিটকি। তারা সাধারণ মানুষের কথা শুনেনা। তারা ২৪ ঘন্টা রেডিও, টিভি ও ক্যাসেট, ভিডিও শুনে সময় কাটায়। এদের সঠিক পথ দেখানোর জন্য বাবা, মা এবং শিক্ষক সকলকেই নিতে হবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ।
তবেই গড়ে উঠবে সুন্দর সুশীল সমাজ। আগামী প্রজন্মের কাছে রেখে যাবো কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের কথায় —-
"এসেছে নতুন শিশু তাকে ছেড়ে দিতে হবে স্হান
জীর্ণ পৃথিবীতে ব্যার্থ ,মৃত আর ধ্বংসস্তুপ- পিঠে
চলে যেতে হবে আমাদের।
চলে যাব -তবু আজ যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ
প্রাণ পণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল ,
এবিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার -"
####
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন