Featured Post
কথায় কথায় কয়েকটি গল্প ।। রণেশ রায়
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
কথায় কথায় কয়েকটি গল্প ।। রণেশ রায়
আনন্দমেলা
বাঁদর ভোঁদড় দুই বন্ধু। ঘরে বসে গল্প করে। বাঁদরের লেজটা এইয়া মোটা আর এততো বড় ! কিন্তু ভোঁদড়ের লেজ কোথায় ? এমন সময় কট কট কট। দরজায় টোকা। কে এলো? ভোঁদড় গিয়ে দরজা খোলে। এসে গেছে বাউল বন্ধু। এসো এসো। পাতা আছে পিঁড়ে খেতে দেব চিড়ে ।
তিনজনে বসে। এখন বাউল গান শোনাবে।
----- তোর একতারাটা কই? গান শোনাবি না? বাঁদর প্রশ্ন করে
----- একতারা গেছে মেঘ পুরীতে
---- কেন?
------ ওখানে ওর নেমন্তন্ন । ও একতারা বাজাবে।
------ তবে আমরা গান শুনবো না ? ভোঁদড় বলে।
----- হবে হবে। সবুর কর। সবুরে মেওয়া ফলে। তা, তোর লেজ কই ? বাউল জানতে চায়।
----- আর বলিস না! জঙ্গলে দস্যুর আক্রমন। লেজ আগুন গায়ে লাগিয়ে মশাল জ্বালিয়ে গেছে জঙ্গল পুরীতে। দস্যুদের পুড়িয়ে জঙ্গলবন্ধুকে উদ্ধার করবে। দস্যুরা লেজের আগুনে পুড়লো। লেজের আগুন এবার কি করে নেবে।
বলতে বলতে মেঘ বন্ধু বৃষ্টি পাঠালো। বৃষ্টি নেমে এলো নাচতে নাচতে। ঝম ঝম ঝমা ঝম। লেজ লাফাতে লাফাতে ঘরে ফিরে এলো দস্যু মেরে। সে আবার ভোঁদড়ের লেজে এসে বসলো। আনন্দে বাউল বৃষ্টির তালে তালে গান ধরলো। সে এক আনন্দ মেলা।
মেঘবন্ধু
গভীর জঙ্গলে ময়ূর আর শেয়াল দুই বন্ধু। রোজ বিকেলে গাছের নিচে এসে গল্প করে। সে কত গল্প ! বাঘ বাঘিনীর গল্প সিংহ সিংহীর গল্প। সাপ নেউলের গল্প। এমনি করে তাদের চলে। বাঘিনী দূর থেকে দেখে। কখনও কখনও মেঘ ডাকে আকাশে। ময়ূরকে ডাকে। ময়ূর কত খুশি। সে পেখম মেলে নাচতে থাকে। মেঘ বৃষ্টি হয়ে নামে। মযূরের হাত ধরে নাচে। শেয়াল তার তালে তালে ডুগডুগি বাজায়। জঙ্গলে নাচ গানের মেলা। বাঁদর ভোঁদড় খরগোশ। আর কতরকম পাখি। যে যেখানে থাকে দৌড়ে আসে।
বাঘিনীর সব দেখে রাগ। সে নিজে থেকে কেন যাবে ! ময়ূরের যত ভাব শেয়ালের সঙ্গে ! ওর হিংসে হয়। আর সে তো জঙ্গলের রানী। তার কত শক্তি, কত সম্মান। সবাই তাকে ভয় করে। তাকে নেমন্তন্ন না করলে সে নিজে থেকে যাবে কেন? সে রাগে ফোঁসে। আসলে ময়ূরকে ওর খুব পছন্দ। ও ময়ূরকে বিয়ে করতে চায়।
একদিন শেয়ালের খুব জ্বর। ময়ূর চলেছে বদ্যির বাড়ি। জঙ্গলের ওই প্রান্তে। রাস্তায় বাঘিনী তার রাস্তা আগলে ধরে। ময়ূর কি করে ! বাঘিনী বলে:
----- তুই শেয়ালকে ছেড়ে আমার কাছে আয়। আমরা বিয়ে করে সুখে সংসার করব। আর বাঘকে পাঠিয়ে দেব শেয়ালের ঘরে।
বাঘিনীর আর দোষ কোথায়? ময়ূর এতো সুন্দর ! পেখম মেলে নাচে। ময়ূরী নাচতে পারে না। নাচে ময়ূর। জঙ্গলের রাজ্যে সে কত সুন্দর ! তাকেতো সবার পছন্দ হবেই। ময়ূর ভয় পায় ! এখন কি করে বাঁচবে? সে বুদ্ধি করে পেখম মেলে নাচতে শুরু করে। বাঘিনীতো পাগল। তার কথা বন্ধ হয়ে যায় । শান্ত হয়ে বসে নাচ দেখে।
আকাশ থেকে মেঘ দেখে বোঝে ময়ূর নিশ্চয়ই বিপদে পড়েছে। নইলে অসময়ে ময়ূর বন্ধু নাচে কেন ? সে তো ডাকে নি। সে না ডাকলে ময়ূর নাচে না তো ! মেঘ বন্ধু বৃষ্টিকে সঙ্গে নিয়ে নেমে আসে। ঝম ঝম শব্দে বৃষ্টি এতো জোরে পড়তে থাকে যে বাঘিনীর চোখ ঝাপসা হয়ে ওঠে। সে অন্ধকার দেখে। এই ফাঁকে ময়ূর মেঘবন্ধুর ডানায় উঠে বসে। মেঘবন্ধু তাকে উড়িয়ে নিয়ে যায়। বৃষ্টি বিদায় নেয়। বাঘিনীর দৃষ্টি ফিরে আসে। কই ! ময়ূর কই ! সে রাগে ফুঁসতে থাকে। বৃথাই তার হালুম হুলুম।
কে পছন্দের
মামাবাবুর চার ছেলে। এক একটা একেকরকম। বড় ছেলে একটা গূন্ডা। গুন্ডামি করে অনেক রোজগার তার। সব সময় হাতে ডান্ডা। মেজটা বোকা। মুখে তেমন কথা ফোঁটে না। সে খুব অভাবী। চালাক চতুর নয় বলে তেমন কিছু করে উঠতে পারে নি। সেজ ছেলে সেয়ানে বড়। সবসময় ধান্দা। কাকে ঠকিয়ে খাওয়া যায়। মানুষ ঠকিয়ে আজ বড়োলোক। পেল্লাই বাড়ি। আর ছোটটা ! বলতে নেই। বাবা মায়ের আহ্লাদে মাথায় উঠেছে। ভীষণ হিংসুটে। কথায় কথায় ঝগড়া করে। একাই সবটা খাবে।
সবাই স্কুলে একসঙ্গে পড়ে। ওদের সবাই চেনে। মেজটার সঙ্গে সবার ভাব। অন্যদের সকলে এড়িয়ে চলে। মাস্টারমশাই একদিন ক্লাসে রূপমকে প্রশ্ন করে :
------ তোরা ওই বোকাটাকে সবাই ভালোবাসিস কেন ? টাকা পয়সা কিছুই নেই। ভবিষ্যৎ অন্ধকার। অন্য তিনজনকে দেখতে পারিস না !
রূপম বলে:
অন্যগুলোতো অমানুষ। ও এখনো মানুষ হয়েও উঠতে পারে। শিখিয়ে পড়িয়ে মানুষ করে তোলা যাবে। তাই ওকেই বন্ধু বলে ভাবি।
খুকুর বুদ্ধি
খোকা-খুকু দুই ভাই বোন। খোকা খুব দুষ্টু। খুকু শান্ত। খোকার সারাদিন খেলা আর খেলা। তবে দুজনায় খুব ভাব। সময় পেলেই গল্প করে লুডো খেলে। দাদু খুকুকে খুব ভালোবাসে। আর খোকা দুষ্টুমী করে বলে ওকে বকে। এতে খুকু খুব কষ্ট পায়। খোকার লজ্জা নেই। বকা খেয়ে কানমলা খেযেও হাসে।
একদিন দুজনে লুডো খেলছে। খোকা হারলেই রেগে যায়। তাই খুকু ওকে দান ছেড়ে দিয়ে খেলে যেন খোকাই জেতে। আজ ও ভাবলো ছাড়বে না। খেলে জিতবে বা হারবে। আর খেলায় হারজিত আছেই। খোকার মেনে নিতে শেখা উচিত। ও আজ খোকাকে উচিত শিক্ষা দেবে। তাই ভালো করে খেলবে। ছাড়বে না। খোকা হেরে যায়। হেরে গিয়ে ওর মাথা গরম। খুকুর মুখে এক ঘুষি মারে। দাঁতে লেগে খুকুর দাঁত পড়ে যায়। মিনু বেড়াল দূর থেকে দেখে। ও খুব কষ্ট পায়। দাদুর ঘরে গিয়ে কাঁদতে থাকে। দাদু বোঝে একটা কিছু হয়েছে। মিনু কিছু একটা হলেই কাঁদে। তাই দাদুর বুঝতে বাঁকি থাকে না। সে উঠে বেরিয়ে আসে। ততক্ষনে খোকা বোঝে সে কি করেছে। সে দু:খ পায়। কিন্তু এখনতো দাদু বুঝে যাবে! খুকুও বোঝে আর রক্ষা নেই। এবার খোকার পিঠে পড়বে। দাদু সব দেখে রেগে আগুন। দাদু চিৎকার করে খোকাকে ডাকে। এখন খুকু কি করে খোকাকে বাঁচাবে ! তার মাথায় একটা বুদ্ধি আসে। সে দাদুর কাছে গিয়ে বলে :
---- দেখো দাদু আমার নড়া দাঁতটা পড়ে গেছে। খোকা আমাকে মুখ ধুইয়ে দিচ্ছে।
দাদু হেসে ফেলে। সে আর কাকে বকবে মারবে ! ততক্ষনে খোকা হাওয়া। দিদুর কোলে গিয়ে চুপ করে বসে।
লোভে ভাঙ্গন ভাঙ্গনে পতন
দু ভাই ছোটন আর টোটন। খুব ভাব। একসঙ্গে নাচে গায় খেলে বেড়ায়। তবে খাবার সময় খুনটুসি। টোটন একটু লোভি। ও একটু বেশি খেতে চায়। মা দুজনকে সমান ভাবে ভাগ করে দেন। ছোটন ভাইকে খুব ভালোবাসে। তার থেকে
একটু টোটনকে দেয়। টোটন খুব খুশি।
ওদের পোষা কুকুর ভুলু। সেও ওদের পিছু পিছু। একসঙ্গে খেলে বেড়ানো। ওরা দু ভাই খেতে বসলে ভুলু ওদের কাছে বসে লেজ নাড়ে। দুভাই ওদের থেকে ভুলুকেও খেতে দেয়। টোটনের মত সেও লোভি। তার লোভে জিভ লক্ লক্ করে। সুযোগ পেলেই ওদের পাত থেকে চুরি করে খাবে। কিন্তু দুভাই একসঙ্গে থাকে। আর ওরাতো ভুলুর ধান্দা বোঝে। তাই সাবধানে থাকে। দুজনের বুদ্ধির কাছে একা ভুলো পারবে কি করে?
ভুলুর মাথায় বুদ্ধি চাপে। সে রান্নাঘর থেকে একটুকরো মাংস চুরি করে এনে মাংসটা খেয়ে খালি বাটি এককোনে রাখে। দুভাই রোজের মতো খেতে বসে। ভুলুও ওদের সঙ্গে। হঠাৎ লেজ নাড়তে নাড়তে দূরে রাখা মাংসের বাটির দিকে এগোয়। টোটন বোঝে ওখানে খাবার আছে। মাংসের গন্ধও পায়। লোভ সামলাতে পারে না। দৌঁড়ে সেখানে যায। এই সুযোগে ভুলো দৌড়ে ফিরে এসে টোটনের খাবার নিয়ে পালায়। একা একা ছোটন আর কি করে ! টোটন ওখানে ভুলুর রাখা বাটিতেও কিছু পায় না। সেটাতো ভুলু আগেই সাবার করে দিয়েছে।
দুর্বৃত্তের বিচার
ঘুঘু পাখী খুব বুদ্ধি ধরে। তবে সুবুদ্ধি নয় দুর্বুদ্ধি। তার শুধু ভাবনা কখন কাকে ঠকানো যায় কাকে মেরে খাওয়া যায়। বাঁদরের বুদ্ধিও কম নয়। সে কম যায় না। তবে সে দুষ্টু বটে কিন্তু বদবুদ্ধি ধরে না। কারো ক্ষতি করে না। তাই সবাই তার বন্ধু। ঘুঘু সকলকে বিপাকে ফেলে। কিন্তু তার ফাঁদে বাঁদর ধরা দেয় না। ঘুঘুর আরও রাগ সে ফাঁদ পাতলে বাঁদর সেটা ফাঁস করে দেয়। সবাইকে সাবধান করে। তাই ঘুঘু তাকে তাকে থাকে কখন বাঁদরকে ফাঁসাবে।
বিকেলে মেঘবন্ধু ডাকলে ময়ূর পেখম মেলে নাচে। বাঁদর তার সঙ্গে যোগ দেয়। ভল্লুক সঙ্গে ঢাক বাজায়। মৌমাছিরা গুন্ গুন্ করে গান ধরে। হাতি গাধা ঘোড়া খরগোশ যে যেখানে থাকে বৌ বাচ্চাদের নিয়ে দৌড়ে আসে। টিভি খুলে সিংহ ঘরে বসে বাঘকে নিয়ে নাচ গান দেখে শোনে। জঙ্গলের এই উৎসবে পেঁচা ঘোড়ারাও হাসে গায়। কিন্তু ঘুঘুর মুখে হাসি নেই। সে পেঁচামুখ করে ভাবতে থাকে কি করে বাঁদরকে শিক্ষা দেওয়া যায়।
একদিন ঘুঘুর মাথায় দুর্বুদ্ধি চাপে। খবর পায় আজ বাঁদর রাতে বাড়ি থাকবে না। সে ঘরে ঢুকে বাঁদরের সব কিছু চুরি করবে। ভেঙে চুরে শেষ দেবে। কিন্তু সদর দরজা দিয়েতো ঢোকা যাবে না। সেখানে শেয়াল থাকে। হুক্কা হুয়া করে চেঁচামেচি শুরু করলেই তো বিপদ। আর বদ বুদ্ধিতে সেও কম যায় না। ঘুঘু বাঁদরের ঘরের জানালা খুলে রাখে দিনে একসময়। কিন্তু জানেনা যে ওখানে মৌমাছির বাসা। আর মৌমাছি বাঁদরের খুব বন্ধু। ঘুঘু যখন জানলা খোলে মৌমাছি তার চাকের ফাঁক থেকে ঘুঘুকে দেখে ফেলে। বোঝে তার কোন বদ মতলব আছে। সে শেয়াল বন্ধুকে খবরটা দিয়ে দেয়। শেয়াল বুদ্ধি খাটিয়ে বুঝে ফেলে ঘুগু কি করতে চলেছে।
রাতে ঘুগু জানালা দিয়ে গুটি গুটি ঘরে ঢোকে। তার কি আনন্দ ! বাঁদরের বিছানায় ডিগবাজি খায়। যেখানে যা পায় নিয়ে ঝোলায় ভরে। তারপর যেই না পেছন ফিরে জানলা দিয়ে পালাবে ! শেয়াল এসে তাকে জাপটে ধরে। মৌমাছিরা জানলায় এসে গুন গুন করে গান ধরে। হাজার মৌমাছির গুনগুনানি যে বিরাট শব্দ সৃষ্টি করে তা শুনে বাঘ ভল্লুক হাতী ঘোড়া সবাই দৌড়ে আসে। ঘুঘুকে রাজদরবারে সিংহের কাছে নিয়ে যাওয়া হবে। সে বিচার করে শাস্তি দেবে।
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন