সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

Featured Post

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় ৪৪ ।। জুলাই ২০২৫

ছবি
      সম্পাদকীয় ছোট্ট বন্ধুরা আশা করি তোমরা ভালো আছো। তোমরা তো জানো, বাংলার ঋতু বৈচিত্রে আষার-শ্রাবন বর্ষাকাল। একথাটা যেন আমরা ভুলতেই বসেছিলাম। পরিবেশ দূষণ আর আমাদের বিভিন্ন প্রযুক্তির যথেচ্ছ সীমাহীন ব্যবহারে আমরা প্রকৃতির মহিমা থেকে বঞ্চিত হচ্ছিলাম। গরমে হাঁসফাঁস করতে করতে যেটুকু বর্ষার ছোঁয়া পেতাম তা যেন ক্ষণিকের! গ্রীষ্মের সীমাহীন আস্ফালনের পর হঠাৎ-ই বর্ষা মিলিয়ে যেতে শীতের দিনকয়েকের আগমন। ফের গ্রীষ্মের দৌরাত্ম্য।কিন্তু এবারে যেন জাকিঁয়ে নেমেছে বর্ষা।রিমঝিম শব্দের মধুরতায় মন মোহিত হয়ে যাচ্ছে। তোমরাও নিশ্চয় উপভোগ করছো বর্ষার সৌন্দর্য্য। চারদিকের খালবিল, নালা-নদী জলে থৈ থৈ। সবুজের সমারোহ চারপাশে।এটাই তো কবিদের সময়, কবিতার সময়। মন-প্রান উজার করে লেখার সময়। পরাশুনোর ফাঁকে, বৃষ্টি-স্নাত বিকেলে তেলেভাজা মুড়ি খেতে খেতে তোমরাও বর্ষার আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে নিজেদের আবেগে ভাসিয়ে দাও লেখার খাতা। ধীরে ধীরে পরিণত হোক তোমাদের ভাবনার জগৎ। তবে বর্ষার ভালো দিকের সাথে সাথে তার ভয়াল রূপও রয়েছে । অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে  বন্যার আশঙ্কা থেকেই যায়। কত মানুষের কষ্ট, দূর্ভোগ বলো? সেই রকম বর্ষ...

ছোটগল্প ।। নিশির ডাক ।। তাপসকিরণ রায়




                            নিশির ডাক

                            তাপসকিরণ রায়

 

নিশির ডাক আবার কি ? জানতাম না আমি।

আমি তখন ছোট। ক্লাশ সিক্সে পড়ি। ছিলাম এক গাঁয়ে। ঠিক গ্রাম নয়। ছোট খাট শহর বলা চলে। মধ্যপ্রদেশ, বস্তার জেলায় ছিল সে জায়গা। গাঁয়ের নাম কোন্ডাগাঁ। এখন অবশ্য মধ্যপ্রদেশের জাগায় ছত্তিসগড় হয়েছে।

ঠাকুমা বললেন, 'গভীর রাত হলে নাকি তান্ত্রিক সাধুরা লোকালয়ে বের হয়। ওরা মানুষের আত্মা চায়। আত্মাদের ধরে রেখে ওদের তন্ত্র সাধনা সিদ্ধ করে।'

কে জানে বাবা, এসব কি কথা ! শুনতে তো ভীষণ ভয় হয়। সত্যি অসত্যি কে জানে !

রাত হলে কিন্তু ভয়ের গল্প শুনতে ভালই লাগত। ঠাকুমাকে আমরা দুই ভাই, বোন গিয়ে বলতাম, 'ভয়ের গল্প বলো, ঠাকুমা, ভূতের গল্প বলো।' ঠাকুমা রাতের খাওয়া সারতেন। পান চিবাতে চিবাতে যেন ঝুলি থেকে বের করতেন গল্প। ভূত, পেত্নী, দৈত্য, দানা, আরও কত সব গল্প !

আমি বললাম, 'নিশির ডাক কি, ঠাকুমা ?' গল্প বলা শুরু করলেন ঠাকুমা।

--'এই গাঁয়েরই গল্প শোন তা হলে তোরা। দু বছর আগের কথা। চারি দিকে রটে গেলো রাতে নাকি নিশি ডেকে যায় ! অনেক রাতে আসে, ঘরের বাইরে থেকে নাকি নাম ধরে ডাকে। এক বার, দু বার, তিন বার। এই তিন বারের মধ্যে যদি সাড়া দিয়েছ, অমনি তোমার আত্মাকে ওরা ওদের পাত্রে ভরে নিয়ে চলে যাবে !'

শ্রোতা আমরা দুই ভাই, আর এক বোন। ভয়ে আরও কাছাকাছি জড়সড় হয়ে বসলাম--ঠাকুর মার গা লেগে প্রায়।

আমি প্রশ্ন করি, 'আত্মা যদি নিয়ে যায় তা হলে তো মানুষ বাঁচে না !'

ঠাকুমা বললেন, 'হ্যাঁ, দেহ থেকে আত্মা বের করে নিলে আর থাকে কি?'

-- 'তার মানে মরে যায় ? আর ভূত হয়ে যায় ?' আমার ভাই ঠাকুমাকে ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করে ওঠে।

ঠাকুমা বলেন, 'ঠিক ধরেছিস, আত্মা নিয়ে গেলে লোক মরে যায়।'

আমি বলি, 'আত্মা মানে তো ভূত, না ঠাকুমা ?'

--'হ্যাঁ রে--আত্মা বলিস আর প্রেতাত্মা বলিস, সব গিয়ে হল ভূত-- সোজা কথায় তাকে ভূতই বলে, ঠাকুমা বলেন।  

আমি বলি, 'ঠিক আছে, এবার বলো তোমার গল্প।'

ঠাকুমা আবার শুরু করলেন, 'একবার কি হল, তোদের অজিত কাকুদের বাড়ি গভীর রাতে ঘরের বাইরে থেকে কেউ ডেকে উঠলো-- খুব গম্ভীর আওয়াজে।

--অজিত, বলে ডাক দিলো। তখন নিশির ডাক কথাটা এখানে বড় চাউর হয়ে গিয়েছিল। গভীর রাতে এসে ডাকলে কেউ সাড়া দিত না। আর নিশি হলে নাকি তিন ডাকের পর আর ডাক দেয় না।

আবার ঘরের বাইরে থেকে কেউ ডেকে উঠলো--অজিত বাড়ি আছ ? এমনি ডাকে যেন আপনজন কেউ ডাকছে। অজিত দেখল তার ঘরের সবাই গভীর ঘুমে। কাউকে ডাকবে কি ! ভয়ে তার মুখ দিয়ে রা বেরোচ্ছে না। সে জানে তিন ডাকের মধ্যে সাড়া দিতে নেই। সাড়া দিলে কি হবে তাও তার অজানা নেই। দ্বিতীয় ডাকের পর অজিতের শরীরে যেন কাঁপনি এসে গেল। মনে হল মুখ তার আরষ্ট হয়ে গেছে। ঘরের কাউকে ডাকতে চাইলেও ডাকতে পারছে না। অজিত একবার চেষ্টা করল স্ত্রীকে ডাকার, কিন্তু একি ! তার গলা থেকে শুধু গোঁ গোঁ আওয়াজ বের হচ্ছিল !

এবার তৃতীয় ডাক ডাকার পালা। নিশি তিন বার ডাক দেয়। চার বার ডাকলে সে ডাক নিশির হবে না, কোন মানুষেরই হবে।

অনেক সময় হয়ে গেলো। অজিত তৃতীয় ডাকের অপেক্ষায় ছিলো। কিন্তু না, আর তো ডাক আসছে না ! কখন আসবে কে জানে ! এমনি কয়েক ঘন্টা কেটে গেলো। আর নিশি ডাকলো না। অজিত সারা রাত জেগে জেগে ও নিজেই জানে না কখন সে ঘুমিয়ে পড়েছে। যখন চোখ খুলল ঝলমল রোদ ঘরের জানলা দিয়ে উঁকি মারছে। ধড়ফড় করে উঠলো অজিত। নিজেরই মনে হল, বেঁচে আছি তো আমি !

অজিতের স্ত্রী মানে তোদের সরকার কাকি, ঘরের বাইরে উঠোন ঝাড়ু দিচ্ছিল। ভয় পেয়ে অজিতকে  ডেকে বললো, ওগো, শীগগির এসো, দেখবে এসো ! অজিতের মনে রাতের আতঙ্ক থেকে গিয়েছিল, হঠাৎ স্ত্রীর ডাকে সে তিড়িং করে বিছানা থেকে লাফ দিয়ে উঠলো। স্ত্রীর কাছে গিয়ে হাজির হল।

--এই দেখো আমাদের ঘরের দেওয়াল দেখো !--তোদের সরকার কাকি অজিত কাকুকে দেখালেন।

এগুলো কি দেখছে অজিত, স্পষ্ট দেখবে বলে ঘুমের চোখ ঘষে তাকালো সে। মনে হল, তাদের দেয়ালে কেউ যেন সিঁদুর লেপে রেখেছে। তার এক পাশে ত্রিশুল ও ওঁ, শব্দ এঁকে রাখা ! পাশাপাশি দুটো ঘুঁটে দেবার মত গোবরের চাপলা ! নীচে মাটিতে ফুল বিছানো',  

ঠাকুমা থামলেন অল্প সময়।

আমি বললাম, 'কে পুজো করে গেছে ঠাকুমা ?'

--'ওই তান্ত্রিক সাধুরাই হবে ! মন্ত্রতন্ত্র পড়ে পুজো করে তবে ঘরের লোককে ডেকে নেয়', মনে হয়, ঠাকুমা তাঁর নিজের আন্দাজের কথা বলে গেলেন।

-- 'অজিত কাকু খুব বাঁচা বেঁচে গেলো', বোন মৌরিমা বলে উঠলো।

-- 'হ্যাঁ রে ! আগে থেকে জানত তাই। না হলে তুই আমি তো, কে ?--আমরা হলে তো সাড়া দিয়েই দিতাম', ঠাকুমা বোনকে বললেন।

--'শুধু কে?, বললেই ধরে নিতে পারবে?' কৌতুহলী প্রশ্ন আমার ভাইয়ের।

ঠাকুমা উত্তর দিলেন, 'হ্যাঁ রে, শুধু টু, শব্দ করলেই হল। শুনেছি ওদের হাতে মাটির হাঁড়ি রাখা থাকে। ঘরের মধ্যে থেকে টু, শব্দটি বাইরে বেরিয়ে এলে সঙ্গে সঙ্গে হাঁড়িতে ভরে হাঁড়ির মুখ চাপা দিয়ে দেয় !'

আমরা বাচ্চারা সবাই ভীত হয়ে পড়লাম। ও বাবা ! কি ভয়ঙ্কর ব্যাপার ! আমি বললাম, 'তারপর অজিত কাকুর কিছু হয় নি তো?'

ঠাকুমা বললেন, 'না,বেঁচে গেছে।'

--'আচ্ছা ঠাকুমা, নিশিতে ডেকে নিয়ে চলে গেছে এমন ঘটনা শুনেছ তুমি ?' আমি বললাম।

-- 'কত শুনলাম', আর একটা পান মুখে নিয়ে ঠাকুমা বলে উঠলেন।

--'বলো না একটা--', তাড়াতাড়ি আমি বলে উঠলাম।

আবার ঠাকুমা শুরু করলেন নিশির ডাকের গল্প।

'এই কোন্ডাগাঁর ঘটনা শুনাচ্ছি', ঠাকুমা আবার আরম্ভ করলেন,

'কলোনীর শেষ দিকে থাকত এক আদিবাসী পরিবার। লোকটার নাম ছিলো ভীমা, ওর বৌর নাম মুক্কী। ওদের একটা মাত্র ছেলে ছিল, নাম ব্রজু।'

-- 'কত দিন আগের কথা ঠাকুমা ?' আবার আমার প্রশ্ন।

--'এই পনের, ষোল বছর হবে। তোদের জন্মের আগের ঘটনা রে, তপন !' ঠাকুমা বলে চললেন, 'ছেলে ব্রজু নাকি অনেক দিন থেকে অসুস্থ। চলতে ফিরতে পারে না। সারাদিন প্রায় বিছানায় শুয়ে কাটাত। অল্প সময় খাটে হেলান দিয়ে বিছানাতে বসে থাকতে পারত। ব্রজুর  নাকি নিশিডাকের  স্বপ্ন আসত খুব। রাতে তাকে নিশিতে ডাকছে, কোন সাধু এসে তার হাত ধরে নিয়ে যাচ্ছে। ও নাকি সাধুর হাত ধরে অনেক, অনেক  দূরে কোথাও চলে যাচ্ছে। পাহাড়, পর্বত, নদী, ঝর্ণা পেড়িয়ে ওই আকাশের সূর্য যেখানে ডুবে যায় সে যেন সেখানে পৌঁছাবে বলে ও ছুটে চলেছে !

ব্রজুকে অনেক ডাক্তার, বদ্যি, হাকিম, ফকির দেখিয়েছে তার বাবা ভীমা, কিছুতেই কিছু হয় নি। তার রোগ আর সারে নি।'

--'তারপর ?' ভাই আমার ধৈর্য হারিয়ে বলে উঠলো, 'নিশি কখন ডাকবে ঠাকুমা !'

--'বলতে দে আমায়, একটু পরেই নিশি ডাকবে রে !', ঠাকুমা বলে চললেন, 'এখন আমাদের কলোনী কত পরিষ্কার। ওই সময় কলোনীর আশপাশ ছিল জঙ্গলে ভরা। ঘর বাড়ির মাঝখানে মাঝখনে দাঁড়িয়ে ছিলো সাল, তেন্দু, আমলকী, হরিতকীর গাছ। রাত হলেই চারদিক নিঝুম হয়ে যেত। রাতে এক ঘর থেকে অন্য ঘরে যেতে গেলে গা ছম ছম করত। স্ট্রীট লাইট ফাইট কিছুই ছিল না। ঘরের বলতে হ্যারিকেন লন্ঠন, ল্যাম্প বাতিই ছিল রাতের আলো। সে সব কথা এখন ভাবতে পারিস তোরা !'

বোন ঝিমাচ্ছিল এক কোনায় বসে, গল্প ওর কান পর্যন্ত পৌঁচাচ্ছিল না। ঠাকুমা বলে উঠলেন, 'এই ছেমরী, বিছানায় গিয়ে ঘুমা গে যা',

ঠাকুমার কথায় বোন নড়েচড়ে বসলো, নিশির কথা মনে পড়ে যাওয়ায় ওর ঘুম ভেঙে গেলো। ও বললো, 'না, তুমি গল্প তাড়াতাড়ি শেষ করো তো !'

--'হ্যাঁ, হ্যাঁ, শোন, বলে শুরু করলেন ঠাকুমা, 'ওই সময় ভীমা, মুক্কী ওরা যেখানে থাকত সে খান থেকেই শুরু হয়ে ছিল জঙ্গল। ব্রজু তখন পনের বছরের বাচ্চা। অসুস্থ, হাঁটতে চলতে পারে না। ওর বাবা মার খুব কষ্ট।

সেদিন নাকি অমাবস্যা, তার ওপর শনিবার ছিল। তার মানে ভূত, প্রেত, নিশি, ওদের ঘোরা ফেরার দিন। অবাধ তখন ওদের চলা ফেরা।

রাত বাড়তে লাগলো। ভীমা আর মুক্কী দিন ভর খাটা খাটনি করে। রাতে তাই তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ে। আর শুলো মানে ঘুম আসতে আর দেরী হল না।

ব্রজু  রাতে ঘুমায়। তবে মাঝে মাঝে তার ঘুম ভেঙে যায়। সারা দিন ও বলতে গেলে শুয়েই কাটায়। দিনেও মাঝে মাঝে ঘুমিয়ে পড়ে। তাই রাতের ঘুম কিছুটা হালকা ওর।

ঘুম না এলে ও বিছানার পাশের জানালা খুলে দেয়। চারিদিকে অন্ধকার ছাড়া প্রায় কিছুই দেখা যায় না। সে দিনও তাই হল। ঘুম আসছিল না। বন্ধ জানালা খুলে দিলো। ঘুঁটঘুঁটে  অন্ধকার চারিদিক ! এমন কি বাইরের জঙ্গলও কালো পর্দায় ঢাকা মনে হল। মাঝে মাঝে জোনাকী জ্ব্লে উঠছিল। ঝিঁঝি পোকারা বিশ্রাম নিয়ে মাঝে মাঝে ডেকে উঠছিল।

রাত গভীর হল। ব্রজু দেখল, আকাশের এক কোন দেখা যাচ্ছে। কিছু তারারা ম্লান আলো দিচ্ছে। জানালার এক কোণ দিয়ে আসা সে আলোর টিম টিম আলোয় ঘরের ভিতর আরও ভয়ের রহস্য জমা হতে লাগছে। ও মনে মনে হয়ত ভাবছিল, ওই তারাদের দেশে যদি যেতে পারতাম, তবে কি মজাই না হতো ! ভাবতে ভাবতে কখন যেন ঘুমে   ব্রজুর  চোখ লেগে এসে ছিল। তন্দ্রা ঘুমে ওর চোখ জড়িয়ে যাচ্ছিল। ঠিক এমনি সময় বাইরে থেকে গুরু গম্ভীর একটা আওয়াজ এলো --ব্রজু !

আচমকা ব্র্রজুর তন্দ্রা ছুটে গেল। ওর মনে হল কোনো স্বপ্ন দেখছে না তো ও !

--ব্রজুর ঘুম আছিস !--এবার ব্রজুরর কানে স্পট কথাগুলি এলো। এটা দ্বিতীয় ডাক ছিলো। ও ভাবলো জানালা খোলা আছে। নিশি আবার জানলা দিয়ে উঁকি মারবে না তো ! ও ধীরে ধীরে শরীর টেনে খাটের কোণে এলো। হাত বাড়ালো জানলা বন্ধ করার জন্যে। কিন্তু এ কি ! ও স্পষ্ট দেখতে পেলো, এক সাধু, তার শরীর যেন অন্ধকারে জ্বলছিলো ! কপালে সিঁদুর মাখা, হাতে তার ত্রিশুল। ভয়ঙ্কর দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে ব্রজুরর দিকেই !

ব্রজু কোন মত জানলার কপাটে ধাক্কা দিল। অপেক্ষা করতে থাকলো তৃতীয় ডাকের। মা, বাবার দিকে তাকালো ও। ওরা অচেতন, গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে ছিল। বাবাকে ধাক্কা দিলো ও, বাবা, মা, বলে অনেক বার ডাকলো। ওরা কেউ সাড়া দিলো না।

দ্বিতীয় ডাক হয়ে গেছে সে প্রায় এক ঘন্টা পার হয়ে গেছে। আর কোন ডাক নেই। ব্রজু কেমন মোহাচ্ছনের মত পড়ে আছে। ও ঘুমিয়ে না জেগে আছে ও নিজেই যেন তা বুঝতে পারছে না।

এবার ও স্পষ্ট শুনতে পেল। ঘরের বাইরের রাস্তা থেকে কেউ গম্ভীর  আওয়াজে ডেকে উঠলো-- ব্রজু ! আমি তোকে নিতে এসেছি !

এবারের ডাক বেশ সুন্দর, বেশ মোহময় লাগছিল ব্রজুর কাছে। ও যেন ঘুমের ঘোরে বলে উঠলো, কে গো তুমি !'

এ পর্যন্ত বলে ঠাকুমা থেমে গেলেন।

আমি চুপ করে থাকতে পারলাম না, 'বললাম, তারপর ?'

ঠাকুমা বলে চললেন, তারপর আর কি ! খুব ভোরে উঠে ভীমা আর মুক্কী দেখল, ওদের ঘরের দরজা খোলা। বিছানায় ব্রজু নাই ! ওরা তাড়াতাড়ি ঘরের বাইরে বের হল। দেখল ব্রজু মাটিতে লুটিয়ে পড়ে আছে। ওর আত্মাকে নিশি অনেক আগেই ডেকে নিয়ে চলে গেছে !

--'ও মরে গেলো ?' ভাইয়ের অস্থির প্রশ্ন ছিল।

ঠাকুমা বললেন, 'হ্যাঁ, আত্মা নিয়ে গেলো, ব্রজু মরে গেলো।'

গল্প শোনার পর আমাদের সেকি ভয় ! সন্ধ্যের পর থেকেই গা ছম ছম করতে থাকলো। সন্ধ্যে রাতে  বাইরে, রাস্তায় কেউ কথা বলে উঠলে মনে হত নিশি এখনি ডেকে উঠবে না তো !

সে দিন মাত্র রাত দশটা বাজে। আমরা খেয়ে শুতে যাবো।

আমি আর ভাই এক ঘরের খাটে শুয়ে ছিলাম। বাইরে থেকে আওয়াজ এলো, 'তপন বাড়ি আছিস ?'

ভয়ে আমি চমকে উঠলাম ! এক লাফে খাটে চড়ে বসলাম। ভাইয়ের দিকে তাকালাম। মনে হল, ও ঘুমিয়ে পড়েছে। কিন্তু তা কি করে হয় ! এই মাত্র তো ও শুলো!

তার মানে সব লক্ষণ মিলে যাচ্ছে ! আবার ডাক এলো বাইরে থেকে, 'তপন ঘুমিয়ে পড়লি ?'

ওরে বাবা ! এ নিশি ছাড়া আর কিছু হতেই পারে না। একদম চেনা গলা। অনেকটা পাশের কুয়াটারের মলয়দার গলার মত মনে হল !

কিন্তু না, ঠাকুমা বলেছেন, নিশি এমনি চেনা গলা মিলিয়ে নাকি ডাকে।

এবার দরজায় ধাক্কা পড়ল--'তপন, তপন !'

ভয়ে আমি চীত্কার দিয়ে উঠলাম। পাশের ঘর থেকে মা, বাবা ছুটতে ছুটতে এলেন, কি হল, কি হল ?? বলতে বলতে। আমার মুখ দিয়ে তখন কথা সরছিল না। ভাই তখন জেগে ভয় পেয়ে 'গুঁ গুঁ', করে উঠলো।

এমনি সময় বাইরের দরজায় আবার ধাক্কা পড়ল। আমার মুখ থেকে ভয়ের মাত্র একটা সংকেত বের হল--আঙ্গুল দিয়ে বাইরের দরজার শব্দের কথা ইশারা করলাম। বাবা সটান বেরিয়ে গেলেন বাইরে। দরজা খুললেন।

--'মেসোমশাই ! তপনকে অনেকক্ষণ ধরে ডাকছি ! তপন ঘরে আছে ?' মলয় দার কথা শুনতে পেলাম আমি।

--'ও ভয়ে মূর্ছা গেছে, ঘরের ভিতর গিয়ে দেখো', বাবার কথা ভেসে আসলো আমার কানে।

মলয়দা, বাবা এক সঙ্গে ঘরে ঢুকলেন। আমি এবার ভয় মুক্ত হয়ে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে লাগলাম। ততক্ষণে দেখলাম ঠাকুমাও আমাদের ঘরে এসে হাজির।

মলয় দা আমাকে বললো, 'তোর এত ভয় ?'

ঠাকুমা বলে উঠলেন, 'হবে না, রাতে আমার কাছ থেকে নিশির ডাকের গল্প শুনছে যে !'

বাবা ঠাকুমাকে বলে উঠলেন, 'তুমি ওদের আর এই আজগুবি ভয়ের গল্প শুনিও না,মা !

--'না বললেই শোনে ওরা !' ঠাকুমা আমার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠেন।

জানি না নিশির ডাক সত্যি কি না। অলৌকিক ঘটনার কোনো সূত্র খুঁজে পাওয়া মুস্কিল ! প্রায় সব গল্পই দেখা যাবে, এর ওর মুখে শোনা।  এর মধ্যে বাস্তবতা আদৌ আছে কি না তা কে বলতে পারবে !

___________________________________________________________________________________________

                                                                                                                                                                                

                               

address:Tapaskiran Ray

flat no.406/4th floorCARAVS Building/

station road/civil lineJabalpur (M.P.)

PIN-482001

 

জীবনী : নাম : তাপসকিরণ রায়। পিতার নাম : স্বর্গীয় শৈলেশ চন্দ্র রায়। মাতাঃ শ্রীমতী বেলা রায়। জন্মস্থান : ঢাকা, বাংলা দেশ।

স্বর্গীয় সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রকাশনায় কৃত্তিবাস প্রকাশনী থেকে লেখকের প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ : চৈত্রের খরায় নগ্ন বাঁশির আলাপ। উদার আকাশ প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত লেখকের দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থঃ তবু বগলে তোমার বুনো ঘ্রাণ। শিশু বিতান প্রকাশনী থেকে দুটি শিশু ও কিশোর গল্প গ্রন্থঃ (১) গোপাল ও অন্য গোপালেরা (২) রাতের ভূত ও ভূতুড়ে গল্প, প্রকাশিত হয়েছে। নান্দনিক থেকে প্রকাশিত লেখকের গল্প সঙ্কলন, গুলাবী তার নাম। এ ছাড়া বেশ কিছু সংকলন গ্রন্থে লেখকের কবিতা ও গল্প প্রকাশিত হয়েছে।  

প্রসিদ্ধ লেখক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিমল মিত্রের সঙ্গে লেখকের পত্রালাপ ছিল। ওঁদের সম্পাদিত পত্রিকায় লেখকের লেখা অনেকবার প্রকাশিক হয়েছে। 

প্রসাদ, সারাক্ষণ, পথের আলাপ, লং জার্নি, দৌড়, কালি কলম ও ইজেল, রেওয়া, কর্কট ক্রান্তি, দিগন্ত, বৈঠকী আড্ডা,  নিরুক্ত, কবিতার সাত কাহন, অঙ্কুর, আত্মদ্রোহ, বেদুইন ইত্যাদি বেশ কিছু পত্রপত্রিকায় লেখকের গল্প, কবিতা ছাপা হয়েছে। এ ছাড়া ঐহিক, কালিমাটি, কৌরব, আদরের নৌকা, সৃষ্টি, পরবাস ইত্যাদি আরো কিছু অন লাইন পত্রিকাতে তিনি লেখেন। শিশু-কিশোরদের পথের দাবী, পথের সুজন, কিচিরমিচির, ছেলেবেলা, জয়ঢাক, ম্যাজিক ল্যাম্প, ইচ্ছামতি, কচিকাঁচা, আগডুম বাগডুম ইত্যাদি পত্রিকায় লেখকের উপন্যাস, গল্প ও কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। 

পত্রিকা গ্রূপের দোয়েল পত্রিকা, কিচিরমিচির, পালক, সেতু অন্যপথে, মানভূম সংবাদ, আনন্দ কানন, আজ আগামী ইত্যাদি পত্রিকায় লেখকের শিশুকিশোর উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছেl

লেখকের সম্পাদনায় নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে তার অনলাইন ব্লগ ও ই-পত্রিকা স্বরধ্বনি ও বর্ণালোক। লেখক বর্তমানে চরৈবেতি পত্রিকার সম্পাদক।


 [ছবি: ইন্টারনেট মাধ্যম থেকে সংগৃহীত]


 

মন্তব্যসমূহ

সপ্তাহের পছন্দ

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় ৪৪ ।। জুলাই ২০২৫

ছড়া ।। কেলে গাইটা ।। প্রবোধ কুমার মৃধা

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় ৪৩ ।। জুন ২০২৫

কবিতা ।। এখন ।। সুশান্ত সেন

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় ৪২ ।। মে ২০২৫

ছড়া ।। বাঘের থাবায় কাঁটা ।। প্রবীর বারিক

ছড়া ।। নতুন বই এর গন্ধ ।। দীনেশ সরকার

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় ৪০ ।। মার্চ ২০২৫

থ্রিলার গল্প ।। লাশ কাটার ঘর ।। ইয়াছিন ইবনে ফিরোজ

ছোটদের আঁকিবুঁকি ।।চতুঃচত্বারিংশ সংখ্যা ।। জুলাই, ২০২৫

মাসের পছন্দ

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় ৪৪ ।। জুলাই ২০২৫

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় ৪২ ।। মে ২০২৫

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় ৪৩ ।। জুন ২০২৫

ছড়া ।। কেলে গাইটা ।। প্রবোধ কুমার মৃধা

ছড়া ।। তাপের বহর ।। রঞ্জন কুমার মণ্ডল

গল্প ।। মামা বাড়ি ভারি মজা ।। মিঠুন মুখার্জী

কবিতা ।। এখন ।। সুশান্ত সেন

ছোটদের আঁকিবুঁকি ।। ত্রিত্বারিংশ সংখ্যা ।। জুন, ২০২৫

ছড়া ।। বাঘের থাবায় কাঁটা ।। প্রবীর বারিক

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় ৪০ ।। মার্চ ২০২৫

বছরের পছন্দ

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় ৪০ ।। মার্চ ২০২৫

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 38th issue: January 2025

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সুচিপত্র ।। 37th issue: December 2024

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় ৪১ ।। এপ্রিল ২০২৫

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় ৪২ ।। মে ২০২৫

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। ,39th issue: February 2025

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। পঞ্চত্রিংশ সংখ্যা ।। আগষ্ট ২০২৪

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। ষড়ত্রিংশ সংখ্যা ।। সেপ্টেম্বর ২০২৪

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় ৪৩ ।। জুন ২০২৫

কবিতা ।। আকাশ-সাগর ।। শান্তনু আচার্য

অতি প্রিয়

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। আত্মপ্রকাশ সংখ্যা ।। অক্টোবর ২০২১

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। দ্বিতীয় সংখ্যা ।। নভেম্বর ২০২১

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 4th issue: January 2022,

নিবন্ধ ।। শিশু-কিশোর সাহিত্যবলয়ে শিশুরাই যেন ব্রাত‍্য না থাকে ।। অরবিন্দ পুরকাইত

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 7th issue: April 2022

নিবন্ধ ।। দেশীয় উদ্ভিদ কেন গুরুত্বপূর্ণ ? ।। ডঃ চিত্তরঞ্জন দাস

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় - ১০ ।। জুলাই ২০২২

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় - ১১ ।। আগস্ট ২০২২

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় - ১২ ।। সেপ্টেম্বর ২০২২

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র : 8th issue: May 2022