Featured Post
অণুগল্প ।। ঝুমুক ঝুমুক ।। ব্রজ গোপাল চ্যাটার্জি
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
ঝুমুক ঝুমুক
ব্রজ গোপাল চ্যাটার্জি
"কেমন আছো কাকু"---?
হঠাৎ'ই কোত্থেকে এসে টুক করে আমার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম !
দেখি এক ঋজু প্রত্যয়ী দৃঢ় মেরুদন্ডের দীপ্তিময়ী মেয়ে আমার সামনে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। গলায় ঝোলানো আই কার্ডে লেখা ঝিমলি, মানে আমার পূর্ব পরিচিত সেই ঝিমলি ঠাকুর ।
এবার সত্যিই চমকে উঠে হতভম্ব আমি, ভ্যাবাচাকা খেয়ে একেবারেই থ।
সেই কোন কালে----তা প্রায় দশ এগারো বছর তো হবেই, আমার পরিচিত ছিল এই ঝিমলি।
শীতের সময় আমাদের গ্রামে খেজুর গুড় করতে আসা দলটার মধ্যে, এক জনের সদ্য মা মরা মেয়ে।
মেয়েটার বয়স ওই মেরেকেটে দশ তখন। বাড়িতে দেখার কেও ছিল না বলে, বাবার সঙ্গে যাযাবর জীবন কাটাতে এসেছিল আমাদের গ্রামে। মহলের এক গেছোর মেয়ে, আমাদের গ্রামের অপরিচিত অতিথি হয়ে। গ্রামের শেষের পুকুর পাড়ে, খেজুর পাতার বেড়া দেওয়া,তালপাতার ছাওয়া ওদের অস্থায়ী বাসা। মেয়েটা তখন ঘাগরা পড়তো। কলা বিনুনী লম্বা চুলে লাল সবুজ ফিতে বাঁধতো। পায়ে সাবেকি বিহারী ঘরানার একজোড়া জুতসই চওড়া নুপুর। একটা মিষ্টি ঝুমুক ঝুমুক শব্দ হতো, ওর চলনের প্রতিটি পদক্ষেপে। আচার-ব্যবহারও ছিল ভারি মিষ্টি ,ওই নুপুরের শব্দেই মতোই। গায়ের শ্যামলা রঙ্গে অসম্ভব সুন্দর নাক-মুখের গড়ন গঠন।
একদিন দুর্ভাগ্যক্রমে, পা পিছলে গাছ থেকে পড়ে গেল ওর বাবা। মাথায় সাংঘাতিক চোট পেল। গ্রামের অনেকের সঙ্গে আমিও চিকিৎসার জন্য চাঁদাতোলা, ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া, হাসপাতালে ভর্তি করানো---এইসব করে, ওকে আমার স্ত্রীর কাছে নিয়ে আসি। আমার ঘরের অতিথি করে। কেমন যেন একটা মায়া মায়া ভাব জন্মে গিয়েছিলো আমার ঘরে থাকা কালীন। অল্প
পাঁচ দিনেই সব শেষ। হতভাগী পাঁচ দিনের সন্ধ্যায়, মরা বাপের লাশ নিয়ে পাড়ি দিল নিজের গ্রামে।
কালের নিয়মে ধীরে ধীরে আমার বিস্মৃতির অতল তলে তলিয়ে গেল ঝিমলি। বাতাসে মিলিয়ে গেল তার পায়ের নুপুরের সেই মোহময় ঝুমুক ঝুমুক শব্দটা।
কিন্তু আজ-----------!
আজ এতোদিন পরে, ভেলোরে চিকিৎসা করাতে এসে সেই ঝিমলিই এখন আমার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। কেতাদুরস্ত পোশাকের উপর সাদা এপ্রন চড়িয়ে, কাঁধে স্টেথো ঝুলিয়ে একেবারে ফিটফাট প্যারামেডিক্যাল ইন্টার্ন ।
ভাবছি কাকে আগে আমি ধন্যবাদ জানাবো ? মানে কাকে আমার আগে ধন্যবাদ জানানো উচিৎ ?
জীবন যুদ্ধে লড়ে যাওয়া লড়াকু সৈনিক ঝিমলিকে ? না অদৃশ্য শক্তি নিয়ে ঝিমলিকে লড়িয়ে দিয়েছেন যিনি, সেই সর্ব-শক্তিমান ঈশ্বর কে ?
যে সমস্যা নিয়ে ভেলোরে চিকিৎসা করাতে গিয়েছিলাম, তা আজ সম্পূর্ণ নিরাময় হয়েছে। তবে ভেলোর থেকে যে সমস্যা নিয়ে ফিরলাম, তার জন্য উড়ে যেতে বসেছে রাতের ঘুম।
চোখ বুজলেই শুনতে পাই ঝিমলির উত্তরণের সেই মোহময় পদশব্দ---"ঝুমক ঝুমক ঝুম ঝুম"।
________________________________________
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন