Featured Post

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। ত্রয়োত্রিংশ সংখ্যা ।। জুন ২০২৪

ছবি
  প্রচ্ছদ-চিত্রঃ সুনীত নস্কর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা। সম্পাদকীয় কেমন আছো ছোট্ট বন্ধুরা। গরমের ছুটি তো শেষ হয়ে এল। স্কুল খুলে যাচ্ছে। কিন্তু গরমের দাবদাহ কিন্তু এতটুকু কমেনি। এই গরমে  খুবই সাবধানে নিয়ম মেনে চলতে হবে তোমাদের। এখন তো আম, জাম কাঁঠালের সময়। এখন এইসব মৌসুমী ফল খেতে হবে। তাহলে শরীর সুস্থ থাকবে। শরীর সুস্থ থাকলে মন সুস্থ থাকবে। মন সুস্থ থাকলে পড়াশুনো ভালো হবে।           আশাকরি এতদিন বাড়িতে থেকেই মন দিয়ে পড়াশুনো করেছ। সঙ্গে অনলাইন কিশলয়ের পাতায় চোখও রেখেছ। পড়াশুনোর পাশাপাশি গল্প লেখা, ছবি আঁকা ইত্যাদির শখও মনের মধ্যে লালন পালন করতে হবে তোমাদের। পড়াশুনোর চাপে সব ছেড়ে দিলেও চলবে না কিন্তু। স্কুলের পড়া, বাড়ির পড়ার পাশাপাশি গল্প- কবিতা লেখা, প্রবন্ধ লেখা, ছবি আঁকা ইত্যাদি চালিয়ে যাও। তোমাদের প্রতিভার বিকাশ হোক। তোমাদের সৃজনীসত্ত্বার প্রকাশ হোক তোমাদের সৃষ্টির মধ্য দিয়ে। আর সাথে সাথে তোমার সেই সৃষ্টি অনলাইন কিশলয়ে প্রকাশের জন্য পাঠিয়ে দাও। বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা বাকি বন্ধুরাও জানুক তোমার সৃষ্টি সম্পর্কে। আর কী? সবাই সুস্থ থাকো, ভালো থাকো, আনন্দে থাকো।   শুভকামনাসহ-- প্রিয়ব্রত দত্ত ও কার্

কিশোর থ্রিলার ।। অপারেশন শাহিন ।। আবরার নাঈম চৌধুরী


অপারেশন শাহিন 

আবরার নাঈম চৌধুরী


শীতের অপরাহ্ণ। পুকুর ঘাটে একটা মিষ্টি হিম বাতাস বয়ে গেল। দূরে  একটা পাখি উড়ে এসে গাছে বসেছে। পুকুরের অপর পাড়ে দুটো নারকেল গাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে। ক্ষণে ক্ষণে হিম বাতাস বইছে আর এলোমেলো  করে দিচ্ছে দুই কিশোরের চুল। হঠাৎ মুঠো ফোনে কল আসে। 
"স্যার কল দিয়েছে ইমতু! আমি আসছি।"  
মাহি উঠে একটু দূরে গিয়ে দাঁড়িয়ে কল রিসিভ করে। 
ইমতু মাহি দুই বন্ধু। মাহি ঢাকা শহরে বড় হয়েছে। তাই গ্রামের সৌন্দর্য সে কখনো অবলোকন করেনি। তাই এসএসসি পরীক্ষার পর ইমতু মাহিকে তার গ্রামের বাড়িতে ঘুরতে যাওয়ার প্রস্তাব দেয়। মাহি প্রস্তাবে রাজি হলেও বাসায় বাবা মার বারণের কথা ভেবে আবার সিধান্ত পরিবর্তন করে। অতঃপর ইমতুর আম্মু অনেক কষ্টে মাহির বাবা মাকে রাজি করায়।  

শীতকাল। তাই মাহির মা জোর করে মাহির ব্যাগে অনেক গরম কাপড় ঢুকিয়ে দেয়। এতে মাহি অনেক আপত্তি করলেও গ্রামে এসে শীতের প্রকোপ দেখে তার বোধোদয় হয়। 
গ্রামে সকাল বেলা সূর্যি মামার দেখা পাওয়া দায়। দুপুর বেলা দেখা দেয় মেঘের আড়ালে। শেষ বিকেলে সূর্যি মামার বিদায় কালে প্রকৃতি আবার ঠাণ্ডা হয়ে আসে। শেষে চাঁদনী রাতে প্রকৃতি মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ে কুয়াশার কোলে। 
মাহি এসব মুগ্ধ চোখে দেখে। ইমতু অবশ্য প্রতি ঈদে গ্রামে আসে। ওর কাছে এসব নতুন কিছু নয়। তবে চৌদ্দ বছরের শহুরে কিশোর মাহির জন্য এগুলো একেবারেই নতুন।

শুক্রবার বিকেলে ইমতু আর মাহি গ্রামের দক্ষিন দিকে ঘুরতে বের হয়। তাজপুর গ্রামের উত্তর দিকে হিন্দু বাড়ি। সেখানে ঘুরে দেখার মত কিছু নেই। দক্ষিন দিকে তাল দিঘির পাড়। দিঘিতে প্রচুর মাছ আছে। ইমতুর জেঠা মাছের কারবার করেন।
দিঘির পাড়ে যখনই দুই কিশোর বসলো ওমনি ইমতুর বন্ধু রতন দূর থেকে  ডাক দিল। 
"ইমতু! ঐ ইমতু!"
ইমতু রতনকে দেখে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, "রতন না? আরে আমাদের রতন যে!" 
রতন দৌড়ে আসে। এসে হাঁপাতে থাকে। 
ইমতু বলল, "আরে বাবা আস্তে, আস্তে। এত হুলুস্থুলের কী আছে?"  
রতন এমনেও একটু হুলুস্থুল ধরনের ছেলে। 
রতন হাঁপাতে হাঁপাতে বলে, "দৌড়াচ্ছি কি আর সাধে?"
"কেন? এমন কি হয়েছে?"
"আচ্ছা আগে বসি। এরপর বলছি।"
রতন ইমতু আর মাহির মাঝখানে বসে বলল, " তোদের সন্ধ্যার আগেই ঘরে ফিরতে হবে কিন্তু।" 
মাহি অবাক হয়ে বলল, "কেন? বাড়ি যেতে যেতে সন্ধ্যা হলে সমস্যা কি?"
ইমতু বলল, "আরে তেমন কিছু না। গ্রামে ইলেক্ট্রিসিটি নেই তো, তাই ও বলছে বাড়ি যেতে আমাদের সমস্যা হবে। পথ অন্ধকার হয়ে যাবে।"
রতন উত্তেজিত কণ্ঠে বলল, "মোটেও না। সন্ধ্যার পর এই দক্ষিন দিকের মানুষ বাইরে বের হয় না। বাইরে বের হলেই তাকে ধরে নিয়ে যায়।"
ইমতু চোখ বড় বড় করে বলল, "কে ধরে নিয়ে যায়?"
" ভূত!"
মাহি ঠোঁট বাকিয়ে বলল, "ভূত বলে কিছু আছে নাকি?" 
রতন কণ্ঠস্বর নিচু করে বলল, "এভাবে বলো না, উনারা অসন্তুষ্ট হন।"
ইমতু রতনের কথায় রহস্যের গন্ধ পেল। জিজ্ঞেস করল, "কাউকে ধরে নিয়ে গিয়েছে এখন পর্যন্ত?"
রতন চোখ বড় বড় করে বলল, "ধরে নিয়ে যায়নি মানে? আমাদের ইবুর কথা তোর মনে আছে?"
ইমতু একটু ভেবে বলল, "সেই ইবু! বল কাটিয়ে গোল দিতে পারতো সেই ইবু তো?"  
একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে রতন বলল, "হ্যাঁ, সেই ইবু। এখন শুধুই স্মৃতি।"
"মানে? স্মৃতি মানে?"
"ওর লাশ পাওয়া গিয়েছিল জমিদার বাড়ির উঠোনে। বট গাছের সাথে ঝুলছিল।" 
মাহি বলল, "সুইসাইড?"
"না, সুইসাইড না। ভূতেরা ওকে মেরে গাছের সাথে ঝুলিয়ে দিয়েছে।"
মাহি ভ্রু কুঁচকে তাকাল রতনের দিকে।  

সন্ধ্যা ছুঁই ছুঁই। প্রকৃতি কুয়াশার কোলে মাথা রেখে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। ইমতু, রতন, মাহি দ্রুত বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। রাস্তাটি জমিদার বাড়ির পাশ দিয়ে উত্তর দিকে চলে গিয়েছে। ইমতু রতনের কথা বিশ্বাস না করলেও মাহির পুরোপুরি বিশ্বাস, তার মনকে দুর্বল করে দিয়েছে। তাই তো জমিদার বাড়ির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তার গা ছম ছম করে উঠল। ভাঙ্গা দেয়ালের এই নির্বিকার বাড়িটি কি ভয়ংকর? মাহি ভাবে। 

রতন তার বাড়িতে চলে যাচ্ছিল। ইমতু পিছন থেকে ডাকে, "এই রতন!  শুন একটু?"
রতন কাছে এসে দাঁড়িয়ে বলল, "বল।" 
"সাড়ে সাতটায় একবার আমাদের বাড়িতে আসবি?"
"আচ্ছা, চলে আসবো।" 
অতঃপর ইমতু আর মাহি মুচকি হেসে রতনের থেকে বিদায় নিল। 

সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা। প্রকৃতি মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছে কুয়াশার কোলে। কুয়াশার মায়াজালে দূরের গাছপালাকে ঝাপসা দেখা যাচ্ছে। দূরে একটি হুতুম পেচার ক্রন্দনের ধ্বনি শুনা যাচ্ছে। । ঝিঁঝিঁ পোকা এক নাগাড়ে ডাকছে তো ডাকছেই।    
বিদ্যুৎ বিহীন এই তাজপুর গ্রামে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা মনে হয় যেন ঢের রাত। পর পর তিনটি মোড়াতে বসে আছে তিন কিশোর। গ্রাম দেশে বেতের মোড়ার প্রচলন খুব বেশি।
ইমতু রতনকে জিজ্ঞেস করল, "আচ্ছা, এই ভূত আর কারও ক্ষতি করেছে?"
রতন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, "আমাদের শাহিনের কথা মনে আছে?" 
"হ্যাঁ, কেন মনে থাকবে না? আমি গ্রামে আসার পর ওকে অনেক খুঁজেছি কিন্তু পাইনি। ওর বাড়িতে গিয়েছিলাম কিন্তু বাড়িতে তালা মারা।"
"শাহিনের রক্তাক্ত জামা জমিদার বাড়ির গেটের সামনে পাওয়া যায় কিন্তু শাহিনকে আমরা আজও খুঁজে পেলাম না।"
কষ্টে বুকটা হুহু করে উঠল ইমতুর। অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে জিজ্ঞেস করল, "তার মানে নিখোঁজ?"
"হুম।" 
ইমতু মাহির কাঁধে হাত রেখে বলল, "মাহি?" 
"হ্যাঁ বল।" 
"আমি যা ভাবছি তুই ও কি তাই ভাবছিস?" 
মাহি কিছুক্ষন চুপ করে থাকে। রতন কিছু বুঝে না। তাকিয়ে থাকে। 
নীরাবতার দরজা ভেঙ্গে মাহি বলল, "রহস্যের গন্ধ পাচ্ছি।"
ইমতু সাথে সাথেই বলল, "আমিও। বিষয়টা যে একদল সন্ত্রাসীদের কাজ এতে কোনো সন্দেহ নেই।" 
রতন ক্ষেপে গিয়ে বলে, "কী সব আবোল তাবোল কথা বলছিস? এসব ভূতের কাজ। জমিদার মুনির ভুঁইয়ার বউ মুনিয়া বিবির ভূতের কাজ এটা।"
মাহি কৌতূহলী হয়ে রতনের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, "কে এই মুনির ভূঁইয়া?" 
"মুনির ভূঁইয়া অত্যন্ত অত্যাচারী জমিদার ছিলেন। তিনি তাঁর বউ মুনিয়া বিবিকে হত্যা করেছিলেন। মারার আগে তাঁর বউ উঠোনে গ্রামবাসীর কাছে চিৎকার করে সাহায্য প্রার্থনা করেছিল। কিন্তু মুনির ভুঁইয়ার ভয়ে কেউ এগিয়ে আসেনি।" 
"কেন? মেরে ফেলল কেন?"
"কারণ আমার দাদিকে তাঁর খুব পছন্দ হয়েছিল। বিয়ে করবে বলে তাঁর এক মাত্র পথের কাঁটা মুনিয়া বিবিকে উঠোনে গাছের সাথে ঝুলিয়ে হত্যা করে।"
ইমতু জিজ্ঞেস করল, "তোর দাদি?"
"হুম।"
"কত সালের ঘটনা এটা?"  
"এই ১৯২০ বা ১৯২৫ এর দিকের।" 
"এখন কত সাল?"
"এখন ২০২১।"
"তাহলে কি দাঁড়ায়?"
"কি দাঁড়ায়?"
"তাহলে দাঁড়ায় এক দল শিশু পাচারকারি এই ঘটনার ফায়দা উঠিয়েছে।" 
মাহি বিস্মিত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো, "শিশু পাচারকারি?"
ইমতু গম্ভীর কণ্ঠে বলল, "হ্যাঁ, সন্ত্রাসী নয়। যেহেতু শাহিনকে পাওয়া যায় নি, বুঝাই যাচ্ছে যে ওরা শাহিনকে জিম্মি করেছে আর ইবুকে মেরে গাছের সাথে ঝুলিয়ে রটিয়ে দিয়েছে যে মুনিয়া বিবি ফিরে এসেছে বদলা নিতে।" 
ইমতুর কথা শুনে মাহি আনন্দে আত্মহারা হয়ে বলল, "বাহ! রহস্যের সমাধানের দরজা খুলে গেল।"
"হ্যাঁ, এখন শুধু হাতে নাতে ধরতে পারলেই হয়।" 
রতন কাচুমাচু করে বলে, "তোরা বাপু শহরের মানুষ। আমি জানতাম তোরা বিশ্বাস করবি না।" 
ইমতু বলল, "রতন! তুই আমাকে বিশ্বাস করিস?" 
"হ্যাঁ করি।" 
"তাহলে আমার এই কথা কেন অবিশ্বাস করছিস?"
"না মানে-"
"আমার শৈশব তো তোদের সাথেই কেটেছে।"
খানিকক্ষণ চুপ থেকে ইমতু আবার রতনকে বলল, "একটা সাহায্য করবি?"
"কি?"
"এখন জমিদার বাড়ি গিয়ে একবার অবস্থাটা দেখে আসতে চাচ্ছি। যাবি আমার সাথে?"
"এখন? মাথা খারাপ? আমি পারব না।"
মাহি বলল, "যা বলছিস ভেবে বলছিস তো?" 
 ইমতু মুচকি হেসে মাহিকে জিজ্ঞেস করল, "কেন? ভয় পাচ্ছিস?" 
"না তা নয়, তবুও রাতে যাওয়া কী ঠিক হবে?" 
"এক বার দেখে আসি। তা না হলে রহস্যের সমাধান করব কিভাবে?"
মাহি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, "তুই গোয়েন্দা হলি কবে থেকে?" 
ইমতু মুচকি হেসে বলল, "এই ধর আজ থেকে।"
চারদিকে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক। কিছুক্ষণ সবাই চুপচাপ। খানিক বাদে ইমতু উঠে দাঁড়িয়ে বলল, "আমি চললাম। তোরা কেউ আসতে চাইলে আসতে পারিস।"
মাহিও উঠে দাঁড়ায়। পা বাড়ায় ইমতুর পিছু পিছু। রতন বোকার মত বসে থাকে। 

ঝিঁঝিঁ পোকা ডাকছে তো ডাকছেই। মশার ভোঁভোঁ শব্দ। সাথে কামড় তো আছেই। জমিদার বাড়ি থেক একটু দূরে দুটি নারকেল গাছের আড়ালে ২  কিশোর। রীতিমত ঘামছে ওরা। চোখ স্থির। মাঝে মধ্যে কিছু মশা এসে চোখের পাতায় বসছে ঠিকই কিন্তু ওদের বিরক্ত করতে ব্যর্থ হচ্ছে ।  
মাহি ফিস ফিস করে বলল,"ইমতু!" 
ইমতুও চাপা স্বরে ফিস ফিস করে বলল, "বল!" 
"ভিতরে যাবি? এখানে দাঁড়িয়ে থেকে মনে হয় না কিছু বুঝা যাবে।"  
"যাব। আর কিছুক্ষন আমরা এখান থেকে লক্ষ করি।"
"তুই আসলে কী করতে চাস?"
"দেখতে চাচ্ছি, ভেতরে কেউ ঢুকে কিনা বা ভেতর থেকে বের হয় কিনা।" 
"আচ্ছা।"  
বিশ থেকে পচিশ মিনিট পর তারা নারকেল গাছটার আড়াল থেকে বের হয়। পা টিপে টিপে গেটের কাছে চলে আসে। পুরনো গেটটাতে জং ধরে গেছে। গেটটা ইমতু সাবধানে ঠেলা দেয় যাতে কোন শব্দ না হয়। পা টিপে টিপে ওরা উঠোনের এক কোণে সেই অভিশপ্ত বড় বটগাছটার পিছে এসে দাঁড়াল। ইমতু আর মাহি যখন উঠোনে প্রবেশ করে তখন হয়তো কোনো অশরীরী তাদের লক্ষ্য করে।  
হঠাৎ ইমতু জমিদার বাড়ির দেওয়ালে কার যেন ছায়া দেখতে পেল। এ যেন কোন অশরীরীর ছায়া। ছায়াটা ধীরে ধীরে সরে যেতে থাকে। ইমতু ঘামছে উত্তেজনায়। 
ইমতু নিচু গলায় ফিস ফিস করে মাহিকে বলল, "কিছু দেখলি?" 
"না তো! কী?" 
" ঐ দেখ! ছায়া।"
 "তাই তো!ভূতের ছায়া হবে।" মাহি ভয়ে কাঁপছে।  
ইমতু মাহিকে সাহস দিয়ে বলল, "ধুর বোকা, মানুষেরই ছায়া হয় বুঝলি?
ইমতু এগোতে চাইলে মাহি বাঁধা দেয়। আমার উপর ভরসা রাখ, কিচ্ছু হবে না, এমন চোখ দিয়ে ইশারা দেয় ইমতু মাহিকে। ইমতু অশরীরীর ছায়াকে অনুসরণ করে। সেই রক্ত পিপাশু অশরীরীও বুঝে ফেলে ইমতু তাকে অনুসরণ করছে।  
হঠাৎ ছায়া উধাও হয়ে গেল। ইমতু অবাক চোখে ঠায় ওখানেই দাঁড়িয়ে গেল। 
মাহি আবারো ফিস ফিস করে বলে, "দেখলি ইমতু! দেখলি! ছায়া নেই। বলেছিলাম না ভূত!"
"তুই চুপ করবি?"  
 হঠাৎ তারা একটা নুপুরের শব্দ শুনতে পেল। শব্দটা পুকুর ঘাট থেকে আসছে আঁচ করে ইমতু পুকুর ঘাটের দিকে এগোয়। ভিতু মাহি পিছু হটে আবার বট গাছের আড়ালে লুকায়। 
ওদিকে পুকুর ঘাটে এসে কাউকে দেখতে পেল না ইমতু। হঠাৎ পিছন থেকে প্রচণ্ড ধাক্কা খেল। ঝুপ্পুশ শব্দ। অন্ধকারে আচমকা পুকুরে পড়ে গেল সে। সাঁতার জানা ইমতু নিজেকে সামলে যেই না পানি থেকে উঠতে যাবে তখনই বুঝতে পারল পানির নিচে কে যেন তার দুই পা ধরে ফেলেছে যাতে সে নড়তে না পারে। এরপর সাথে সাথেই কে যেন ইমতুর ঘাড় ধরে প্রচণ্ড বেগে তাকে পানির নিচে ডুবিয়ে ফেলল। আবার উঠিয়ে আবার ডুবাল। ইমতু বুঝতে পারছে না সে কী করবে? আবার ডুবাল আবার উঠাল। বাচার জন্য ইমতু ছটফট করতে থাকে, চিৎকার করতে থাকে, ডাকতে থাকে মাহিকে। কিন্তু বিধি বাম। মাহি দৌড়ে পুকুর ঘাটে আসে। পুকুর ঘাটে দাঁড়ানো অশরীরীর বিকৃত ভয়ংকর চেহারা চাদের আলোয় আবছা দেখেই ভয়ে চিৎকার করে দৌড় দেয় মাহি। ওদিকে ইমতু সুযোগ বুঝে অন্ধকারে ঢিল ছুড়ে। পিছন ঘুরে আবছা আলোয় ঘুষি বসিয়ে দেয় একজনের মুখে। 
"মাগো", বলে চিৎকার করে উঠে। কিন্তু অপরদিক থেকে আরেকজন ইমতুর গায়ে ঝাপিয়ে পড়লেও সুবিধা করতে পারল না। ইমতু তার মুখেও ঘুষি বসিয়ে দেয়। 
দুই জন যখন কুপোকাত তখন ইমতু দ্রুত পুকুর থেকে যেই না  উঠে আসে অমনি তার সামনে দাঁড়ায় সেই বিকৃত চেহারার অশরীরী। ইমতু কিছুটা ঘাবড়ে যায়। তারই সুযোগ নেয় অশরীরী। ছুরি দিয়ে ঘাই দেয় ইমতুর শরীরে। যন্ত্রণায় ছটফট করে উঠে ইমতু। এরপর আরেকটি ঘাই।  ইমতু মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। হঠাৎ পিছন থেকে কে যেন অশরীরীকে পা দিয়ে ল্যাং মেরে ফেলে দেয় মাটিতে। চাঁদের আবছা আলোয় ব্যথায় ছটফট করতে থাকা ইমতু দেখে এ যে তারই বন্ধু রতন। রতনের হাতে ক্রিকেট খেলার স্ট্যাম্প। অশরীরী উঠে দাঁড়িয়ে রতনকে ছুরি দিয়ে আঘাত করতে চাইলে আত্মরক্ষার স্বার্থে রতন স্ট্যাম্প দিয়ে অশরীরীর শরীরে আঘাত করে। একটা কাপুনি দিয়ে অশরীরী আবার মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। ওদিকে পুকুরের সেই লোকগুলো উঠে এলে রতন ওদের ধাওয়া দেয়। একজন পালিয়ে গেলেও আরেকজন ল্যাং খেয়ে পড়ে যায়। আর যে ল্যাং মারে সে আর কেউ নয়, শহুরে কিশোর মাহি। মাহি লোকটার চুলের মুঠি ধরে আক্রোশে এক ঘুষি মারে। 
"ভাই আমারে ছাইরা দেন। ভাই, ও ভাই বলে চিৎকার করতে থাকে।"
চিৎকার শুনে আশেপাশের মানুষ টর্চ নিয়ে এগুতে থাকে জমিদার বাড়ির দিকে। ওদিকে মাহি আর রতন ওদের মারছে তো মারছেই। 
টর্চের আলোয় আলকিত জমিদার বাড়ি। গ্রামের মানুষজন সবাই উপস্থিত হয় ঘটনাস্থলে। গ্রামের কিছু যুবক ইমতুকে নিয়ে দ্রুত হাসপাতালের দিকে রওনা দিল। অশরীরী নামক মুখোশধারী ব্যক্তির মুখোশ খোলা হল। সে আর কেউ না, পূর্ব দিকের আব্দুলের ছেলে রমিজ। তাদেরকে বটগাছের সাথে বাঁধা হল। আধা ঘণ্টা পর পুলিশ এসে ওদের ধরে নিয়ে গেল। 

একটা হিম বাতাস বয়ে গেল। পুকুরের  অপর পাড়ে দুটো নারকেল গাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে। । দূরে একটা পাখি উড়ে এসে গাছে বসেছে।
"এই ইমতু! কি ভাবছিস?"
মাহির কথায় বাস্তবে ফিরে এল ইমতু। কিছু মাস আগে ঘটে যাওয়া ঘটনাটি ওর স্মৃতির ক্যানভাসে উঁকি দিচ্ছিল। 
"না রে, কিছু না। কিছু বলবি?"
 "ওরা ছাড়া পেয়ে গিয়েছে।" 
"সেই শিশু পাচারকারীরা?"
"হ্যাঁ।" 
"তুই কিভাবে জানলি?" 
"আমার মামা ঐ থানার সাব ইন্সপেক্টর। উনার কাছ থেকে শুনলাম আজ।" 
এরপর দুজন কিছুক্ষন চুপচাপ। নিরাবতা ভেঙ্গে ইমতু উদাস কণ্ঠে বলল, "শাহিনের জন্য খুব চিন্তা হচ্ছে রে, বেঁচে আছে না মরে গেল কে জানে?"
"যদি শাহিন বেঁচে থাকে, ওরা শাহিনকে কোথায় রাখতে পারে?" 
মাহি ইমতুর দিকে তাকিয়ে বলল, "একবার সেই জমিদার বাড়ির ঘরগুলো সার্চ করে দেখলে কেমন হয়?"
"ভালো আইডিয়া।" 

দুই কিশোরের অবয়বে চিন্তার ছাপ। কী  ভাবছে ওরা? অন্ধকার রুমে টর্চ জ্বালিয়ে কাগজে লেখা শব্দটা বার বার পড়ছে ইমতু আর মাহি। 
ইমতু মাহিকে জিজ্ঞেস করল, "আচ্ছা, জায়গাটা কোথায় হতে পারে?"
মাহির কপালে চিন্তার ভাঁজ, বলল, "এই জায়গার নাম আজ প্রথম শুনলাম।"
"আমিও প্রথম শুনালাম। গুগল ম্যাপস কী বলছে?" 
"নেটওয়ার্ক পাচ্ছিনা। চল বের হই।" 
"চল।" 
জমিদার মুনির ভুঁইয়ার পরিত্যক্ত জমিদার বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলো ওরা। ইমতু  আবারও আধুনিক মুঠো ফোনে গুগল ম্যাপসের সহায়তাতায় জায়গাটি অনুসন্ধান শুরু করল। আনকোরা জায়গাটি অনুসন্ধানে ব্যর্থ  হলো সে। অবয়বে বিরক্তির ছাপ সুস্পষ্ট। তা দেখে মাহি জিজ্ঞেস করল, "কী রে? পেলি জায়গাটা?"
"না রে। আমার কেন জানি মনে হচ্ছে এটা কোনো অজপাড়া গ্রাম।"
"এখন কী হবে?"
ইমতু দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল, "শাহিনের রহস্য ভেদের একমাত্র সূত্র এই জায়গাটি।"
কিছুক্ষণ দুই কিশোরই চুপচাপ। নীরাবতার দেওয়াল ভেঙ্গে মাহি বলল, "চল বাড়ি যাই। দুপুর হয়েছে। খেয়ে নেই।"
ইমতু উদাস কণ্ঠে সায় দিয়ে বলল, "ঠিক আছে, চল।"

মধ্যাহ্নের তাজপুর গ্রাম। জ্যৈষ্ঠের শেষ, আষাঢ়ের শুরু । সূর্যের দীপ্ত কিরণ অসীম আক্রোশে আছড়ে পড়ছে ধরণীর বুকে। টানা কদিন একনাগাড়ে বর্ষণের পর আজ ক্ষণিকের বিশ্রাম। আকাশে অন্তহীন ছেড়া মেঘের ছোটাছুটি এই তপ্ত রোদেও বর্ষার অস্তিত্ব জানান দিয়ে যাচ্ছে। ইমতু এসব মুগ্ধ চোখে অবলোকন করে আর ভাবে আমাদের মাতৃভূমি কত সুন্দর!

দুপুরের খাবারের পর মাহি বিছানায় শরীর এলিয়ে দিলেও ইমতু অন্য কক্ষে মায়ের পাশে বসে  জিজ্ঞেস করল, "মা! বাড়িয়াখালি জায়গাটা কোথায়?" 
ইমতুর মা অবাক হলেন, বললেন, "বাড়িয়াখালি? কেন?"
"বল না মা? কোথায়?"
"এটা তো আমার নানার বাড়ি।" 
"তোমার নানার বাড়ি?"
"হ্যাঁ, কেন?"
"কখনো বলোনি।"
"তুই জানতে চাসনি তাই বলিনি।"
"মা তোমার কাছে একটা জিনিস চাইব, দেবে?" 
"সাধ্যের মধ্যে থাকলে অবশ্যই দিব।"
"তোমার নানার বাড়ি থেকে একবার ঘুরে আসতে চাই।"
"হঠাৎ ওখানে?"
"এখন তো বন্ধ। ঘুরে আসি একবার?"
"ঠিক আছে। আমি ডিপটিকে জানিয়ে রাখব।" 
"উনি আবার কে?"
"নানার বাড়ির কেয়ারটেকার।"
"কিন্তু আমি আর মাহি যাব কিভাবে?"
"তোর ছোট মামাকে বলব নিয়ে যেতে।"
"ছোট মামা?"
"হ্যাঁ।" 
ইমতু ছোট মামার কথা শুনে খুব খুশি হলো। মামা নিলয় চৌধুরী তাকে অত্যন্ত স্নেহ করেন। নিলয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বর্ষের ছাত্র। 
ইমতু আবার মাকে জিজ্ঞেস করল, "মা! মামা কবে আসতে পারে?"
"ফ্রি থাকলে আজকে বা কালকে আসতে বলব।"
"আচ্ছা মা। আমি মাহির কাছে যাই।"
"শুন?"
ইমতু বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলে, "বল।"
"তোর বন্ধের আর কতদিন বাকি?"
"এই, আর এক সপ্তাহ।"
"আচ্ছা, যা, মাহি কী করে দেখ।" 
ইমতু কক্ষ থেকে বেরিয়ে শয়ন কক্ষে এসে দেখল মাহি  ঘুমের রাজ্যে ডুবে আছে।

পশ্চিম আকাশের এক কোণায় সূর্য ঘুমিয়ে পড়েছে অনেক আগেই। আকাশে এখন চাঁদ সহ হাজার তাঁরার মেলা। অবশেষে মাহির ঘুম ভাঙল। শোয়া থেকে উঠে বসেছে ঠিকই কিন্তু ঝিমুচ্ছে। খাটের এক কোণে ইমতু। চা আর খৈ খাচ্ছে। চায়ে এক চুমুক দিয়ে মাহিকে জিজ্ঞেস করল, "কী রে? ঘুম ভালো হয়নি?"
মাহি তন্দ্রা বিজড়িত কণ্ঠে বলল, "ঘাড়টা ব্যথা করছে।"
"কোনো চিন্তা নেই। খৈ আর চা খাওয়ার পর প্যারাসিটামল একটা খেয়ে ফেলিস। দ্রুত সুস্থ হয়ে পড়। বাড়িয়াখালি যেতে হবে তো নাকি?"
বাড়িয়াখালির কথা শুনে মাহির সাত রাজ্যের ঘুম উড়ে গেল, জিজ্ঞেস করল, "মানে? কাগজে লেখা সেই জায়গাটা?"
"আস্তে, আস্তে। মা শুনতে পাবে। হ্যাঁ, কাগজে লেখা সেই জায়গাটা।"
"কিভাবে সন্ধান পেলি জায়গাটার?"
"আম্মুর নানার বাড়ি।"
"কি বলিস?"
"হ্যাঁ।"
"তাহলে শাহিনের রহস্য ভেদের কাজ কিছুটা এগোল।"
"কিন্তু আমাদের কাজটা দ্রুত করতে হবে।"
"কেন?"
"বোকা! বন্ধের আর এক সপ্তাহ বাকি।"
"আরে তাই তো! আমার মনে নেই। 
"ঠিক আছে। এখন চা আর খৈ খেয়ে নে।" 
মাহি চায়ে চুমুক দিল। ইমতু ডুব দিল গল্পের বইয়ের পাতায়। মাহি চা শেষ করে পত্রিকা হাতে নিল। হঠাৎ আকাশে মেঘের গর্জন। রাতে হয়তো প্রচুর বৃষ্টি হবে।

রাত পৌনে এগারটা থেকে শুরু হলো তুমুল ঝড়-বৃষ্টি। এই ঝড়-বৃষ্টির বাঁধা উপেক্ষা করে হঠাৎ দরজায় কে যেন কড়া নাড়ল। ইমতু দরজা খুলে দেখল এই বাদলা রাতে তার ছোট মামা কাক ভেজা হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। মামাকে দেখেই সে আনন্দে আত্মহারা হয়ে জড়িয়ে ধরে বলল, "মামা! তোমারই অপেক্ষায় ছিলাম।"
"এখানে দাঁড় করিয়ে রাখবি?"
ইমতু তড়িঘড়ি করে মামার হাত থেকে ব্যাগ নিয়ে বলল, "এসো মামা, ভিতরে এসো। মা! ছোট মামা এসেছে।"
ইমতুর মা রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে এসে ভাইকে দেখে জিজ্ঞেস করলেন, "এ কী রে?
"একদম ভিজে গেছি বুবু।"
"তাই তো দেখছি। এই তোর মামাকে একটা গামছা দে।"
ইমতু একটা গামছা তার মামার হাতে দিল। মামা গামছা হাতে নিয়ে বললেন, "বুবু! আমি ভিতরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসি।"
"হ্যাঁ, যা জলদি।"
 মামা ভিতরে চলে গেলেন। ইমতুর মা চলে গেলেন রান্না ঘরে ভাইয়ের জন্য খাবার তৈরি করতে। মাহি ইমতুকে কক্ষের এক কোণায়  টেনে নিয়ে এনে জিজ্ঞেস করল, "তোর মামাকে শাহিনের ব্যাপারটা বলবি?"
ইমতু চোখ পাকিয়ে বলল, "মাথা খারাপ?"
"জ্ঞান দিবে?"
না, তা না। বড় কারো সাহায্য নিয়ে সমাধান করা আর আমরা নিজেরা করার মধ্যে পার্থক্য আছে।"
"হ্যাঁ, ঠিক বলেছিস।"

রাতের খাবারের পর ইমতুর কক্ষে ছোট মামার প্রবেশ। ইমতু আর মাহি কিছু একটা পরামর্শ করছিল কিন্তু মামাকে দেখে নড়ে চড়ে বসল।
ছোট মামা হাসি মুখে জিজ্ঞেস করলেন, "কী খবর গোয়েন্দারা? কী নিয়ে কথা হচ্ছে?"
ইমতু বলল, "না মামা, তেমন কিছুই না।"
"তোরা নাকি নানার বাড়ি যেতে চাস?"
"হ্যাঁ মামা।"
"কেন? নতুন কোনো রহস্যের সন্ধান পেলি বুঝি?"
"ইয়ে মানে, না মামা। আম্মুর মুখে শুনলাম গ্রামটা খুব সুন্দর।"
"শুধু সুন্দরই নয়। নিরিবিলি।" 
"নিরিবিলি?"
"হ্যাঁ।"
"একটা কমিউনিটি সেন্টার আছে যদিও তা পরিত্যক্ত, লোক মুখে ভূতের বাড়ি নামে পরিচিত।"
"কী বল মামা?"
"হ্যাঁ। পুলিশ পর্যন্ত ওখানে যেতে সাহস করে না।"
"তাই?"
"হ্যাঁ রে। সাবধানে থাকবি। একদম ওদিকটায় যাবি না।"
"তুমি আছ না? তুমি থাকতে কিসের চিন্তা?"
"আমি তোদের পৌঁছে দিয়ে ঢাকা চলে যাব।"
"হঠাৎ ঢাকা?"
"কিছু বই কিনব নীলক্ষেত থেকে।"
"আচ্ছা।"
"আমি যাই শুয়ে পড়ি, তোরাও শুয়ে পড়, অনেক রাত হয়েছে।"
"ঠিক আছে মামা।"
           
শয়ন কক্ষ থেকে ছোট মামার প্রস্থানের পর দুই কিশোর বিছানায় শরীর এলিয়ে দিলেও ছোট মামার ভূতের বাড়ির প্রসঙ্গটি ওদের মনে সৃষ্টি করেছে নানান চিন্তা, অজস্র প্রশ্ন। শাহিনকে কি ওখানে পাওয়া যাবে? ইমতু ভাবে। এক সময় নানান চিন্তার অবসান হয়, নিদ্রার মেঘ ছেয়ে যায় ইমতু ও মাহির চোখের আকাশে। মেঘের কোলে লুটিয়ে পড়ে ওরা। হারিয়ে যায় গভীর নিদ্রায়। 

খুব সকালে নাস্তার পর ছোট মামা সহ দুই কিশোর বেরিয়ে পড়ল বাড়িয়াখালির উদ্দেশ্যে। লোকাল বাসের জানালার পাশে বসল ইমতু তার পাশেই মাহি। ছোট মামা বসেছেন দুই সিট সামনে। এক ঘন্টার মধ্যেই মীরসরাইয়ের বাড়িয়াখালি বাজারে বাস পৌঁছে গেল। বাস থেকে নামা মাত্রই বয়স্ক একজন লোক এগিয়ে এসে ইমতুর ছোট মামাকে জিজ্ঞেস করলেন, "কেমন আছ?"
ইমতুর ছোট মামা হাসি মুখে বললেন, "ডিপটি ভাই! কেমন আছেন?"
"ভালো আছি। এরা কারা?"
"ও হচ্ছে ইমতু, বুবুর ছেলে।"
"রাশেদার ছেলে?"
"হ্যাঁ।"
মামা এবার আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, "ইমতু! উনি হচ্ছেন তোমার ডিপটি মামা।"
ইমতু মৃদু হেসে বলল, "উনার কথা অনেক শুনেছি মায়ের মুখে।"
ডিপটি ভাই হাসলেন। মাহির দিকে তাকিয়ে বললেন, "ওকে তো ঠিক চিনলাম না।"
ইমতু বলল, "ওর নাম মাহি। আমার বন্ধু। ঢাকা থাকে। আমরা একসাথেই এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছি।"
"ও বাবা! আমার ভাগিনারা কত বড় হয়ে গিয়েছে!"
ইমতু আর মাহি তাদের ডিপটি মামার কথায় একটু লজ্জা পেল। 
ইমতুর ছোট মামা বললেন, "ভাই! আমি তাহলে আসি।"
ডিপটি ভাই চমকে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, "আসি মানে? কোথায় যাচ্ছ?"
"আমাকে আজ জরুরী প্রয়োজনে ঢাকা যেতে হবে।"
"কী কাজ?"
"কিছু বই কিনব। আপনি এদের নিয়ে বাড়িতে চলে যান।"
"তা তো যাবই। রাশেদা আমাকে সব ফোনে বলেছে।"
"ঠিক আছে ভাই, আমি তাহলে আসি।"
"সাবধানে যেয়ো।"
ইমতুর ছোট মামা পা বাড়ান। ডিপটি ভাই ইমতু আর মাহিকে তার রিক্সায় উঠান। হ্যাঁ, ডিপটি ভাই  ক্লাস ফাইভ পাস করা একজন রিক্সা চালক, বাড়িয়াখালি গ্রামে রিক্সা চালান। পাশাপাশি ইমতুর মা রাশেদা বেগমের নানা বাড়ির দেখভাল করেন। 

হাসমতুল্লাহ চৌধুরী বাড়ি, বাড়িয়াখালি, চট্টগ্রাম। বাড়ির সম্মুখে মুক্ত আকাশের নিচে বিশাল উঠান। উঠানে প্রচুর ঘাস এবং তার এক কোণে গোয়াল ঘরে গরু ঝিমুচ্ছে। পূর্ব দিকে বিশাল পুকুর। পুকুর পাড়ে প্রচুর গাছপালা। আম গাছে প্রচুর কাঁচা আম। উত্তর দিকে খড়ের গাদা। ইমতু, মাহি মুগ্ধ চোখে এসব অবলোকন করছে। মাহি বলেই ফেলল, "কী সুন্দর!"
ইমতু বলল, "হ্যাঁ, ঠিক মায়ের মুখে যেমন শুনেছি।" 

ইমতুর মায়ের নানার বাড়িটি ছয়টি বিরাট কক্ষ বিশিষ্ট। পূর্ব দিকের একটি কক্ষে তাদের ডিপটি মামা থাকার বন্দোবস্ত করে বাজারের দিকে ছুটলেন। ওদিকে ইমতু আর মাহি পুকুরে গোসল সেরে তাদের শয়ন কক্ষে বিশ্রামের উদ্দেশ্যে নরম বিছানায় পিঠ এলিয়ে দিল। 

দুপুরে খাওয়ার পর সন্ধ্যার পূর্ব পর্যন্ত শয়ন কক্ষেই অবস্থান করল দুই কিশোর। অবশেষে ওরা সন্ধ্যায় বেরিয়ে উঠোনে পাটি পেতে বসল। খানিকবাদে তাদের ডিপটি মামাও এসে বসে বললেন, "তোমাদের কিছু প্রয়োজন হলে বলবা।"
ইমতু মাথা নাড়িয়ে বলল, "অবশ্যই মামা।"
"কাল সকালে গ্রামটা একবার ঘুরে দেইখো।"
"আচ্ছা মামা।" 
মাহি বলল, "মামা! এখানে নাকি একটা পরিত্যক্ত কমিউনিটি সেন্টার আছে? এখন নাকি সেখানে ভূতের আড্ডা?"
ডিপটি মামা চোখ সরু করে বললেন, "তোমরা জানলা কিভাবে?"
মাহি কিছু বলার আগেই ইমতু বলল, "ছোট মামার মুখে শুনেছি।"
"নিলয় বলেছে এই কথা?"
"হ্যাঁ।"
"তোমরা ওদিকটায় রাতে যাবে না।"
"কেন?"
"তোমাদের ভালোর জন্যই বলছি, যাবে না। ওরা তোমাদের ক্ষতি করবে।"
"কারা?"
"সেখানে ভূত-প্রেত বাস করে। মওকামতো কাউকে বাগে পেলে ভর করে তার ওপর।  আছর করে নানারকম আজগুবি কাণ্ড ঘটায়।"
"বলেন কি মামা?"
"হ্যাঁ।"
মাহি ভয়ে শিউরে ওঠে। ইমতু রহস্যের গন্ধ পায়। হয়তো এখানে শাহিনকে পাওয়া যাবে, ইমতু ভাবে। 
"তোমারা বস, আমি রাতের খাবারের বন্দোবস্ত করি গিয়ে।"
"ঠিক আছে মামা।"
তাদের ডিপটি মামা চলে গেলেন রান্নাঘরের দিকে। উনি চলে যেতেই ইমতু মাহিকে জিজ্ঞেস করল, "কিছু বুঝলি?"
মাহি মাথা চুলকে বলল, "না।"
"রহস্য!"
"দেখ ইমতু, আগেরবার ছিল শিশু পাচারকারি। এবার কিন্তু সত্যি ভূত।"
"তুই আসলেই বোকা। ভূত বলতে কিছু আছে নাকি?"
"তাহলে?"
ইমতু একবার আশেপাশে তাকাল। এরপর গলার স্বর নিচু করে বলল, "আপাতত যা বুঝলাম, এক সংঘবদ্ধ চক্র ভূতের ভয় দেখাচ্ছে।"
"কিন্তু কেন?"
"নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য।"
মাহি একটু ভেবে বলল, "কী স্বার্থ থাকতে পারে?"
ইমতু গভীর চিন্তায় পড়ে গেল, আসলেই কী সেই স্বার্থ? 
মাহি আবারো বলল, "ঐ পরিত্যক্ত কমিউনিটি সেন্টার নয় তো?"
ইমতু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, "মানে?"
"ঐ কমিউনিটি সেন্টার থেকে গ্রামের মানুষদের দূরে রাখার জন্যই হয়তো।"
"কিন্তু এটা তো পরিত্যক্ত!"
"সেটা অবশ্য ঠিক, এটা পরিত্যক্ত।"
ইমতু একটু ভেবে বলল, "এই কমিউনিটি সেন্টারের ভেতর কিছু নেই তো?"
মাহি জিজ্ঞেস করল, "কি থাকবে?"
"এই ধর, টাকা পয়সা কিংবা চোরাই মালামাল?"
"থাকতেও পারে। এক কাজ করি।"
"কী কাজ?"
"কাল সকালে একবার দেখে আসি।"
"কী?"
"কমিউনিটি সেন্টারটা।"
মাহি কিছু বলল না। ইমতু আঁচ করল মাহি ভয় পাচ্ছে। 
"কী রে ভয় পাচ্ছিস?"
"না, না।"
"ভয়ের কিছু নেই, ভুত-প্রেত বলতে কিছু নেই।"
মাহি আর কিছু বলল না, চুপ চাপ বসে রইল। আকাশে অনেক তারা। ঝিঁঝিঁ পোকা ডাকছে। চারদিক অন্ধকার। ঘরে সামনের কক্ষে ইমতুর ডিপটি মামা মোমবাতি জ্বালিয়েছেন। জানালা দিয়ে কিশোরদের দিকে তাকিয়ে দাঁত বের করে হাসলেন।

ভোরের শেষে মিষ্টি সকাল। দুই কিশোর বেরিয়ে পড়েছে সেই ভূতুড়ে কমিউনিটি সেন্টার পর্যবেক্ষণের উদ্দেশ্যে। গ্রামের এক মুরুব্বিকে জিজ্ঞেস করায় তিনি কমিউনিটি সেন্টারের পথ দেখিয়ে দিলেও কেমন যেন অদ্ভুত দৃষ্টিতে ইমতু আর মাহির দিকে তাকিয়েছিলেন যেন ভিন গ্রহের এলিয়েন দেখছিলেন। 

জায়গাটা বেশ নিরিবিলি। আশেপাশে কোন বাড়ি ঘর নেই। কমিউনিটি সেন্টারের গেটে তালা ঝুলছে। পাশেই ছোট্ট একটা পুকুর। সাথেই এবড়ো থেবড়ো রাস্তা। চারদিকে প্রচুর গাছপালা আর ঝোপ ঝাড়।  তাই সূর্যের দীপ্ত আলো প্রবেশে বাঁধার সম্মুখীন হচ্ছে। আশেপাশের এ সব কিছু পর্যবেক্ষণ করে বাড়ির পথ ধরল ওরা।

শয়ন কক্ষের বিছানায় আলসে মাহি শুয়ে আছে। ইমতু বসে কি যেন ভাবছে। 
"কী ভাবছিস?"
মাহির কথায় ইমতুর হুশ ফিরল, বলল, "একটা জিনিস তোর চোখে পড়েছে?"
"কী?"
"কমিউনিটি সেন্টারের গেটে তালাটা?"
"হ্যাঁ তালা তো ঝুলবেই, এটাই স্বাভাবিক।"
"কিন্তু তালাটা একেবারে নতুন।"
"তো?"
"এখনো বুঝতে পারছিস না?"
"না।"
"কমিউনিটি সেন্টারটা পুরাতন, পরিত্যক্ত।"
"হ্যাঁ, তো?"
"তাহলে তালাটাও পুরাতন হওয়ার কথা তাই না? কিন্তু গেটে তো সদ্য বাজার থেকে কিনা নতুন তালা ঝুলছে। এ থেকে কী বুঝা যায় বল তো?"
"কী?"
"কমিউনিটি সেন্টারে কারো যাওয়া আসা আছে।"
"তুই একদম নিশ্চিত হলি কিভাবে?"
"তুই নিজেই একটু ভেবে দেখ। নতুন তালার সাথে ভূতুড়ে কান্ডের কী সম্পর্ক থাকতে পারে?"
এতক্ষণ পর মাহির বোধোদয় হলো, বলল, "এভাবে তো ভেবে দেখিনি!"
ইমতু মুচকি হাসল, বলল, "আরো চালাক হতে হবে বন্ধু।"
 মাহিও মুচকি হাসে। কিছুক্ষণ দু'জনই চুপচাপ। মাহি নীরাবতা ভেঙ্গে বলল, "এখন আমরা কী করব?"
"অপারেশনে যাব।"
"কবে?"
"আজ রাতেই।"
"কিন্তু ডিপটি মামা?"
"উনাকে না জানিয়েই ঘর থেকে বের হব।"
"কাজটা কী ঠিক হবে?"
"তুই চিন্তা করিস না আমি সামলে নিব।"
"কয়টায় বের হবি?"
"রাত দুইটা আড়াইটা।"
"প্ল্যানটা বল।"
"শুন!"
ইমতু নিচু গলায় মাহিকে তার প্ল্যানটা বুঝিয়ে বলল।  

রাত দুইটা পেরিয়ে আড়াইটা। পরিত্যক্ত কমিউনিটি সেন্টারের পাশেই সেই ছোট্ট পুকুর। পুকুরের পাশেই চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে গাছগাছালি, ঝোপ ঝাড়। ঝোপ ঝাড়ে মশার কামড় সহ্য করে গা ঢাকা দিয়েছে ইমতু আর মাহি। চোখ স্থির হয়ে আছে কমিউনিটি সেন্টারের দিকে। প্ল্যান অনুযায়ী দশ মিনিট পর মাহি ইমতুকে ইশারা দিয়ে ঝোপের আড়াল থেকে বেরিয়ে ধীর পায়ে হেঁটে কমিউনিটি সেন্টারের দিকে এগোতে থাকে। হঠাৎ পুকুরে কে যেন ঝাপ দিল। মাহি চমকে পুকুরের দিকে তাকাল কিন্তু কিছু দেখল না। হঠাৎ... হঠাৎ কী?
হঠাৎ কে যেন মাহির পিছনে এসে দাঁড়াল। কাঁধে হাত রাখতেই মাহি চমকে পিছনে তাকাতেই প্রচন্ড ভয়ে পিছনে সরে গেল। দ্রুত টর্চ লাইট জ্বালাতেই দেখতে পেল এক বিকৃত চেহারার অশরীরী, সারা শরীরে রক্ত। দাঁতে, ঠোঁটে রক্তের বন্যা। এই মাত্র বুঝি কারো ঘাড়ে কামড় বসিয়ে রক্ত খেয়ে এসেছে। বিকৃত চেহারার অশরীরী এক পা দুই পা করে এগোচ্ছে মাহির দিকে। মাহি ভয়ে পিছনের দিকে দৌড় দিতেই পিছলা খেয়ে পড়ে কোমরে ব্যাথা পায়। ভয় আর ব্যাথার সংমিশ্রণের কারণে সে উঠতে পারল না। হঠাৎ এক ডানপিটে কিশোরের আবির্ভাব। পিছন থেকে ঝাপিয়ে পড়ল অশরীরীর উপর। মুখের উপর হাত রেখে হ্যাঁচকা টানে মুখোশ খুলে ফেলল। বেরিয়ে এলো আসল চেহারা। অন্ধকারে লোকটিকে চেনা চেনা লাগল কিশোরের। তখনই কে যেন আড়াল থেকে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করল। ধোঁয়ায় আছন্ন হয়ে গেল চারদিক। কে যেন পেছন থেকে ডানপিটে কিশোরের ঘাড়ে আঘাত করল। ব্যাথায় সে কুকিয়ে উঠল । অসহনীয় ব্যাথার কারণে মাটিতে বসে পড়ল। ওদিকে সুযোগ বুঝে মুখোশবিহীন লোকটি মাটি থেকে উঠে দৌড় দিতে চাইলেও পারল না। কারণ তার সামনে ইমতু দাঁড়ানো। ইমতু ধাওয়া দিল। লোকটি পিছনের দিকে দৌড় দিতেই সেই ডানপিটে কিশোরের শরীরের সাথে ধাক্কা খেয়ে এবড়ো থেবড়ো রাস্তায় ছিটকে পড়ে গেল। তখনই দূর থেকে পুলিশের গাড়ির শব্দ শোনা গেল। অবস্থা বেগতিক দেখে কমিউনিটি সেন্টারের ভেতর থেকে অপরাধীরা একে একে পালাতে শুরু করল। কিন্তু কে জানত পুলিশ রাস্তার দু'দিক থেকে আসছে। পুলিশ বাহিনী অপরাধীদের পাকড়াও করল। কমিউনিটি সেন্টার থেকে উদ্ধার করল  প্রাচীন কালের মুদ্রা, গহনা, মূর্তি সহ প্রচুর প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। এছাড়াও অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করল শাহিনকে।

বিকেল বেলা। উপরে আকাশ। তাতে আজ কালো মেঘের আনাগোনা। নিচে পুকুর। পুকুর ঘাটে তিন কিশোর বসে আছে। 
"ফায়াজ! আমাদের সাহায্যের জন্য ধন্যবাদ।"
"আমি তোর বন্ধু, এইটুকু সাহায্য করতেই পারি।"
"তুই ওদিন ওভাবে পিছন থেকে ঝাপিয়ে না পড়লে মাহিকে মনে হয় মেরেই ফেলত।"
"আমার তো এখনো বিশ্বাসই হচ্ছে না, তোর ডিপটি মামাই ছিল অশরীরী।" 
ইমতু কিছু বলল না। একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল।
এভাবেই শেষ হলো শাহিনকে উদ্ধারের অভিযান অর্থাৎ অপারেশন শাহিন।  শাহিনের অবস্থা আশংকাজনক। ওর শরীরে প্রচুর ঘুমের ড্রাগস পেয়েছে ডাক্তাররা। শাহিন কী বাঁচবে? নাকি না ফেরার দেশে চলে যাবে?...
 
 
                                    (সমাপ্ত)           


আবরার নাঈম চৌধুরী
 ফাইন্ড আলাউদ্দিন টাওয়ার, সরকারি মহিলা কলেজ রোড, কুমিল্লা, বাংলাদেশ।










   

 



  
   

 


   

               
  
    

 
      
  

   
        



মন্তব্যসমূহ

সপ্তাহের পছন্দ

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। ত্রয়োত্রিংশ সংখ্যা ।। জুন ২০২৪

ছোটোদের আঁকা ।। মনামি মন্ডল, রায়সী চক্রবর্তী ও নিশান্তিকা নস্কর।

ছড়া ।। একটা খুশি ।। তীর্থঙ্কর সুমিত

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 32nd issue: May 2024

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় - ১২ ।। সেপ্টেম্বর ২০২২

ধারাবাহিক উপন্যাস ।। তিতলির বিশ্বভ্রমণ ।। ডাঃ অরুণ চট্টোপাধ্যায়

ছড়া ।। ও জোনাকি ।। কান্তিলাল দাস

দুটি ছড়া ।। গোবিন্দ মোদক

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। আত্মপ্রকাশ সংখ্যা ।। অক্টোবর ২০২১

মাসের পছন্দ

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। ত্রয়োত্রিংশ সংখ্যা ।। জুন ২০২৪

কবিতা || মর্যাদা || অবশেষ দাস

ছোটোদের আঁকা ।। মনামি মন্ডল, রায়সী চক্রবর্তী ও নিশান্তিকা নস্কর।

নিবন্ধ ।। কোনারক মন্দিরের ভয়াবহতা ।। সুজয় সাহা

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 32nd issue: May 2024

ছোটর কলম ।। বইপড়া ।। উন্নীত কর্মকার

গল্প ।। রবীন্দ্রজয়ন্তী ।। কুহেলী ব্যানার্জী

ছড়া ।। একটা খুশি ।। তীর্থঙ্কর সুমিত

অণুগল্প ।। পুরস্কার ।। চন্দন দাশগুপ্ত

বছরের পছন্দ

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। ত্রয়োত্রিংশ সংখ্যা ।। জুন ২০২৪

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচীপত্র ।। 29th Issue: February

প্রচ্ছদ ও সূচীপত্র ।। 24th issue: September 2023

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 31st issue: April 2024

প্রচ্ছদ ও সূচীপত্র ।। 25th issue: October 2023

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 32nd issue: May 2024

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 30th issue : March 2024

প্রচ্ছদ ও সূচীপত্র ।। 23rd issue: August 2023

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচীপত্র ।। 26th issue: November 2023

অতি প্রিয়

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। আত্মপ্রকাশ সংখ্যা ।। অক্টোবর ২০২১

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। দ্বিতীয় সংখ্যা ।। নভেম্বর ২০২১

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 4th issue: January 2022,

নিবন্ধ ।। শিশু-কিশোর সাহিত্যবলয়ে শিশুরাই যেন ব্রাত‍্য না থাকে ।। অরবিন্দ পুরকাইত

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 7th issue: April 2022

নিবন্ধ ।। দেশীয় উদ্ভিদ কেন গুরুত্বপূর্ণ ? ।। ডঃ চিত্তরঞ্জন দাস

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় - ১০ ।। জুলাই ২০২২

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় - ১১ ।। আগস্ট ২০২২

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র : 8th issue: May 2022

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় - ১২ ।। সেপ্টেম্বর ২০২২