আরতি মিত্র
ঘুম থেকে উঠে দেখে, বুবাই বিছানায় নেই।সুমিতা অবাক হল। এমনটা তে কখনও হয় না।
তার ওঠার আগে বুবাই কোনদিনই ওঠে না। সুমিতাই তার ঘুম ভাঙায়। স্কুলে যাওয়ার তাড়া দেয় তাকে। বুবাইয়ের স্কুলের গাড়ি দশটায় আসে। বুবাই ক্লাস টু-তে পড়ে, সাত বছর বয়স।
সুমিতা বিছানা থেকে নেমে দেখল, বাইরে বেরোবার দরজা তো খোলা তবে গেল কোথায়?
ছাদে? মায়ের দুশ্চিন্তার অন্ত নেই
মনের কোণে একটা সন্দেহ উঁকি মারল
ছেলে তো মাঝে মাঝেই ছাদে গিয়ে একদৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে। তারা দেখে।
ছাদে গেল না তো? বুবাই বুবাই করে ডাকতে ডাকতে শুক্লা উপরে ছাদে গিয়ে দেখলেন বুবাই সকালে উঠে ভোরের আকাশ দেখছে, তবেও সুমিতাও কম অবাক হল না ছেলের এই কান্ড দেখে।
ভাবলেন, কত বড় হয়ে গেছে তার ছেলে। বুকটা তার গর্বে ভরে উঠল।
তিনি বুবাইকে বললেন, কিরে কি করছিস এখানে?
প্রশ্ন করতেই উত্তর এল , আকাশ দেখছি।
রোজই তো দেখিস,এখন হিম পড়ছে। ঠান্ডা লাগবে যে , চল, নীচে চল। আজ এত সকালে উঠে পড়েছিস কেন?
সে অনেক কথা মা। চল, নীচে গিয়ে তোমায় বলব।
সে যাই হোক,সুমিতা তো বুবাইকে নীচে নিয়ে এলেন।
তাকে বললেন, পড়তে বস,সামনে পরীক্ষা যে।
বুবাই বই নিয়ে বসলো বটে , কিন্তু তার পড়ায় যে মন নেই , বোঝাই যাচ্ছে তাকে দেখে।সুমিতা আর তাকে কিছু না বলে, বাথরুমে ঢুকে পড়ল প্রাত্যহিক কাজ সারতে।
রূপকথার গল্প শুনে শুনে সব সময় আনমনা হয়ে কি যেন ভাবে বুবাই। কে জানে?
বাবা এসে তো যত দোষ মায়ের ঘাড়েই চাপাবে।
বলবেন, ছেলেকে শাসনও করতে পার না?
ওদিকে বুবাই ভাবছে চাঁদের বুড়ি আর পরীদের কথা। ওদের দেশে গেলে কি মজাটাই না হবে
পড়তে হবে না। দুটো পাখা লাগিয়ে সারা আকাশটাই ঘুরে বেড়াবে সে। ইচ্ছে হলে চাঁদের দেশে চলে যাবে। কোথাও আমার হারিয়ে যেতে নেই মানা। বুবাই এক গানটা একদিন স্কুল থেকে ফেরার পথে, ট্রাফিক সিগনালে শুনেছিল।
তারও গানটা গেয়ে উঠতে ইচ্ছে হল।
বুবাই কে রেডি করে স্কুলের গাড়ি দশটায় আসতেই তাকে গাড়িতে তুলে দিল সুমিতা, তারপর ঘরে ফিরে এসে সংসারের কাজে মন দিল।
স্কুলে মিতা আন্টি গল্পের ক্লাসে সুন্দর সুন্দর গল্প বলে। আজও সে বলল, নীল পরী, লাল পরীর গল্প। বুবাই তার বলা গল্প বিভোর হয়ে শুনছিল। ক্লাস শেষ হওয়ার ঘন্টা বাজতেই,বুবাই বেশ হতাশ হল। কি আর করা। তারপর স্কুল শেষ হতেই, স্কুলের গাড়িতেই বুবাই বাড়ি ফিরে এল।
সন্ধ্যায় বাড়িতে পড়তে বসে, আন্টির গল্পের কথা তার মনে পড়ছিল। সে যাই হোক রাতের খাওয়া দাওয়া শেষ করে সে মায়ের সঙ্গে ঘুমোতে এল বিছানায়।
ঘুমের ভিতর আচমকা শুনতে পেল, কে যেন ডাকছে তাকে, বুবাই বুবাই বলে।
সে তাকিয়ে দেখল কি সুন্দর একটা নীল পরী তাকে ডেকে বলল,আমার সঙ্গে যাবে?
- কোথায়?
- আমাদের দেশে।
- কোথায় তোমাদের দেশ?
- চাঁদে
বুবাইয়ের তো খুব আনন্দ, তক্ষুনি রাজী হয়ে গেল সে নীল পরীর কথায়।
পরীটা ওর গায়ে একটা রঙীন পালক ছোঁয়াতেই বুবাইও পরী হয়ে গেল।
কী আনন্দ! কী আনন্দ!
আর পড়াশোনা করতে হবে না তাকে।
শুধু সুন্দর রঙিন পাখা মেলে উড়ে বেড়াবে সে।
জ্যোৎস্নার আলো ডানায় মেখে উড়তে শুরু করলো বুবাই। ও ভাবল চাঁদে গিয়ে নিশ্চয়ই চরকা কাটা বুড়িকে দেখতে পাবে।
ঠিক তাই হল।
চড়কাকাটা বুড়ির কাছে গিয়ে বুবাই দেখল
বুড়ি তখনও চড়কা কেটে চলেছে।
সে বলল, এই সুতোগুলি দিয়ে কি হবে
বুড়ি মা?
বুড়ি ফোকলা দাঁত বের করে একগাল হেসে বলল, আমার পরী মেয়েদের জন্য পোষাক বানানো হবে। তুমি নেবে একটা জামা তোমার জন্য?
বুবাই খুশি হয়ে বলল,
আমায় দেবে বুড়ি মা একটা জামা তৈরী করে?
- কেন দেব না বাছা আমার?
বুবাই সেই জামা নিয়ে বাড়ি ফিরে এল, মা দেখে তো অবাক হয়ে বলল, এ জামা তুই কোথায় পেলি বুবাই।
বুবাই মাকে সব খুলে বলবে ভাবল। মা শুনে খুব অবাক হবে নিশ্চয়ই। আবার বিশ্বাস না-ও করতে পারে বুবাইয়ের কথা।
হঠাৎ কে যেন আবার তাকে ডাকতে লাগল, এই বুবাই, ওঠ ওঠ। কত বেলা হয়ে গেলো যে, স্কুলে যাবি না আজ?
ধরমর করে বিছানা থেকে উঠে চোখ রগরাতে রগরাতে দেখল, ওমা কোথায় পরী?
ও তো তার বিছানাতেই শুয়ে আছে, মা তাকে ডাকছে।
তাহলে কি সবটাই স্বপ্ন ছিল?
স্বপ্নের জগৎ ছেড়ে বাস্তবে নেমে এসে তার মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। কিন্তু কি আর করা? এই জীবনটাই তো তার সত্যিকারের জীবন,
একে মেনে নেওয়া ছাড়া আর উপায় কি বল?
বুবাই বিছানা থেকে নেমে বাথরুমে গিয়ে ঢুকল, ফ্রেস হতে।
বাথরুমে ঢুকে মনে মনে ভাবল, আজ গল্পের ক্লাসে মিতা আন্টিকে তার স্বপ্নের কথাটা বলতে হবে।
__________________________________________________________________________
Arati Mitra.
267/3 Nayabad,Garia
[ছবি: ইন্টারনেট মাধ্যম থেকে সংগৃহীত]
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন