Featured Post
অণুগল্প ।। বিক্রমজিৎ কিংবা লক্ষ্মীর পাঁচালী ।। শংকর ব্রহ্ম
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
বিক্রমজিৎ কিংবা লক্ষ্মীর পাঁচালী
শংকর ব্রহ্ম
সে'সব অনেকদিন আগের কথা।
অচিনপুর নামে একটা দেশ ছিল । যেখানে পরীরা এসে মানুষের সাথে গল্প করত। পাখিরা, মাছেরা সব মানুষের সাথে কথা বলত। যেখানে ছিল আলো গাছ। যে গাছে রাতে আলো জ্বলতো।
ছিল আশা নামে একটা নদী। যে নদীর পাশে বসে কেউ দুখের কথা বললে, নদী তার সব দুঃখের কথা শুনে তা দূর করে দিত।
নদীর পাশেই ছিলো একটা গ্রাম, নাম লক্ষ্মীকান্তপুর। সেই গ্রামেই থাকত ছোট্ট একটা মেয়ে। সবাই তাকে লক্ষ্মী বলেই ডাকতো। বয়স তার আর কত হবে। সবে মাত্র দু'টো দাঁত পড়েছে। সে সারাদিন ঘুরে বেড়াত বাগানে , সেখানে প্রজাপতিদের সাথে নাচতো, বনের পাখির সাথে গাইত। কি মধুর ছিল তার গলার স্বর। তার গান শুনে, বনের সব গাছের পাতারা নাচতো, জলের মাছ ডাঙায় উঠে এসে তার গান শুনত। সন্ধ্যেবেলায় পরীরা এসে তার সাথে গল্প জুড়ত।
একদিন লক্ষ্মী আশা নদীর পাশে বসে কাঁদতে লাগলো। গাল বেয়ে টুপ করে এক ফোটা জল পড়ল নদীতে।
নদী বলে উঠল, ওমা এ কি গো লক্ষ্মীমণি, তোমার চোখে জল! কি দুঃখ তোমার, বলো আমায়।
আমার মার খুব অসুখ করেছে গো আশা নদী। মা নাকি আর বেশীদিন বাঁচবে না। মা না থাকলে আমার কি কোন আনন্দ থাকবে বল? কাঁদতে কাঁদতে বলল সে। তার কান্না দেখে নদীর জল কেঁপে উঠলো। নদীর মাছেরা, নদীকে মিনতি করে বলল, ও গো আশা নদী, তুমি তো সবার দুঃখ দূর কর। লক্ষ্মীর মা কে তুমি ভালো করে দাও।
বনের গাছেরা মাটিকে বলল, মাটি তুমি তো আমাদের সবাইকে বাঁচিয়ে রেখেছো। লক্ষীর মা কে তুমি বাঁচিয়ে দাও। নাইলে আমরা আর কোন ফুল, ফল দেবো না।
রাতে আলোচনা সভা বসলো।
আশা নদী, বনের মাটি, বাতাস আর পরীরা সবাই মিলে, এই ঐ অনেক ভেবে চিন্তে শেষে খুঁজে পেলো লক্ষীর মা কে বাঁচানোর একটা উপায়।
লক্ষ্মীকে পরদিন ডেকে বলল, তোমার মা কে বাঁচানোর একটা উপায় আমরা খুঁজে পেয়েছি।
কিন্তু সে যে বড় কঠিন।
লক্ষ্মী কেঁদে কেঁদে বলল, বল তোমরা আমায় কি সে উপায়। মা কে বাঁচাতে আমি সব করতে পারবো।
- বেশ, তবে কাল ভোরে সূর্য ওঠার আগে, একটা ফানুশে করে তোমায় আমরা সকলে মিলে উড়িয়ে দেবো। সে ফানুশ গিয়ে যেখানে পড়বে সেখানেই মিলবে তোমার মা কে বাঁচানোর উপায় - বলল নীলপরী।
ভোর বেলায় একটা বড় ফানুশে বসিয়ে লক্ষ্মীকে আকাশে উড়িয়ে দিল সবাই।
কাঁদল গ্রামের মানুষ, নদী, গাছ, মাছ সবাই। উড়তে উড়তে বহুদুরে উড়ে গেলো সে ফানুশ। গিয়ে পড়লো অচেনা এক রাজ্যে। সেখানে ঘাসগুলো সব ফ্যাকাসে, গাছে নেই কোন পাতা, নদীতে নেই জল।
হাঁটতে হাঁটতে এক বিরাট রাজ প্রাসাদের সামনে এসে দাড়ালো লক্ষ্মী।
ভিতরে ঢুকে দেখলো রাজা একা বসে কাঁদছেন।
তার কাছে গিয়ে লক্ষ্মী বলল, আপনি কাঁদছেন কেন?
রাজা মাথা তুলে দেখলো, লাল রঙের শাড়ি পরে দাঁড়িয়ে আছে এক মেয়ে।
সে বলল, কে তুমি মা? কোথায় থেকে এসেছো?
আমার এই রাজ্যে এক সন্ন্যাসীর অভিশাপ লেগেছে। তাই কোন গাছে ফল নেই, নদীতে জল নেই। না খেতে পেরে আমার সব প্রজারা মরে যাচ্ছে। আমার একমাত্র পুত্র বিক্রমজিৎ জলের অভাবে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে।
- আমি পারবো আপনার রাজ্যকে বাঁচাতে বলল লক্ষ্মী।
- কি বললে মা তুমি! তুমি পারবে? কথা দিচ্ছি যদি তুমি সত্যি আমার রাজ্য আর আমার ছেলেকে বাঁচাতে পারো, যা চাইবে তাই পাবে, বলল রাজা।
রাজাকে নিয়ে সে বাইরে বেরিয়ে এলো।
এসে গান গাওয়া শুরু করলো লক্ষ্মী। তার সে গান শুনে ঘাসগুলো সব সতেজ হয়ে উঠল, গাছগুলো সব পাতায় পাতায় ভরে উঠল সবুজ হয়ে। নদীতে জল এলো কলকল শব্দে ছুটে। নদী ভরে গেল জলে । তাতে কত মাছ। জল খেয়ে বাঁচল রাজপুত্র বিক্রমজিতের প্রাণ। বিক্রমজিতের সাথে বসে গল্প করতে করতে তার দুঃখের কথা লক্ষ্মী বলল বিক্রমকে। বিক্রমজিৎ সব শুনে বলল, আমি জানি কি করে তোমার মা কে বাঁচানো যাবে।
সে বলল, কি করে? বল আমায় সে উপায়?"
বিক্রমজিৎ বলল, এ রাজ্যের পুব কোনে আছে এক বৃষ্টি গাছ। সে গাছের নীচে দাঁড়ালেই বৃষ্টি হয় সুগন্ধী মিষ্টি রস। তা যদি তোমার মা কে, খাওয়াতে পারো বাঁচবেন তিনি।
তারপর দু'জনে মিলে চলে গেল সে বৃষ্টি গাছের কাছে। দু'জনে মিলে ভিজল আর শিশি ভরে নিলো সেই বৃষ্টির জল। তারপর রাজকুমার তার ঘোড়ায় চাপিয়ে লক্ষ্মীকে নিয়ে প্রান্তরের পর প্রান্তর পেরিয়ে গেল লক্ষ্মীর মায়ের কাছে। বৃষ্টির জল খেয়ে সুস্থ হয়ে উঠল তার মা। রাজপুত্র বিক্রমজিৎ ফিরে গেল তার রাজ্যে।
রাজা সারা রাজ্যে ঢেড়া পিটিয়ে ঘোষণা করেদিলেন, লক্ষ্মীমণির সাথে বিক্রমজিতের বিয়ের কথা।
তার অল্প কিছুদিন পর রাজা মহাসমারোহে, ধুমধাম করে লক্ষ্মীকে বিক্রমজিতের বউ করে নিয়ে গেলেন রাজ্যে। রাজবঁধূর সম্মানে একমাসব্যাপী সারা রাজ্যজুড়ে উৎসব চললো। প্রজারা সকলে তাতে সামিল হতে পেরে ভীষণ খুশি।
______________________________________________________________________
[ছবি: ইন্টারনেট মাধ্যম থেকে সংগৃহীত]
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
মন্তব্যসমূহ
সূচিপত্র
সূচিপত্র
-
-
-
-
-
-
- প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় - ১১ ।। আগ...
- নিবন্ধ ।। দুষ্টু মিষ্টি কোকিল ।। সুশীল কুমার দত্ত
- ছোটোদের আঁকিবুঁকি ।। কিশলয় - ১১ ।। আগস্ট ২০২২
- ক্যুইজ, ধাঁধা, শব্দখেলা, 11th issue:Agust 2022,
- ছোটগল্প ।। পবনপুত্রের কীর্তিকলাপ ।। বাণীব্রত গোস্বামী
- ছোটগল্প ।। কিশোর ভুতের গল্প ।। ছাত্র শঙ্কর ।। শাশ্...
- অণুগল্প ।। বিক্রমজিৎ কিংবা লক্ষ্মীর পাঁচালী ।। শংক...
- ছোট গল্প ।। কেক ।। চিত্তরঞ্জন গিরি
- ছোটগল্প ।। বন্ধু ।। পৌষালী
- ছোটগল্প ।। নিশির ডাক ।। তাপসকিরণ রায়
- ছোটগল্প ।। ভালোর ফল ।। চৈতি চক্রবর্তী
- অণুগল্প ।। একটা হাসির ঘটনা ।। রুপা দত্ত চৌধুরী
- ছড়া ।। ব্যাঙের বিয়ে ।। পশুপতি দত্ত
- কবিতা ।। লোনা ভূমি ।। সুদামকৃষ্ণ মন্ডল
- ছড়া ।। পাখির খেদ ।। চন্দন মিত্র
- ছড়া ।। ছড়া দাদুর ছড়া।। রণেশ রায়
- ছড়া ।। হেঁসেলে হরিণছানা ।। তপতী মণ্ডল
- কবিতা ।। তেপান্তরের কথা ।। সুবীর ঘোষ
- ছড়া ।। স্কুল ব্যাগে ঢাকা শৈশব ।। জগদীশ মাল
- ছড়া।। ফুলের মতো ।। রিয়াদ হায়দার
- ছড়া ।। সঠিক দিশা ।। কাশীনাথ হালদার
- ছড়া ।। আয় বৃষ্টি আয় ।। হারান চন্দ্র মিস্ত্রী
- ছড়া ।। মজার ছড়া ।। গৌর গোপাল পাল
- ছড়া।। সন্ধ্যাবেলায় ।। বিদ্যুৎ মিশ্র
- ছড়া ।। ভুত ভেগেছে ।। আসগার আলি মণ্ডল
- কবিতা।।সত্যের নিশান ।। মেশকাতুন নাহার
- কবিতা ।।মাঝি ।। শ্যামাপদ মালাকার
- কবিতা ।। ডাহুক ডাকা মাঠ ।। নিরঞ্জন মণ্ডল
- ছড়া ।। ঋতুর সনে ।। শীলা সোম
- ছড়া ।। ই-পাঠশালা ।। সঞ্জয় বন্দোপাধ্যায়
- ছড়া ।। বাবার রাগ ।। কাজী সামসুল আলম
- ছড়া ।। পুজোর গন্ধ ।। দীপক জানা
- অণুগল্প ।। দহন ।। দেবাশীষ মুখোপাধ্যায়
- ছড়া ।। ছড়ায় ছড়া ।। ডাঃ তারক মজুমদার
- ছড়া ।। বর্ষা দিনের মজা ।। দীপক পাল
- ছড়া ।। আমের ছড়া ।। মুহাম্মদ আলম জাহাঙ্গীর
- কবিতা ।। স্বপ্নিল রাত ।। স্বপ্নিল রাত
- ছড়া ।। অদ্ভুতুম ।। শুভাশিস দাশ
- কবিতা ।। কুকুর ছানা ।। অঞ্জলি দেনন্দী, মম
- ছড়া ।। রামধনু ।। কার্ত্তিক মণ্ডল
- ছড়া ।। চায়ের দোকান ।। গোপা সোম
- ছড়া ।। রেখে যাবো এঁকে ।। অরুণ চক্রবর্তী
- কবিতা ।। শুভ্রপরী ।। সুজিত কুমার পাল
- ছড়া ।। বর্ষার গান ।। সুদীপ ঘোষ
- ছড়া ।। সংখ্যার গুচ্ছ ছড়া ।। মুহাম্মদ আলম জাহাঙ্গীর
- কবিতা ।। কালোজাম ।। আনন্দ বক্সী
- কবিতা।। অধরা স্বপ্ন ।। মিঠুন মুখার্জী
- কবিতা ।। এই শহরে বৃষ্টি দেখা ।। শাহীন খান
- কবিতা ।। তোমরা কেন ।। শংকর দেবনাথ
- ছড়া ।। নদী মাতা ।। সুরঞ্জীত্ গাইন
- ছড়া ।। রঙ্গিন তুমি ।। প্রশান্ত কুমার মন্ডল
- কবিতা ।। আমার মামারা ।। গোবিন্দ মোদক
- কবিতা ।। ১৫ই আগষ্ট স্মরণে ।। অজিত কুমার জানা
- ছড়া ।। আমার গাঁয়ে ।।মজনু মিয়া
- কবিতা ।। কিছু অভ্যাস ।। কুশল রায়
- ছড়া ।। রোদফেরি ।। কৃপাণ মৈত্র
- ছড়া ।। যুদ্ধ ।। দিলীপ কুমার মধু
- ছড়া ।। সূর্যমামা ।। রঞ্জন কুমার মণ্ডল
- ছড়া ।। বর্ষাকালের রূপ ।। রেজাউল করিম রোমেল
- ছড়া ।। খোকন এলো ।। মীরা রায়
- কবিতা ।। কাবাব ।। সুশান্ত সেন
- ছড়া ।। মায়ের অভাব ।। রূপালী মুখোপাধ্যায়
- কবিতা ।। ঘড়ির কাঁটা ।। সান্ত্বনা ব্যানার্জী
- ছড়া ।। ব্যাঙের বিয়ে ।। মহা রফিক শেখ
-
-
-
-
-
-
-
-

অভিনন্দন যারা পড়বেন
উত্তরমুছুন