দুষ্টু সিংহ ও টুনটুনি
(উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর গল্প অবলম্বনে)
ডঃ রমলা মুখার্জী
দুষ্টু সিংহ দেখে এক নধর সারস পুকুর-মাঝে-
খাবে তাকে ভাবে,
কাদা-পুকুরে নাবে।
পারে না আর উঠতে
নড়তে কিংবা চড়তে।
প্রাণ যে যায়,হায় হায়,কেউ নেই যে ধারে কাছে।
একটি গাধা যাচ্ছিল সেই পথটি ধরে নিজের কাজে-
সিংহ হাঁকে,"প্রণাম গাধা,
তুমিই হলে বনের রাজা,
প্রাণ যে আমার ভাজা ভাজা-
উদ্ধার কর আমায় দাদা।"
হাঁদা গাধা গলে জল সিংহরাজের তোয়াজে।
গাছের লতা টেনে গাধা দড়ির মত পাকিয়ে-
ছুঁড়ে দিল তাক করে,
সিংহ ধরে উঠে পড়ে।
সিংহ পাজি ভারি,
অকৃতজ্ঞের ধাড়ি,
গাধাকেই খেতে যায় হালুম করে লাফিয়ে।
গাধা বলে,"এ কি কর, প্রাণদাতাকেই খাও?
দাঁড়াও তবে একটুখানি-
তিনজনকে সাক্ষী মানি।
তারা যদি বলে,
উপকারিকে খেলে।"
দাম্ভিক সিংহ বলে,"দেখ কি রায় পাও।"
এক মৌমাছিকে ডেকে বললে গাধা হেঁকে,
"ওগো মৌমক্ষি
দাও তুমি সাক্ষী।
মনে দারুণ ব্যথা,
শোনো সব কথা।
বল,ধর্ম না অধর্ম,সাক্ষী দেবে কাকে?
সব কথা শুনে টুনে মৌমাছি ভেবে-চিন্তে কয়,
"সিংহরাজ করেছে কাজ সঠিক
কৃতঘ্ন মানুষও করে তাই,
মধু খেয়ে ভাঙে বাসাটাই।
উপকার করেছো,তুমি তো বেঠিক।"
মহানন্দে চেঁচায় সিংহ,"জয়,অধর্মের জয়।"
গাধা কয়,"দাঁড়াও পাষণ্ড,পাজি সিংহ তুমি,
দুই সাক্ষী আছে বাকি,
তার আগেই খাবে নাকি?
ঐ যে একটা বটগাছ
দাঁড়িয়ে হোথা পথ-মাঝ,
ওকেই সাক্ষী মানি,শোনাই কাহিনি আমি।
গাধা ডাকে,"বটদাদা গো বটদাদা, ওঃ, কত্তো তোমার ঝুরি.....
বয়স তোমার অনেক হল,
একটা কথা সঠিক বল,
ধরো,কারুর যদি বিপদ হয়,
উপকার করা কি ঠিক নয়?
অভিজ্ঞতার আলোয় দাদা গো,দাও না বিচার করি।
পরিপক্ক বটবৃক্ষ বলে দুখের হাসি হেসে,
"গরমে আমি দিই ছায়া-
আর আমকেই খুঁটে খুঁটে
আঠা নেয় লুটে পুটে,
কেউ করে না তো মায়া।
পাতা ছেঁড়ে,ডাল ভাঙে,বজ্জাত মানুষ অনায়াসে।
উপকারির অপকার করাই হল আধুনিকতার নীতি,
বুঝলে বোকা গাধা ভাই,
জান বাঁচিয়ে করেছো ভুল,
দিতেই হবে তার মাশুল,
মরা ছাড়া তোমার গতি নাই।"
সিংহ লম্ফ দিয়ে বলে,"এবার গাধা তোর হবে ইতি।"
"একটু সবুর কর সিংহ," কয় গাধা কাতরে,
"ঐ যে দেখ যায় পক্ষি...
ঐ আমার শেষ সাক্ষী।
মিষ্টি পাখি টুনটুনি -
একটা কথা যা শুনি,
উপকার করে প্রাণ যায়,আমি বোকা গাধা রে।"
বুদ্ধিমতি টুনটুনি উড়ে আসে গাধার কাছে;
সব শুনে বলে,
"গাধা ছিল কাদায়,
সিংহ ছিল ডাঙায়,
বুঝেছি তাহলে।"
সিংহ বলে,"ওরে পাখি,তোর মাথায় কি আছে"?
হেসে বলে টুনটুনি,"জানি জানি,সব জানি"।
সিংহকে গাধা রেখেছিল আটকিয়ে,
কাদাপুকুর যাচ্ছিল রাস্তা দিয়ে।
সিংহ যায় রেগে
ছোটে মহা বেগে।
কাদায় ঢুকে বলে,"টুনির ঘটে গোবরের খনি।
এই দেখ,এইভাবে আমি ছিলাম সেঁদিয়ে কাদায়-
গাধা ছিল ডাঙায়,
বাঁচালে সে আমায়।
এখন আমি খাব তাকে,
মরলাম বৃথা বকে বকে,
ঢোকাতে কি পারলাম কথাটা,টুনি তোর মাথায়"?
হেসে গায় টুনটুনি,"ওরে পাপিষ্ঠ,পাঁকে পচে হও ক্ষয়।
আমি সেজেছিলাম হাঁদা।
এসো এসো গাধা দাদা,
সিংহ নেমেছে পাঁকে,
পালাই এখান থেকে"।
কান মুলে গাধা কয়,"দুষ্টুর উপকার কভু আর নয়"।
টুনি বলে,"কৃতঘ্নকে শাস্তি দেওয়া চাইই চাই,
কাজ হাসিল কৌশলে,
না বোঝার এই ছলে।
সিংহ হল জব্দ
শেষ হল তার শব্দ"।
টুনটুনির কত বুদ্ধি জানলে তো সবাই।
_________________________________________________
ডঃ রমলা মুখার্জী, বৈঁচী, হুগলী,
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন