ভালোর ফল
চৈতি চক্রবর্তী
জঙ্গলে বাঘ আর কুমীরের মধ্যে বেশ বন্ধুত্ব।
দুজনে মিলে কত সুখের দুখের কথা বলে।
----বাঘমামা বলছে জানো তো কুমীরভায়া
বয়স তো হচ্ছে আর ছুটে ছুটে শিকার ধরতে পারছি না।
----বলেছ ঠিকই। কিন্তু উপায় তো নেই।
পেট চালাতে গেলে তো এসব করতেই হবে।
-----আর যদি আমরা এমন কিছু করি যে
যাতে শিকার এমনি এমনি এসে আমাদের কাছে এসে যায়।
-----কিন্তু কে সেসব করবে ভায়া?
----একটা
কাজ করি চলো ওই যে বিকেলবেলাছোট বাচ্চাগুলো খেলা করে আমি বা তুমি ওখান
থেকে একটা করে বাচ্চাকে ধরে আনবো। এনে এনে জমা করে রাখবো তারপর একদিন একদিন
করে খাব।
ওরা দুজনে যখন কথা বলছিলো তখন দূর থেকে সজল দেখছিলো। ওদের
কথা তো ও বুঝতে পারে না। কিন্তু জঙ্গলের গাছে একটা হনুমান তার বন্ধু। যার
পিঠে চড়ে সারা জঙ্গল ঘুরে বেড়ায়।
সজল ছুটতে ছুটতে চলে যায় বন্ধুর কাছে।
----ও বন্ধু ও বন্ধু শোনো না। একটা কথা আছে।
----আসছি আসছি। আগে কিছু ফল তোমার জন্যে এনে রেখেছি খেয়ে নাও।
----তুমি আসছো তো? আমার কথা আছে তোমার সাথে।
----বলো কি কথা?
----ওই যে বাঘমামা আর কুমীরদাদা কিসব বলছে কিছু বুঝতে পারছি না। তুমি বলে দেবে তো?
----চলো দেখি কি বলছে। কিন্তু খুব সাবধানে চলতে হবে। চলো পেছন দিক দিয়ে গিয়ে লুকিয়ে শুনি। ওরা বলছে বাচ্চাদের ধরে নিয়ে যাবে।
----ওরা আমার বন্ধুদের কেন নিয়ে যাবে? আর রাখবেই বা কোথায়? তুমি কি জানো?
----আমি শুনেছি তবে কোনোদিন দেখিনি।
----তার মানে ওখানে আরো কেউ আছে?
----হয়তো বা।
----আমি কি করে যাব ওখানে?
----তার জন্যে তোমার তিমির সাথে আলাপ হওয়া দরকার। দাঁড়াও কাল ওর সাথে কথা বলবো।
----সজল পরদিন হনুর সাথে কথা বলে যে বাঘমামা আর কুমীর যখন কথা বলবে উপরে এসে তখন তিমি ওদের নিয়ে যাবে নীচে জলের নীচে।
পরদিন সজল রেডি হয়ে এসে গেছে হনুর কাছে। বন্ধু এসো কোথায় তুমি?
----এই তো তিমি এলো বলে।
----তুমি যাবে তো?
----না
আমি যাব না। আমি জলের তলায় থাকতে পারবো না। তুমি একটা ছোট অক্সিজেন
সিলিন্ডার নিয়ে আসবে। যাতে তোমার কষ্ট না হয়। আর তাড়াতাড়ি ফিরে আসবে দেখেই।
আমি কিন্তু চিন্তা করবো।
----আচ্ছা বন্ধু।
----সজলকে তিমির পিঠে চড়িয়ে দিয়ে বলে দেয় সাবধানে নিয়ে যাবে বন্ধুকে আবার ঠিক করে ফিরিয়ে আনবে। মনে থাকবে তো?
-----হ্যাঁ গো হ্যাঁ।
সজলকে পিঠে নিয়ে তিমি চলে যায়।
নীচে নীল জল। কত মাছেরা ঘুরে বেড়াচ্ছে।
কত অজানা প্রাণী ঘুরে বেড়াচ্ছে নানা জায়গায় কারো নাম সজল জানেই না। তারা সজলকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাচ্ছে। যেন মনে হচ্ছে ওরাও সব বন্ধু ওর।
----ধীরে
ধীরে তিমি সজলকে নিয়ে ডাঙায় একটা ঘরের সামনে নামিয়ে দেয়। বলে যায় ঠিক তিন
ঘন্টা বাদে আমি তোমায় নিতে আসবো। ততক্ষণে সবটা ঘুরে দেখে এসো কেমন?
সজল
ঘুরতে ঘুরতে কতগুলো খুপরি ঘর দেখতে পায়। ভয়ে ভয়ে গিয়ে দেখতে পায় ওর
অনেকগুলো বন্ধু সেখানে রয়েছে। সজলকে দেখে ওরা অবাক হয়ে যায়। কিন্তু ওরা বলে
তুমি পালিয়ে যাও। এখানে একজন শিয়ালরাজা আছেন যিনি এই সব ঘরগুলো দেখাশোনা
করেন।
একজন বন্ধু চুপি চুপি অনেকগুলো ঘর দেখায় প্রতিটি ঘরে নানা বয়সের মানুষ এনে রেখেছে।
প্রতিদিন একজন করে খাওয়া হয়।
তুমি পালাও নাহলে তোমাকেও পুরে রেখে দেবে।
পালাও পালাও।
----আমাকে সব জানতে হবে।
----এই দেখো এটা হলো ওষুধঘর, এটা হলো
খাবার
ঘর, এটা হলো জলের ঘর। এখান থেকে সব খাবার দেওয়া হয় সবাইকে। যাতে সবাই খেয়ে
দেয়ে মোটা হয়। তারপর তাদের খায় ওই কুমীর, বাঘ আর শেয়াল। একটা বক প্রতিবাদ
করেছিলো বলে তাকে ঘরে বন্দি করে রেখেছে।
----কি করে তোমাদের নিয়ে যাব? একজন করে যদি প্রতিদিন নিয়ে যাই?
----তা হবে না। রোজ গোনা হয় কতজন আমরা আছি।
----তাহলে একটা বুদ্ধি বার করতে হবে। আগে আমায় বকের কাছে নিয়ে চলো।
----বকমামা দেখো আমাদের এক বন্ধু নিজে এখানে এসেছে।
----বকের চোখ থেকে জল ঝরে।
----কেঁদো না আমি তোমাদের সবাইকে নিয়ে যাব।
----কি
করে নিয়ে যাবে বলো যদি শেয়াল, বাঘ, কুমীর কেউ জানতে পারে তো তোমাকেই খেয়ে
নেবে। তবে এখানে একটা গুপ্ত ঘর আছে যার খবর একমাত্র আমি জানি। তুমি কিছু
ব্যবস্থা করতে পারলে আমি তোমাকে সেখানে লুকিয়ে রেখে সাহায্য করতে পারবো।
----ঠিক আছে। শোনো বন্ধুরা তোমরা সবাই মিলে ওই ঘরটা পর্যন্ত সুড়ঙ্গ খুঁড়ে রাখবে কেমন।
যাতে ওখান থেকে সবাইকে আমি বার করে নিয়ে যেতে পারি।
আজ চলি তবে। ঠিক কাল বা পরশু আবার আসবো। দেখি কি করতে পারি।
বলে সজল ফিরে আসে তিমির কাছে তারপর তিমি তাঁকে ফিরিয়ে নিয়ে আসে হনুর কাছে।
বন্ধু এসে গেছি।
----হনু লাফিয়ে এসে সজলকে দেখে নিশ্চিন্ত হয়। এসেছ বন্ধু বড্ড চিন্তা হচ্ছিলো তোমার জন্যে।
বলো কি কি দেখলে।
---সজল সব বলার পরে হনু মাথা নাড়ায়। হুম এরকম কিছুই সন্দেহ হয়েছিলো আমার। যাক এবার পথ খুঁজতে হবে কি করে কি করা যায়।
---আমার
মাথায় বুদ্ধি আছে যদি ডুবুরি কাকুদের নিয়ে যাই ওরা দু'জন করে তুলে নিয়ে
চলে আসবে। আর তিমিও কিছুদের নিয়ে আসবে। আমি গিয়ে সব বলবো ওই ডুবুরি
কাকুগুলোকে যাতে ওরা ব্যবস্থা করে দেয়।
----খুব ভালো কথা তাহলে তাই হোক। তুমি কার কথা বলো।
পরদিন সজল চলে যায় ডুবুরিদের কাছে। ওরা তো শুনে অবাক। বলে তুমি এত ছোট হয়ে এত কিছু করলে কিভাবে?
----সে অনেক কথা। তোমাদের পরে বলবো কেমন। আগে তোমরা তৈরি হও কালই যাব কারণ যত দেরি হবে তত এক একজন করে কমে যাবে।
-----ঠিক আছে কালই আমরা তৈরি থাকবো। তুমি এসে নিয়ে যেও।
ওরা একটা সাবমেরিনের ব্যবস্থা করলো।
পরদিন প্রথমে সজল তিমির পিঠে। তার পেছন পেছন ডুবুরিরা। আর সাবমেরিন তার পেছনে।
সকলে মিলে চুপি চুপি প্রথমে গুপ্ত সুরঙ্গে গিয়ে ঢোকে। সজল এক এক করে সকলকে সেই পথে সোজা সাবমেরিন পর্যন্ত পৌঁছতে থাকে।
এদিকে শেয়ালকে পাহারা দিচ্ছে কিছুজন যাঁরা শেষে যাবে। সজল শেয়ালের জন্য অনেকটা
ওষুধ
নিয়ে এসেছিলো মনেকরে। তাই দিয়ে তাকে অজ্ঞান করে রাখা হয়েছে। তবে তাড়াতাড়ি
কাজ করতে না পারলে সব ভেস্তে যাবে। এক এক করে যখন সকলকে উঠিয়ে নিয়েছে। এবার
শেয়ালের পালা। ডুবুরিকাকুরা একটা বস্তায় শেয়ালকে পুরে
সাবমেরিনে তোলে।
এবার সকলকে নিয়ে তারা ফিরে আসে।
ওদিকে ডুবুরি কাকুরা বন বিভাগে খবর দেয় যে ওই বাঘ আর কুমীরকে আর ছেড়ে রাখা যাবে না।
সবাই মিলে জাল ফেলে কুমীরকে ধরে। তারপর
বাঘকে ধরার জন্যে ফাঁদ পাতা হয়। অনেকদিন পর সেই বাঘ ধরা পড়ে।
তারপর সজল যেন নিশ্চিন্ত হয়। সে আবার বন্ধুদের সঙ্গে আগের মতো খেলতে পারে। তাঁর সব বন্ধুদের সাথে হনু আর তিমির পরিচয় করিয়ে দেয়।
মাঝে মাঝে ওদের পিঠে চড়ে সজলের বন্ধুগুলোও
ঘুরে বেড়ায়।
হনুও ওদের সাথে দিব্যি খেলে। আর সবাই দেখে অবাক হয় যে ওরা কেমন সুন্দর খেলা করে। আর বন্ধুদের মা'রা তো সজলকে মাথায় তুলে রাখে
বলে তাঁর জন্যেই ছেলেগুলোকে ফিরে পেয়েছে।
ওদিকে বাঘমামা, কুমীরভায়া, শিয়ালমামা সকলকে নিয়ে আলাদা করে আলাদা ঘরে রাখা আছে। এবার তাদের খারাপ কাজের ফল ভুগবে।
আর বকমামা ভালো কাজ করার জন্যে ছুটি পেয়ে গেল।
সজলের চেষ্টায় তাঁর বন্ধুরাও ছাড়া পেয়ে গেল।
ভালো কাজের ফল সবসময় ভালো হয়।
______________________________________________________________________________________
চৈতি চক্রবর্তী
[ছবি: ইন্টারনেট মাধ্যম থেকে সংগৃহীত]
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন