Featured Post
গল্প ।। মহাদেবের টোটকা ।। উত্তম চক্রবর্তী
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
মহাদেবের টোটকা
উত্তম চক্রবর্তী
আজ শনিবার, অমাবস্যা। ভূতদের মিটিং বসেছে তালতলার সবচেয়ে বড় বটগাছের মাথায়। মিটিঙে রাজ্যের সমস্ত ভূত পরিষদের মাথাদের ডাক পড়েছে রাত বারোটার সময়। সবশুদ্ধ আশি জন ভূত পরিষদিয় নেতা এসেছেন রাত সাড়ে এগারোটার মধ্যে। মিটিঙের উদ্যোক্তা "পশ্চিমবঙ্গ ভূত সমাজ উন্নতি সংঘ"। আজকের প্রধান বক্তা ভূত সাম্রাজ্যের মধ্যমণি ও নেতা হিতেন গোস্বামী তখনো এসে পৌঁছননি। আগত সমস্ত ভূত প্রধানদের আপ্যায়ন করবার জন্য প্রথমেই ওয়েলকাম ড্রিংকস হিসাবে কুকুরের রক্তের জুস বিতরণ করা হয়েছে। যারা নিরামিষ ভূত তাদের দেওয়া হয়েছে তরমুজের জুস। এরপর রাতের ডিনারে সমস্ত আমিষ ও নিরামিষ ভূতদের জন্য আছে অনেক রকম খাবার আয়োজন।
এই মিটিংটা আজ ডাকা হয়েছে করোনায় মৃত ভূতদের নিয়ে কী করা হবে সেই বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ নীতি নির্ধারণ করবার জন্য। ইতিমধ্যেই পশ্চিম বঙ্গের কয়েক হাজার মানুষ করোনা রোগে মারা গিয়ে ভূত হয়ে যেখানে সেখানে ঘুরে বেড়াচ্ছে। মানুষদের জন্য কোভি শিল্ড বা কো ভ্যাক্সিন নামের কোভিড ইনজেকশন চালু হয়ে রোগটাকে বাড়তে না দেওয়ার সমস্ত প্রচেষ্টা চলছে। কিন্তু যারা ইতিমধ্যে এই করোনা রোগের শিকার হয়ে পরলোক গমন করেছেন, মানে মরে ভূত হয়ে গেছেন তাদের জন্য তো মানুষরা কিছু করতে পারবেনা। যা করতে হবে সব ভূতদেরই করতে হবে। এদিকে ভূতরা কেউই এদের সাথে একসাথে থাকতে রাজি নয়।
ঠিক রাত সাড়ে বারোটার সময় ডিনার শেষ হবার পরেই হিতেন গোস্বামী এসে হাজির হলেন তালতলার বড় বট গাছের সবচেয়ে উঁচু ডালে। আশেপাশের ডালে "পশ্চিমবঙ্গ ভূত সমাজ উন্নতি সংঘের" সব হোমরা চোমরা ভূতেরা বসা। সংঘের সভাপতি কাঞ্চন বড়াল মিটিং শুরু করে বললেন, 'বন্ধু গন। আজ আমাদের এই সভায় প্রথমেই আমি আপনাদের সবাইকে স্বাগত জানাই। এই মিটিঙের উদ্দেশ্য আপনারা সবাই জানেন। আমাদের একটা কিছু করতে হবে যাতে এই মারাত্মক করোনা রোগে মারা যাওয়া ভূতরা আমাদের মত সুস্থ সবল ভূতদের কোনরকম বিপদে না ফেলতে পারে। এদিক ওদিক রাস্তায়, জঙ্গলে , পোড়ো বাড়িতে, গাছের ডালে, শ্মশানে বিভিন্ন স্থানে তারা অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমি আমাদের এই মিটিঙের প্রধান বক্তা শ্রীযুক্ত হিতেন গোস্বামীকে অনুরোধ করছি এসে আপনাদের এই সমস্যার ব্যাপারে কিছু বলে ভূত সমাজকে আজ একটা দিশা দেখানোর জন্য।'
হিতেন গোস্বামী বলতে উঠে প্রথমেই হাতজোড় করে বললেন,' আমি আপনাদের সবার কাছ থেকে আগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি আমার আসতে একটু দেড়ি হয়ে যাবার জন্য। আসলে আমি আমাদের ভূত সমাজের এই সমস্যা নিয়ে আলোচনার জন্য বদরিনাথ পাহাড়ে গিয়েছিলাম। আমি শুনেছি সেখানে স্বামী প্রচেদানন্দের ভূত দেবাদিদেব মহাদেবের কঠোর আরাধনা করে আমাদের দেশের ভূত সমাজের এই অদ্ভুত সমস্যার কথা তাকে জানিয়ে একটা সমাধান চেয়েছিলেন। স্বামীজির সেই কঠোর তপস্যায় খুশী হয়ে দেবাদিদেব মহাদেব নিজে তাকে দেখা দেন এবং একটা উপায় জানান। আমি আজ সেটাই জানতে গেছিলাম সেখানে।'
সমস্ত ভূতরা একযোগে চেঁচিয়ে উঠল,'কী সমাধান শীগগির বলুন আমাদের।'
হিতেন বাবু একটু হেসে বললেন,' স্বামীজি আমাকে বললেন শিব-জি বলেছেন যত করোনা রোগে মৃত ভূত এসেছে ওদের সবাইকে চীনে পাঠিয়ে দাও। চীন এবার বুঝুক কত ধানে কত চাল।'
মহাদেবের দেওয়া এই টোটকার কথা শুনে উল্লাসে সমস্ত ভূতরা হাততালিতে ফেটে পড়ল। মিটিং-এ
সবার চাহিদা ও দেবাদিদেব মহাদেবের পরামর্শে ঠিক হল চীনদেশকে সায়েস্তা করতে দেশের অন্যান্য রাজ্যের মত পশ্চিম বাংলার সমস্ত করোনা ভূতদের চীনে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। এরপর সারারাত ধরে চলল ভূতদের আনন্দ উল্লাস আর নাচ গান। এক সপ্তাহের মধ্যেই পশ্চিমবঙ্গের শহর ও গ্রাম থেকে খুঁজে খুঁজে সমস্ত করোনা ভূতদের ধরে ধরে বাক্স বন্দি করে পাঠিয়ে দেওয়া হল চীনে। এখন একটাও করোনা ভূত নেই সেখানে। বিশ্বাস না হলে গ্রামে গঞ্জে গিয়ে দেখে আসুন।
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন