সুব্রত দাস
"চারু পিসি তোমার মতো গল্প বলতে পাত্তো?", চোখ বড় বড় ক'রে পেয়ারা খেতে খেতে বললো দোলা। শীতের দুপুরবেলায় বাড়ির কচিকাঁচারা একজোট হয়েছে লালদিদার কাছে। গল্প শুনতে। বাড়ির গাছের পেয়ারামাখা হয়েছে ছোটদের জন্য। নরম রোদের আলোয় পেয়ারামাখার সঙ্গে লালদিদার গল্প সে এক ভারি মজার ব্যাপার।
"পারতো বইকি। তার কাছে আমরা ছোটবেলায় কত গল্প শুনেছি, এই তোমাদের মতো। বাড়ির নানা অনুষ্ঠানে আমার বাবা তাকে ডেকে নিয়ে আসতেন। এই যেমন ধরো শ্রী কৃষ্ণের জন্মদিনে জন্মাষ্টমী পালন করা হবে বাড়িতে। কত লোক আসবে। খোল কত্তাল বাজিয়ে কীর্তন গান হবে। আর কতরকম ফলপাকুড়, খিচুড়ি, তালের বড়া, আরো কত কী!"
"চারুপিসি তোমায় খুব ভালোবাসতো? তোমায় বকতো না?" এবার চম্পা বললো একবার এদিক ওদিক তাকিয়ে। লালদিদা খিলখিল করে হেসেই ফেললেন চম্পার কান্ড দেখে।
পরিমলবাবু এ বাড়িতে আজ বছর চারেক হলো ঘর ভাড়া নিয়ে রয়েছেন। স্ত্রী ও তার কলেজ পড়ুয়া বোনের সঙ্গে। তার নাম মিনি। সে চম্পার পিসি। উঠতে বসতে সময় অসময়ে চম্পাকে পড়াতে বসায়। সবসময় পড়তে ভালো লাগে? চম্পারও ভালো লাগতো না। আর তাই মাঝে মধ্যে মিনিপিসির বকুনি শুনতে হতো। এসব কিছুই জানতেন লালদিদা। তাই চম্পার কান্ড দেখে হাসতে হাসতে বললেন, "চারুপিসি কিন্তু আমাদেরও বকতেন, তবে পড়া নিয়ে নয়, একটা বিশেষ সময়ে।"
পেয়ারা খাওয়া শেষ হলে, একটা নীল রঙের তোয়ালে হাত মুছে লালদিদা পান চিবোতে চিবোতে গল্প শুরু করলেন। "আমাদের
চারুপিসি থাকতেন কাকিনাড়ায়। সে বছর বাড়িতে বেশ বড় ক'রে জন্মাষ্টমী পালন করা হয়েছিল।
সমস্ত বাড়ি জুড়ে প্যান্ডেল করা হয়েছিল। বাড়ি ভর্তি লোক এ লোকারণ্য। হইচই চেঁচামেচি আর ছোটোদের ছুটোছুটিতে বাড়ির অবস্থা হয়েছিল জমজমাট। তালের বড়া বানাবার জন্য চারুপিসিকে ডাকা হল। সারি সারি তাল আর হাড়ি হাড়ি গুর রাখা হয়েছিল রান্নাঘরের এক কোনায়।
চারুপিসি তালের বড়া বানাতে বসেছেন। আর আমরা বাড়ির ছোটরা সবাই ভিড় করেছি। ইয়াব্বড় লোহার কড়াইতে তালের বড়া ভাজা হচ্ছে। খাওয়ার লোভে জিভে জল আসলে কি হবে, আমাদের বকবকানিতে তালের বড়া খাওয়া তো দূরের কথা, উল্টে চারুপিসির বকুনি জুটছিল ঘন ঘন।
একসময় তালের বড়া বানানো শেষ হলো। কিন্তু খালি হাতেই এক এক করে সরে পড়লাম একরাশ মনখারাপ নিয়ে। ওদিকে খোল কত্তাল বাজিয়ে কীর্তন গান হচ্ছে। এমন সময় চারুপিসি আমাকে ডেকে বললেন - আশা, যা তোর সব বন্ধুকে ডেকে নিয়ে আয় ছোট দালানে। একটা জিনিস দেবো। যা শিগগির যা। এই বলে চারুপিসি চলে গেলেন। ছোট দালানের দিকে।
সে সময় আমাদের বাড়ির পেছনে ছিলো ছোট দালান। বাড়ির মা কাকিমা পিসিমাদের গল্প করবার জায়গা। সবাইকে ডেকে নিয়ে ছোট দালানে গিয়ে দেখি সে এক অবাক কান্ড! ছোট দালানের বারান্দায় লম্বা ক'রে শতরঞ্চি পাতা হয়েছে। শালপাতার থালায় তালের বড়া সাজানো। চারুপিসি আমাদের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বললেন এবার তোরা সবাই বসে খেয়ে নে। আমাদের আনন্দ তখন দেখে কে! তালের বড়া বানাবার সময় এন্তার বকুনি। আর এখন?
________________________________________________________________________________________
সুব্রত দাস
গরিফা, পোঃ রামঘাট, সূচকঃ ৭৪৩১৬৬,
জেলাঃ উত্তর ২৪ পরগণা, পশ্চিমবঙ্গ,
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন