Featured Post

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। ত্রয়োত্রিংশ সংখ্যা ।। জুন ২০২৪

ছবি
  প্রচ্ছদ-চিত্রঃ সুনীত নস্কর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা। সম্পাদকীয় কেমন আছো ছোট্ট বন্ধুরা। গরমের ছুটি তো শেষ হয়ে এল। স্কুল খুলে যাচ্ছে। কিন্তু গরমের দাবদাহ কিন্তু এতটুকু কমেনি। এই গরমে  খুবই সাবধানে নিয়ম মেনে চলতে হবে তোমাদের। এখন তো আম, জাম কাঁঠালের সময়। এখন এইসব মৌসুমী ফল খেতে হবে। তাহলে শরীর সুস্থ থাকবে। শরীর সুস্থ থাকলে মন সুস্থ থাকবে। মন সুস্থ থাকলে পড়াশুনো ভালো হবে।           আশাকরি এতদিন বাড়িতে থেকেই মন দিয়ে পড়াশুনো করেছ। সঙ্গে অনলাইন কিশলয়ের পাতায় চোখও রেখেছ। পড়াশুনোর পাশাপাশি গল্প লেখা, ছবি আঁকা ইত্যাদির শখও মনের মধ্যে লালন পালন করতে হবে তোমাদের। পড়াশুনোর চাপে সব ছেড়ে দিলেও চলবে না কিন্তু। স্কুলের পড়া, বাড়ির পড়ার পাশাপাশি গল্প- কবিতা লেখা, প্রবন্ধ লেখা, ছবি আঁকা ইত্যাদি চালিয়ে যাও। তোমাদের প্রতিভার বিকাশ হোক। তোমাদের সৃজনীসত্ত্বার প্রকাশ হোক তোমাদের সৃষ্টির মধ্য দিয়ে। আর সাথে সাথে তোমার সেই সৃষ্টি অনলাইন কিশলয়ে প্রকাশের জন্য পাঠিয়ে দাও। বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা বাকি বন্ধুরাও জানুক তোমার সৃষ্টি সম্পর্কে। আর কী? সবাই সুস্থ থাকো, ভালো থাকো, আনন্দে থাকো।   শুভকামনাসহ-- প্রিয়ব্রত দত্ত ও কার্

গল্প ।। সেই ছেলেটা ।। রমলা মুখার্জী

 




সেই ছেলেটা

রমলা মুখার্জী


এবারে দারুণ শীত পড়েছে; অনেক বছর এমন কঠিন শীত পড়েনি। দেরিতে এলে কি হবে, হাড়ে হাড়ে জানিয়ে দিচ্ছে, 'শীতের বনে কোন সে কঠিন আসবে বলে শিউলিগুলি ভয়ে মলিন।' যাবারও নাম নেই। বসন্ত কাল কে বলবে!
              পরাগ তো বিছানার লেপের মধ্যে শুয়েও কাঁপছে; উঠতেই চাইছে না। তাকে ঘুম থেকে তোলাই তার মা অজন্তার এক ভীষণ কাজ হয়েছে। কিছুতেই উঠবে না – অজন্তাও ছাড়বে না। সকালে স্কুল – ভোর বেলায় উঠে তৈরী হয়ে ট্রেন ধরতে হয় – তা সে শীতই হোক আর গ্রীষ্মই হোক।
                পরাগরা যেখানে থাকে সেখানে কোন ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল নেই, তাই অজন্তা পরাগকে বর্ধমানে সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুলে ভর্তি করে দিয়েছে। একজন মহিলা রোজ পরাগকে নিয়ে যান, নিয়ে আসেন। পরাগের বাবা তো থাকেন না, দিল্লীতে বড় চাকরি করেন – অজন্তাও কাছেই একটি স্কুলে শিক্ষকতা করেন – তাই এই ব্যবস্থা। পরাগের সমবয়সী অন্য সব ছেলেরা স্হানীয় ইংলিশ মিডিয়ায় স্কুলে পড়ে। তাই পরাগকে একা একা স্কুলে যেতে হয়, অনেকটা সময় যেতে আসতেই চলে যায়। বাড়ি ফিরেই আবার তাকে বইয়ের বোঝা নিয়ে বসতে হয়। অন্য ছেলেদের সাথে খেলাধূলা বা মেলামেশার সুযোগ পরাগের বড় একটা হয় না। ছুটির দিনে তো  মা পিছনে লেগে থাকেন পুরনো পড়া ঝালাতে, বিকেলে আঁকার স্যার। দম যেন বন্ধ হয়ে আসে পরাগের। ফুলের পরাগ যেখানে সেখানে উড়ে বেড়াতে পারলেও ছোট্ট পরাগ যেন জেলখানার কয়েদি, খাঁচায় বন্দী পাখি। 
               বাড়িতে নতুন অতিথি এসেছে – বোন রেণু  হয়েছে – খুব মজা – ওকে নিয়ে মা ইদানিং ব্যস্ত থাকেন – পরাগেরও খুব ভাল লাগে – বোন কচি কচি হাত পা ছোঁড়ে – ক্রমে হাঁটতে শেখে – মুখে আধো আধো বুলি বলে – দা- বা- মা- কত কি! বাবা মাসে একবার আসেন – কত কি জিনিস নিয়ে – বোনের দোলনা, প্যারাম্বুলেটর, পরাগের সাইকেল – মায়ের কষ্ট হবে বলে এ.সি. মেশিন বসিয়ে দিয়ে গেলেন। সেদিন ফোন করেছিলেন মাকে, এবারে নাকি এসে সুন্দর একটা গাড়ি কিনবেন। - পরাগ গাড়ি করে স্কুল যাবে আসবে। ধুৎ, তাহলে তো পরাগ আরও একা হয়ে যাবে। তবু তো ট্রেনে কত লোকজন দেখা যায়। একা একা গাড়ি করে যেতে মোটেই পরাগের ভাল লাগবে না – তা সে যতই ভাল গাড়িই হোক না কেন।
           দেখতে দেখতে পরাগের স্ট্যান্ডার সেভেন হয়ে গেল। হঠাৎ একদিন মণিমাসি খবর দিল তার খুব জ্বর, পরাগকে স্কুলে নিয়ে যেতে পারবে না – এদিকে বোন রেণুরও কদি'ন ধরেই শরীর খারাপ – হাম হয়েছে – ডাক্তার বলেছে খুব যত্নে রাখতে – তাই ক'দিন ধরে অজন্তা স্কুলেই যেতে পারছে না। সিজন চেঞ্জের সময় – সবাইকারই খুব অসুখ-বিসুখ হচ্ছে – দখিনা বাতাস যেমন মনকে দোলা দেয়, তেমন শরীরকেও দুলিয়ে দিয়ে যায়। উত্তর বাতাসও মাঝে মাঝে শাসন করছে।
            পরাগের ইউনিট টেস্ট চলছে, কামাই করা যাবে না – অন্য কাউকেও পাওয়া গেল না। এখনও ভোরে বেশ শীতের রেশ রয়েছে – কেউই অত ভোরে যেতে রাজী হল না। পরাগ মাকে বলে, 'মা তুমি আমায় ট্রেনে তুলে দাও – আমি ঠিক যেতে পারব। আমি তো এখন বেশ বড় হয়ে গেছি।' মা ধমকে বলে, 'হ্যাঁ খুব বড় হয়েছ, যা চঞ্চল তুমি, তোমাকে একা ছাড়া মানে তো সারাদিন চিন্তায় থাকা।' 'তুমি একদম চিন্তা করো না মা, আমি চুপটি করে বসে যাব আবার চুপটি করে বসে বাড়ি ফিরব। যাই না মা – দেখো তুমি'
- 'কিচ্ছু খাবে না বল।'
- 'না মা কিচ্ছু খাব না। দুষ্টুমি করব না' ইত্যাদি ইত্যাদি হাজার খানেক প্রতিশ্রুতি মাকে দিয়ে 
রওনা হল পরাগ। অজন্তা মেয়েকে কিছুক্ষণের জন্য আয়ার কাছে রেখে ছেলেকে ষ্টেশনে তুলে দিয়ে গেলেন। ট্রেনটা ছাড়ার যা অপেক্ষা। আসলে পরাগের কবে থেকে ইচ্ছে একা একা ভ্রমণের। মাসির 'এটা করো না', 'ওটা খেও না', 'ওখানে বসো না', 'ওখানে যেও না', শুনতে শুনতে প্রাণ ওষ্ঠাগত। গুটির ভেতর থেকে প্রজাপতি আজ পাখা মেলেছে – আজ তাকে পায় কে! তার জমানো পয়সা সে এক ফাঁকে পকেটে ভরে ফেলেছে –মা-মাসির নিষিদ্ধ  অখাদ্য কুখাদ্য খাবে বলে – তার বলে কবে থেকে ইচ্ছে ঐসব খাবার। মটরশুঁটি সেদ্ধর চার্টটা যা বানায় না – লাল টম্যাটো কুঁচি, সবুজ ধনেপাতা, সাদা আলু যা দেখতে হয় না – খেতে না জানি কেমন – আজকে খেতেই হবে। কলেজের দিদিগুলো রোজ খায়। পরাগের কপালে নামী কোম্পানীর কেক, ভাল ভাল মিষ্টি, আপেল, আঙুর, ডিমসেদ্ধ, কলা, কাজু – কোন কোনদিন হয়ত বা লুচি, আলু ভাজা – একঘেয়ে – খেয়ে খেয়ে মুখে অরুচি ধরে গেল। "আমাকে আমার মত থাকতে দাও" – মোবাইলটা বেজে উঠল – মা ফোন করেছেন, 'শুনতে পাচ্ছিস' – 'হ্যাঁ বল' – 'শোন, ফেরার সময় কর্ড লাইন না মেন লাইন ভাল করে জিজ্ঞেস করে উঠবি, কর্ডে যেন উঠে পড়িস না, বলতে ভুলে গেছি। আর শোন ক্লাস হবার সময় সুইচ অফ করবি, আর সব সময় মোবাইলটা খোলা রাখবি, বুঝলি? আমি কিন্তু খুব টেনশনে আছি' – কিরে উত্তর দিচ্ছিস না কেন?' 'হ্যাঁ হ্যাঁ তুমি যা যা বললে সব ঠিক করব দেখো তুমি।' তাড়াতাড়ি মোবাইলটা পকেটে রেখে দেয়। তখন থেকে কেবল চা বিস্কুট বিক্রি হচ্ছে – যাও বা পটেটো চিপসটা এল ঠিক তখনই মায়ের ফোন। "ও চিপস কাকু – ও চিপস কাকু" তড়াক করে উঠে পরাগ ছুট্টে গিয়ে একটা চিপসের প্যাকেট কিনে আনল। ওঃ কি সুন্দর খেতে – মাঝে মাঝে মাসির কাছে বায়না করে চিপসটা খায় পরাগ – মা কেবল বলে এগুলো নাকি বাজে তেলে ভাজা – আচ্ছা বাজে তেলে ভাজলে এত সুন্দর খেতে হয় – মা'টা না কিচ্ছু বোঝে না। আর কিছুই উঠছে না – মটর সেদ্ধ আলুর চাট তো বেলাতে বেচে, ফেরার সময় খাবে না হয়। 'ঝালমুড়ি' – 'ঝালমুড়ি' – ঐ তো ঝালমুড়ি – 'ও ঝালমুড়ি কাকু, একটা ঝালমুড়ি দাও – ওঃ কি দারুণ খেতে – ওরে বাবারে কি ঝাল! এইরে মাসি তো লঙ্কা ছাড়া বানাতে বলে, কদাচিৎ ভাগ্যে জোটে, পরাগ তো বলতে ভুলে গেছে। লঙ্কা বেছে বেছে, যাহোক করে সবটা কোনমতে ওয়াটার বটলের জল সহযোগে খেয়ে তো নিল। ও দুটো লজেন্স কিনে খেলেই সেরে যাবে – 'লজেন্স কাকু – চারটে লজেন্স দাও তো।' একবার ওঠে – একবার বসে। পাশেই বসেছিলেন এক সুট-বুট পরিহিত ভদ্রলোক – তিনি তো ভারি বিরক্ত – 'কি খোকা চুপ করে বস – বাড়িতে কি কোন শিক্ষা-টিক্ষা পাও না? ট্রেনে যে শান্ত হয়ে বসতে হয় জানো না'। 'আমাকে আমার মত থাকতে দাও' – আবার মায়ের ফোন – 'কিরে বর্ধমানে ঠিক নেমেছিস?' – না মা এখনও বর্ধমানের মুখে বাঁকার কাছে গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে – ঢোকেনি – এক্ষুনি ঢুকে যাবে। চিন্তা করো না।' 'কেকটা খেয়েছ তো?' – 'অ্যাঁ – হ্যাঁ হ্যাঁ'। 'শান্ত হয়ে বসে বইগুলো পড়ে নিচ্ছ তো?'  'ইয়ে মানে দেখবো দেখবো করছিলাম – কিন্তু এত ট্রেনে গোলমাল' 'কিসের গোলমাল' – 'মানে তেমন কিছু নয়–সেই মিউজিক বাজিয়ে গান গেয়ে ভিক্ষে – এইসব আর কি।' 'ওরে বাবা এত সকালেই ওরা এসে হাজির – বাবা গাড়িটা যে কবে কিনবে – এবার এলে গাড়ি আর ড্রাইভারের ব্যবস্থা করে তবে ছাড়ব – যত ঝামেলা আমার। চুপ করে বসে থাকবে, রাখছি।' ফোনটা রেখে পরাগ ভাবে, 'ভাগ্যিস ঝালমুড়ি খাবার সময় মা ফোন করেনি – তাহলে তো হুস হুস শব্দে সব বুঝে ফেলত। নমো মা সর্বমঙ্গলা' – পরাগ তার মাসির মত আজ মা সর্বমঙ্গলার ভক্ত হয়ে পড়ল। 
          বর্ধমান এসে গেল। ষ্টেশনে স্কুলের বাসে চেপে পরাগ স্কুলে যায়। আজ পরীক্ষায় মন দিতে পারল না। দীপা আন্টির কাছে বকুনিও খেল। হেভি খাবারের পর ঝাল জোয়ানের মত দীপা আন্টির বকুনি খেয়ে ঝালমুড়ি সব তাড়াতাড়ি হজম হয়ে গেল। ভাবতে বসল ফেরার পথে আবার কি কি অখাদ্য খাবে। যেটুকু সময় থাকবে প্ল্যাটফর্মে প্ল্যাটফর্মে নেচে বেড়াবে – সে আজ মুক্ত বিহঙ্গ। এসব ভাবতে ভাবতেই ছুটির ঘন্টা বেজে গেল।  ষ্টেশনে এসে দেখে ভীষণ গণ্ডগোল, ট্রেন অবরোধ। বাঃ কি মজা – আজ সব প্ল্যাটফর্মগুলো ঘোরা যাবে। যেমনি ভাবা তেমনি কাজ। লাফাতে লাফাতে পৌঁছে গেল সাত নং এ, দেখতে পেল সেই ছেলেটাকে, ওরই বয়সী হবে। ছেঁড়া প্যান্ট – গায়ের জামাটাও শতছিন্ন – একটা সোয়েটারও নেই – প্রায়ই এসে খাবার চায় – আর ঠিক খাবার খাওয়ার সময় এসে জোটে। কোথায় থাকে কে জানে, মাসি তো দেখলেই দূর দূর করে তাড়িয়ে দেয়। পরাগের সময় কাটছিল না – তাই ছেলেটাকে জিজ্ঞেস করল, 'তোর বাড়ি কোথায়?' মাথা নাড়ল ছেলেটা। 'মানে তোর বাড়ি নেই?' আবার মাথা নাড়ল। পরাগ বলে, 'তো থাকিস কোথায়?'
- 'এই ইস্টিশনে।'
- 'ষ্টেশনে, তা তোর শীত করে না?'
- 'করে, খুব শীত করে, মা বস্তা চাপা দেয়, কিন্তু বস্তাটা খুব ছেঁড়া আর ছোট।' 
প্রশ্রয় পেয়ে ছেলেটা পরাগের আরও কাছে চলে আসে। পরাগের মনে পড়ল পুজোয় বেড়াতে যাবার সময় অনেক রাত্রে এক্সপ্রেস ট্রেন ধরতে হয়েছিল তাদের। তখন দেখেছিল স্টেশনেই কত ভিখারি রাত্রে শুয়ে থাকে – ওখানেই ওদের রাত কাটে – দিন কাটে – ওরা নিরাশ্রয়।
         পরাগ দুটো সিঙারা কিনল – একটা ওকে দিল, একটা নিজে খেল। একটা আস্ত সিঙারা পেয়ে ছেলেটা প্রথমে অবাক হয়ে গেল – তারপরেই দে ছুট।  যা বাবা, কোথায় গেল ছেলেটা? যাক গে – এ প্ল্যাটফর্ম ও প্ল্যাটফর্ম ঘুরে ঘুরে, লাফালাফি করে এটা সেটা খেয়ে ক্লান্ত হয়ে ধপাং করে চার নং প্ল্যাটফর্মে একটা ফাঁকা বেঞ্চ দেখে বসে পড়ল পরাগ। মনে পড়ে গেল টিফিন বাক্সের টিফিন তো যেমন তেমনি আছে – মা আবার বাড়িতেই আছে – জানতে পারলে মেরে শেষ করে দেবে – কিন্তু পেটে যে একবিন্দু জায়গা নেই – মাসিটা থাকলেও হত – যা খেতে পারে না ওর নাতির জন্যে নিয়ে যায়, অবশ্য মাকে বলতে বারণ করে। আর মাটাও তেমনি – কত যে বেশি বেশি খাবার দেয় না – অত কি খাওয়া যায় নাকি! আবার দেখে সেই ছেলেটা – 'কিরে কোথায় গিয়েছিলি?'
- 'ঐ পাঁচ নম্বরে বোন আছে, আধখানা সিঙারা দিয়ে এলাম।'
- 'তোরা ক ভাই বোন?'
- 'তিনটে বোন, দুটো ভাই।'
- 'তোর বাবা কি করে?'
- 'ভিক্ষে।'
- 'মা?'
- 'ভিক্ষে। সবাই আমরা ভিক্ষে করি।'
- 'পড়াশোনা তো করতে পারিস?'
- 'আমরা ভিখিরিরা কেউ কাজও করি না, পড়িও না – তবে আমার না খুব পড়তে ইচ্ছে করে।'
- 'পড়বি?'
- 'কি করে পড়ব? ভাল করে খেতেই পাই না তো পড়া – পেটই ভরে না।'
মাইক্রোফোনে খবর হল গাড়ি চালু হয়েছে – ওদের মেন লাইন লোকাল চার নং থেকেই ছাড়বে। 
পরাগ তাড়াতাড়ি ওর সব টিফিন কৌটো থেকে বার করে কৌটোয় মোড়া ঠোঙাটায় ভরে ছেলেটার হাতে দিল। ছেলেটা বলল, 'সব দিলে কেন? তুমি কি খাবে? তোমার মা বকবে।'
'ও মাসির কথা বলছ? মাসির নাতি তো প্রায়ই খায় – আজ না হয় তুমিই খেলে।'
         ট্রেন এসে গেল। পরাগ ঠেলেঠুলে ট্রেনে উঠে ঠিক জানলার ধারে একটা সিট জোগাড় করে বসে পড়ল। দেখল ছেলেটা তখনও দাঁড়িয়ে আছে। হাত নেড়ে পরাগ কাছে ডাকল। 
          সসংকোচে ছেলেটা কাছে এসে বলল, 'আজ অনেক দিন পর ভাইবোনেরা মিলে ভালমন্দ খাব।'
          ছেলেটার মুখে যে পরিতৃপ্তির হাসি পরাগ দেখল – তা কি পরাগ বড় হলে ভুলে যাবে? ফেরার সারাটা পথ ও শুধু ছেলেটার কথাই ভেবে চলল। একবার এক এন.জি.ও সংস্থায় এক অনুষ্ঠানে ও একটা কবিতা আবৃত্তি করেছিল – ওঁরা পথশিশুদের বস্ত্র বিতরণ করার আয়োজন করেছিলেন – কেবলই ঘুরে ফিরে কবিতার লাইনগুলো মনে পড়তে লাগল – তবে সবটা কিছুতেই মনে পড়ছে না –

'ঐ যে দেখি ষ্টেশনের চত্বরে
এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে ঘোরে
গন্ধ গায়ের ন্যাংটো ছেলের দল –
ওরা কি হয় 'অকারণে চঞ্চল?'
ক্ষুধা-কাতর কচি মুখ ম্লান, ক্লান্ত
পথ-শিশু সব পথ-হারা উদভ্রান্ত।
খাবার খেয়ে খাচ্ছে কেবল তাড়া-
ঘেও কুকুরের মতই লেজটি নাড়া।
ওরা তো মানুষ, নাকি সারমেয় ছানা,
সারাদিন ঘুরে জোটে কি একটু দানা?
ওদের পৃথিবী এঁটো পাতা কাড়াকাড়ি
আমাদের ঘরে কানাড়া দরবারি,
সবাই মিলে ভরাই ওদের প্রাণ
ফিরিয়ে দিয়ে হাসি আলোর গান।'
_____________________________________________

ডঃ রমলা মুখার্জী
বৈঁচী, বিবেকানন্দপল্লী, 
জেলা হুগলী, পিন 712134

মন্তব্যসমূহ

সপ্তাহের পছন্দ

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। ত্রয়োত্রিংশ সংখ্যা ।। জুন ২০২৪

ছোটোদের আঁকা ।। মনামি মন্ডল, রায়সী চক্রবর্তী ও নিশান্তিকা নস্কর।

ছড়া ।। একটা খুশি ।। তীর্থঙ্কর সুমিত

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 32nd issue: May 2024

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় - ১২ ।। সেপ্টেম্বর ২০২২

ধারাবাহিক উপন্যাস ।। তিতলির বিশ্বভ্রমণ ।। ডাঃ অরুণ চট্টোপাধ্যায়

ছড়া ।। ও জোনাকি ।। কান্তিলাল দাস

দুটি ছড়া ।। গোবিন্দ মোদক

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। আত্মপ্রকাশ সংখ্যা ।। অক্টোবর ২০২১

মাসের পছন্দ

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। ত্রয়োত্রিংশ সংখ্যা ।। জুন ২০২৪

কবিতা || মর্যাদা || অবশেষ দাস

ছোটোদের আঁকা ।। মনামি মন্ডল, রায়সী চক্রবর্তী ও নিশান্তিকা নস্কর।

নিবন্ধ ।। কোনারক মন্দিরের ভয়াবহতা ।। সুজয় সাহা

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 32nd issue: May 2024

ছোটর কলম ।। বইপড়া ।। উন্নীত কর্মকার

গল্প ।। রবীন্দ্রজয়ন্তী ।। কুহেলী ব্যানার্জী

ছড়া ।। একটা খুশি ।। তীর্থঙ্কর সুমিত

অণুগল্প ।। পুরস্কার ।। চন্দন দাশগুপ্ত

বছরের পছন্দ

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। ত্রয়োত্রিংশ সংখ্যা ।। জুন ২০২৪

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচীপত্র ।। 29th Issue: February

প্রচ্ছদ ও সূচীপত্র ।। 24th issue: September 2023

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 31st issue: April 2024

প্রচ্ছদ ও সূচীপত্র ।। 25th issue: October 2023

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 32nd issue: May 2024

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 30th issue : March 2024

প্রচ্ছদ ও সূচীপত্র ।। 23rd issue: August 2023

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচীপত্র ।। 26th issue: November 2023

অতি প্রিয়

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। আত্মপ্রকাশ সংখ্যা ।। অক্টোবর ২০২১

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। দ্বিতীয় সংখ্যা ।। নভেম্বর ২০২১

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 4th issue: January 2022,

নিবন্ধ ।। শিশু-কিশোর সাহিত্যবলয়ে শিশুরাই যেন ব্রাত‍্য না থাকে ।। অরবিন্দ পুরকাইত

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 7th issue: April 2022

নিবন্ধ ।। দেশীয় উদ্ভিদ কেন গুরুত্বপূর্ণ ? ।। ডঃ চিত্তরঞ্জন দাস

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় - ১০ ।। জুলাই ২০২২

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় - ১১ ।। আগস্ট ২০২২

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র : 8th issue: May 2022

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় - ১২ ।। সেপ্টেম্বর ২০২২