অখিলের সৌরঝড়
প্রদীপ দে
দূর থেকে থেকে ছুটে আসা সৌরঝড়ের আগমনের কথা ছিল ঠিকই, কিন্তু তা যে এত তাৎক্ষণিকতার সঙ্গে ঝরে পড়বে এটা অভাবনীয় ব্যাপারই বটে।
সেদিনটা ছিল ভাদ্রের কৃষ্ণপক্ষের এক রবিবার। ছোট্ট গ্রাম রুপাই। এই গ্রামের সব্বাই ছিল পরম ধর্মপ্রাণা আর ধর্মভিরু। সকাল সকাল উঠে সূর্য প্রনাম সেরে বহু দেবদেবীর পুজো পাঠ সারতেই তাদের মূল কার্যই খানিক ব্যহত হত। তা হক! ভক্তি দিয়ে সব কাজ উদ্বার করা যায় আর ভক্তের ভগবান আর উল্টে দিলে ভগবানের ভক্ত হলে সকল কর্মই সমাধা হয়, বেগ পেতে হয় না -এ বিশ্বাস তাদের রক্তে, তাদের শিরার রন্ধে রন্ধে ছিল!
বিশ্বাসে মেলায় সব। অসম্ভবও সম্ভব হয়।
কিন্তু ……
ঠিক বারোটা বাজতেই সব বারোটা বেজে গেল। শঙ্খনিনাদ! অলক্ষ্মে কোন অলক্ষ্মীর অলৌকিক হাসি ……
গ্রামের পুরুষেরা বেশিরভাগ কাজে ঘরের বাইরে। মহিলারা গৃহস্থালির কাজে ব্যস্ত। ছোটরা অনেকেই বিদ্যালয়ে অথবা ঘরে বন্দি।
আকাশ কালো মেঘে জড়িয়ে গেল। কোথা দিয়ে এত মেঘ এল? খবর কে দিল? এ প্রশ্ন মুর্খুমি। প্রকৃতির ডাক এলে তার বোধহয় প্রতিরোধ অনর্থক। সূর্য কোথায় যেন হারিয়ে গেল নিমেষে। সবাই বুঝে গেল প্রবল বৃষ্টিপাত আসন্ন।
এরকমতো প্রায়শই হয়। তবু কালো মেঘ দেখলে সবাই সাবধান হয়েও আনন্দ পায় - এক আদুরে বৃষ্টির লোভে।
আনন্দ? কোথায় বৃষ্টি?
হঠাৎ আকাশ থেকে কালো মেঘগুলো অদৃশ্য হয়ে গেল। ছোটরা যেমন লুকোচুরি খেলে ঠিক তেমনই।
অবাক সকলে! সূর্য ফিরে এল, প্রবল তেজে, প্রবল শক্তিতে। আগুনের গোলা যেন! চতুর্মাত্রিক এক জলন্ত অগ্নিবলয়ে রুপান্তরিত হল। এ সূর্যের রঙ একেবারে লাল। চোখে দেখা যাবে না। কিছুই নেই শুধুই আগুন আর আগুন। লেলিহান শিখায় সব জ্বলেপুড়ে খাক্ হয়ে যাবে।
গাছপালা ঘরের চালা আগুনে দাউদাউ করে জ্বলে উঠলে সবাই আতংকিত হয়ে পড়ল। সৌরজগত থেকে প্রবলতর এক ঝড় তেড়ে এল পৃথিবীর বুকে, ছোট গ্রামটাতে আছড়ে পড়লো। কি তার আলো!
জলন্ত অথচ বর্ণময় সে আলো। সাতরঙ যেন ছাড়িয়ে গেল! সে অমোঘ দর্শন আর সম্ভবের সীমানায় সীমাবদ্ধ রইলো না। মানুষ অচেতন হল।
উষ্ণ ঝড়ের দাপটে সব লন্ডভন্ড হয়ে গেল। পূর্ব সীমানা থেকে উদ্ভূত বিদ্যুৎ ঝলকানি ঝাঁটা রূপে ঝাঁপাঝাঁপি শুরু করে ঝলসানোর তান্ডবলীলায়
ব্যস্ত এক শক্তি ব্যপ্ত রইলো আদিগন্তে। এত আগুনের রশ্মি শব্দপ্রকরণ যা প্রানীজগতের আকুতিকেও হার মানিয়ে দিল।
বিজ্ঞানপ্রেমী অখিল আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারলো না - শেষ অস্ত্র তার কণ্ঠে ঘোষিত হল, --
-- আগুন! আগুন! জল! আরো জল!
মা শিবানীদেবী দৌড়ে এল - ছেলের চোখেমুখে জলের ছিটা দিল। ঠেলাঠেলি করে জাগানোর চেষ্টা করলে, -- পারিস বাবা এই ভরদুপুরে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখতে?
যে অখিল ভেবেছিল একদিন বিজ্ঞানের দাপটে সে অখিলের নাথ হবে সেই ভয়ে কুপোকাত! ঘেমেনেয়ে একশা! জামাপ্যান্ট সব ভিজে গেছে !
তবুও তার কাছে এক সান্ত্বনা বাকি ছিল - সে জানালা দিয়ে তাকাতেই দেখতে পেলো আকাশে কালো মেঘেরা এসে ভিড় করেছে, শীতল বাতাস বইছে -এখনই বুঝিবা বৃষ্টি নামবে!
-- বৃষ্টি নামুক ………
______________________________________________
প্রদীপ কুমার দে
বিরাটী আবাসন
এল আই জি -৯
এম বি রোড
নিমতা
কোলকাতা -৭০০০৪৯
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন