মাছ বৃষ্টি
গৌতম সমাজদার
আকস্মিকভাবে আকাশ থেকে ঝরে পড়ল মাছ। অবাক হচ্ছেন? হ্যাঁ, এই ঘটনা বহুবার ঘটেছে পৃথিবীর বুকে এবং আজও তা ঘটে। বৃষ্টির ফোঁটার সাথে আকাশের বুক চিরে মাছ পড়ার ঘটনা স্বাভাবিক প্রাকৃতিক ঘটনা না হলেও মানুষ বারে বারে অবাক হয়েছে। যারা বিষয়টিকে মজার ভাবেন, পরবর্তীতে তার কারণ জেনে অবাক হয়েছেন। আমেরিকার টেক্সাসের টেক্সারকানা শহরে হঠাৎ দেখা যায় শহরের আকাশ থেকে বৃষ্টির মতো মাছ ঝরে পড়ছে। ২০১৭ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার অরভিলে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনের ছাদ ও পাশের মাঠে মাছ বৃষ্টি দেখতে পাওয়া যায়। সিঙ্গাপুরে ১৮৬১ সালের ফেব্রুয়ারীতে মাছের বৃষ্টি দেখা গেছে। ঐ সময়েই প্রথম সবার নজর কাড়ে অবাক করা ঘটনা। সেই সময় অনেক প্রবন্ধে আলোচনা দেখা যায় এই মাছ বৃষ্টি নিয়ে। ২০১০ সালে অস্ট্রেলিয়াতেও মাছ বৃষ্টি হয়। ২০১২ সালে ফিলিপাইন ও ভারতে ঘটে মাছ বৃষ্টি।
এখনো পর্যন্ত বিশ্বের প্রায় ১৮-২০ টি জায়গায় মাছ বৃষ্টির খোঁজ মিলেছে। আকাশ থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে নেমে এল জীবন্ত মাছ। হণ্ডুরামে প্রায় ১০০ বছর ধরে ঘটেছে এই ঘটনা। কোন এক বছরের মে কিম্বা জুন মাসে হণ্ডুরামের ইউরো শহরে প্রচণ্ড ঝড় হয়। প্রচুর বৃষ্টিপাত আর বজ্রপাতের গর্জনে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। ঝড় থেমে যাবার পর সেখানকার মানুষ দেখতে পায় জ্যান্ত প্রচুর মাছ রাস্তায় লাফালাফি করছে। তখন অনেকেই ভেবেছিলেন, হয়ত আশেপাশের পুকুর থেকে মাছ লাফিয়ে রাস্তায় চলে এসেছে। কিন্তু পরে বোঝা যায় সরাসরি আকাশ থেকে বৃষ্টির ফোঁটার সাথে হাজার হাজার মাছ নেমে রাস্তায় পড়ছে। কিন্তু কেন হয় এই ঘটনা বারবার? ১৯৭০ সালে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক বিজ্ঞানীদের একটি দল ইউরোর এই ঘটনা নিজেরা দেখতে পান এবং অনেক চিন্তা ভাবনার শেষে তারা বুঝতে পারেন, মাটিতে পড়ে থাকা মাছগুলো দৃষ্টিশক্তিহীন অর্থাৎ এরা গভীর সমুদ্রের মাছ, যেখানে আলো পৌঁছায় না। বিজ্ঞানীরা বলেন, মাছ বৃষ্টি অস্বাভাবিক ঘটনা হলেও এর পিছনে বৈজ্ঞানীক কারণ আছে। তা হল, যখন কোন নদী বা সমুদ্রের ওপর দিয়ে টর্ণেডো ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়, তখন হাল্কা ওজনের মাছ জলের সংস্পর্শে ঘূর্ণিঝড়ে মিশে গিয়ে ওপরে উঠে যায়। ঝড় থেমে গেলেও অনেক ওপরে তখনও তা থেকে যায়। সাথে মিশে থাকে মাছ। তা মেঘ হিসেবে জমে থাকে। পরে ঝড় থেমে গেলে বৃষ্টি হয়। তখন বৃষ্টির সাথে মাছ মাটিতে নেমে আসে।
______________________________________________________________________________________
গৌতম সমাজদার
22/86 রাজা মণীন্দ্র রোড, কোল-37
[চিত্রঃ: ইন্টারনেট মাধ্যম থেকে সংগৃহীত]
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন