Featured Post
গল্প ।। রবীন্দ্রজয়ন্তী ।। কুহেলী ব্যানার্জী
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
রবীন্দ্রজয়ন্তী
কুহেলী ব্যানার্জী
গ্রীষ্মের দুপুর। ঠা ঠা রোদ। মাথার ওপর সূর্যটা আগুনের ভাঁটার মতো জ্বলছে। চারদিক বড় নিঝুম। একটা ঘুঘু আমগাছের ডালে বসে দুপুরের নির্জনতা ভঙ্গ করে চলেছে। ছোট ছোট আম ধরে আছে গাছে। মাটিতেও একগুচ্ছের এধার ওধার পড়ে আছে। দুটো কাঠবেড়ালি এ ডাল ও ডাল লাফিয়ে বেড়াচ্ছে। গ্রামের মেঠো পথ ধরে এক শাঁখারি বাক্স মাথায় চলেছে। আর হেঁকে চলেছে .......শাঁখা নেবে গো, শাঁখা। ভারি মিষ্টি সে ডাক। গরমের মধ্যেও মন যেন কেমন উদাস হয়ে যায়। আজকাল রোজ দুপুরবেলা কারেন্ট থাকছে না। তবে টুপুরদের যে খুব কষ্ট হয় তা নয়। বাগান থেকে সুন্দর হাওয়া আসে। গল্প বলতে বলতে মা কখন ঘুমিয়ে পড়ে। কিন্তু ওর ঘুম আসে না। চুপিচুপি উঠে পরে।
-- জিতু…. এই জিতু… ঘুমোচ্ছিস? ……. টুপুর ফিসফিসিয়ে জিতুকে ডাকে ।
-- না ঘুম আসছে না তো।
-- আচার খাবি?
-- চল।
দুজনে আচার নিয়ে বসে। জেঠুর মেয়ে নিতা ও হাজির হয়। মা জেগে গেলেই বকা দেবে। তাই বাগানে গাছের ছায়ায় ওরা চলে যায়। ওদের বাড়ির পাশেই রয়েছে মস্ত এক বটগাছ। কত পাখি যে গাছটায় থাকে কে জানে।সারাদিন কিচিরমিচির লাগিয়ে রাখে। বটগাছটার ডানদিকেই রয়েছে টিনের চালওয়ালা এক ভাঙা বাড়ি। চারপাশে শুধুই ঝোপঝাড় আর ভাঙা ভাঙা ইট ছড়িয়ে আছে –ঠিক যেন এক্কেবারে ভুতুড়ে বাড়ি। একসময় বাড়িটায় একটা ঠাকুমা থাকতো। টুপুর দেখেছে তাকে। সাদা থান পরা, ধবধবে সাদা চুলের বুড়ি ঠাম্মা। টুপুরের সব একটু একটু মনে পড়ে। ও তখন বেশ ছোট ছিল। এখনো যে খুব বড় হয়ে গেছে তা মোটেও নয়।তবে এবার পৌষ এলে বারো পূর্ণ হবে। টুপুরকে দেখতে ফর্সা, রোগা পাতলা মতো। মাথায় ঝাঁকড়া চুল। মিষ্টি মুখের নিতা হাসলে পরে গালের দুদিকে টোল পড়ে। টুপুর আর নিতা দুজনেই পিঠোপিঠি। তাই ওদের দুজনের ভারি ভাব। মেয়েলি খেলায় জিতু বেচারা ওদের মাঝে বিশেষ পাত্তা পাই না।
ওদের কাঁঠালপোতা গ্রাম থেকে স্কুলটা বেশ দুরে। অনেকটা পথ। সবাই একসাথে সাইকেল চড়ে যায়। লাল মোরামের পথ। পথের দুধারে সবজির ক্ষেত। গরমে কুমড়ো, লাউ, ভেন্ডি হয়। আর শীতের সময় তো কতো ফসল ফলে। কখনো কখনো ওরা ক্ষেতে কাজ করা কাকুদের কাছে ছোলা, আখ এসব আবদারও করে। স্কুলের পাশে ছোট্ট একটা ক্যানেলটায় প্রায় সারাবছর ঝিরঝির করে বয়ে চলা জল থাকে । গ্রীষ্মের এইসময়টায় চাষীরা ধান লাগায় । স্কুলের চারপাশটা তাই সবুজে সবুজ হয়ে থাকে। কচি ধানে সারা মাঠ ঢেকে থাকে। এখন ওদের সকালে স্কুল চলছে। কদিন পরেই গরমের ছুটি পড়ে যাবে। টুপুরের স্কুল ছুটি একেবারেই ভাল লাগে না।
সামনেই পঁচিশে বৈশাখ। বিকেলদিকে ওদের এখন প্রতিদিন তিথিপিসিদের বাড়ি রিহার্সাল চলছে। ওখানে ওদের রবীন্দ্রনৃত্যের প্রাকটিস হয়। ওরা ছোটরা করবে রবীন্দ্রনৃত্য আর বড়রা নৃত্যনাট্য চিত্রাঙ্গদা। টুপুরের খুব দুঃখ। ছোটদের গীতিনাট্যে নেবে না। ভাবে কবে যে বড় হবে। হারমনিয়াম তবলা সহযোগে যখন বড় দিদিদের নাচ শুরু হলে টুপুর অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে। ''গুরু গুরু..ঘন মেঘ গরজে পর্বতশিখরে" ......শিকারের উদ্দ্যেশ্যে বেরনো পুরুষবেশী চিত্রাঙ্গদা। ছোট্ট টুপুরের তখন কেমন জানি মনে হয়।
তিথিপিসিদের বাড়িটা টুপুরের ভারি পছন্দ। বড় বড় খিলান, খড়খড়ি দেওয়া জানলা ,শান বাঁধানো মেঝে , প্রচুর ফুলের গাছ আর আম-লিচুর বাগান। বাগানের পাশেই একটা পুকুর। ঘাটটা বাঁধানো। পুকুর জুড়ে লালশালুক আর পদ্ম। এদিক ওদিক ফড়িং উড়ে বেড়াচ্ছে। পুকুরের ধারে একটা মাছরাঙা ঘাপটি মেরে বসে আছে। জায়গাটা ভারি নিরিবিলি। টুপুরের একটু বসে থাকতে ইচ্ছে করে।
-- কি রে টুপুর একলা বসে কি ভাবছিস? বড় হয়ে তো কবি হবি মনে হচ্ছে। …… তিথিপিসি বলে।
-- টুপুর লজ্জা পেয়ে যায়। তাড়াতাড়ি উঠে পড়ে।
ঘরে গিয়ে দেখে শুভাদি, রবিদা, টুটুদা, রুনাইদি সকলে হারমোনিয়াম তবলা নিয়ে বসে পড়েছে। শুভাদি গান গাইছে। খুব মিষ্টি গলা। মাঝে মাঝে তিথিপিসি চায়ের জোগান দিচ্ছে – আর চলছে জমাটি আড্ডা। তবে বেশিক্ষণ আড্ডা চলে না। সবাই আবার শুরু করে দেয়। হাতে সময় বেশি নেই।......
পঁচিশে বৈশাখের দিন টুপুরদের অনেক কাজ। সকাল সকাল উঠে ফুল তুলে আনা আবার কিছু ফুল নিয়ে স্কুল যাওয়া.. এরপর এসে মালা গাঁথা। বেশ উৎসব উৎসব লাগে সারাটা দিন। সকালে স্কুল যায়। স্যাররা কবিগুরু সম্বন্ধে কতো কথা বলেন। আবৃত্তি হয়,গান হয়। সন্ধ্যেয় আবার গ্রামের ক্লাব মঞ্চে অনুষ্ঠান। সমস্তটায় রবিদার উদ্যোগে হয়। গ্রামের ছোট-বড় ,বিদগ্ধজনও আসেন। বেশ জমজমাট অনুষ্ঠান হয় প্রত্যেকবার।
কিন্তু সেদিন শেষ দুপুরে চারদিক হঠাৎ কেমন জানি থম্ মেরে গেলো। আকাশ কালো করে মেঘ ঘনিয়ে এলো। চারদিক ঘন অন্ধকার। ঘরের পাশে আমবাগানটাও যেন আবছা। ছাগল, গরুগুলো ডাকতে শুরু করেছে। ভীষণ বেগে ঝড় এলো। কালবৈশাখীর ঝড়। ধুলোয় চারদিক ভরে গেল। পাতা , খড় সব ঝড়ে উড়ে বেড়াতে লাগলো । টুপুর জানলার ফাঁক দিয়ে বাইরে চেয়ে থাকে । বাগানের তাল,নারকেল গাছগুলো ঝড়ে প্রায় নুইয়ে পড়ছে। যেন এখনই ভেঙে পড়বে। বটগাছটায় পাখিদের বাসাগুলো কি হবে কে জানে। ওদের ঘরের ঘুলঘুলিতে চড়ুই দুটো চুপটি করে বসে আছে অজানা আতঙ্কে। ঝড়ের তাণ্ডবে পাশের বাড়ির খড়ের চালাঘরটা উড়েই গেলো চোখের সামনে। কতক্ষণ যে ঝড় হল - কে জানে। তারপর শুরু হল বাজ পড়া আর বৃষ্টি। ভিজে মাটির সোঁদা সোঁদা গন্ধ উঠতে লাগলো। গাছের পাতায় মোটা মোটা ফোঁটায় চড়বড় করে বৃষ্টি এলো।
নাঃ ….. সব মাটি হয়ে গেলো আজ আর ওদের অনুষ্ঠানটা বোধহয় হলো না। এদিকে সন্ধ্যে হয়ে গেছে কতক্ষন। লোডশেডিং চলছে। চারদিক ঘুটঘুটে অন্ধকার। বৃষ্টি কমলে লণ্ঠন হাতে নিতা আর টুপুর তিথিপিসিদের বাড়ি গেল খোঁজ নিতে। গিয়ে দেখল সত্যি সত্যিই আজকের অনুষ্ঠান বাতিল হয়ে গেছে। সকলে মন খারাপ করে বসে আছে।
হঠাৎ রবিদা সকলকে চমকে দিয়ে বলে উঠল, আমাদের এতোদিনের পরিশ্রম কিছুতেই নষ্ট হতে দিলে চলবে না। প্রকৃতির ওপর তো কারও হাত চলে না। তাই আমরা আগামীকালই রবীন্দ্রজয়ন্তী পালন করবো। টুটুদার কথায় সবাই হৈ হৈ করে উঠল। একমুহুর্তে থম্থমে পরিবেশটা কেটে গিয়ে সবার মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠলো।
___________________________________
কুহেলী ব্যানার্জী
লালকুঠিপাড়া
সিউড়ি, বীরভূম
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
সূচিপত্র
সূচিপত্র
-
-
-
-
-
-
-
-
- প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 32nd issue: May 2024
- প্রবন্ধ ।। স্বদেশ পর্যায়ের গানে রবীন্দ্রনাথ ।। ভু...
- গল্প ।। রবীন্দ্রজয়ন্তী ।। কুহেলী ব্যানার্জী
- প্রবন্ধ ।। রবীন্দ্রনাথের প্রকৃতিপ্রেম ।। আরতি মিত্র
- মুক্তগদ্য ।। হৃদয়ে রবীন্দ্রনাথ ।। শুভশ্রী দাস
- কবিতা ।। হে ঠাকুর ।। অনিন্দ্য পাল
- ছড়া ।। রবি কবি ।। অজিত কুমার জানা
- ছড়া ।। হৃদয় দিলাম পেতে ।। ক্ষুদিরাম নস্কর
- ছড়া ।। রবিঠাকুর, তোমায় বলি ।। জয়শ্রী সরকার
- ছড়া ।। পঁচিশ তোমার পঁচিশ আমার ।। দীপ রায়
- ছড়া ।। সবার তুমি রবিঠাকুর ।। গোবিন্দ মোদক
- ছড়া ।। পঁচিশে বৈশাখ ।। রঞ্জন কুমার মণ্ডল
- মুক্তগদ্য ।। রবীন্দ্রসৃষ্টি ।। সঞ্জয় বৈরাগ্য
- ছড়া ।। রবি বারো মাস ।। বিদ্যুৎ মিশ্র
- ছোটগল্প ।। আদর ।। শান্তা কর রায়
- কবিতা ।। দিকপাল ।। সুদামকৃষ্ণ মন্ডল
- কবিতা ।। কবিপ্রণাম ।। রণেশ রায়
- কবিতা ।। রবীন্দ্রনাথ ।। সুশান্ত সেন
- ছড়া ।। আজ পঁচিশে ।। সুব্রত চৌধুরী
- কবিতা ।। একটাই নাম ।। প্রবীর বারিক
- কবিতা ।। অতুলনীয় ।। অমিত দত্ত
- কবিতা ।। কুর্ণিশ ।। প্রহ্লাদ কুমার দাশ
- ছোটদের আঁকিবুকি ।। 32nd issue: May 2024
- অনুবাদ ।। কথা না-বলা টিয়া ।। সুস্মিতা পাল
- বিশেষ রচনা ।। শিশুর মানসিক বিকাশে মায়ের ভূমিকা ।। ...
- ছড়া ।। বুড়ি ও চাঁদ ।। রবীন বসু
- ছড়া ।। চোর-মোবাইল ।। দীপ রায়
- ছড়া ।। কুসুমপুর ।। প্রদীপ কুমার সামন্ত
- দুটি ছড়া ।। বদ্রীনাথ পাল
- ছড়া ।। রুদ্র বৈশাখ ।। দীনেশ সরকার
- ছড়া ।। ছোট্ট ছেলে খোকন ।। অজয় মুখোপাধ্যায়
- ছড়া ।। দৌড় ।। সমর আচার্য্য
- কবিতা ।। জাগাতে হবে ।। কাজল আচার্য
- দুটি ছড়া ।। রথীন পার্থ মণ্ডল
- ছোটগল্প ।। দুর্গতিনাশিনী ।। শংকর ব্রহ্ম
- গল্প ।। ভূতের রাজা ও গোপাল ভাঁড়।। মিঠুন মুখার্জী
- ছড়া ।। শীত গীত ।। সাইফুল ইসলাম
- ছড়া ।। এখন গ্রীষ্মকাল ।। দীপঙ্কর বেরা
- ছড়া ।। মানুষ নাকি ভূত ।। বদরুল বোরহান
- কবিতা ।। শিকড় ।। অধীর কুমার রায়
- ছড়া ।। রূপাই-এর চিঠি ।। গোবিন্দ মোদক
- দুটি কবিতা ।। হারান চন্দ্র মিস্ত্রী
- কবিতা ।। এই ছেলেটা ।। রাণা চ্যাটার্জী
- ছড়া ।। মুড়িওয়ালা ।। বাসুদেব সরকার
- কবিতা ।। রাজার দেশে ।। এস এম মঈনুল হক
- ছড়া ।। ভূতের রাজা ।। শ্যামল হুদাতী
- ছড়া ।। ফাঁদ ।। প্রবোধ কুমার মৃধা
- ছড়া ।। সবুজে সাজাই দেশ ।। ইমরান খান রাজ
- ছড়া ।। বাবার মতো বড় ।। জয়শ্রী সরকার
- ছড়া ।। সাজছে খুকু ।। সুজন দাশ
- কবিতা ।। ফেব্রুয়ারীর এই মাসটা ।। চিত্তরঞ্জন সাহা ...
- ছড়া ।। ভুল ।। তপনকান্তি মুখার্জি
- ছড়া ।। আমরা বুড়ো খোকা ।। শেখ মোমতাজুল করিম শিপলু
- ছড়া ।। বৈশাখ আর জষ্ঠি এলে ।। উৎপলেন্দু দাস
- গ্ৰীষ্মের ছড়া ।। প্রশান্তিতে কুমার মন্ডল
- ছড়া ।। অভ্র নামে ছেলেটা ।। মহা রফিক শেখ
- কবিতা ।। মনের ভাবনা ।। অরিন্দম মাইতি
-
-
-
-
-
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন