প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় ৪৫ ।।আগস্ট, ২০২৫

কয়েকটি শিশুতোষ গল্প
বিচিত্র কুমার
(০১)
সোনার হরিণের গল্প
একদেশে এক সুন্দর বন ছিল, যেখানে সবুজ গাছপালা আর ফুলেরা পরিপূর্ণ আনন্দে বাস করত। বনটির রাজা ছিল এক তেজস্বী সিংহ। কিন্তু সিংহের সুখের সংসার অসম্পূর্ণ ছিল একটি কারণে—তার একটি সোনার হরিণের জন্য খুব ইচ্ছে ছিল।
একদিন, সিংহ তার পরামর্শদাতাদের সঙ্গে বৈঠক করল। "আমার প্রিয় বন, আমি চাই একটি সোনার হরিণ পেতে। তোমরা যদি এটি আনতে পারো, তবে আমি তোমাদের বিশেষ পুরস্কার দেব।"
পরামর্শদাতারা বিভিন্ন পরিকল্পনা করে, তারা জানালো যে সোনার হরিণ দেখতে হলে একটি বিশেষ গাছের ফুল চাই। সেই ফুল শুধু তখনই ফোটে, যখন সূর্যাস্তের পরে চাঁদের আলো পড়ে।
সব পশুরা এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করল এবং রাতের অন্ধকারে ফুলটি খুঁজে বের করার জন্য মেতে উঠল। তাদের মধ্যে ছিল এক তরুণ শিম্পাঞ্জি, যাকে সবাই খুব ভালোবাসত। শিম্পাঞ্জি যাত্রার সময় এক সোনার ফুলের কথা শুনেছিল। সে বিশ্বাস করল, সেই ফুলের কারণে সোনার হরিণ আসবে।
সে একটি ছোট পথ ধরে চলতে শুরু করল, পাহাড় ও নদী পার করে, শেষে একটি জাদুকরী গাছের সামনে এসে দাঁড়াল। চাঁদের আলো পড়তে শুরু করার সাথে সাথে ফুলটি ফুটল। ফুলের আলোতে সোনার হরিণ ধীরে ধীরে উপস্থিত হল।
শিম্পাঞ্জি সোনার হরিণকে দেখিয়ে রাজা সিংহের কাছে ফিরে এলো। রাজা সিংহ আনন্দিত হয়ে শিম্পাঞ্জিকে ধন্যবাদ দিল এবং একটি বড় উদযাপন আয়োজন করল।
সেই রাতেই বনজুড়ে আনন্দে লেগে গেল। সোনার হরিণও বনবাসী হয়ে গেল এবং রাজা সিংহের বন্ধু হয়ে গেল। বনটির জীবন আরও সুখময় হয়ে উঠল, কারণ তারা জানত—একটি সত্যিকারের বন্ধু সবসময় পাশে থাকবে।
এভাবেই, সোনার হরিণের উপস্থিতি বনটির প্রতি এক নতুন জীবন এনে দিল এবং সকলেই সুখে এবং আনন্দে কাটাতে লাগল।
---
(০২)
অলৌকিক মেলা
-বিচিত্র কুমার
এক দিন সারা গ্রামে ঘোষণার মতো একটা খবর ছড়িয়ে পড়ল—এবার গ্রামে হচ্ছে এক অলৌকিক মেলা! সবাই খুব উত্তেজিত। ছোট্ট সুমিতও খুব আনন্দিত, কারণ সে মেলার বিভিন্ন রকমের রাইড আর খেলনা দেখতে পছন্দ করে।
মেলা শুরু হতেই সুমিত আর তার বন্ধুদের চোখ ধাঁধানো মেলার স্টলগুলো দেখে। সোনালী লাইট আর রঙ-বেরঙের শীতল বাতাসে, মেলার গতি দারুণ ছিল। কিন্তু এই মেলার বিশেষত্ব ছিল অন্য জায়গায়—এখানে যেকোনো খেলনা কথা বলতে পারত!
প্রথমে সুমিত একটি দুলন্ত ঘোড়ার স্টলে গিয়ে দাঁড়াল। ঘোড়াটি বলল, "হ্যালো সুমিত! আমি তোমার সঙ্গে দুলে খেলতে চাই।" সুমিত অবাক হয়ে শুনল। এরপর সে এক চকোলেটের স্টলে গেল। চকোলেট বলল, "আমার স্বাদে লুকিয়ে আছে সুখ। এক টুকরো খাও, তুমিও সুখী হও!"
সুমিত আরও অবাক হল যখন সে দেখতে পেল, একটি ছোট্ট ড্রাগন তাকে বলছে, "আমি তোমার সঙ্গে আকাশে উড়তে চাই। চলো, আকাশ দেখাই!" সুমিত একটু সাহসী হয়ে ড্রাগনের পিঠে চড়ে বসে। তারা আকাশে উড়ে বেড়াল। সুমিতের মন ভরে গেল আনন্দে।
মেলার শেষ দিকে, সুমিত এক বিরাট ঝুলন্ত পদ্মফুলের কাছে গেল। পদ্মফুল হাসতে হাসতে বলল, "এখন তুমি যদি আমার সঙ্গে খেলতে চাও, তবে আমাকে গান গাও।"
সুমিত ছোট্ট এক গান গাইল—"ফুলের মতো উজ্জ্বল রোদ, তোমার হাসিতে মলিন মেঘ।" পদ্মফুল আনন্দে ঝলমলে হয়ে উঠল।
মেলা শেষ হলে সুমিত বাড়ি ফিরে এল, কিন্তু তার মনে পড়ে গেল সেই অদ্ভুত আর মজার মেলার কথা। সুমিত জানত, এই মেলা শুধু একদিনের ছিল, কিন্তু তার স্মৃতি চিরকাল থাকবে, আর সে আশা করেছিল ভবিষ্যতে আবার এমন মেলা দেখতে পাবে।
সেই রাতেই সুমিত মনের আনন্দে ঘুমিয়ে পড়ল, স্বপ্নে দেখল অলৌকিক মেলার খেলনা আর তার বন্ধুরা।
(০৩)
বানরের রাজ্য
-বিচিত্র কুমার
একটা সময়ে, এক সুন্দর বনভূমির মাঝে একটি রাজ্য ছিল। রাজ্যের রাজা ছিল এক উজ্জ্বল, চঞ্চল বানর, যার নাম ছিল রাজু। রাজু সব সময় হাসিখুশি থাকতেন এবং তার রাজ্য ছিল আনন্দে ভরা।
একদিন, রাজুর পিপঁড়ে খেলার একটা নতুন ধারণা এলো। তিনি ভাবলেন, কেন না বানরের রাজ্যকে আরো মজার করা যায়? তাই তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, রাজ্যে একটি বড়ো রঙ্গিন মেলা হবে।
রাজুর আদেশে, সব বানরেরা কাজে লেগে গেলো। তারা বানালো রঙ-বেরঙের পতাকা, সাজালো বড়ো মঞ্চ আর সজাগ করলো ফুচকা আর চপের স্টল। মেলা আয়োজনের জন্য রাজ্য পুরোপুরি প্রস্তুত হয়ে গেলো।
মেলার দিন এলো। রাজু আনন্দিত হয়ে দেখলেন, বনভূমির সব প্রাণীরা মেলায় আসছে। হরিণ, শিয়াল, খরগোশ—সবাই আসলো একসাথে। রাজু খুবই আনন্দিত, কারণ এতগুলো প্রাণী একসাথে মেলা উপভোগ করছে।
মেলার মধ্যে ছিল একটি বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন—'বানরের নাচের প্রতিযোগিতা'। রাজু নিজেই বিচারক হয়ে বসে গেলেন। প্রথমে মঞ্চে উঠলো চঞ্চল বানরের দল। তারা মজার, হাস্যকর নাচ করে সবাইকে মাতিয়ে দিলো। তারপর আসলো সজাগ বানরের দল। তাদের নাচ ছিল অত্যন্ত সুন্দর ও সুরেলা। রাজু খুবই মুগ্ধ হয়ে দেখলেন।
সবাই মেলা উপভোগ করছে, মিষ্টির স্বাদ নিচ্ছে আর একে অপরের সঙ্গে আনন্দ ভাগ করে নিচ্ছে। মেলার শেষে, রাজু সবাইকে ধন্যবাদ জানালেন এবং বললেন, "আমাদের রাজ্যের আনন্দ আর বন্ধুত্ব সব সময় এইভাবে চলুক।"
রাজ্যের প্রাণীরা উল্লাসের সাথে সম্মতি জানালো। সেইদিন থেকে, বনভূমির প্রাণীরা একসাথে আনন্দ করার আরেকটি ভালো দৃষ্টান্ত পেয়ে গেলো। রাজুর রাজ্য হয়ে উঠলো সুখ-সমৃদ্ধির এক আদর্শ জায়গা।
অবশ্যই! এখানে একটি নতুন ছোট্ট রম্য শিশুতোষ গল্প দিলাম:
---
(০৪)
ছোট্ট মিঠু ও তার বন্ধু
-বিচিত্র কুমার
ছোট্ট মিঠু ছিল একদম প্রাণবন্ত ও দুষ্টু ছেলেটি। তার সবথেকে প্রিয় কাজ ছিল নতুন বন্ধু বানানো। একদিন সে তার backyard-এ খেলতে খেলতে হঠাৎ করে একটি নতুন বন্ধু পেলো। কিন্তু এই বন্ধু ছিল একটু অদ্ভুত।
এটি ছিল একটি ছোট্ট হলুদ পেঁপে, যেটি মিঠুর কাছে কথা বললো। মিঠু প্রথমে অবাক হয়ে গেলো, তারপর মুচকি হেসে বললো, "তুমি কি আসলে কথা বলছো?"
পেঁপেটি হেসে বললো, "হ্যাঁ, আমি কথা বলতে পারি! আমার নাম পেপি। তুমি কি আমাকে বন্ধু হিসেবে নিতে চাও?"
মিঠু আনন্দে নেচে উঠলো। "অবশ্যই! আমরা কি মজা করতে পারি?"
পেপি বললো, "হ্যাঁ, নিশ্চয়ই! আমি শুনেছি তুমি গান গাইতে ভালোবাসো। আমি গান শুনতে খুব পছন্দ করি। তুমি কি আমাকে গান শোনাবে?"
মিঠু তখন একটা সুন্দর গান গাইতে শুরু করলো। পেপি মিষ্টি সুরে গানের সাথে তাল মিলিয়ে দুলছিল। সেই গান শেষ হতেই পেপি বললো, "তোমার গলা সত্যিই খুব সুন্দর। আমি যদি একটু বড় হতাম, তাহলে আমার গলা থেকে গান বেরোতো!"
মিঠু হেসে বললো, "তুমি যদি পেঁপে না হতেও, তুমি চমৎকার বন্ধু। কিন্তু তুমি কি জানো, আমি সব সময় ভাবি পেঁপে মিষ্টি হয়, আর তুমি যে গান গাওয়ার কথা বললে, তাতে তুমি আরও মিষ্টি হয়ে গেলে!"
দুজনেই হাসতে হাসতে মজার সময় কাটাতে লাগলো। তারা একসাথে খেললো, গান গাইলো এবং নতুন নতুন খেলনার সন্ধান পেলো। মিঠু বুঝতে পারলো যে, বন্ধুত্বের মধ্যে কোনো সীমাবদ্ধতা নেই—যেমন পেঁপে একটি অদ্ভুত বন্ধু হতে পারে, তেমনি সে তার দুষ্টু ভাবনার মাধ্যমে আনন্দের মুহূর্তগুলো তৈরি করতে পারে।
সেই দিন মিঠু এবং পেপি একসাথে অনেক মজা করলো এবং পরদিনও তারা একে অপরের সাথে খেলতে থাকলো। পেপি তার নতুন বন্ধু মিঠুর সাথে বন্ধু হতে পেরে খুবই খুশি ছিলো এবং মিঠু জানতো, মিষ্টি পেঁপের সাথে বন্ধুত্ব গড়া তার জীবনের অন্যতম সেরা অভিজ্ঞতা।
---
(০৫)
মুন্নি আর চাঁদের কাহিনী
-বিচিত্র কুমার
একদিন রাতে, মুন্নি নামে একটি ছোট্ট মেয়ে মায়ের সাথে ছাদে বসে চাঁদ দেখতে বের হলো। চাঁদটি পূর্ণিমার রাতের মতো উজ্জ্বল ও সুন্দর ছিল। মুন্নির চোখের সামনে চাঁদ একেবারে হাতের নাগালে মনে হচ্ছিল।
মুন্নি চাঁদকে বলল, "ওই চাঁদ, তুমি কি আমার সাথে খেলতে চাও?"
চাঁদ হেসে বলল, "কীভাবে খেলব? আমি তো আকাশে ভাসি!"
মুন্নি ভাবল, "তাহলে আমি একটা দোলনা বানাবো, তুমি তাতে চড়তে পারো!"
মুন্নি তার মাকে বলল, "মা, আমি একটা দোলনা বানাতে চাই, যাতে চাঁদ খেলতে পারে।"
মা হাসলেন এবং বললেন, "ঠিক আছে, কিন্তু তোমার দোলনা যাতে নিরাপদ হয় সেদিকে খেয়াল রেখো।"
মুন্নি কাঠের দোলনার কাজ শুরু করল। সে দোলনার পাটি দিয়ে মজবুত করে বানালো। রাতের বেলা, দোলনা তৈরি হয়ে গেলে, মুন্নি চাঁদকে ডাকল।
চাঁদ আস্তে আস্তে নিচে নামলো এবং দোলনায় চড়ে দেখতে লাগলো। দোলনা খুবই মসৃণ ছিল এবং চাঁদ আনন্দিত হয়ে ওঠল। তারা অনেকক্ষণ ধরে দোলনায় খেললো। চাঁদ মাঝে মাঝে আকাশের দিকে তাকিয়ে একবার কীর্তন গেয়ে উঠছিল।
বিকেল হলে চাঁদ বলল, "ধন্যবাদ মুন্নি, আজকের রাতটা আমার জীবনের অন্যতম সুন্দর রাত ছিল। আমি এখন আবার আকাশে ফিরে যাব।"
মুন্নি একটু দুঃখিত হলেও বলল, "চাঁদ, তুমি আবার আসবে তো?"
চাঁদ হেসে বলল, "অবশ্যই, যখনই পূর্ণিমার রাত হবে, আমি এখানে এসে তোমার সাথে খেলব।"
মুন্নি খুশিতে বলল, "আমি অপেক্ষা করব।"
চাঁদ আকাশে ফিরে গেল, আর মুন্নি তার মায়ের সাথে ঘুমাতে চলে গেল।
এভাবেই মুন্নি ও চাঁদের বন্ধুত্বের শুরু হলো, আর পূর্ণিমার রাতে, মুন্নি অপেক্ষায় থাকে চাঁদের আবার আসার জন্য।
__________________________________________________________________________________________
বিচিত্র কুমার
গ্রামঃ খিহালী পশ্চিম পাড়া
পোস্টঃ আলতাফনগর
থানাঃ দুপচাঁচিয়া
জেলাঃ বগুড়া
দেশঃ বাংলাদেশ
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন