Featured Post
নিবন্ধ ।। কবিতায় কল্পকথা ও কল্পচিত্র ।। রণেশ রায়
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
কবিতায় কল্পকথা ও কল্পচিত্র
রণেশ রায়
কবি এই ব্রহ্মলোক ও সমাজকে প্রত্যক্ষ করলে তার সঙ্গে ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ায় যুক্ত হলে তাঁর মনোজগতে তা প্রতিফলিত হয়, তা তাঁর কল্পনায় ভিন্ন মাত্রা পায়।এক উপলব্ধির জন্ম হয়।এই উপলব্ধিকে সংকেত ও উপমার সাহায্যে ব্যঞ্জনসিক্ত অর্থবহ করে তুলতে পারলে তাকে শব্দাবলীতে কথামালায় সাজিয়ে ছন্দময় করে তুলে তাল লয়ে ভরপুর করে তুলতে পারলে তাকে কবিতা বলা হয়।
কবিতার জন্য কবিতা লেখায় আমি বিশ্বাস করি না। কবির নিজের চেতনা অনুযায়ী ভাবনার ছন্দবদ্ধ কথামালায় রূপান্তরকে আমি কবিতা বলে মনে করি। জীবনকে সঠিক ভাবে বুঝে জীবনবোধকে কবিতায় রূপ দিতে চেষ্টা করা হয় কবিতায়। তাই জীবনের কোলাহল জীবন যুদ্ধ তাকে কেন্দ্র করে যে মনন তারই প্রতিফলন ঘটাবার অবিরাম প্রচেষ্টা দেখা যায় কবির লেখা কবিতায়। এ এমন কোন বিমূর্ত ভাবনার উপস্থাপন হতে পারে না যা কোন অর্থ বহন করে না। যাকে পাঠক যেভাবে বোঝে সেভাবে বুঝবে বলে দায় সারা হয়। বরং আমরা মনে করি কবির নিজের ভাবনা জীবন বোধের যেন ছান্দনিক বিচ্ছুরণ ঘটে কবিতায়। বিমূর্ত ভাবে উপমার সাহায্যে তা পরিবেশিত হলেও যেন তা কবির ভাবনা জীবন বোধ ধরে অর্থবাহক হয়ে ওঠে, কবিকে তাঁর ভাবনা নিয়ে উপস্থিত হতে দেখা যায় পাঠকের দরবারে। এখানে নিজের ভাবনাকে লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করাকে মদত দেওয়া ঠিক নয়। সেটা করলে কবিতা ও কবি এক পলায়নবাদি ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়। কবিতায় নেহাত বিনোদন শেষ কথা হতে পারে না। সাহিত্যের আঙিনায় কবিতার একটা সামাজিক দায়িত্ব থাকে কারণ সাহিত্য সৃষ্টি করা প্রয়োজন সুস্থ্য সমাজ গড়ে তোলায় তার দায়িত্ব পালন করার জন্য।
আমি কবির কল্পকথাকে নেহাত কবির কল্পনার জালবোনা বলে মনে করি না। এক দ্বান্দ্বিক সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে বিষয়টাকে সামগ্রিকতায় বিচার করা দরকার বলে মনে করি। এই সামগ্রিকতা হল এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড যাকে প্রকৃতি বলে জানি, মানব সমাজ আর তার সঙ্গে মানুষের মনোজগত। প্রকৃতি আর মানুষ নিয়ে বস্তুজগত। প্রকৃতিরই অংশ মানুষ তার বিশেষ বৈশিষ্ট্য নিয়ে বাঁচে যা তার চেতনায় আলোকিত। সেটা তার মনোজগত। এই মনজগতকে কবি কথায় প্রকাশ করেন ভাষায় লিপিবদ্ধ করেন উপমার সাহায্যে তুলে ধরেন। প্রকৃতি ও মানুষ আন্তঃসম্পর্কে সম্পর্কিত। আবার মানুষে মানুষে সম্পর্ক নিয়ে এই সমাজ। প্রকৃতি মানুষকে নিয়ে এই বস্তু জগৎ বা ভৌত জগৎ। কবি তাঁর ইন্দ্রিয় দিয়ে এই বস্তুজগতকে অবলোকন করেন তার বিবর্তন প্রক্রিয়া বোঝার চেষ্টা করেন। তাঁর মনোজগতে প্রতিবিম্বিত হয় এই প্রকৃতি এই মানব সমাজ প্রকৃতিকে মানব সমাজকে অবলোকন করার সঙ্গে সঙ্গে। বস্তুজগতের প্রতিফলন ঘটে কবির স্নায়ুজগতে। তাঁর মনোজগৎ উদ্ভাসিত হয়। আবার মনোজগৎ এইভাবে যে বার্তা পায় সেটা তাঁকে উপলব্ধিতে সাহায্য করে। অতীত বর্তমানকালকে তিনি যেভাবে অবলোকন করেন তা তাঁকে জীবনটাকে বুঝতে সাহায্য করে। তাঁর জীবন বোধ তৈরি হয়। তা দিয়ে তিনি কল্পনার মালা গাঁথেন। ভবিষ্যতের দিক নির্দেশ করতে চাযন। এর থেকে সৃষ্টি হয় কল্প কথা যা কবিতার ভাষায় রূপ পায়। ছন্দ তাল লয়ে কবিতায় সেজে ওঠে। অর্থাৎ বস্তুজগত যেমন মনোজগতের ওপর ক্রিয়া করে তেমনি মনোজগৎ প্রকৃতি জগৎ মানব সমাজের দিক নির্দেশ করে তাকে বুঝতে সাহায্য করে। মানুষের দৈনন্দিন জীবনে হাসি কান্না প্রেম ভালোবাসা জীবন যুদ্ধকে বোঝার চেষ্টা করে। এসবই কবির কল্পকথা হয়ে কবিতায় রূপ পায়। সেখানে মনোজগতের প্রকৃতিজগতের ওপর ক্রিয়া প্রতিক্রিয়াটাও গুরুত্বপূর্ন। এখানেই বস্তু জগৎ ও মনোজগতের মধ্যে দ্বান্দ্বিক সম্পর্কটা তাৎপর্যপূর্ণ যা আর বস্তুজগতকে বাদ দিয়ে কল্প কথা থাকে না। কবিতায় উভয় জগতের বিষয়টা মূর্ত হয়ে ওঠে। তা বাস্তব অবস্থা থেকে উঠে এসে কবির কল্পজগতে এক কল্প চিত্র সৃষ্টি করে। কবি আবেগ তাড়িত হয়ে ওঠেন তাঁর ভাবের জগতে তার ভাবনা কবিতা হয়ে ওঠে তাঁর কল্পকথায়। এর সঙ্গে এক কল্প চিত্র সৃষ্টি হয় যা একান্তভাবে কবির সৃষ্টি। একে নেহাত ভাববাদ ভাবা ঠিক নয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে আমি কবিতা লেখায় বিশ্বাস করি।
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন