Featured Post
ছোটগল্প ।। আদর ।। শান্তা কর রায়
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
আদর
শান্তা কর রায়
রবি ঠাকুর পড়তে পড়তে দুঃখগুলো লুকিয়ে রেখেছিলো মৃন্ময়ী ও প্রত্যক দিন রাত দুটো পর্যন্ত কুলুঙ্গিতে ওর স্বামী সন্তানের জন্য তুলে রাখে সুখ। তারপর যথার্থভাবে ধর্ষিতা হয়। এইসময় ও গুনগুন করে গান গায়,আনন্দ আনার চেষ্টা করে।
আর ভাবে কাল হয়তো সে আসবে,ওর রান্না করা খাবারে পাত পড়বে, আর অলক্ষিতে বাজবে সানাই ।
জন্মের সময় বাবা বলেছিলেন মা এলেন,তাই নাম টুকু ( মৃন্ময়ী ) ।গান,সাঁতার ,ছবি আঁকা,পড়াশোনা সবটায় প্রথম বরাবর । যথা সময়ে টুকুর সম্বন্ধ আসতে শুরু হলো, উচ্চ ঘর,মেধাবী বর,বাবা আল্হাদী মেয়েকে রাজি করালেন । "টুকু যাবে শ্বশুড় বাড়ি সঙ্গে যাবে কে?,ঘরে আছে টুকুর বাপি কোমড় বেঁধেছে ।",দুর্মূল্যের বাজারে বেজায় খরচা করে পালকি চড়ে পরের ঘর আলো করতে চললো মৃন্ময়ী ।
বছর ঘুরতে যমজ সন্তান প্রসব করলো,সবাই বলাবলি করছে ভাগ্যৱান বটে,। পুত্ৰ কন্যা বেড়েছে মায়ের স্নেহে, বাবার প্রশ্রয়ে । বাবা আসেন মেয়ের কাছে ফি রবিবার, মেয়ে যায় জামাই ষষ্ঠী আর দুর্গাপূজায় । বেশ চলছিলো অসম্মানের ঘটি বাটির সম্পর্ক ।জমিদার বাড়ির বৌ,যদিও এই তাল পুকুরে ঘটি ডোবেনা ।সরকারি চাকরির সুবাদে যদিও প্রতি বছর ভ্রমন হয় দেশ বিদেশে ।যথেষ্ট সম্মান না থাকায় একদিন বেরিয়ে পড়লো বাড়ি থেকে । জানতে দেরি হলো উচ্চ রক্তচাপ যুক্ত স্বামী ভালোই আছেন । বরং আগের থেকে বেশি হাঁটছেন আর ওষুধ কম লাগছে । সবটা বোঝার পর মৃন্ময়ী তার সন্তানদের একটা চিঠি লিখলো -
আমার একটা নৌকা চাই ,
রবিঠাকুরের কাছে যাব।
বাবাকে বেলুড় নিয়ে যাব,আমার একটাও নৌকা নাই।
দূরের সমুদ্রে তলিয়ে যাচ্ছে সোনালি মাছ পরি।
আগুন রঙের পাখিটা আর উড়তে পারছে না।
ওকে রাতের চতুর্থ প্রহরে পৌঁছতে হবে আইনস্টাইনের দেশে।
মায়ের পাশে ঘুম পরিদের গল্প শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়তো মেয়ে
একবারও মনে পড়ছে না কত রাত সে খায়নি
অথবা অযথা স্বর্গের কল্পনায় বেহুলার ভেলার মতো যদি পেত! !
পরিযায়ী মনের ফসল জড়ো হয়েছে বিস্তর
সেগুলি নেয়ার জন্য ছোট নৌকা হলেই চলবে ।
বিয়ের আগে যাকে ফিরিয়ে দিতে দ্বিধায় ছিলাম
সেই মানুষটা আজ সাতসমুদ্র তেরনদীর পাড়ে থাকে।
তাকে ফিরিয়ে আনতে হবে,
দুর্বোধ্য ভাষার ত্রাসে ক্ষুরের শব্দ শুনে
অতীত দিনের আঘাত যত,ফুটো করা দেওয়াল
ছলাৎ ধ্বনি ঘুম ভেঙে যায় স্বপ্ন মশগুল ।
ভবিষ্য এই ফিরিয়ে দিতে দ্বিধার সম্বল
ঘর আলো নিভিয়ে রাখার প্রতাপ অবিরল
সুস্থ থেকে জানতে শিখো মায়ের ইতিহাস
আবার যদি জন্ম দিশা কম্পাস মন চায়
নদীর বুকে একলা যেন সাঁতরাতে না হয়
অতিক্রমণ নৌকা হলেই আশার পরিচয়
কিঞ্চিত হোক কল্পনাতে ফাটল হাতিয়ার ।
ওইদিকে এক কদম গাছ সীমিত নয় প্রাণ
সন্ধ্যা সকাল পুনরাবৃত্তির কেবল খতিয়ান
জানতে পারা বন্ধন সেই পায়ের শব্দ শোনা
তরী গিয়ে আসুক নিয়ে ভালোবাসা গোনা ।
___________________________________________________________________________________
শান্তা কর রায়
১৭৪রাজেন্দ্র এভিনিউ
উত্তর পাড়া, হুগলি।
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন