Featured Post

ছড়া ।। আকাশটাকে খোঁজে ।। দীনেশ সরকার

ছবি
আকাশটাকে খোঁজে দীনেশ সরকার            পড়তে বসলে জানলা দিয়ে মন ছুটে যায় দূরে গাইছে পাখি ওই যে গাছে মিষ্টি-মধুর সুরে। কিংবা যখন হাত বাড়িয়ে আকাশ আমায় ডাকে পড়ার পাতায় মন আমার কি বাঁধা তখন থাকে?   পূবের হাওয়া কড়া নাড়ে যখন আমার দোরে কিংবা অলি গুনগুনিয়ে চতুর্দিকে ঘোরে প্রজাপতি পাখা মেলে ওড়ে ফুলের মেলায় কখন যেন অবুঝ এ মন যায় হারিয়ে হেলায়।   কাঠবেড়ালি কাটুস্‌-কুটুস্‌ আমার দিকে তাকায় মন তখন কি আটকে থাকে পড়ার বইয়ের পাতায়? টুনটুনিটা তিড়িং-বিড়িং পুচ্ছ নাচায় গাছে মনটা বাঁধা তখন কি আর অঙ্কখাতায় আছে?   অঙ্ক কষতে ভুল হয়ে যায়, পড়া যাই যে ভুলে স্যারের বকা মাঝে মাঝেই খাই আমি ইস্কুলে। মনকে আমি কত্ত বোঝাই, মন তবু কি বোঝে সুযোগ পেলেই জানলা দিয়ে আকাশটাকে খোঁজে।   ******************************************** দীনেশ সরকার ১৪০ ডি, হিজলি কো-অপারেটিভ সোসাইটি, প্রেমবাজার, খড়্গপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর---- ৭২১৩০৬

স্মৃতিকথা ।। আমার চোখে শৈশবের দুর্গাপুজো ।। মিঠুন মুখার্জী

  ।।  আমার চোখে শৈশবের দুর্গাপুজো ।।

                        মিঠুন মুখার্জী

 
উৎসবপ্রিয় বাঙালি। তাদের বারো মাসে তেরো পার্বণ। আর সমস্ত পার্বণের মধ্যে বাঙালির কাছে শ্রেষ্ঠ পার্বণ হল দুর্গা পুজো। শরৎ ঋতুতে শিউলির গন্ধে চারিপাশের পরিবেশকে আমোদিত করে কাশফুলের সৌন্দর্যে মা দুর্গার মর্ত্যে আগমন ঘটে। মা তাঁর সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে বাপের বাড়ি আসেন। আবালবৃদ্ধবনিতার কাছে এই দিনগুলি খুবই আনন্দমুখর হয়ে ওঠে। তবে এক এক বয়সের মানুষের কাছে পুজোর আনন্দানুভূতি এক এক রকম। শৈশব-কৈশোর-যৌবন-প্রৌঢ় ও বার্ধক্যে  এই দুর্গাপুজোর অনুভূতি সম্পূর্ণ আলাদা। মানব জীবনের সবচেয়ে সুখকর সময় শৈশব। এই বয়সে সংসারের কোনো জটিলতা, বাস্তববোধ তাদের মধ্যে থাকে না। তারা একেবারে সাদা কাগজের মতো। চারিপাশের পরিবেশে যা দেখবে তাই তারা শিখে থাকে। বড়দের দেখাদেখি দুর্গাপুজোর প্রকৃত আনন্দ শিশুরাও উপভোগ করার চেষ্টা করে।মন্ডপে মন্ডপে ঢাকের আওয়াজ ও ঘন্টা - শঙ্খনিনাদ শিশুর মনকে আরও পবিত্রতায় ভরে তোলে।

      দুর্গা পুজোর একমাস আগে থেকেই শিশুরা বাবা-মার সঙ্গে কেনাকাটায় মেতে ওঠে। বাবা-মা তো আছেই দাদু-ঠাকুমা, মামা-মাসি আরও অনেক আত্মীয়ের কাছ থেকে নতুন জামা-প্যান্ট পেয়ে থাকে তারা। তবুও কেনাকাটার শেষ হয় না। শুধু জামা-প্যান্টই নয়, জুতো, মেকাপ, গহনা সবই তাদের কেনাকাটার মধ্যে থাকে। গ্ৰামের ও শহরের শিশুদের মধ্যে কিছু ভিন্ন ভিন্ন চাহিদা লক্ষ করা যায়। শৈশবে শিশুর মধ্যে অনুকরণ প্রবৃত্তি বেশি কাজ করে। তাই একজনেরটা দেখে নিজেও তা পাওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করে তারা। কারোকে কিছু করতে দেখলে সেও সেই বিষয়টি করার চেষ্টা করে। ভালো-মন্দ ফল নিয়ে তারা ভাবে না। পুজোয় একজনের জামা-প্যান্ট বেশি হলে অন্যজনও বাবা-মার কাছে তার তুলনা টেনে বলে--"ওর এতগুলো হয়েছে, আমার এতো কম কেন? আমায় কেউ জামা-প্যান্ট দেয় না কেন?"
      মহালয়ার দিন থেকে দেবীপক্ষের শুরু হয়। পুজো পুজো একটা আমেজ প্রতিটি শিশুর মনে চলে আসে। প্রতিবছর  ভোর পাঁচটায় উঠে টিভিতে মহালয়া দেখে তারা । কেউ কেউ আবার রাত তিনটের সময় ঘুম থেকে উঠে রেডিওতে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের চন্ডী পাঠ শোনে। চন্ডীপাঠ শুনে প্রতিটি শিশুর শরীর রোমাঞ্চিত হয়ে ওঠে। কেউ আবার বাবার সাথে গঙ্গায় তর্পণের উদ্দেশ্যে যায়। এরপর থেকে প্রতিটি মুহূর্তে তারা দুর্গা পুজোর আনন্দ অনুভব করে। 
    শিশুরা ঘুরতে খুবই পছন্দ করে। তাই দুর্গা পুজোর দিনগুলিতে সে পিতা-মাতার সাথে ঠাকুর দেখতে যায়। মন্ডপে মন্ডপে ঘুরে খুবই আনন্দ পায় সে। মন্ডপ-ঠাকুর- আলোকসজ্জা সবকিছু খুবই কৌতূহল নিয়ে দেখে সে এবং বাবা-মার কাছে হাজারটা প্রশ্ন করে থাকে। সেই প্রশ্নের উত্তর দিয়েও শান্তি নেই। একের পর এক প্রশ্ন তাদের মাথায় যেন সাজানো থাকে। দেবী দুর্গার মহিষাসুর বধের কাহিনীও কখনো কখনো জানার ইচ্ছা প্রকাশ করে শিশুরা। পুজোর কটাদিন তারা বাবা- মার কাছে ঠাকুর দেখার ইচ্ছা প্রকাশ করে । 
     শুধু ঠাকুর দেখাই নয় খেতেও খুব ভালোবাসে শিশুরা। ভাত-রুটির পরিবর্তে ফাস্টফুডের দিকে তাদের নজর বেশি। দুর্গা পুজোয় ঘুরতে গিয়ে চাউমিন,এগরোল, মোগলাই, বিরিয়ানি, মোমোর মতো খাবারের প্রতি শিশুরা আসক্তি প্রকাশ করে। তাছাড়া চিকেনের আইটেম, ফুচকা, বিভিন্ন রকমের আইসক্রিম তারা খেয়ে থাকে। ঠাকুর দেখা উপলক্ষ হলেও লোকদেখা ও খাওয়া - দাওয়ার উপর শিশুদের আকর্ষন বেশি। 
   শৈশবকাল জীবনের সবচেয়ে আনন্দের সময়। আগে পিছে চিন্তা না করে শিশুরা আনন্দ করে থাকে। মনের মতো পোশাক পরে সেজেগুজে বন্ধুদের সঙ্গে আনন্দ করে তারা। বাজি ফাটিয়ে,বন্দুক দিয়ে ক্যাপ ফাটিয়ে খুব মজা পায় তারা। দুর্গা পুজোর চারটি দিন আনন্দ হইহুল্লোড়ের মধ্যে দিয়ে কাটে তাদের। শরৎ ঋতুতে ফোটা বিভিন্ন ফুলের সুবাসে আকাশ বাতাস যেমন ভরে ওঠে, ফুলের মতো নিষ্পাপ শিশুরাও তেমনি শরৎকালের শারদ উৎসবকে আরও আনন্দময় করে তোলে।
         দুর্গাপুজোর ছুটি কিছু কিছু শিশুদের একটু অন্যভাবে কাটে। এই সময়ে তারা বাবা-মার সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যায়। ফলে পুজোর আনন্দটি ঘোরার আনন্দে পরিবর্তন হয়ে যায়। যেখানেই সে যাক না কেন তার মনের মধ্যে থাকে বিগত বছরের নষ্টালজিক অনুভূতি। ঘুরতে গিয়ে সেখানে কোথাও যদি দুর্গা পুজো হতে দেখে, তবে সে সেখান থেকেও পুজোর আনন্দ পুরো মাত্রায় উপভোগ করার চেষ্টা করে। বাড়ির আশেপাশের পুজোর জন্য তার মনটা কিছু সময় ভারাক্রান্ত হয়ে থাকে। আবার কিছু শিশুরা দুর্গাপুজোর এই কদিন এলাকা ছাড়া কোথাও যেতে পছন্দ করে না। বাইরের সমস্ত আনন্দ থেকে নিজের এলাকার পুজো উপভোগ করার মত আনন্দ তাদের সবচেয়ে ভালো লাগে। অষ্টমীর দিন মার সঙ্গে মা দুর্গার কাছে অঞ্জলি দেওয়া, দশমীর দিন ঠাকুরের সঙ্গে শোভাযাত্রায় যাওয়া, গানের তালে তালে নাচা, বাজি ফাটানো ---  এই সকল আনন্দ থেকে কোনোভাবেই সে বঞ্চিত হতে চায় না। 
        দুর্গা পুজো সকল শিশুদের কাছে একরকম নয়। নিম্নবিত্ত পরিবারের শিশুদের কাছে অভাব এত ভয়ঙ্কর রূপ নেয় যে তাদের সামান্য চাহিদাও তাদের বাবা-মা পূরণ করতে পারে না। নতুন জামা-প্যান্ট তারা পায় না। মনের মধ্যে থাকে না পাওয়ার একরাশ যন্ত্রনা। তাদের পুজোর দিনগুলি বাড়িতেই কাটে চোখের জলে। আলোঝলমলে মন্ডপ ও প্রতিমার কাছে এরা লজ্জায় যায় না। দিনের বেলা ফাঁকা মন্ডপ ঘুরে দুঃখের মাঝে একটু আনন্দ উপভোগ করার চেষ্টা করে। এদের কথা সমাজের সম্পন্ন মানুষেরা ভাবে না। তারা তাদের উদ্বিত্তটুকু ফেলে দেয় কিন্তু এদের দেয় না। আবার মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত পরিবারের শিশুরা না চাইতেই সব পেয়ে যায়। ফলে অভাব এরা বোঝে না। প্রতিটি মুহূর্তে দুর্গা পুজোর আনন্দ উপভোগ করে। প্রতিটি মন্ডপে এদের ভিড় লক্ষ করা যায়। এরা সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মানো শিশু।
                 শৈশবে শিশুরা দুর্গাপুজোয় কেবল আনন্দ উপভোগই করে না অন্যকেও আনন্দ দেয়। মন্ডপে মন্ডপে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে শ্রোতাদের আনন্দ দান করে। শিশুরা নৃত্য - গান- কবিতা আবৃত্তি করে। তাদের যে কোন উপস্থাপনই সকলে খুবই আনন্দের সহিত গ্ৰহণ করে। পুজোর গান, রবীন্দ্রসঙ্গীত ও বিভিন্ন নাচের গানে নৃত্য পরিবেশন করে অন্যকে তারা যেমন আনন্দ দান করে তেমনি নিজেরাও আনন্দ পায়। সন্তানের মুখে হাসি ফোটাতে পেরে পিতা-মাতাও তৃপ্ত হন।
         পরিশেষে বলাযায়, শিশুর জীবনে দুর্গাপুজোর আনন্দ ও গুরুত্বকে কোনোভাবেই অস্বীকার করা যায় না। বতর্মানের পড়াশোনা ও তার বাইরের নানান চাপ শিশুর জীবনকে একঘেয়ে করে তুলেছে এবং তাদের মুখ থেকে আত্মতৃপ্তির হাসি কেড়ে নিয়েছে। মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেটের কুপ্রভাব তাদের আস্টেপিস্টে জড়িয়ে ধরেছে । দুর্গাপুজোর কটা দিন তারা সব বিসর্জন দিয়ে আনন্দে মেতে ওঠে। তাদের মুখে ফুটে ওঠে আত্মতৃপ্তির হাসি। যে হাসি সারা বছর তাদের মুখে থাকার কথা তা আজকের ব্যস্ততা কেড়ে নিচ্ছে। তাই দুর্গাপুজোর মতো উৎসবের প্রভাব প্রত্যেকটি শিশুর জীবনে খুবই প্রয়োজন।


=====================
মিঠুন মুখার্জী
C/O-- গোবিন্দ মুখার্জী
গ্ৰাম : নবজীবন পল্লী
পোস্ট+থানা -- গোবরডাঙা
জেলা -- উত্তর ২৪ পরগণা


        
         
         




মন্তব্যসমূহ

সপ্তাহের পছন্দ

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 38th issue: January 2025

কবিতা ।। আকাশ-সাগর ।। শান্তনু আচার্য

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সুচিপত্র ।। 37th issue: December 2024

কবিতা ।। নতুন বছর ।। জীবন সরখেল

চোখের ভাষা ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত

ছড়া ।। শীতের দু'টি মাসে ।। গোবিন্দ মোদক

প্রচ্ছদ ও সূচীপত্র ।। 24th issue: September 2023

ছোটদের আঁকিবুঁকি ।। কিশলয় - ২২ ।। জুলাই ২০২৩

ছড়া ।। দৃষ্টিকাড়া বৃষ্টি ।। শচীন্দ্র নাথ গাইন

ছড়া ।। অদ্ভূতুড়ে ।। প্রবোধ কুমার মৃধা

মাসের পছন্দ

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 38th issue: January 2025

কবিতা ।। আকাশ-সাগর ।। শান্তনু আচার্য

ছড়া ।। শৈশবের রথ ।। ইয়াসমিন বানু

কবিতা ।। নতুন বছর ।। জীবন সরখেল

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সুচিপত্র ।। 37th issue: December 2024

অণুগল্প ।। ঝুমুক ঝুমুক ।। ব্রজ গোপাল চ্যাটার্জি

ছোটগল্প ।। হেমন্ত দাদার সাথে ।। দীপক পাল

ছড়া ।। আকাশটাকে খোঁজে ।। দীনেশ সরকার

ছড়া ।। শীতবুড়িটা ।। প্রবোধ কুমার মৃধা

কবিতা ।। খুকির বায়না ।। খগেশ্বর দেব দাস

বছরের পছন্দ

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। ত্রয়োত্রিংশ সংখ্যা ।। জুন ২০২৪

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 38th issue: January 2025

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সুচিপত্র ।। 37th issue: December 2024

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। চতুর্ত্রিংশ সংখ্যা ।। জুলাই ২০২৪

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচীপত্র ।। 29th Issue: February

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 31st issue: April 2024

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 32nd issue: May 2024

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 30th issue : March 2024

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। পঞ্চত্রিংশ সংখ্যা ।। আগষ্ট ২০২৪

অতি প্রিয়

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। আত্মপ্রকাশ সংখ্যা ।। অক্টোবর ২০২১

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। দ্বিতীয় সংখ্যা ।। নভেম্বর ২০২১

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 4th issue: January 2022,

নিবন্ধ ।। শিশু-কিশোর সাহিত্যবলয়ে শিশুরাই যেন ব্রাত‍্য না থাকে ।। অরবিন্দ পুরকাইত

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 7th issue: April 2022

নিবন্ধ ।। দেশীয় উদ্ভিদ কেন গুরুত্বপূর্ণ ? ।। ডঃ চিত্তরঞ্জন দাস

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় - ১০ ।। জুলাই ২০২২

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় - ১১ ।। আগস্ট ২০২২

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র : 8th issue: May 2022

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় - ১২ ।। সেপ্টেম্বর ২০২২