অঞ্জনা মজুমদার
ঋভুর মেজমামা সারাদিন তার পরীক্ষাঘরে কী কী পরীক্ষা করেন বাড়ির সবাই তটস্থ হয়ে থাকে। সেদিন বাড়ির ভুলু কুকুরের লেজে গোটা পাঁচেক কালিপটকা বেঁধে তাতে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছিলেন। কালিপটকা ফাটছে আর ভুলু ঘুরে ঘুরে লাফাচ্ছে, গলা দিয়ে কুঁইকুঁই আওয়াজ। কালিপটকা ফেটে যাওয়া বন্ধ হতে ভুলু যে সেই শুয়ে পড়লো, ঋভু আর বিনি সাধাসাধি করে কোনওমতে এককাপ গরম দুধ খাইয়ে তাকে ঘুম পাড়িয়ে দিল। তারপর থেকে ভুলু ঘেউঘেউ করতে ভুলে গেছে।
মিনি একদিন মাছ চুরি করে খেতে গিয়ে মেজমামার রাখা আয়নার রিফ্লেকশনে সূর্যরশ্মি চোখে পড়ে। তারপর থেকে মিনি চোখে কম দেখে। ইঁদুরগুলো মিনির সামনে দিয়ে নির্ভয়ে দৌড়াদৌড়ি করে। মিনি কিচ্ছু বলে না। দেখতেই পায় না নিশ্চয়ই।
পাড়ার সবচেয়ে নামকরা চোর পুলু একদিন ভুল করে ঋভুর মেজমামার ল্যাবরেটরিতে ঢুকে পড়ে আটকা পড়ে গেল। কেউ দেখতে পাচ্ছে না এমন একটা অদৃশ্য দেওয়াল পুলুর চারদিকে খাড়া হয়ে গেল। যতক্ষণ না মেজমামা বাড়ির সবার অনুরোধে সেই দেওয়াল তার বিজ্ঞান প্রয়োগ করে সরিয়ে দিলেন ততক্ষণ পুলু কাঠ হয়ে দাঁড়িয়ে কাঁদছিল। তারপর থেকে পুলু এ বাড়ি মুখো হয় না।
কোনও ফেরিওয়ালা এ বাড়ি মুখো হয় না। তারা বলে এ বাড়িতে ভূত আছে। এ বাড়িতে নাকি দিনে রাতে নানারকমের শব্দ শোনা যায়। বাড়ির লোকজন শোনে না শুধু যে লোকেরা এ বাড়ির ক্ষতি করতে চায় তারাই ভয় পায়।
মেজমামা একদিন ঋভু আর বিনিকে ডেকে বললেন, আমি একটা ওষুধ তৈরি করেছি যাতে অদৃশ্য হওয়া যায়।
ঋভু বলল, তা আবার হয় নাকি?
মিনি বলল, মেজমামা যখন বলেছে তখন নিশ্চয়ই হয়। মেজমামা তুমি বরং ভুলুকে অদৃশ্য করে দাও।
দেখবি? বলে মেজমামা ভুলুকে একটা বিস্কুট খেতে দিলেন। ভুলু খেয়ে নিল। আর আশ্চর্য! দেখতে দেখতে ভুলু চোখের সামনে একটু একটু করে অদৃশ্য হয়ে গেল।
মিনি কেঁদে ফেলল, মেজমামা আমরা আর ভুলুকে দেখতে পাবো না?
পাবি নিশ্চয়ই পাবি। কিন্তু আমার অদৃশ্য থেকে আবার দৃশ্যমান হবার ওষুধের রিসার্চটা একটু বাকি আছে যে! বলেই মেজমামা আবার ল্যাবরেটরিতে ঢুকে পড়লেন।
এদিকে বিশাল সমস্যা হল, সবাই ভুলুর কুঁইকুঁই শুনতে পাচ্ছে কিন্তু দেখতে পাচ্ছে না।
দাদুভাই মেজমামাকে বললেন, সত্য তোমার পরীক্ষা নিরীক্ষা ওই নিরীহ কুকুরের ওপর না করলে চলছিল না? তাড়াতাড়ি ওকে নিজের রূপে ফিরিয়ে দাও।
দিদিভাই পুজোয় বসলেন। যতক্ষণ না ভুলু নিজের রূপে আসে ততক্ষণ তিনি জলস্পর্শ করবেন না। মেজমামাও নাওয়া খাওয়া ভুলে ল্যাবরেটরিতে। নানান জিনিস তৈরি করছেন আর ভুলুর খাবার থালায় রাখছেন। কিন্তু ভুলুর কুঁইকুঁই থালার আশেপাশে শোনা যাচ্ছে না। ক্রমশঃ দূরে চলে যাচ্ছে।
শেষে মেজমামা দু তিন রকমের বিস্কুট তৈরি করে ভুলুর থালায় রেখে বললেন আয় সবাই মিলে ভুলুকে রিকোয়েস্ট করি যদি খায়। আমরা সবাই এমনকি দাদুভাই ও ওরে ভুলু আয় আয় বলে ডাকাডাকি করতে লাগলাম।
একঘন্টার ডাকাডাকি করে আমরা ক্লান্ত হয়ে অবসন্ন, গলা ধরে গেল। তখনই হঠাৎ ভুলুর কুঁইকুঁই শুনতে পেলাম আর ধীরে ধীরে ভুলু আমাদের চোখের সামনে আবছায়া থেকে অবয়ব পেল। হঠাৎ আগের মতন ঘেউঘেউ করে ডেকে উঠল। ডাকটা আনন্দের মনে হল। আমরাও আনন্দে হৈ হৈ করে উঠলাম।
দিদিনের উপবাস ভঙ্গ হল। কিন্তু মেজমামা মনমরা। আমি জানতে চাইলাম কি হয়েছে মেজমামা ? তোমার আবার কি হল? তোমার এক্সপেরিমেন্ট তো সাকসেসফুল।
মেজমামা বললেন, অদৃশ্য হবার ওষুধ বিস্কুট দুটো তৈরি করেছিলাম। একটা ভুলু খেয়েছিল। কিন্তু আকার ফিরে পাবার ওষুধ তো অনেক কিছু চেষ্টা করেছি। কোনটা ঠিক ওষুধ গুলিয়ে ফেলেছি। অদৃশ্য করলেই তো হবে না। তাকে আবার ফিরিয়ে আনতে হবে তো! আমার এই পরীক্ষা সাকসেসফুল হল না।
দাদুভাই বললেন, দরকার নেই এমন পরীক্ষার। ভগবানের ওপর কারুকাজ করার দরকার কি? এমন পরীক্ষা আজ থেকে বন্ধ। ভালো কিছু করে দেখাও।
মেজমামা মাথা নিচু করে রইলেন। ভুলুর মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, অদৃশ্য করার পরীক্ষা বাতিল।
আমরাও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। মেজমামা মুচকি হাসলেন। আমরা আশঙ্কিত মেজমামার মাথায় আবার উদ্ভট কিছু আইডিয়া এসেছে। মেজমামা আবার পরীক্ষাগারে ঢুকেছেন। পরবর্তী অদ্ভুত আবিষ্কারের অপেক্ষায় আছি আমরা।
_____________________________________________________________________________________
অঞ্জনা মজুমদার
এলোমেলো বাড়ি
চাঁদপুর পল্লী বাগান
পোঃ রাজবাড়ি কলোনী
কলকাতা ৭০০০৮১
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন