[ছবি: ইন্টারনেট মাধ্যম থেকে সংগৃহীত]
চাঁদনী ভিখিরি নয়
শংকর ব্রহ্ম
পাশের ঘরে বসে মা টিভি সিরিয়াল দেখছে। বুবাই এ ঘরে বসে বাবার দেওয়া হোমটাক্সের অংকগুলি করছে। একটা অংক কিছুতেই মেলাতে পারছে না সে।
বুবাই ঠোঁট কামড়ে ভাবছে, কিভাবে সলভ করা যায়। এমন সময় দরজার বাইরে কেউ একজন,
বলল, ভিতরে আসতে পারি?
বুবাই বলল, কে?
- আমি ভূতনীর মা।
সে আবার কে, ভূতনীর মা? বুবাই মনে মনে ভাবল?
তবুও মুখে বলল, এসো।
বলতেই দেখে, একগলা ঘোমটা টেনে সাদা থান পরা এক মহিলা ঘরে ঢুকে এলো।
- কি চাই?
- আমার ভূতনী কদিন ধরেই বায়না ধরেছে যে, সে আপনার সঙ্গে বন্ধুত্ব করবে।
- কোথায় সে?
- ওই তো বাইরে দাঁড়িয়ে আছে।
- ওকে ভিতরে আসতে বলো।
- ভিতরে আসতে লজ্জা পাচ্ছে।
- লজ্জার কি আছে? আসতে বলো ভিতরে।
- আয়রে ভূতনী ভেতরে আয়
- এসে আমায় নে যা মা তুই
- ভূতনীর মা বাইরে গিয়ে, ভূতনীকে ভেতরে নিয়ে এলো।
ভূতনী তখন লাজুকভঙ্গীতে জড়োসড় হয়ে একপাশে দাঁড়ালো। কী সুন্দর ছিপছিপে গড়ন, চাঁদপনা মুখটি তার। তাকে তার মা, ভূতনী বলে কেন ডাকে বুঝতে পারল না বুাবই।
- তুমি আমার বন্ধু হবে?
- ভূতনী মাথা কাৎ করে সম্মতি জানাল।
ভূতনীর মা তখন বলল, তোরা তবে গল্প কর। আমি কাজ সেরে পরে এসে তোকে নিয়ে যাব।
ভূতনী তার মার কথায়ও মাথা নেড়ে সম্মতি জানাল। বুবাই তখন তাকে তার টেডি বিয়ারটা দিয়ে বলল, তুমি এটা নিয়ে খেল। আমি ততক্ষণে অংকটা শেষ করে নিই, তারপর তোমার সঙ্গে গল্প করব।
টেডি বিয়ারটা হাতে পেয়ে খুব খুশি হল ভূতনী।
বুবাই আবার অংকে মন দিল।
টিভি সিরিয়াল দেখা শেষ করে, মা এ ঘরে এসে বুবাইকে বলল, কার সাথে কথা বলছিলি রে এতক্ষণ?
ভূতনী ততক্ষণে খাটের নীচে লুকিয় পড়েছে, ভয়ে।
- কই, নাতো। বই পড়ছিলাম।
- ওহ্ ,আচ্ছা।
বলেই, বুবাইরের মা তার রান্নার কাজ সারতে রান্না ঘরে চলে গেল।
ভূতনী খাটের তলা থেকে বেরিয়ে এসে বলল,
- উনি তোমার মা হন?
বুবাই অংক করতে করতেই, মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো।
- তোমার পুতুলটা কী সুন্দর।
বুবাই এবার চোখ তুলে তার দিকে তাকাল। আর ভাবল, কী মিষ্টি মেয়েটার কন্ঠস্বর।
বুবাইয়ের এতদিন শুনে এসেছিল, ওরা সব নাকি, নাকি সুরে কথা বলে। বুবাই দেখল,তার সে ধারণা একবারে ভুল।
বুবাই বলল, পুতুলটা তোমার পছন্দ? তুমি নেবে?
ভূতনী খুশিতে ঘাড় কাৎ করে সম্মতি জানালো।
- ঠিক আছে, তুমি যাবার সময় নিয়ে যেয়ো।
- ঠিক তো?যাবার সময় আবার না বলবে না তো?
- না , ওটা তোমাকে আমি আমাদের বন্ধুত্বের স্মৃতি স্বরূপ দিলাম।
- আচ্ছা। আমিও মাকে বলব, আমাদের বন্ধুত্বের স্মৃতি ন্বরূপ, তোমাকে একটা মন্ত্র শিখিয়ে দিতে।
বুবাই মনে মনে ভাবল, বলে কি ভূতনী? তাকে তার মা ভূতের মন্ত্র শিখিয়ে দেবে? তার বিশ্বাস হচ্ছিল না।
তবু বিস্ময় প্রকাশ না করে, বলল,বেশ। বলে দেখ, শিখিয়ে দেয় কিনা?
ভূতনী এবার জেদের সঙ্গে বলল, - আমি বললে, দেবে না মানে?
বাইরে তখন কলিং বেল বেজে উঠল। বাবা ফিরল বোধহয়।
ভূতনী বলল, তবে আমি এবার যাই ?
বুবাই বলল,আচ্ছা কাল এসো আবার।
সে চলে যাচ্ছিলো।
বুবাই বলল, পুতুলটা ফেলে গেলে যে? এটা নিয়ে যাও।
সে লাজুক হাতে পুতুলটা তুলে, কোলে নিয়ে,
বাইরে চলে গেল। বাইরে তার মা অপেক্ষা করছিল,তাকে নিয়ে চলে গেল সেদিনের মতো।
বুবাই দেখল ভূতনীর সাথে কথা বলতে বলতে কখন অঙ্কটা মিলে গেছে ।
পরের দিন ভূতনী আবার এলো তার মাকে নিয়ে।
বুবাই তাকে দেখে বলল, আরে, এসো এসো।
বসো এখানে। তোমার নাম কি?
- ভূতনী।
- ওটা বাজে নাম,আমি তোমাকে চাঁদনী বলে ডাকব।
- বেশ তাই ডেকো।
- তুমি আমার সাথে বন্ধুত্ব করতে চাও কেন?
- তোমাকে আমার ভাল লাগে।
- বেশ। তুমি জানো আমার নাম কি?
- জানি তো
- কি, বলতো?
- বুবাই।
- কি করে জানলে?
- আমরা ভূতেরা সব জানতে পারি।
- তাই নাকি?
- হ্যাঁ গো। আমার মা তোমাকে মন্ত্র শিখিয়ে দিলে দেখবে ,তুমিও সব জানতে পারবে।
- বাঃ, বেশ হবে তাহলে।
চাঁদনীর মা বাইরে দাঁড়িয়েছিল। চাঁদনী মাকে ভিতরে ডেকে বলল, এই মা, আমার বন্ধুকে মন্ত্রটা শিখিয়ে দে যা -
ভূতনীর মা ভিতরে এসে বলল,
- ভূতের মন্ত্র, মানুষকে শেখানোটা কি ঠিক হবে?
- ঠিক, বেঠিক আমি জানি নে, তুই ওকে মন্ত্রটা শিখিয়ে দিবি কিনা বল?
- আচ্ছা, কাল শিখিয়ে দেব
- না, আজই, এক্ষুনি দে -
ভূতনীর মা ইতস্ততঃ করে বলতে শুরু করলো,
" হ্রীং ক্রীং ট্রীং ফট
ঘটে যা ঝটপট। "
ভূতনীর মা বলল,
এই মন্ত্রটা তিনবার মন দিয়ে বলে, যা চাইবে, তাই পাবে।
বুবাইয়ের মা পাশের ঘর থেকে বলল, কার সঙ্গে কথা বলছিস রে বুবাই?
বুবায়ের মুখে এসে গেছিল, চাঁদনীর সঙ্গে। সামলে নিয়ে বলল,কারও সঙ্গে না তো মা, আমি বই পড়ছি।
বুবায়ের মা এ ঘরে আসতেই, ওরা দু'জন হাওয়ায় মিলিয়ে গেল। একটু পড়েই বাবা ফিরল অফিস থেকে বাড়ি । ওরা তখন চলে গেছে।
পরেরদিন, বুবায়ের মা টেডি বিয়ারটা না দেখতে পেয়ে, বুবাইকে বলল, কিরে টেডি বিয়ারটা দেখছি না। কোথায় রেখেছিস ওটা?
বুবাই বলল,ওটা কাল আমি একটা ভিখিরি মেয়েকে দিয়ে দিয়েছি
- কেন রে?
- ও খুব লোভের দৃষ্টিতে পুতুলটা দেখছিল। আমি বললাম, নিবি পুতুলটা?
- হ্যাঁ দাও । বলে, ও খুব আশা করে চাইলো, তাই আমিও দিয়ে দিলামওটা।
বুবাইয়ের মা আর কিছু না বলে, নিজের কাজে চলে গেল।
বুবাই তখন ভাবল, মাকে সত্যি কথাটা বললে কি আর মা তা বিশ্বাস করত? মোটেও না। তাই ভিখিরি মেয়ের কথা মিথ্যে বলে তাকে সারতে হয়েছে ব্যাপারটা।
পরেরদিন সন্ধ্যায় বুবাই আশা করে রইল, চাঁদনী আসবে। সেদিন এলো না। তারপর দিনও না। তারপর আর এলো না সে। সাতদিন এ ভাবে চাঁদনী না আসায়,বুবাই খুবই অস্থির হয়ে পড়ল।
সে মন্ত্র পড়ল -
" হ্রীং ক্রীং ট্রীং ফট
চাঁদনী চলে আয় ঝটপট। "
একটু পড়েই চাঁদনী এসে হাজির। আগের মতো লাজুক ভঙ্গীতে নয়, তার বদলে, দীপ্ত ও তেজী ভঙ্গী।
- কি আমায়, ডাকছো কেন?
- তুমি এতদিন আসনি কেন?
- আমি আর আসব না।
- কেন?
- আসব কেন? আমি কি ভিখিরি। তোমার কাছে পুতুলটা ভিক্ষে চেয়ে নিয়েছি?
এই নাও তোমার পুতুল, আমি ফেরৎ দিয়েদিলাম। তুমি আমাকে ভিখিরি বলেছো। আমি আর কখনও আসব না তোমার কাছে। আর আমার মার দেওয়া মন্ত্রশক্তিও আমি ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। ওই মন্ত্রে আর কোন কাজ করবে না।
বলেই চাঁদনী আকাশে মিলিয়ে গেল চাঁদের সঙ্গে।
____________________________________________________________________________________________
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন