Featured Post

ছড়া ।। আকাশটাকে খোঁজে ।। দীনেশ সরকার

ছবি
আকাশটাকে খোঁজে দীনেশ সরকার            পড়তে বসলে জানলা দিয়ে মন ছুটে যায় দূরে গাইছে পাখি ওই যে গাছে মিষ্টি-মধুর সুরে। কিংবা যখন হাত বাড়িয়ে আকাশ আমায় ডাকে পড়ার পাতায় মন আমার কি বাঁধা তখন থাকে?   পূবের হাওয়া কড়া নাড়ে যখন আমার দোরে কিংবা অলি গুনগুনিয়ে চতুর্দিকে ঘোরে প্রজাপতি পাখা মেলে ওড়ে ফুলের মেলায় কখন যেন অবুঝ এ মন যায় হারিয়ে হেলায়।   কাঠবেড়ালি কাটুস্‌-কুটুস্‌ আমার দিকে তাকায় মন তখন কি আটকে থাকে পড়ার বইয়ের পাতায়? টুনটুনিটা তিড়িং-বিড়িং পুচ্ছ নাচায় গাছে মনটা বাঁধা তখন কি আর অঙ্কখাতায় আছে?   অঙ্ক কষতে ভুল হয়ে যায়, পড়া যাই যে ভুলে স্যারের বকা মাঝে মাঝেই খাই আমি ইস্কুলে। মনকে আমি কত্ত বোঝাই, মন তবু কি বোঝে সুযোগ পেলেই জানলা দিয়ে আকাশটাকে খোঁজে।   ******************************************** দীনেশ সরকার ১৪০ ডি, হিজলি কো-অপারেটিভ সোসাইটি, প্রেমবাজার, খড়্গপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর---- ৭২১৩০৬

ছোটদের পাতা ।। গল্প ।। নিমফুলী গ্রামের আতঙ্ক ।। সূর্য মন্ডল

নিমফুলী গ্রামের আতঙ্ক

                  - সূর্য মন্ডল


মানুষের জীবনে এমন কিছু কিছু ঘটনা ঘটে যা কখনোই বিশ্বাস যোগ্য হয়ে উঠে না যা শুধু কল্পনায় মনে হয়। সেটা ভৌতিক কিছু হোক কিংবা অন্য কিছু।
 এখন এমন একটা গল্প বলবো যা বিশ্বাস করা তো দূরের কথা যা কেউ কখনো স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি এমনটা ঘটতে পারে ।
  বেশ কয়েক বছর আগে নিমফুলী বলে একটা গ্রামে কিছুদিন ধরে অদ্ভুত অদ্ভুত ঘটনা ঘটতো। কিন্তু কেউ সেই ঘটে যাওয়া ঘটনা নিয়ে মাথা ঘামাতো না সকলে ভাবতো আজকাল এইসব প্রায় ঘটে থাকে। 
  এমন করে কয়েকদিন এমন অদ্ভুত ঘটনা ঘটা বন্ধ হলো। লোকজন ও সেই সব বিষয় নিয়ে কিছু ভাবতো না। সকলে সেই ঘটনা গুলোকে ভাবনা ভেবে উড়িয়ে দিতো।
 এই ভাবে বেশ কিছু দিন চলার পরে হঠাৎ একদিন নিমফুলী গ্রামে ঘটলো এক ভয়ংকর বিপদ। যা নিমফুলী গ্রামে এক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির উদয় হলো। গ্রামের পশ্চিম প্রান্তে আছে একটা বিরাট শশ্মান অন্যান্য গ্রামের থেকে এখানে লোক আসে মড়া পোড়াতে কারণ এই অঞ্চলের মধ্যে নিমফুলী গ্রামেই একমাত্র শশ্মান আছে আর অন্য কোনো গ্রামে নেই।শশ্মানটা একেবারে পশ্চিম প্রান্তের শেষ দিকে মানে পুরো জঙ্গলের ভিতরে সেই জন্য এখানে যত মড়া আসে সব দিনের বেলাতে সন্ধে বা রাত্রি বেলায় কেউ মরা পোড়াতে আসে না সকলের মনে একটু হলেও তো ভয় আছে শশ্মানটা যেহেতু জঙ্গলের মধ্যে তাই ভুত অথবা কোনো বন্য পশুর ভয়ে কেউ সন্ধের দিকে আসে না।
  তো সেই শশ্মানে ঘটলো ভয়ঙ্কর বিপদ। কারা মড়া পোড়াতে এসে শশ্মানের একধারে ফেলে দিয়ে গেছে সেটা আবার আধ পোড়া অবস্থায়। এই কথাটা নিমফুলী গ্রামের জমিদার ত্রিদিবকান্তের কাছে পৌঁছানো মাত্র তিনি বেশ রাগের চোটে বললেন উঠলেন - এটা কাদের কাজ? 
 ত্রিদিবকান্তের সহপাটি রজনীকান্ত বললো, সেটাই তো জানি না ।
 ত্রিদিবকান্ত বললো, মড়াটাকে ওখানে পরে থাকতে কারা দেখেছে? তাদের কাছেই শোনা যাক তারা এই বিষয়ে কিছু জানে কিনা!
 রজনীকান্ত বললো, সিধু আর চয়ন। ওরা ভোর বেলায় মাঠে যাচ্ছিলো ঐ জঙ্গলের পথ দিয়ে সেই সময় দেখে শশ্মানের ওখানে মড়াটা পরে আছে আধ পোড়া অবস্থায়।
  এরই মধ্যে গ্রামের কিছু লোক ত্রিদিবকান্তের কাছে এসে হাজির হয়েছে। তাঁদের দেখে ত্রিদিবকান্ত বললো, কি ব্যাপার?কি হয়েছে? 
 তাঁদের মধ্যে থেকে একজন বললো, আজ্ঞে জমিদার মশাই একটা কথা বলার ছিলো। ঐ শশ্মানের এক ধারে যে মরাটা পরে আছে সেটা আধ পোড়া নয়।
 লোকটির কথা শুনে ত্রিদিবকান্ত চমকে উঠলেন। বললেন, তবে।
 লোকটা বললো, ওটা আধ খাওয়া।
 লোকটার কথা শুনে ত্রিদিবকান্ত রীতিমতন ঘাবড়ে গেলেন। চুপকরে সকলের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বললো , তাহলে ওখানে গিয়ে ব্যাপারটা একটু দেখে আসা দরকার কি বলো সবাই!
 ত্রিদিবকান্তের প্রস্তাবে সকলে একমত হয়ে বললো, হ্যাঁ আপনি একটু দেখবেন চলুন। গ্রামে আজকাল যা ভৌতিক ঘটনা ঘটছে তাতে বলা যায়না কি থেকে কি হয়ে যাই। চলুন জমিদার বাবু আপনি একটু চলুন ওখানে কথাটা বলে রামনাথ একটু চুপ করলো। তারপর সকলে চলে গেলো। 
  ত্রিদিবকান্ত যাবে বিকাল বেলায় মড়াটা দেখতে। তিনি রজনীকান্তকে বললেন , ব্যাপারটা কি বলো তো? কোনো ভৌতিক ব্যাপার কিছু আছে নাকি? 
 রজনীকান্ত বললো , তাই তো মনে হচ্ছে। আধ খাওয়া একটা মড়া শশ্মানটার ধারে অমন ভাবে পরে আছে এটা তো মনে হচ্ছে কোনো ভুতের কাজ মানুষ তো আর এমন কিছু করবে না তাই না কথাটা বলে রজনীকান্ত চুপ করে গেলো। তার চুপ করে যাওয়ার কারণটা হচ্ছে গ্রামের এই সব ভৌতিক কান্ড কথায় তার মনে মনে একটু ভয় ভয় লাগছিলো। 
  গ্রামটার এখন খুব নাম। আগে এতটাও কেউ নিমফুলী গ্রামটাকে চিনতো না। একাধারে পড়েছিলো গ্রামটা। সেই সময় গ্রামে শুধু দু-তিনটে ঘর মাত্র আর ছিলো এই শশ্মানটা যেটা প্রায় দুশো বছর পুরোনো। গ্রামে এই দু তিন ঘরের মধ্যে একজন ছিলো ত্রিদিবকান্তের ঠাকুরদাদার বাড়ি রামরতন মিত্র। এই রামরতন মিত্র এবং তার সাথে আরো কয়েকজন মিশে নিমফুলী গ্রামটাকে সুন্দর করে তুললো। শুধু শশ্মানটাকে অন্য কোনো জায়গায় সরালো না যেখানে ছিলো সেখানেই রয়ে গেলো। তারপর নিমফুলী গ্রামটার বেশ নামডাক হলো দেখতে দেখতে গ্রামে কুড়ি থেকে পঁচিশ লোকে ঘর করে থাকতে শুরু করলো। এই ভাবে প্রচুর লোক এই গ্রামে এসে থাকতে শুরু করলো। 
 একদিন গ্রামে ঘটলো এক বিপদ। শশ্মানের ধারে আধ খাওয়া অবস্থায় একটা মড়া পাওয়া গেলো। লোকে সেই ঘটনায় প্রচন্ড ভয় পেয়ে গেলো। এমনিতে গ্রামের পাশে শশ্মানটা তার মধ্যে এমন একটা কান্ড। 
 ব্যাপারটা খুঁটিয়ে দেখতে কেউ তেমন ভাবে শশ্মানটাতে যেতে চাইলো না সকলে এই কথা শুনে সিধিয়ে রইলেন ঘরের মধ্যে। তখন ত্রিদিবকান্তের ঠাকুরদাদা রামরতন মিত্র এই গ্রামের একজন নামকরা লোক গ্রামের মোড়ল ও বলা যেতে পারে। তখন রামরতন মিত্র ঠিক করলেন শশ্মানে গিয়ে পুরো ব্যাপারটা একটু খুঁটিয়ে দেখবেন তার সাথে সঙ্গী হলো আরো দুইজন সিধু আর কানাই তারাও চললো রামরতন মিত্রের সাথে। 
শশ্মানটার কাছে গিয়ে রামরতন মিত্র দেখলো অন্য গ্রামের কয়েকটা লোক এসে মড়াটার কাছে জড়ো হয়েছে । রামরতন সেখানে পৌঁছাতে কিছু লোক সরে গিয়ে জায়গা করে দিলো রামরতন মিত্রকে। রামরতন মিত্র কিছুক্ষন সেখানে দাঁড়িয়ে শশ্মানের ধারে একটা বট গাছ তলায় এসে বসলেন তাকে বসতে দেখে সিধু ও কানায় ও এসে বসলেন ।
কানায় রামরতন মিত্রের পাশে বসে বললো, কি বুঝঝেন ?
রামরতন কানায়ের কথার কোনো উত্তর দিলো না শুধু হালকা করে একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে আবার কি যেন ভাবতে লাগলেন। তাকে দেখে সিধু বললো, কি এত ভাবছেন মোড়ল মশায়? মনে হচ্ছে খুব চিন্তায় পরে গেছেন!
 রামরতন এবারে বললো, চিন্তা তো একটু হচ্ছে। মনে হচ্ছে গ্রামের অবস্থা এবার থেকে খারাপ হয়ে যাবে! যা সব কান্ড ঘটছে।
সিধু একটু চুপ করে থেকে বললো, গ্রামে মনে হচ্ছে ভুতের উপদ্রপ বেড়েছে! না হলে এই সব কান্ড কখনো মানুষে করতে পারে। 
সিধুর কথায় কানায় বললো, তুই একটু চুপ করতো সারাক্ষন ভুত ভুত করিস না। আর ভুত যদি হয় তো কিছু একটা করাযাবেক্ষণ বুঝলি।
 কানায়ের কথায় সিধু চুপ করে গেলো। কিছুক্ষন ভেবে নিয়ে রামরতন মিত্র বললো, এটা ভুতের কাজ তার জন্য আমাদের ভালো ওঝা ডাকতে হবে ছোট খাটো ওঝাতে হবে না কারণ মনে হচ্ছে এটা কোনো সাধারণ ভুতের কাজ নয়! না হলে মোড়াটার অমন অবস্থা হতো না। 
  সিধু আর কানায় রামরতন মিত্রের কথায় সাই দিয়ে বললো, হ্যাঁ , এটাই ভালো হবে। 
 রামরতন মিত্র একটু হাপ ছেড়ে বললো , আজকালকার অবস্থা খুব খারাপ। এখন ব্যবস্থা না নিলে পরবর্তী কালে বড়ো সরো কোনো কিছু ঘটতে পারে। কথাটা বলে রামরতন মিত্র উঠে গেলো আর তার সাথে সিধু আর কানায়।
 সেই রাত্তিরে নিমফুলী গ্রামে ঘটে গেলো বিশ্রী একটা ঘটনা। রাত্রি বেলায় গ্রামের প্রত্যেকের চালে ঢিল ইট পড়তে লাগলো। আর তার সাথে শোনা গেলো বিকট বিকট হাসির আওয়াজ। 
  সকালে সবাই উঠে দেখলো ঢিল ইট মারার চোটে অনেকের ঘরের চাল ভেঙে গেছে এদিকে গ্রামের সিধেশ্বর মন্ডলের দু-খানা গরু উধাও হয়ে গেছে। শুধু গরু নয় অনেকের হাঁস মুরগি এমনকি ছাগল পযন্ত উধাও।
  এই ঘটনার পর দলে দলে লোক ভিড় করতে লাগলো রামরতন মিত্রের কাছে সমস্ত ঘটনা বলতে। এদিকে সমস্ত কথা শুনে রামরতন মিত্র আরো গভীর চিন্তায় পরে গেলো এত সুন্দর গ্রামে এত বিশ্রী বিশ্রী ভৌতিক কান্ড ঘটতে লাগলো। রামরতন মিত্র সকলকে বললো, তোমরা বেশি চিন্তা ও ভয় পেওনা ব্যাপারটা আমি দেখছি । রামরতন মিত্রের কথা শুনে একজন বললো, কি বলছেন মোড়ল মশাই ভয় পাবোনা ছেলে পিলে নিয়ে থাকতে হয় এখন তো শুধু গরু ছাগলের উপর দিয়ে যাচ্ছে, বলা যায়না যদি কোনো মানুষের উপর দিয়ে এমন কান্ড ঘটে যাই! 
 রামরতন মিত্র কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বললো, কথা টা তো ঠিক। 
আর একজন বললো, কিছু একটা ব্যাবস্থা করুন না হলে যে বড়ো বিপদ ঘটতে পারে। তখন কি হবে !
রামরতন মিত্র বললো, ঠিক আছে আমি একটা কিছু ভাবছি কি করা যায় তোমরা এখন বাড়ির দিকে যাও আর বাচ্চাদের একটু সামলে রেখো। 
      রামরতন মিত্রের কথা শুনে সকলে বাড়ির পথে চলে গেলো। শুধু থেকে গেলো গ্রামের গোয়ালা দীননাথ। সে বললো, আমার হয়তো আর এই গ্রামে থাকা হবে না! অন্যথায় চলে যেতে হবে বুঝলে তো মোড়ল মশাই। যা হচ্ছে গ্রামে তাতে তো তেমন ভরসা পাচ্ছি না ।
 রামরতন মিত্র বললো, কেনো অন্য কোথাও যাবে এখানে সকলে তো আছে তবে তোমার সমস্যা কি দীননাথ? ভয় করছে বুঝি? 
 দীননাথ বললো, এমন ভৌতিক ব্যাপারে কে না ভয় পায় বলুন! কিন্তু আমার একটা বিষয়ে বেশি ভয় হচ্ছে সেটা হলো আমার গোয়ালের গরু গুলোর জন্য। কাল রাতে সিধেশ্বরের গরু গেছে আজ রাতে যে আমার গরু গুলো যাবে না তার কি কোনো বিশ্বাস আছে ? আমার সংসার এই গরু গুলোর উপরে নির্ভর করে আছে যদি গরু গুলোর কিছু হয়ে যায় তবে আমরা তো না খেতে পেয়ে মরবো।
 রামরতন মিত্র বললো, তুই একটু শান্ত হতো দীননাথ আমি তো বলেছি ব্যাপার খানা আমি দেখছি। কিছু ব্যবস্থা করা যাই না কি! তুই এখন বাড়িতে যা আর একটু গোয়াল ঘরের দিকে নজর রাখিস একটু ঠিক আছে। দীননাথ চলে গেলো যাওয়ার সময় বলে গেলো তুমি আমাদের একমাত্র ভরসা মোড়ল মশাই। 
  দীননাথ চলে যাওয়ার কিছুক্ষন পরে সিধু আর কানাই এসে ঢুকলো রামরতন মিত্রের বাড়িতে রামরতন মিত্র তখন মাথায় হাত দিয়ে বেশ চিন্তা করছে । অনেক কিছুর ভার এখন রামরতন মিত্রের মাথার উপর।
 সিধু রামরতন মিত্রের দিকে তাকিয়ে বললো, কি এত চিন্তা করছো?
 সিধুর গলা শুনে তার দিকে একটু তাকালো রামরতন মিত্র । তারপর বললো , ওঝাকে ডাক সিধু গ্রামের অবস্থা খুব খারাপ।
সিধু বললো, সবটা শুনলাম। সত্যি এবার ওঝাকে ডাকতে হবে। 
 কানায় বললো, তাহলে চল সিধু এখনি বেরিয়ে পড়ি সন্ধের দিকে ফিরে আসা যাবে। তাহলে আজকের রাতটা একটু শান্তি মিলবে।
 রামরতন কানায়ের কথায় বললো, হ্যাঁ, তোরা এখনি বেরিয়ে পর সবে মাত্র দশটা বাজে সন্ধের আগে ফিরতে পারবি। আর এমনিতেও তো বেশি দূরে নই ওঝার বাড়ি। তোরা এখনি চলে যা গুছিয়ে।
  সিধু আর কানায় বেশিক্ষন দাঁড়িয়ে না থেকে ওঝার বাড়িতে যাওয়ার জন্য বেরিয়ে পড়লো। ওঝার বাড়ি অন্য গ্রামে নিমফুলী গ্রামের থেকে তিন ঘন্টার রাস্তা পেরিয়ে মাঠের মাঝখানে ওঝার বাড়ি নাম রামানন্দ পাহাড়ি লোকে তাকে নন্দ বলে ডাকে এটা তার শুনে শুনে সয়ে গেছে।
  সিধু আর কানায় যখন ওঝা রামানন্দ এর বাড়িতে পৌছালো তখন সূর্য মাথার উপরে গণ গণ করতেছে। দুপুরের রোদ্দুরে মাঠের মাটি গুলো ফেটে গিয়েছে।  
    ওঝা রামানন্দের বাড়ির সামনে গিয়ে সিধু একবার ডাকলো কিন্তু বাড়ির ভিতর থেকে কোনো আওয়াজ এলো না । কানায় বললো, সিধু আর একবার ডাক। সিধু আবার ডাকলো, নন্দ ওঝা বাড়ি আছো না কি ?
এবারে বাড়ির ভিতর থেকে ক্ষীণ একটা স্বর শোনা গেলো, আছি। কিন্তু কে তোমরা? আমার সাথে এখন কি দরকার তোমাদের? 
 সিধু বললো, ভুতের সম্মন্ধে একটু শুনতে এসেছি। বলবে?
 নন্দ ওঝা বললো, ভিতরে এসো তোমরা।
 দুজনে ভিতরে গিয়ে দেখলো একটা বহু পুরানো চেয়ারে নন্দ ওঝা বসে আছে। দেখে মনে হলো বয়েস হয়েছে ষাট সত্তর বছর হবে।সিধু আর কানায়কে দেখে নন্দ ওঝা বললো, বলি কিসের জন্য আমার কাছে আসা? কোনো ভুতের পাল্লায় পড়েছো বুঝি? আমি জানি কারণ ভুতের পাল্লায় না পড়লে কেউ এই রামানন্দকে ওঝাকে স্বরণ করে না।
 সিধু বললো, ভুতের পাল্লায় পড়েছি । এখন তুমি না গেলে প্রচুর বিপদে পড়বো। একটি বার নিমফুলী গ্রামে চুলন।
  ওঝা সিধুর কথায় কোনো আপত্তি করলো না। বললো, ঠিক আছে চল বলে ঘাড়ে একটা ঝোলা ঝুলিয়ে সিধু আর কানায়ের সঙ্গে বাইরে বেরিয়ে এলো এসে দেখলো সন্ধে নেমে গেছে পাখির দল কিচিরমিচির করে বাসায় ফিরছে সূর্য তখন মেঘের কোলে ডুব দিয়েছে।
  সিধু আর কানায় যখন রামানন্দ ওঝাকে নিয়ে নিমফুলী গ্রামে ফিরে এলো তখন সন্ধে সাতটা বেজে গেছে গ্রামে কয়েকটা ঘরে বাতি জ্বলছে আর কয়েকটা ঘর এখনো অন্ধকার হয়ে আছে। 
 সিধু আর কানায় চলে এলো রামরতন মিত্রের কাছে সাথে রামানন্দ ওঝা। রামরতন তখন ঘরের মধ্যে বসে ছিলেন সিধুর ডাকে বাইরে এসে দেখলেন ওঝা এসেছে সাথে একটা বড়ো সরো ঝোলা।
   ওঝাকে দেখে রামরতন মিত্র বললো, আসুন ভিতরে আসুন আপনি এখন আমাদের বাঁচাতে পারেন এই ভুতের হাত থেকে। 
 ওঝা বললো, আমাকে একটু সবকিছু খুলে বলতে হবে। ব্যাপারটা কি?
 রামরতন মিত্র তারপর সমস্ত ঘটনা একে একে বিস্তারিত ভাবে বলতে লাগলো । আর বললো, আমাদের এই ভুতের হাত থেকে রক্ষা করুন ।
  রামানন্দ ওঝা সমস্ত কিছু শোনার পর চুপ করে রইলো কিছুক্ষন। তারপর কাঁধে থাকা ঝোলা থেকে একটা একটা মালা বার করলেন মালাটা রুদ্রাক্ষের মালা যা খুবই শক্তিশালী। তারপর রামরতন মিত্রের দিকে তাকিয়ে বললো, কোনো ভয় নেই আমি এর ব্যবস্থা করছি আজ রাতেই। ওঝার কথা শুনে রামরতন ও সিধু কানায় একটু স্বস্থি পেলো।
  ঘরের মধ্যে ওঝার সাথে রামরতন মিত্র কথা বলেছেন এমন সময় বাইরে শুরু হলো চেঁচামেচি রামরতন মিত্র বাইরের এই চেঁচামেচিতে একটু ঘাবড়ে গিয়ে বললো, সিধু দেখতো বাইরের ব্যাপারখানা কি? এত চেঁচামেচি কিসের? কোনো বিপদ ঘটলো কিনা? দেখ দেখ তাড়াতাড়ি।
 সিধু চেঁচামেচি শুনে বাইরে গিয়ে দেখলো দীননাথের বাড়ির সামনে বেশ ভিড় জমিয়েছে গ্রামের লোক।সিধু সেখানে গিয়ে দেখলো একটা মড়া গরুর পাশে বসে দীননাথ কাঁদছে আর বলছে আমার সব শেষ হয়ে গেলো। সিধু ব্যাপারটা পুরোপুরি দেখে রামরতন মিত্রকে গিয়ে বললো, মোড়ল মশায় একটা সাংঘাতিক কান্ড ঘটেছে।
 রামরতন মিত্র চমকে উঠে জিজ্ঞসা করলো, কি হয়েছে সিধু? বাইরে এত চেঁচামেচি কিসের? কিছু হয়েছে নাকি?
 সিধু বললো, দীননাথের গুরু কে অর্ধেক খেয়ে বাকিটা ফেলে রেখে গেছে। তাই নিয়ে দীননাথ এখন কপাল চাপড়াচ্ছে। কি আর করবে বেচারা।
  রামরতন সব শুনে ওঝাকে বললো, শুনলে তো কি ব্যাপার? এবার কিছু একটা করুন গ্রামটা তো একেবারে সর্বনাশ হতে চললো।
 ওঝা বললো, কোনো ভয় নেই আমি দেখছি। শুধু আমাকে শশ্মানের কাছে একটু নিয়ে চল। 
    তারপরে রামানন্দ ওঝা শশ্মানে গিয়ে একটা গন্ডি কেটে ঝাঁড়ফুক করে নিমফুলী গ্রামকে ভুত এবং ভৌকিক ঘটনা থেকে রক্ষা করলো। 
      কিন্তু কে গ্রামের ক্ষতি করছিলো সেটা জানা যাইনি রামানন্দ ওঝা অনেক চেষ্টা করেও সেই ভুতের কোনো খোঁজ করতে পারিনি শুধু ভুতের হাত থেকে গ্রামটাকে তিনি সেদিন রক্ষা করেছিলেন। 

    এই সমস্ত ঘটনা ত্রিদিবকান্তের জানা। কিন্তু সে তো তার ঠাকুরদাদাদের সময়ের ঘটনা সেটা এত বছর পরে আবার নিমফুলী গ্রামে!তিনি মনে মনে একটু ভয় পেয়ে গেলেন তিনি ভয় পেয়েছেন এটা ভেবে যে সেই ঠাকুরদাদাদের সময়কার ঘটনা যদি হয় তখন তিনি কি করবেন কোথায় খুঁজে পাবে সেই রামানন্দ ওঝাকে? তিনি কি আর এখন আছে !
  এই সময় রজনীকান্ত ত্রিদিবকান্তের বাড়িতে এসে হাজির হলো। রিজনীকান্ত কে বেশ চিন্তিত লাগছে দেখে ত্রিদিবকান্ত জিজ্ঞাসা করলো, কি ব্যাপার রজনীকান্ত বেশ চিন্তিত লাগছে মনে হচ্ছে! কিছু হয়েছে নাকি? 
 রজনীকান্ত হাঁপাতে হাঁপাতে বললো, কালু মাইতির একটা গরু মাঠের মাঝ খানে মড়া অবস্থায় পাওয়া গেছে। কে যেন গরুটাকে কিছুটা খেয়ে ফেলে দিয়ে গেছে কাল রাতে।
 ত্রিদিবকান্ত বেশ ভয় পেয়ে গেলো কথাটা শুনে তিনি বুঝতে পারলেন তার ঠাকুরদাদাদের সময়ে ঘটে যাওয়া ঘটনা আবার শুরু হয়েছে। এবারে নিমফুলী গ্রামে একটা ভৌতিক ঘটনা ঘটতে চলেছে। কিন্তু এর থেকে রেহাই কি করে পাওয়া যাবে? তেমন কোনো ওঝাকে তো জানা নেই! 
 রজনীকান্ত বললো, কালকের মড়াটা নিয়ে কিছু ভাবছেন কি? 
 ত্রিদিব কান্ত বললো, হ্যাঁ, সেটার কি কোনো কিছু ব্যবস্থা হয়েছে?
 রজনীকান্ত বললো, হ্যাঁ, মড়াটাকে গ্রামের কিছু লোক মিলে পুড়িয়ে দিয়েছে। ঐ ভাবে তো আর ফেলে রাখা যায় না! গ্রামে সব ছোট ছোট ছেলে পুলের বাস। 
 কথাটা শুনে ত্রিদিবকান্ত শুধু বললো, সত্যি তাই।
      কিছুক্ষন কথা বার্তা বলে রজনীকান্ত চলে গেলো। এদিকে ত্রিদিব কান্ত বেশ চিন্তায় পড়ে গেছে। কি করে এই ভুতের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়! 
      সেদিন সন্ধে বেলায় ঘটলো আর এক ঘটনা বাইরে হৈচৈ শুনে ত্রিদিবকান্ত ঘর থেকে বেরিয়ে এসে দেখলেন গ্রামের শেষ প্রান্তে থাকা বট গাছ থেকে একটা আলো ভেসে আসছে আর সেই দৃশ্য দেখতে গ্রামের সমস্ত লোকের সমাগম হয়েছে। 
  ব্যাপারটা ঠিক ত্রিদিবকান্ত বুঝে উঠতে পারলেন না। তিনি ভাবতে লাগলেন আলোটা কিসের? 
 ঠিক সেই সময় একজন ছুটে এসে সকলকে জানালো ওটা ভুতের চোখ থেকে বেড় হওয়া এক আলো সকলে ঘরের মধ্য চলে যাও না হলে বিপদ ঘটতে পারে। লোকটার কথা শুনে দাঁড়িয়ে থাকা সমস্ত লোকজন ভয়ে যে যার ঘরের মধ্যে চলে গেলো। ত্রিদিবকান্ত ও সেখানে আর দাঁড়িয়ে না থেকে চলে গেলো এটা ভেবে যে সকালে ব্যাপারটা দেখা যাবে। 
   সকাল হতে ত্রিদিবকান্তের কানে গেলো কাল রাতে ঐ বট তলায় একটা মৃত ব্যাক্তিকে পাওয়া গেছে আধ খাওয়া অবস্থায়। ত্রিদিবকান্ত কথাটা শুনে সেখানে দেখতে গেলো। গিয়ে দেখলো সেখানে কিছু মানুষ ভিড় জমিয়ে আছে ত্রিদিবকান্ত তাদের কে সরিয়ে দিয়ে দেখলো তিনি যা শুনেছেন তা সত্যি। মড়াটাকে ঐ অবস্থায় দেখে একটু কষ্ট হলো ত্রিদিবকান্তের এবং তার সাথে ভয় ও পেলেন । তিনি ভাবতে লাগলো কি করা যায়?
 সেই সময় একজন ত্রিদিবকান্তের কাছে এসে বললো, কিছু একটা করুন বাবু না হলে যে বড়ো একটা সর্বনাশ হবে। আজ নিমাইয়ের সাথে ঘটলো কাল আর একজনের সাথে।এরকম চলতে থাকলে তো আমরা আর রাস্তা ঘাটে চলার সাহস পাবো না ।
 ত্রিদিবকান্ত বুঝবে পারলো মৃত ব্যক্তিটার নাম নিমাই। তারপর লোকটাকে বললো, নিমাই ওখানে গিয়েছিলো কি করতে? 
লোকটা বললো, বাবু ওর একটা ছাগল ছানা আছে সেটা রাতে বাড়িতে না আশায় নিমাই খুঁজতে বেরিয়েছিলো। তারপর এই সব ঘটে গেলো। লোকটা চলে যাওয়ার কিছুক্ষন পরে ত্রিদিবকান্ত বাড়িতে চলে গেলো।
   ত্রিদিবকান্ত আসার পরে সেখানে রজনীকান্ত এসে বললো, গ্রামটাতে আর শান্তিতে থাকা হবে না যা সব ভৌতিক কান্ড ঘটছে।
    ত্রিদিবকান্ত এতক্ষন চুপ করেছিলো রজনীকান্তের কথা শেষ হওয়ার পরে বললো, কি করি বলো তো রজনী ? তোমার কোনো ওঝার খবর জানা আছে? যদি থাকে তাড়াতাড়ি নিমফুলীতে আনার ব্যাবস্থা করো। রজনীকান্ত কিছুক্ষণ ভেবে নিয়ে বললো - আমার ছোটবেলায় যেখানে বেড়ে উঠা মানে আমার শৈশব গ্রাম চাঁদনীপুর ওখানে একটু খোঁজ নিয়ে দেখলে হত যদি কোনো ওঝা কে পেয়ে যাই! শুনেছিলাম চাঁদনীপুরে একটা নাম করা ওঝা থাকে কিন্তু আমি তাকে কখনো চোখে দেখিনি ওখানে থাকতে ও কখনো দেখেনি ওনাকে।
 ত্রিদিবকান্ত বললো - তুমি একটু খোঁজ নেও তাহলে। নাহলে শেষ মেশ ভুতের হাতে সকলের প্রাণ যাবে দেখছি। 
রজনীকান্ত দেখছি বলে উঠে গেলো। রজনীকান্ত চলে যাওয়ার পর ত্রিদিবকান্ত উঠে একবার বাইরে এসে দাঁড়ালো। চাঁদের আলোয় কি সুন্দর লাগছে পরিবেশটা। একটা মনোরম দৃশ্য ভেসে উঠছে চোখের সামনে। চারিদিক কোনো শব্দ নেই একেবারে নিস্তব্ধ। কিছুক্ষন বাইরে থেকে ত্রিদিবকান্ত ঘরের মধ্যে চলে গেলো। রাত বাড়ছে চারিদিক থেকে ঝিঁঝি পোকার ডাক শোনা যাচ্ছে। এখন গ্রামে কেউ বেশি রাত অবধি বাইরে থাকে না। গভীর অন্ধকার আর নিশ্চুপে নিমফুলি গ্রামটা এক আলোড়নের সৃষ্টি করেছে। 
   রাত বেশ গভীর। আকাশে এক ফালি চাঁদ উজ্জ্বল ভাবে জ্বলছে। হঠাৎ শশ্মানের দিক থেকে এক বিকট আওয়াজ হতে লাগলো। আওয়াজটা ক্ষনে ক্ষনে থামছে আর ক্ষনে ক্ষনে শুরু হচ্ছে। আওয়াজটা এতটায় ভয়ানক যে গ্রামের সকলের ঘুম উড়ে গেলো। কেউ জানালা দিয়ে উঁকি মেরে দেখতে লাগলো। আবার কেউ ভয়ে সিঁথিয়ে রইলো ঘরের মধ্যে।
   ত্রিদিবকান্ত হুড়মুড়িয়ে উঠলো বিছানা থেকে। বাইরে আসার সাহস পাচ্ছে না জমিদার ত্রিদিবকান্ত। ঘরের বারান্দায় এসে চাকর ভজাকে ডেকে বললো, এই বাইরে কিসের আওয়াজ হচ্চে রে?
ভজা বললো, বাবু আওয়াজটা শশ্মানের দিক থেকে আসছে। কি বিকট ভয়ংকর আওয়াজ। 
ত্রিদিবকান্ত আর বাইরে বেরোলো না ঘরের মধ্যে চলে গেলো। অপেক্ষা করতে লাগলো সকালের জন্য। গ্রামের অর্ধেক লোক জেগে রইলো। আর সারা রাত শশ্মানের থেকে কখনো কান্নার আওয়াজ , কখনো হাসির আওয়াজ , আবার কখনো চিৎকার ভেসে আসতে লাগলো। 
  সকাল হতেই ত্রিদিবকান্ত আবার ডেকে পাঠালেন রজনীকান্তকে। রজনীকান্ত আসতেই ত্রিদিবকান্ত জিজ্ঞাসা করলেন , কালকে রাতের ঐ বিকট আওয়াজটা শুনেছিলে। রজনীকান্ত বললো, হ্যাঁ শুনেছিলাম।
ত্রিদিবকান্ত বললো, এবার একটা কিছু করো রজনী। গ্রামের লোক জন প্রচন্ড ভয় পেয়ে আছে যে। বুঝে উঠতে পারছিনা কি করবো এখন
রজনীকান্ত বললো, হ্যাঁ এবার একটা কিছু করা দরকার। আমি আজকেই বেরিয়ে পড়বো ওঝার খোঁজে। 
ত্রিদিবকান্ত রজনীকান্তের কথা শুনে একটা সস্থির নিঃস্বাস ফেলে বললো, হ্যাঁ যা করার একটু তাড়াতাড়ি করো। 
রজনীকান্ত তাড়াতাড়ি উঠে পড়লো। আর বেশি দেরি করা যাবে না ভেবে সময় মতন বেরিয়ে পড়লো রজনীকান্ত। আর যাওয়ার সময় ত্রিদিবকান্তকে বলে গেলো আসতে একটু দেরি হতে পারে। 
  রজনীকান্ত ওঝার খোঁজে যাওয়ার জন্য সাথে বিল্টু বলে একজনকে নিলেন। একটা অচেনা জায়গায় একা যাওয়ার সাহস পেলেন না রজনীকান্ত। দুপুরের খাওয়া শেষ করে বেরোলেন দুইজন। রজনীকান্ত ঠিক করলেন আগে তার জন্মভিটে চাঁদনীপুর যাবে। ওখানে ভালো ওঝা পেলে নিয়ে আসবেন নয়তো অন্য কোনো গ্রামে যেতে হবে ওঝার খোঁজে। কথা মতন রজনীকান্ত তার জন্মভিটে চাঁদনীপুরে গেলেন । চাঁদনীপুরে তাদের বাড়িটা নেই ঠিকই কিন্তু চেনা জানা অনেক লোককে পেলেন রজনীকান্ত তারপর কথায় কথায় নিমফুলী গ্রামের সকল ভৌতিক কান্ডের কথা বললেন। সব শুনে চাঁদনীপুর গ্রামের বিষ্ণুপদ মল্লিক বললেন , ভারি ভয়ংকর ঘটনা দেখছি। এমন ঘটনা অন্য কোনো গ্রামে ঘটতে দেখিনি বাপু। কিছু একটা করো হে রজনীকান্ত। 
   রজনীকান্ত বললো, সেটাই তো ভাবছি কি করা যায় এখন!
 চাঁদনীপুর গ্রামের আর একজন বললেন, শুনেছি আমাদের পাশের গ্রামে একটা ওঝা থাকে বেশ নাম ডাক ও আছে জানি। ওখানে গিয়ে দেখো একটু যদি উনি কিছু একটা ব্যবস্থা করতে পারেন। 
রজনীকান্ত বললো, কোন গ্রাম আমরা তো ঠিক মতন চিনি না।
লোকটা বললো, গ্রামটার নাম হচ্ছে কি বকুলতলা। ওখানে গেলে একটা কিছু ব্যাবস্থা হতে পারে। চলো আমি নিয়ে যাচ্ছি সেখানে।
রজনীকান্ত লোকটার কথায় সম্মতি হলো। বললো, আচ্ছা তাহলে বকুলতলা গ্রামটাতে চলো যদি সমস্যার কোনো সমাধান হয়। 
কথা মতন লোকটার সঙ্গে রজনীকান্ত আর বিল্টু রহনা হলো বকুলতলা গ্রামের দিকে। গ্রামটা বেশি দূরে নয়। চাঁদনীপুর গ্রামের বিশাল একটা মাঠ পেরোলেই বকুলতলা গ্রাম। গ্রামে পৌঁছে সোজা চলে গেলো মানিক ওঝার কাছে। গিয়ে দেখলো তিনি বাড়িতে নেই একটু বাইরের দিকে বেরিয়েছেন আসতে একটু সময় ঘন্টা খানেক মতন। 
  বিল্টু বললো, কি করবে ? চলে যাবে কি?
রজনীকান্ত বললো, না এসেছি যখন ওঝাকে সঙ্গে করে ফিরবো। সন্ধে হলে হোক ক্ষতি নেই দরকার পরে রাতটা চাঁদনীপুরে কাটিয়ে ভোরের দিকে নিমফুলী গ্রামে ফিরবো। একটা দিনের জন্য তেমন কিছু হবে না।
  তিন জনে অপেক্ষা করতে লাগলো মানিক ওঝার জন্য। কিছুক্ষন পরে ওঝা এলেন তারপর রজনীকান্তের কাছ থেকে সব শুনে বললেন, আচ্ছা আমি দেখছি কি করা যায়। তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে বেশ ভয়ঙ্কর ব্যাপার। কিছুতো একটা করতেই হবে। রজনীকান্ত বললো, হ্যাঁ, বাবা কিছু একটা করুন। নইলে যে ভুতের জন্য সারা গ্রাম উজার হয়ে যাবে।
 মানিক ওঝা বললো, কাল সকালের জন্য অপেক্ষা কর।
রজনীকান্ত বললো, সেটাই ঠিক হবে। 
কথা বলার পর তিন জনে চাঁদনীপুরে ফিরে গেলেন। আর অপেক্ষা করতে লাগলেন কালকের সকাল আর উষ্ণ ভরা সূর্যের জন্য।
  সকাল হতে রজনীকান্ত আর বিল্টু মানিক ওঝাকে নিয়ে হাজির হলে নিমফুলী গ্রামে। গ্রামে আসতে রজনীকান্ত খবর পেলেন কালকে রাতে কে যেন ত্রিদিবকান্ত বাবুকে আঁচড়িয়ে সারা শরীর রক্তাক্ত করে দিয়েছে। 
 খবর শুনে রজনীকান্ত বিল্টু আর মানিক ওঝা ছুটে গেলেন ত্রিদিবকান্ত বাবুর বাড়ির দিকে সেখানে গিয়ে দেখলেন প্রচুর লোক জমা হয়েছে সেখানে। রজনীকান্ত সকলকে সরিয়ে দিয়ে ত্রিদিবকান্ত বাবুর পাশে গিয়ে বসলেন বললেন , কি করে হলো এইসব?
ত্রিদিবকান্ত বাবুর চোখে একটা ভয়ের ছাপ। সারা শরীর ভয়ে কাঁপছে। আস্তে আস্তে বললে, ভুত ।
রজনীকান্ত বললো, আমি ওঝা এনেছি। আর কোনো ভয় নেই।
ত্রিদিবকান্ত বললেন , কিছুই হবে না। সে খুবই শক্তি শালি । সে খুব ভয়ংকর দেখতে। আমাকে মেরে ফেলেছে সবাইকে মেরে ফেলবে তোমরা পালাও এখনই এই গ্রাম ছেড়ে।
রজনীকান্ত কিছু বলতে পারলেন না শুধু নিস্তব্ধ হয়ে ত্রিদিবকান্ত বাবুর দিকে চেয়ে থাকলেন। দেখলেন একটা ভয় আর আতঙ্ক নিয়ে চোখ বুঝলেন ত্রিদিবকান্ত । রজনীকান্ত বুঝতে পারলেন নিমফুলী গ্রাম থেকে চিরতরে বিদায় নিলেন তিনি।
  সেই দিনের পর থেকে ভয়ে আর আতঙ্কে সকলে নিমফুলী গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে চলে গেছে। আর সারা জীবন ভয় আর আতঙ্ক ঘিরে পরে রয়েছে নিমফুলী গ্রামটা।


================
নাম - সূর্য মন্ডল
পোস্ট - আমঝাড়া
জেলা - দক্ষিণ ২৪ পরগনা
পিন - ৭৪৩৩২৯
ফোন নম্বর - 8420303151
বয়স - ১১ বছর 
শ্রেণী - পঞ্চম 
বিদ্যালয় নাম - জনপ্রিয় নগর জনপ্রিয় বিদ্যালয় (উঃ : মা )

মন্তব্যসমূহ

সপ্তাহের পছন্দ

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 38th issue: January 2025

কবিতা ।। আকাশ-সাগর ।। শান্তনু আচার্য

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সুচিপত্র ।। 37th issue: December 2024

কবিতা ।। নতুন বছর ।। জীবন সরখেল

চোখের ভাষা ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত

ছড়া ।। শীতের দু'টি মাসে ।। গোবিন্দ মোদক

প্রচ্ছদ ও সূচীপত্র ।। 24th issue: September 2023

ছোটদের আঁকিবুঁকি ।। কিশলয় - ২২ ।। জুলাই ২০২৩

ছড়া ।। দৃষ্টিকাড়া বৃষ্টি ।। শচীন্দ্র নাথ গাইন

ছড়া ।। অদ্ভূতুড়ে ।। প্রবোধ কুমার মৃধা

মাসের পছন্দ

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 38th issue: January 2025

কবিতা ।। আকাশ-সাগর ।। শান্তনু আচার্য

কবিতা ।। নতুন বছর ।। জীবন সরখেল

ছড়া ।। শৈশবের রথ ।। ইয়াসমিন বানু

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সুচিপত্র ।। 37th issue: December 2024

অণুগল্প ।। ঝুমুক ঝুমুক ।। ব্রজ গোপাল চ্যাটার্জি

ছোটগল্প ।। হেমন্ত দাদার সাথে ।। দীপক পাল

ছড়া ।। আকাশটাকে খোঁজে ।। দীনেশ সরকার

ছড়া ।। শীতবুড়িটা ।। প্রবোধ কুমার মৃধা

কবিতা ।। খুকির বায়না ।। খগেশ্বর দেব দাস

বছরের পছন্দ

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। ত্রয়োত্রিংশ সংখ্যা ।। জুন ২০২৪

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 38th issue: January 2025

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সুচিপত্র ।। 37th issue: December 2024

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। চতুর্ত্রিংশ সংখ্যা ।। জুলাই ২০২৪

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচীপত্র ।। 29th Issue: February

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 31st issue: April 2024

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 32nd issue: May 2024

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 30th issue : March 2024

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। পঞ্চত্রিংশ সংখ্যা ।। আগষ্ট ২০২৪

অতি প্রিয়

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। আত্মপ্রকাশ সংখ্যা ।। অক্টোবর ২০২১

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। দ্বিতীয় সংখ্যা ।। নভেম্বর ২০২১

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 4th issue: January 2022,

নিবন্ধ ।। শিশু-কিশোর সাহিত্যবলয়ে শিশুরাই যেন ব্রাত‍্য না থাকে ।। অরবিন্দ পুরকাইত

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 7th issue: April 2022

নিবন্ধ ।। দেশীয় উদ্ভিদ কেন গুরুত্বপূর্ণ ? ।। ডঃ চিত্তরঞ্জন দাস

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় - ১০ ।। জুলাই ২০২২

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় - ১১ ।। আগস্ট ২০২২

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র : 8th issue: May 2022

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় - ১২ ।। সেপ্টেম্বর ২০২২