Featured Post

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। ত্রয়োত্রিংশ সংখ্যা ।। জুন ২০২৪

ছবি
  প্রচ্ছদ-চিত্রঃ সুনীত নস্কর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা। সম্পাদকীয় কেমন আছো ছোট্ট বন্ধুরা। গরমের ছুটি তো শেষ হয়ে এল। স্কুল খুলে যাচ্ছে। কিন্তু গরমের দাবদাহ কিন্তু এতটুকু কমেনি। এই গরমে  খুবই সাবধানে নিয়ম মেনে চলতে হবে তোমাদের। এখন তো আম, জাম কাঁঠালের সময়। এখন এইসব মৌসুমী ফল খেতে হবে। তাহলে শরীর সুস্থ থাকবে। শরীর সুস্থ থাকলে মন সুস্থ থাকবে। মন সুস্থ থাকলে পড়াশুনো ভালো হবে।           আশাকরি এতদিন বাড়িতে থেকেই মন দিয়ে পড়াশুনো করেছ। সঙ্গে অনলাইন কিশলয়ের পাতায় চোখও রেখেছ। পড়াশুনোর পাশাপাশি গল্প লেখা, ছবি আঁকা ইত্যাদির শখও মনের মধ্যে লালন পালন করতে হবে তোমাদের। পড়াশুনোর চাপে সব ছেড়ে দিলেও চলবে না কিন্তু। স্কুলের পড়া, বাড়ির পড়ার পাশাপাশি গল্প- কবিতা লেখা, প্রবন্ধ লেখা, ছবি আঁকা ইত্যাদি চালিয়ে যাও। তোমাদের প্রতিভার বিকাশ হোক। তোমাদের সৃজনীসত্ত্বার প্রকাশ হোক তোমাদের সৃষ্টির মধ্য দিয়ে। আর সাথে সাথে তোমার সেই সৃষ্টি অনলাইন কিশলয়ে প্রকাশের জন্য পাঠিয়ে দাও। বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা বাকি বন্ধুরাও জানুক তোমার সৃষ্টি সম্পর্কে। আর কী? সবাই সুস্থ থাকো, ভালো থাকো, আনন্দে থাকো।   শুভকামনাসহ-- প্রিয়ব্রত দত্ত ও কার্

গল্প ।। প্রফেসর হলেন গোয়েন্দা ।। ডাঃ অরুণ চট্টোপাধ্যায়


 

ঢোলগোবিন্দের কড়চা

প্রফেসর হলেন গোয়েন্দা

ডাঃ অরুণ চট্টোপাধ্যায়

প্রফেসর ক্ষেপচুরিয়াসের ডাক কি উপেক্ষা করা যায়? বিশেষ যিনি তাদের মত অখ্যাত দুটো ছেলেকে কিশোর-চলচিত্রের নায়ক বানিয়ে দিয়েছেন যখন?

প্রফেসর ক্ষেপচুরিয়াস কখনও ফোনে ডাকেন না তাদের। ডাকেন মোবাইলে মেসেজ করে। তিনি বলেন মোবাইল মেসেজ থেকে অনেক কিছু শেখা যায়। যেমন ইংরেজি শেখা যায় তেমনি শেখা যায় সংক্ষেপে কী করে নিজের বক্তব্যকে বলা যায় বা অন্যের বক্তব্যকে জানা যায় তা শেখা যায়আর ইংরেজি অক্ষরে বাংলা লেখাকে তিনি একেবারেই পছন্দ করেন না। বলতে গেলে ঘোর অপছন্দ করেন তিনি বলেন হয় খাঁটি ইংরেজি লিখবে আর নাহয় খাঁটি বাংলা লিখবে।  

দুজনেই মেসেজ পেলঃ কুইক মুভ টু ডিটেক্ট সাসপিশাস ম্যাটার। ইমিডিয়েট কনট্যাক্ট।

দুজনেই হতবাক। সাসপিশাস ম্যাটার মানে হল সন্দেহজনক বিষয়। তার সমাধান তো করে গোয়েন্দারা। তারা তো বিজ্ঞানের প্রফেসরের সহকারী মাত্র। এই ডিটেক্টিভগিরিতে তাদের ডাকা হবে কেন?

-আমাদের একটা তদন্তে যেতে হবে।

গম্ভীর প্রফেসরের মুখ দিয়ে কথাটা বেরিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে ঢোল বলল, আমরা কি পারব স্যার?

গোবিন্দ বলল, ক্রিমিন্যালরা মেরে দেবে না তো?

প্রফেসর ভ্রূ কুঁচকে বললেন, কে ক্রিমিন্যাল? কী সব আজেবাজে বকছ?

আর তাঁর মুখের ওপর কথা বলতে কেউ সাহস পেল না। প্রফেসর জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কি কেউ জান অরোরা বোরিওলিস জিনিসটা কি?

ঢোল চুপ করে ভাবতে লাগল। কোথায় যেন শুনেছে এমন কথা কিন্তু মনে করতে পারল না। গোবিন্দ ঝট করে বলে ফেলল, মেরুজ্যোতি স্যার?

প্রফেসর খুব খুশি। ক্ষেপে যাওয়ার বদলে খুশি হওয়াটা প্রফেসরের জীবনে খুব কম ঘটে।

-ঠিক বলেছ।

ঢোলের হঠাৎ মনে পড়ে যেতেই ধাঁ  করে বলে ফেলল, কিন্তু এই মেরুজ্যোতি দেখা যায় তো মেরুতে স্যার?   

প্রফেসর বললেন, তাও ঠিক।

--আমাদের কি সেই মেরুতে যেতে হবে নাকি স্যার? নরওয়ে এইসব-

গোবিন্দের কথায় ঢোল সোৎসাহে বলে ফেলল, বেশ মজা হবে স্যার। মাঝরাতেও ওখানে রোদ থাকে। সূর্য দেখা যায় আকাশে।

-ঠিক। গম্ভীর প্রফেসর বললেন, তবে আমাদের নরওয়ে যেতে হবে এটা ঠিক নয়।

-তবে কি অ্যান্টার্কটিকা স্যার? কথাটা বলে কেঁদে ফেলল গোবিন্দ, ওখানে স্যার বছরে ছমাস সূর্যই দেখা যায় না। মানুষ থেকে বরফের বাক্স হয়ে যাব স্যার।

-রাজাভাতখাওয়া জান?

প্রফেসরের আচমকা প্রশ্নটায় ঢোল ঘাবড়ে গেলেও গোবিন্দ ঘাবড়াল না। বলল, রাজারা শুধু ভাতই খাবে কেন স্যার? ওরা তো মাংস, পোলাও বিরিয়ানি এসব-

কটমটে চোখে তাকিয়ে প্রফেসর আর একটা আচমকা প্রশ্ন করলেন। এবার দুজনকেই, খাওয়া হয়েছে?

ঢোল আর গোবিন্দ দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে হাসল। তার মানে ভাল কিছু খাবার ব্যবস্থা হয়েছে প্রফেসরের বাড়িতে। দুজনেই একযোগ বলল, না স্যার।

উত্তর না দিয়ে আচমকা তাঁর নব আবিষ্কৃত ফ্লাইং কার বার করলেন। নিজে কোমরে বাঁধলেন এন্টি গ্র্যাভিটি বেল্ট আর বাকি দুটো ওদের দুজনকে দিলেন। ওরা বেঁধে নিয়ে প্রফেসরের দুপাশে স্টিয়ারিং রড ধরে দাঁড়িয়ে পড়লএখন মানে এই গাড়িতে প্রত্যেকের এই বেল্ট আর লাগে না। গাড়ির নিজের একটা এন্টি গ্র্যাভিটি সিস্টেম আছে। সেটা সব যাত্রীদের গ্র্যাভিটি বহন করে। তবে প্রত্যেকের এই বেল্ট অটোমেটিক করা থাকে যাতে হঠাৎ কেউ ফ্লাইং কার থেকে পিছলে পড়ে গেলে তার ভারসাম্য রক্ষা করবে এই বেল্ট। নিজেই সক্রিয় হয়ে যাবে। তাই কেউ আর বিপদে পড়বে না।

এই স্টিয়ারিং রড অবশ্য ঘোরে না। কার নিজেই ঘোরে। আর কার মানে তো পায়ের নিচে একটা ট্রে আর তার ওপর দাঁড় করান একটা রড আর তার ওপরে একটা হ্যান্ডেল। ঠিক খোলা রোপওয়ের একটা ক্যাপসুলের মত।

কথা যা হবার হল ফ্লাইং কার আকাশে উঠে যাবার পর। প্রফেসর খোঁজ নিলেন ওরা বাড়িতে বলে এসেছে কিনা। ওরা দুজনেই ঘাড় নাড়ল। আসলে বাড়ি যখনই জানবে ওরা প্রফেসরের ডাকে গেছে তখন আর কেউ দুশ্চিন্তা করবে না। প্রফেসরের দায়িত্বের ব্যাপারে কারোর কোনও সন্দেহ নেই।

-ব্রেক ফাস্ট যা হবার সরকারী রেস্ট হাউসে হবে। বললেন প্রফেসর।

-আমরা-

ঢোলের কথা শেষ হবার আগেই প্রফেসর বলে উঠলেন, রাজাভাতখাওয়া হল আলিপুরদুয়ার জেলার বিরাট আর বিখ্যাত জঙ্গল। এটা আবার আর একটা বড় বক্সার জঙ্গল দিয়ে ঘেরা। বেশ কিছুদিন ধরে রাতের বেলায় এই জঙ্গলে একটা বিরাট ছটা দেখা যাচ্ছে। ঠিক মেরুজ্যোতির মত। এতে জঙ্গলের সব প্রাণী ভয়ে জঙ্গল থেকে ছিটকে লোকালয়ে এসে পড়ছে। এটারই তদন্ত করতে যাচ্ছি। ওরা আমার ফ্লাইং কারের ব্যাপারে বিষদ জানে। ওরা ভেবেছে জঙ্গলের ভেতরে তদন্ত করতে এমন গাড়িই উপযুক্ত।

এই ব্যাপার। আসলে এদের তো ভূগোলে গোল। রাজাভাতখাওয়া বলতে এরা ভেবেছিল রাজাবাজারের কোনও ভাত খাওয়ার হোটেল বুঝি। হয়ত প্রফেসর ক্ষেপচুরিয়াস ওদের মাংস ভাত খাওয়াতে নিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু এ তো দেখা যাচ্ছে জঙ্গল ভ্রমণ। জঙ্গলে জ্যোতি জ্বলছে। পশুরা বিরক্ত হয়ে বন থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। তারই তদন্ত করতে হবে তাদের। সাসপিশাস তো বটেই আবার থ্রিলিং মানে রোমাঞ্চকরও।

ঢোল কিন্তু ভয় পেয়ে গেল। কতকটা নিজের মনে বলল, এখন পশুরা ক্ষেপে গিয়ে আমাদের শরীর থেকেই মাংস না খুবলে খায়।

প্রফেসর শুনতে পেলেন কথাটা। বললেন, তা খাবে কেন? আমরা চিকেন রোস্ট দিয়ে ব্রেকফাস্ট করে তবে ঢুকব জঙ্গলে। আর আমরা তো থাকবে জঙ্গলে আকাশে।

গোবিন্দ তাড়াতাড়ি বলে উঠল, পশুদের তো আর ডানা নেই? দিনদিন তুই বড় বোকা হচ্ছিস ঢোল।

মাত্র একঘন্টার মধ্যেই রাজাভাতখাওয়ার জঙ্গল এসে গেল। বিরাট ঘন জঙ্গল। ঢোল বলল, আচ্ছা এর নাম রাজাভাতখাওয়া হল কেন স্যার? রাজারা তো থাকে রাজপ্রাসাদে। তারা তো আর রোজ জঙ্গলে ভাত খেতে আসে না।

-আচ্ছা সে গল্প অন্য একদিন-

গোবিন্দ নাছোড়, তা হবে না স্যার আজকেই বলতে হবে।

প্রফেসর আকাশে ফ্লাইং কারটাকে ঘুরতে নির্দেশ দিয়ে শুরু করলেন, সে প্রায় তিনশ বছর আগের কথা। ভুটানের রাজা উড়ে এসে জুড়ে বসেছিল এখানে আর দিব্বি সিংহাসন পেতে রাজ্যপাট শুরু করে দিয়েছিল। কোচবিহারের রাজা ভীষ্মের মত সাংঘাতিক প্রতিজ্ঞা করে বসল যতদিন না ভুটানের রাজাকে হটিয়ে দেওয়া যাচ্ছে এখান থেকে ততদিন সে ভাতই খাবে না। একসময় অবশ্য ভূটানের রাজা বিরক্ত হয়ে ছেড়ে চলে গেল। তবে সেই উপলক্ষে খুশি হয়ে কোচবিহারের রাজা তাকে এখানে ভাত খাওয়ালেন নানা উপাদেয় পদ সহযোগে আর নিজেও খেলেন।

ঢোল বলল, ও এই ব্যাপার।

গোবিন্দ বলল, খুব সহজ ব্যাপার যেন। তিনশ বছর আগের কথা ভাব। তখন জঙ্গল কত বড় ছিল আর জন্তুরা কত ভয়ানক ছিল?

ফ্লাইং কার এবার নিচে নামছে। একেবারে রেস্ট হাউসের নিচে। তাঁকে হাসিমুখে অভ্যর্থনা জানিয়ে আহ্বান করলেন বনদপ্তরের একজন অফিসার মিঃ মুখার্জীবিশ্রামের ঘরের ব্যবস্থা আগেই ছিল তবে প্রফেসর জানিয়েছিলেন সমাধান হয়ে গেলেই তিনি চলে যাবেন।

বেশ ভাল ব্রেকফাস্ট হল। সব কিছু জানলেন মিঃ মুখার্জীর কাছ থেকে। উনি হচ্ছেন এখানকার ভারপ্রাপ্ত অফিসার। জানা গেল মাত্র এক সপ্তাহ আগে থেকেই এই অবাক করা কান্ডটা ঘটছে। ঠিক সন্ধ্যে হতেই ধীরে ধীরে জঙ্গলের মাথায় আকাশে ফুটে উঠছে এক তীব্র জ্যোতি। সে নাকি অরোরা বোরিয়ালিসের থেকেও তীব্র। এমন তীব্র যে আশপাশে মানুষের বাড়ির দরজা জানলা সব বন্ধ রাখতে হচ্ছে। এমন কি পশুরাও সে তীব্র ছটা সহ্য করতে না পেরে পালিয়ে যাচ্ছে।

-পশুরা পালাচ্ছে কোথায়? পরে আর তাদের ফিরিয়ে আনা যাচ্ছে না?

- না না স্যার। পরে আর তাদের কোনও খোঁজই পাওয়া যাচ্ছে না। মিঃ মুখার্জী বলে উঠলেন, অথচ সব দামী দামী পশু। গন্ডার, চিতা, হাতি এইসব। তবে হ্যাঁ শিয়াল টিয়াল বনবেড়াল, খরগোস বা অন্য ছোটখাট জন্তুরা লোকালয়ে গিয়ে হামলা করছে খাবারের জন্যে। সারা অঞ্চলে একটা বিশ্রী অবস্থা।

-কিন্তু বড় জন্তুরা আর ফিরে আসছে না তাই তো? প্রফেসর প্রশ্নটা করে সামান্য হাসলেন।

-ঠিক বলছেন। তবে সন্ধান চলছে।

-আমি আসার সময় আকাশপথে জঙ্গল পরিভ্রমণ করে যা জানলুম তা হল আকাশে অর্থাৎ গাছের ডালে বা পাতায় এমন কোনও বিশেষ কিছু নেই যাতে এই জ্যোতি তৈরি হতে পারে। আমার মনে হচ্ছে সব রহস্য রয়েছে মাটিতে। আচ্ছা আপনারা মাত্র কয়েকটা বড় আর দামী জন্তুকে মাইক্রো চিপস লাগিয়ে দিতে পারবেন আজকের মধ্যে?

মিঃ মুখার্জী বললেন, হ্যাঁ তা পারব না কেন। আপনি যা বলছেন তাই হবে স্যার। আমরা নাহয় কটা গন্ডার, হাতি আর চিতার এই চিপস লাগাবার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।

--হ্যাঁ একটা কথা। যে জায়গায় এই জ্যোতির প্রভাব সবচেয়ে বেশি সেই জায়গার পশু কিন্তু সিলেক্ট করবেন কেমন?

ব্রেকফাস্ট খাওয়ার পরে সবাই ঘরে এল। একই ঘরে বড় বিছানায় প্রফেসরের একার আর একটায় ঢোলগোবিন্দের একসঙ্গে। প্রফেসর এসে নিজের মনে নিজের কাজ করতে লাগলেন। কত জিওমেট্রি, ট্রিগোনোমেট্রি আবার সেই সঙ্গে কেমিস্ট্রি ফিজিক্স নিয়েও বসলেন। ঢোলগোবিন্দও সময় নষ্ট না করে গুগুলে গিয়ে রাজাভাতখাওয়া সম্পর্কে সব কিছু জানতে লাগল। প্রফেসর বলেছেন কোথাও গেলে সেই জায়গা সম্পর্কে কিছুটা আগে থেকে জেনে রাখা দরকার। তা রাজাভাতখাওয়ার নামই তো তারা আজ সকালে প্রফেসরের মুখে শুনল। জেনে নেবার সময় আর কই পেল।

বিকাল চারটের সময় তাদের নিয়ে আকাশে চড়লেন প্রফেসর। সারা আকাশে চক্কোর কাটতে লাগলেন কখনও গাছের মাথার চাঁদোয়া দিয়ে। আবার কখনও গাছের ফাঁক দিয়ে দিয়ে।

-এই যা সব গাছের উঁচুতে জঙ্গলের মাথা একে বলে ক্যানোপি।

প্রফেসরের কথায় অবাক হয়ে ওরা ভাবল বাবা জঙ্গলেরও আবার ছাদ থাকে নাকি?

না না কোথাও কিছু নেই। শুধু ঘুরে মরাই সার। এমন কি অরোরা বোরিওলিস বলেও কোনও জ্যোতি পাওয়া গেল না। প্রফেসর কতকটা নিজের মনেই বললেন, আশ্চর্য এরা কি তবে মিথ্যে বলে ডেকে আনল?  

কি ভেবে ফ্লাইং কারকে একেবারে নিচে নামিয়ে আনলেন প্রফেসর। দেখলেন এক অবাক কান্ডআর সঙ্গে সঙ্গে ঢোলগোবিন্দকে নির্দেশ দিলেন, সবাই চশমা পর। কুইক!

একেবারে মিলিটারি হুকুম। তামিল না করে উপায় নেই। দুজনেই চশমা পরে নিল। এই চশমার কাঁচ এক বিশেষ ভাবে তৈরি যাতে তীব্র আলোর ঝলক সহ্য করা যায়। ফ্লাইং কারে একটা ফোটোমিটার আছে। তাতে রিডিং দেখে চমকে উঠে প্রফেসর বললেন, সূর্যের ঝলকের প্রায় একশ গুণ দেখছি। চশমা না পরলে তোমাদের চোখ একেবারে পুড়ে যেত। এবার বুঝেছি কেন পশুরা সব পালাচ্ছে। শুধু আলোই নয় অসহ্য উত্তাপও।

কিছুক্ষণ সেখানে কার নিয়ে ঘোরাঘুরি করলেন প্রফেসর। গায়ে রয়েছে এক অদ্ভুত রকমের পোশাক যা প্রচন্ড উত্তাপ সহ্য করতে পারে। বেরোনর আগে দুই বন্ধুকে এগুলো পরার অর্ডার শুধু দিয়েছিলেন। আর কিছু বলেন নি। এরা কেউ জানতেও চায় নি। কারণ প্রফেসর ক্ষেপচুরিয়াস খুব ক্ষেপে যান কথা না শুনলে। আর উনি তো তাদের কোনও ক্ষতি করবেন না।

এরপর ওয়ারলেসে কথা বলতে লাগলেন কার সঙ্গে যেন। তারপর আধঘন্টা অপেক্ষা। আবার ওয়ারলেসে প্রফেসরের কাছে মেসেজ এলঃ অপারেশন সাকসেসফুল। থ্যাংক্স ফর ইওর কো-অপারেশন স্যার।

ফোন রেখে প্রফেসর বললেন, চল রেস্ট হাউসে যাই। চিকেন কারি না ঠান্ডা হয়ে যায়।

-না না ঠান্ডা হয় নি স্যার। কথাটা হেসে বললেন মিঃ মুখার্জী, আর আপনি যা করে দেখালেন তা এখনও টাটকা আছে। বনমন্ত্রী আপনাকে কংগ্র্যাচুলেশন জানিয়েছেন স্যার। কাল ভোরের ফ্লাইটেই উনি এসে পড়বেন। এতগুলো পশুর মূল্যবান প্রাণ বাঁচিয়ে আপনি তো একেবারে ধামাকা করে দিয়েছেন স্যার।

প্রথম দিকে ঢোলগোবিন্দ কিছু বুঝতেই পারছিল না। ভাল করে বুঝতে পারল তখন যখন বনমন্ত্রী এসে উষ্ণ হাত বাড়িয়ে অভিনন্দন জানালেন প্রফেসরকে। প্রফেসর বললেন, চলুন আপনাদের সবাইকে জায়গাটা দেখিয়ে আনি। আমি খুব ভোরে দেখে এসেছি সব।

তাদের নিয়ে বেরোলেন।  কিছু দূর যাওয়ার পরে একটা জায়গায় সবাইকে নিয়ে থামলেন, এইখানে বিশেষ এক রকম কোয়ার্জ রাখা আছে। এই কোয়ার্জ সারা দিন সূর্যের আলো শোষণ করে আর ঠিক তিন ঘন্টা পরে তার থেকে তাপ আর আলো বিকিরণ করে। এই তাপ আর আলো সূর্যের প্রায় একশ গুণ। যার ফলে গাছের গায়ে গায়ে মেরুচ্ছটার মত বিকিরণ হয়। এই গাছগুলোতে এক ওপর থেকে এক বিশেষ জাতের কেমিক্যাল স্প্রে করা থাকায় সেগুলো এই তীব্র তাপ সহ্য করতে পারে। কিন্তু পারে না জঙ্গলের ভেতরের জন্তুরা। তারা পালাতে চেষ্টা করে।

-তারপর? মিনিস্টার সাহেবের প্রশ্নে প্রফেসর বললেন, আমার নির্দেশে  কয়েকটা মাত্র পশুর মাইক্রোচিপস লাগানো হয়েছিল। সেই সংকেত ধরে তাদের পেছন পেছন গিয়ে মিঃ মুখার্জী আর পুলিশের দলবল পশুর চোরা শিকারীদের ধরে ফেলে। আসলে শিকারীরা একটা সংকেত ছেড়ে রেখেছিল যাতে পশুরা পালিয়ে সেই সংকেত ধরে তাদের কাছেই আসে।

একেবারে হতভম্ব হয়ে গেল ঢোল আর গোবিন্দ। এত বুদ্ধি চোরা শিকারীদের? বন্দুক না ছুঁড়ে, বিষ না খাইয়ে এমন কি গভীর জঙ্গলে না গিয়ে নিজেদের নিরাপদে রেখে পশু চুরি? ভাবা যায়?

-কিন্তু প্রফেসর ক্ষেপচুরিয়াসের বুদ্ধি তো তাদের বুদ্ধির কাছে নস্যি তাই নার রে ঢোল?

গোবিন্দের কথায় নীরবে শুধু ঘাড়ই নাড়ে ঢোল। চমক ভেঙ্গে কথা বলার মত অবস্থায় এখন সে আসে নি।

__________________________________________________________


Dr. ARUN CHATTOPADHYAY

181/44 G.T.ROAD (GANTIR BAGAN)

P.O. BAIDYABATI

DIST. HOOGHLY (PIN 712222)

W.B

.

[ছবি: ইন্টারনেট মাধ্যম থেকে সংগৃহীত]

মন্তব্যসমূহ

সপ্তাহের পছন্দ

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। ত্রয়োত্রিংশ সংখ্যা ।। জুন ২০২৪

ছোটোদের আঁকা ।। মনামি মন্ডল, রায়সী চক্রবর্তী ও নিশান্তিকা নস্কর।

ছড়া ।। একটা খুশি ।। তীর্থঙ্কর সুমিত

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 32nd issue: May 2024

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় - ১২ ।। সেপ্টেম্বর ২০২২

ধারাবাহিক উপন্যাস ।। তিতলির বিশ্বভ্রমণ ।। ডাঃ অরুণ চট্টোপাধ্যায়

ছড়া ।। ও জোনাকি ।। কান্তিলাল দাস

দুটি ছড়া ।। গোবিন্দ মোদক

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। আত্মপ্রকাশ সংখ্যা ।। অক্টোবর ২০২১

মাসের পছন্দ

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। ত্রয়োত্রিংশ সংখ্যা ।। জুন ২০২৪

কবিতা || মর্যাদা || অবশেষ দাস

ছোটোদের আঁকা ।। মনামি মন্ডল, রায়সী চক্রবর্তী ও নিশান্তিকা নস্কর।

নিবন্ধ ।। কোনারক মন্দিরের ভয়াবহতা ।। সুজয় সাহা

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 32nd issue: May 2024

ছোটর কলম ।। বইপড়া ।। উন্নীত কর্মকার

গল্প ।। রবীন্দ্রজয়ন্তী ।। কুহেলী ব্যানার্জী

ছড়া ।। একটা খুশি ।। তীর্থঙ্কর সুমিত

অণুগল্প ।। পুরস্কার ।। চন্দন দাশগুপ্ত

বছরের পছন্দ

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। ত্রয়োত্রিংশ সংখ্যা ।। জুন ২০২৪

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচীপত্র ।। 29th Issue: February

প্রচ্ছদ ও সূচীপত্র ।। 24th issue: September 2023

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 31st issue: April 2024

প্রচ্ছদ ও সূচীপত্র ।। 25th issue: October 2023

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 32nd issue: May 2024

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 30th issue : March 2024

প্রচ্ছদ ও সূচীপত্র ।। 23rd issue: August 2023

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচীপত্র ।। 26th issue: November 2023

অতি প্রিয়

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। আত্মপ্রকাশ সংখ্যা ।। অক্টোবর ২০২১

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। দ্বিতীয় সংখ্যা ।। নভেম্বর ২০২১

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 4th issue: January 2022,

নিবন্ধ ।। শিশু-কিশোর সাহিত্যবলয়ে শিশুরাই যেন ব্রাত‍্য না থাকে ।। অরবিন্দ পুরকাইত

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 7th issue: April 2022

নিবন্ধ ।। দেশীয় উদ্ভিদ কেন গুরুত্বপূর্ণ ? ।। ডঃ চিত্তরঞ্জন দাস

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় - ১০ ।। জুলাই ২০২২

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় - ১১ ।। আগস্ট ২০২২

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র : 8th issue: May 2022

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় - ১২ ।। সেপ্টেম্বর ২০২২